(পূর্বের অধ্যায়ের পর - Click This Link)
চার পাঁচটি রীট মামলা করতে আর উকিলের খরচ যোগাতে সেতু তখন রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। ওর সঙ্গে তখন হাইকোর্টে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি, কিন্তু যারা ওর সাথে ছিল তাদের মুখে শুনেছি একটানা ১৭ দিন সেতু তখন চা-বিস্কুট আর পানি খেয়ে কাটিয়েছে বাড়ির জায়গা জমি বিক্রি করতে হয়েছে, অথচ এই সেতু ছিল আমাদের ক্যাম্পাসে খরচের দিক থেকে সেরা বন্ধু।
প্রতিমাসে টিউশনি এবং ভর্তি কোচিং এ ক্লাস নিয়ে ২০ হাজারের বেশী টাকা আয় করেছে, বাড়ি থেকে ও ভালো একটা সাপোর্ট পেত। কিন্তু কোনদিন একটি টাকা সঞ্চয় করেনি, কোন বন্ধু বা জুনিয়র কোর্স রেজিষ্ট্রেশন করতে পারেনি, কার বাড়ি থেকে টাকা আসেনি তাই না খেয়ে আছে এমন সব গুলোকে খুঁজে বের করে তাদের সমস্যা সমাধান করা ছিল ওর নেশা।
আর সেই সেতু ১৭ দিন ভাত না খেয়ে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক হলে পরিচিত কারোর বেডে শুