somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বাসর রাতের গল্প

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-কি ? নার্ভাস লাগছে ?

আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । আমার হাসি দেখে ভদ্রলোক মনে হয় প্রশ্রয় পেলেন । গলা কাঁপিয়ে হেসে উঠল । এতো জোরে যে আমার কোথায় যেন এক পিচ্চি জোরে কেঁদে উঠল । ভদ্রলোক আমার দিকে বড় রসিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

-আরে এটা কোন ব্যাপারই না ।

এমন ভাবে এটা কোন ব্যাপার না বলল আমার কাছে মনে হল এই ভদ্রলোক দিনে দুতিনটা বিয়ে করে আর দুতিনবার বাসর ঘরে ঢুকে ।

ভদ্রলোক আবার বলল

-শুন । একদম চিন্তা করবা না । আর বউ এর সামনে একদমই নার্ভাস হবা না ।

আমি মনে মনে বললাম বেটা জীবনের প্রথম বিয়ে করছি প্রথমবারের মত বাসর ঘরে ঢুকবো নার্ভাস হব না তো কি করবো ?

আমার পাশে বন্ধু সুমন ছিল । আমার কানে কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল

-অপু এই লোক মনে হচ্ছে বাসর রাত এক্সপার্ট । এমন ভাবে কথা বলছে যেন কত গুলো .....

আমি সুমন কে থামিয়ে দিয়ে বললাম

-চুপ থাক ।

ভদ্রলোক আবার বলল

-আমার শ্যালিকাকে তো আমি চিনি । তৃষা যদি বুঝতে পারে যে তুমি নার্ভাস হয়ে গেছ তাহলে কিন্তু সারা জীবনের জন্য তোমাকে বউয়ের সামনে নার্ভাস হয়েই থাকতে হবে ।

আমি আবার একটু হাসলাম । বললাম

-নাহ । নার্ভাস হব কেন ?

সুমন বলল

-চল অনেক রাত হয়ে গেছে । এবার বাসর ঘরের ভিতর যা । ভাবী ওয়েট করছে।

সুমনই আমাকে আমার ঘরের দরজার কাছে নিয়ে গেল । কিন্তু আমি ঠিকই বুঝতে পারছিলাম ঘরের প্রতিটি চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।

কি অস্বস্থিকর !

বিয়ে করার সময়ও ঠিক একই অনুভুতিটা হয়েছিল । যখন তৃষাদের বাড়িতে হাজির হলাম তখন থেকেই বাড়ির প্রতিটা চোখ কেবল আমার দিকেই তাকিয়ে আছে ।

আর যখন স্টেজের উপর বসে ছিলাম নিজেকে কেমন জানি কোরবানীর পশুর মত মনে হচ্ছিল । কেউ এদিকে আসছি । আমার দিকে তাকাচ্ছে । দেখছে আমার সব কিছু ঠিক আছে কি না ।

এইজন্য আমি এভাবে বিয়ে করতে রাজি ছিলাম না ।

বিয়ে করবো আমরা দুজন । কাজী অফিসে যাবো কবুল বলবো সই করবো ব্যাস ।

ঝামেলা শেষ ।

কিন্তু এখানে যাও । ওখানে যাও । একে সালাম কর ওকে সালাম কর ।

কি ঝামেলার কাজ ! আর এখন আবার ঝামেলা বাসর রাত ।

আল্লাহ জানে ভিতরে কি হবে !

সুমন আমার সাথে আমার ঘরের দরজা পর্যন্ত এল । তারপর বলল

-বন্ধু আমার যাত্রা এখানেই শেষ । এবার তোকে একাই যেতে হবে । আর শোন ঠিক ঠাক মত বিড়াল মারবি কিন্তু ।

-বিড়াল মারবো মানে ?

-আরে বেকুব শুনিশ নাই । বিড়াল কিন্তু বাসর রাতেই মারতে হয় তা না হলে সারা জীবন বউ এর সামনে বিড়াল হয়ে থাকতে হয় । ওকে যা বেষ্ট অব লাক ।

আমি জোরে একটা দম নিলাম । দরজা বন্ধ ছিল । ঠিক বন্ধ না ভেড়ানো ছিল । আমি নক করতে যাবো পেছন থেকে সুমন বলল

-কি করছিস ?

-নক করছি ?

-নক করবি ক্যান ?

-আশ্চর্য । একটা মেয়ে ভেতরে আছে । নক না করে কিভাবে ঢুকে পড়ি ?

-ভিতরের মাইয়া তোমার ম্যাডাম লাগে যে বলতে হবে আসতে পারি ? বেটা ঐটা তোর বউ । ভেতরে ঢুক বেটা ।

এবার সুমন আমাকে প্রায় ধাক্কা দিয়েই আমার ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল ।

আমি এতো দিন আমি জানতাম বাসর ঘরে মেয়েরা ঘোমটা দিয়ে থাকে । তারপর বর আসে তার ঘোমটা তুলে । নতুন বউ তবুও লজ্জায় মাথা তুলে না । বর তার হাত দিয়ে নতুন বউয়ের মুখ তুলে ধরবে ।

বাংলা সিনেমা গুলোতে তো এই ই দেখে এসেছি ।

কিন্তু তৃষা তো দেখি ঘোমটা তুলেই বসে আছে । খাটের ঠিক মাঝখানে বসে আছে । অবশ্য মাথায় কাপড় দেওয়া ।

আমার সাথে চোখাচোখি হতেই তৃষা একটু হাসলো । লজ্জা মিশ্রিত হাসি । আমিও হাসলাম । ঐ লজ্জা মিশ্রিত হাসি ।

এই মেয়েটার সাথে এখন আমার বাকীটা জীনব কাটা্যে হবে ।

অদ্ভুদ না ?

কদিন আগেও আমি তৃষাকে ঠিক মত চিনতামও না । আর আজ থেকে তৃষা আমার জীবন সঙ্গি । আমার বিয়ে করা বউ ।

আমার মনে আছে প্রথম তৃষার ছবি যে দিন দেখেছিলাম । চিকন মত একটা মেয়ে । কিন্তু চেহারায় কেমন একটা মোলায়েম আর মিষ্টি ভাবছিল । ভাবছিলাম বিয়ে যখন করতেই হবে তখন একেই নয় কেন ?

আমি বিয়ের জন্য খুব উচ্চ বাচ্চ করি নি । যা করার আমার মা আর ভাবীই করছিল । কদিন চলে যাবার পর একদিন অফিস যাচ্ছি ভাবি বলল

-আজ তৃষা তোমাকে ফোন করবে ?

আমি ততদিনে তৃষার নাম টা আসলে ভুলে গিয়েছিলাম । আমি বললাম

-তৃষা কে ?

ভাবি বলল

-হায় হায় । যে মেয়ের সাথে কয়দিন পরে তোমার বিয়ে হতে যাচ্ছে সে মেয়ের নাম ভুলে গেছ । তোমার বউ যদি জানে ।।

-ও ।

আমার মনে পড়লো । যে মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে তার নামটা ভুলে যাওয়াটা অন্যায় । মনে মনে বললাম বউ জানলে বলবে বিয়ের আগেই এই অবস্থা । বিয়ের পরেতো ....

আমি ঐদিন একটু অস্থির ছিলাম । সত্যি বলতে কি তৃষার ফোনের জন্য একটু অস্থির ছিলাম । যে মেয়েটার সাথে বিয়ে হতে যাচ্ছে কদিন পরে তার সাথে আজ কথা হতে যাচ্ছে । তাও আবার প্রথম বারের মত ।

তৃষার ফোন আসলো লাঞ্চ লাইমে । কাজ কর্ম রেখে বাইরে যাবো ঠিক তখন ।

আমি ফোন রিসিভ করে বললাম

-হ্যালো ।

ওপাশ থেকে খানিক নিরবতা । তারপর মৃদু কন্ঠে বলে উঠল

-অপু.....বলছেন ?

অপুর মাঝে একটু আবার গ্যাপ ।

-জি বলছি ।

আবার খানিক ক্ষন নিরবতা । তারপর বলল

-আমি তৃষা ?

-তৃষা ? পাখি ?

ওপাশ থেকে যেন একটু হাসির শব্দ শুনতে পেলাম । নিজের ভিতরেই উপলব্ধি করছিলাম যে আমি নিজেও কেমন একটা নার্ভাস হয়ে যাচ্ছি ।

তৃষা বলল

-এখন আপনার লাঞ্চ আওয়ার না ?

-হ্যা । কেন ?

-আমি আপনার সাথে একটু দেখা করতে চাচ্ছিলাম । যদি পসিবল হয় ।

-হ্যা সমস্যা নাই । বলুন কোথায় আসবো ?

কোথাও আসতে হবে না । আমি আপনার অফিসের সামনেই আছি । আপনি একট নিচে নামুন ।

আমি একটু অবাক হলাম । মেয়েটা নিচে দাড়িয়ে ।

সেদিন তৃষার সাথে বেশ খানিকক্ষনই কথা হল । বলতে আমার পছন্দও হল তৃষাকে । মনের ভিতর একটা টেনশন কাজ করছিল তৃষার আবার পছন্দ হবে তো আমাকে ।

সেদিনের তৃষা আর আজকের তৃষার ভিতর একটু পার্থক্য তো আছেই । আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে । বিয়ের সময় মুখ দেখাদেখি একটা পর্ব আছে যেখানে বর আর কনে কে একিই সাথে আয়নায় দেখতে হয় ।

আজ আয়নায় মুখ দেখার সময় দেখছিলমা তৃষা সবসময় চোখ নিচু করে রেখেছিল । একটি বারের জন্যও আমার দিকে তাকাই নি ।

এখনও অবশ্য আর আমার দিকে তাকিয়ে নাই । অন্যদিকে তাকিয়ে ।

আমি খাটের উপর বসতে বসতে বললাম

-বিয়ে তাহলে হয়েই গেল ?

-কেন আপনার সন্দেহ আছে ?

আমি এতো জলদি উত্তর আশা করি নি । আমি বললাম

-আপনি ?

-আমি তো তাও আপনি বলেছি । তুমি তো তাও বল নি ।

আশ্চর্য ফাজিল মেয়ে তো দেখতেছি । লজ্জা শরম কিছু নাই । বিয়ের রাতে মেয়েদের মুখ থেকে নাকি কথাই বের হয় না আর এই মেয়ের কথার খই ফুটতেছে । আবার অন্য দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে । ঐ ভদ্রলোক ঠিকই বলেছিল । তৃষার সাথে সাবধানে কথা বলতে হবে । আমি ভাবছি তৃষার সাথে কি নিয়ে কথা বলবো ঠিক তখনই তৃষা বলল

-তোমার টুপি কোথায় ?

-টুপি ?

-টোপর ? টোপর কোথায় ?

-বাইরে রয়েছে । আসলে টোপর পড়তে কেমন জানি লাগছিল । মনে হচ্ছিল মাথার উপর কেমন একটা তালগাছ নিয়ে ঘুরছি ।

আমার কথায় তৃষা ফিক করে হেসে দিল । তারপর বলল

-তোমাকে টোপর মাথায় কেমন লাগছিল জানো ?

-কেমন ?

-আগের দিনে বাংলা সিনেমায় কিছু কমেডি ভিলেন থাকতো না, সে রকম ?

-কি রকম ?

-এই যেমন মোল্লা টাইপের লোক । আমার এমন হাসি আসছিল না তোমাকে দেখে ।।

-আচ্ছা । বুঝলাম । আর তোমাকে কেমন লাগছিল বলবো ?

-কেমন ?

-তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছিল । এখনও সুন্দর লাগছে ।

তৃষা একটু মুখ ভেঙ্গালো আমাকে । বলল

-সুন্দর না ছাই । এসব হচ্ছে মেয়ে পটানো কথা ।

-আচ্ছা মেয়ে পটানো কথা । আচ্ছা কখন মেয়ে পটানো কথা বলে বলতো ?

-কখন?

আমি বললাম

-মানুষ তখনই মেয়ে পাটানো কথা বলে যখন একটা মেয়ে তার বাগে আসতে চায় না । তুমি তো অলরেডি আমার আয়ত্তে চলে এসেছো?

-আচ্ছা ! তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমার আয়ত্তে চলে এসেছি !

আমি হেসে বললাম

-আমার মনে হচ্ছে না । আমি জানি ।

-তুমি কচু জানো । আমাকে আয়ত্তে আনতে তোমার সারা জীবন লেগে যাবে । এই ! কাছে আসবে না বলে দিচ্ছি ।

আমি সত্যি এবার অবাক না হয়ে পারলাম না । আমি নিজের জায়গা থেকে একটুও নড়ি নি আর এই মেয়ে কয় কাছে আসবে না কিন্তু ।

মানে আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমার এখন কাছে যাওয়া দরকার । এই মেয়ের মাথায় দারুন বুদ্ধি তো । আমি হেসে ফেললাম

আমাকে হাসতে দেখে তৃষা বলল

-হাসছো কেন ?

-এমনি হাসছি । তোমার বুদ্ধি দেখে হাসছি ।

তৃষার সারা মুখে কেমন একটা দুষ্টামীর ছায়া লেগে আছে । এই মেয়ের কাছ থেকে আসলেই সাবধান থাকতে হবে ।

আমি ঘড়িতে সময় দেখলাম । একটার বেশি বাজে । একটু আগে যে বাড়ির ভিতরে যে হইচই হচ্ছিল তা অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছে ।

আমি তৃষা কে বললাম

-ঘুম আসছে তোমার এখন ? সারা দিন অবশ্য অনেক ধকল গেছে ।

তৃষা আবার কেমন দুষ্টামীর চোখে বলল

-এতো ঘুম ? ঘুমাবা ?

আবার হাসি ।

-আরে বাবা আমার ঘুম আসছে না । তোমাকে বললাম । খুব কি ঘুম আসছে ?

-কেন ?

-চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি । আমাদের বাড়ির পেছনে একটা কানা পুকুর আছে । ওখানে রাতের বেলা ভুত নামে ।

-মিথ্যা কথা ।

-চল । গেলেই টের পাবা । এখন জোছনা রাত না ? একদম পরিষ্কার দেখা যাবে । নাকি ভয় পাচ্ছ ?

তৃষা আবার আমাকে মুখ বাকিয়ে বলল

-আমি ভয় পাই না । কিন্তু বাসর রাতে কি কেউ ভুত দেখতে যায় ? বাসর রাতে তো ...।

তৃষা কথাটা শেষ করলো না । আমার দিকে তাকিয়ে থেমে গেল । ওর চোখে আবারও সেই দুষ্টামী ।

-বাসর রাতে মানুষ কি করে শুনি ?

-আমি কি করে বলবো ? আমি কি এর আগে বিয়ে করেছি নাকি ?

-তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি কয়েকবার বিয়ে করেছি । তোমার দুলাভাইয়ের কাছে জিজ্ঞেস কর নি । তার কথা শুনে তো মনে হল সে এই সব ব্যাপারে বেশ এক্সপার্ট ।

-বলেছে তোমাকে ।

আমার ঘরের সাথে গ্রিলের বারান্দা । বারান্দা দিয়ে আমি আর তৃষা বের হয়ে এলাম । প্রথম প্রথম তৃষা ভয় পাবে না বললেও গেট দিয়ে যখন বের হলাম তখন মনে হল ও একটু ভয়ই পেল ।

চারিদিকে একদম সুনশান নিরবতা । ঝিঝি ডাকাও বন্ধ হয়ে গেছে ।

তৃষা আমার সাথে সাথে হাটতে লাগলো । আমাকে বলল

-আমি তোমার হাত ধরবো একটু ?

-ভয় লাগছে ?

তৃষা কোন কথা না বলে আমার হাত ধরলো । বিয়ের পর এই প্রথম আমি তৃষার হাত ধরলাম । কি মোলায়েল একটা হাত যেন ।

তার থেকেও বড় এই অনুভুতিটা ।

আমি তৃষার হাতটা আর একটু ভাল করে ধরলাম । ও তো কেবল আমার হাতটা আলতো করে ধরেছিল আমি ধরলাম আরো ভাল করে ।

আগে রাস্তা দিয়ে হাটার সময় প্রায়ই এমন কাপল দেখতাম হাত ধরে হাটতে । আমি অবাক হয়ে তাদের মুখের দিকে তাকাতাম । দুজনের মুখেই আনন্দের একটা আভা দেখতে পেতাম । ঠিক কি কারনে তারা এতো আনন্দিত আমি বুঝতাম না । কিন্তু আজ যেন আমি কিছুটা হলেও তা উপলব্ধি করতে পারছি ।

আমি তৃষাকে নিয়ে পুকুর পারে বসলাম । আগে তো তৃষা কেবল আমার হাত ধরে ছিল । এখন বসার পর আমার আরো কাছে এসে বসলো ।

চারিদিকে জোঁছনার আলোতে একাকার । পুকুরের টলটলা পানি । এক চমৎকার এক দৃশ্য । মনে হচ্ছে যেন কোন স্বপ্ন দেখছি ।

তৃষা বলল

-এটা তো কানা পুকুর মনে হচ্ছে না । এখানে কি সত্যি কি ভুত নামে ?

আমি হেসে বললাম

-আরে বোকা নাকি ? আমি তো ফান করে বলেছি ।

তৃষা যেন একটু চুপ করে গেল । আমার কাছে মনে হল তাই ।

বললাম

-কি হল ?

-কিছু না ।

তৃষার কিছু না শুনে সত্যিই মনে হল কিছু হয়েছে । কি এমন করলাম যে তৃষার মুড অফ হয়ে গেল । আমি বললাম

-কি হল বল ? এমন চমৎকার একটা রাত এভাবে নষ্ট কেন করছো ?বল প্লিজ ।

তৃষা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল

-আমি না মিথ্যা একদম নিতে পারি না । বিশেষ করে প্রিয় মানুষ গুলোর কাছে থেকে ।

-আরে বাবা । আমি তো জাষ্ট ফান করেছি ।

-ফান করেও না ।

-আচ্ছা ঠিক আছে । এই দেখো তোমার হাত ধরে কথা দিচ্ছি আজকের পর তোমার কাছে আর কখনও মিথ্যা বলবো না । কখনও না ।

তৃষা কেবল আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো । যদিও খুব বেশি আলো ছিল কিন্তু আমার কেন জানি মনে হল ওর চোখে পানি চলে এসেছে । আমি বললাম

-আমি তো একটা কথা দিলাম । তাহলে তুমিও একটা কথা দাও ।

-কি ?

-আজকের পর থেকে তোমার চোখে যেন আমি কোনদিন পানি না দেখি । ওকে ? ডিল ?

তৃষা একটু হেসে ফেলল । বলল

-আচ্ছা । ডিল । আর একটা কথা ।

-কি

-যখন ঝগড়া বাধবে তখন তুমি কিছু বলবে না । চুপচাপ শুনে যাবে । তা না হলে কিন্তু তুমুল ঝগড়া বেঁধে যাবে ।

আমি এখনও বিবাহিত জীবন শুরুই করতে পারলাম না এই মেয়ে আগেই ঝগড়ার কথা শুরু করে দিল । আর মেয়ে বলছে যখন ঝগড়া বাধবে, যদি ঝগড়া বাধে এমন কথা বলে নাই । তারমনে এই মেয়ে আমার সাথে ঝগড়া বাধাবেই ।

আমি বললাম

-যখন ঝগড়া বাঁধবে, মানে কি ? তুমি কি আমার সাথে ঝগড়া করবাই ?

আমার কথা শুনে তৃষা যেন আকাশ থেকে পড়লো । বলল

-আশ্চর্য ঝগড়া করবো না ? বিয়ে করলাম তোমার সাথে আর আমি ঝগড়া রাস্তার মানুষের সাথে নাকি ?

-আচ্ছা ।

-জি হ্যা । আজকে বাসর রাত বলে কিছু বলছি না । কালকে থেকে দেখো কথায় কথায় তোমার সাথে ঝগড়া বাধাবো । এটা করলে কেন ? ওটা করলে কেন ? সেইটা করলে না কেন ? এরকম হাজার টা প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে তোমার জান শেষ করে ফেলবো । বুঝেছ ?

-আচ্ছা । আমার শ্বশুর মশাই আমার কপালে এমন ঝগড়াটে বউ দিল । তোমার ছোটা বোন কেই বিয়ে করা দেখি ভাল ছিল ।

-কি বললা ? আবার বল ।

- না না । কিছু বলিই নি তো । বললাম যে আমার শ্বশুর মশাই একদম ঠিক মেয়েটাই আমাকে দিয়েছে ।

-হুম । এইটাই মনে রেখ ।

আমি মনে মনে হাসলাম । তৃষার সাথে এতো জলদি এতো সহজ হয়ে যাবো ভাবতে পারি নি । তৃষা আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমার সাথে কত চিন-পরিচয় ওর । কত দিনের ভাব ।

বিয়ের আগে কেবল অল্প কয়দিন আমাদের দেখা হয়েছে । তাও বেশির ভাগ সময়ে তৃষা চুপ করেই থাকতো লজ্জায় । আর এখন ?

মেয়েরা পারেও বটে ।

তৃষা বলল

-আর শোন । তুমি কিন্তু আমার উপর রাগ করে থাকতে পারবে না । মনে থাকবে তো । আমি কেবল তোমার উপরর অভিমান করবো । এবং তোমাকেই সেই রাগ ভাঙ্গাতে হবে কিন্তু ।

-আচ্ছা । আর কিছু ?

-আর যখন আমার রাগ ভাঙ্গাতে আসবা অনেক গুলো চকলেট নিয়ে আসবা । চকলেট দেখলে আমি কিছুতেই রাগ করে থাকতে পারবো না । মনে থাকবে তো?

আমি হাসলাম । আমার ভাবতেই ভাল লাগছে এই মিষ্টি মেয়েটা আমার বউ । এর পর থেকে আমার জীবনের সব কিছুতেই এই মেয়েটার ছোঁয়া থাকবে । সকালের ঘুম থেকে উঠে এই মেয়ে টার মিষ্টি হাসি আমি দেখতে পাবো ।

আমি তৃষার হাতটা আমার ঠোটের কাছে এনে আলতো করে একটু চুমু খেলাম ।

এই জোঁছনার আলোতেও দেখলাম তৃষা একটু যেন লজ্জা পেল । তারপর ও আমার কাধে মাথা রাখল আলতো করে ।

কি অদ্ভুদ সুন্দর একটা সময় । চারিদিকে জোঁছনার আলো । পুকুরের টলটলা আলো সেই জোঁছনা কে যেন আর সুন্দর করে দিয়েছে ।

আমি জোঁছনার জল দেখছি তৃষা আমার কাধে মাথা রেখে আছে । দুজনের চোখেই সামনের অসম্ভব সুন্দর দিনের স্বপ্ন ভাবছে ।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৫১
৮৫টি মন্তব্য ৮৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×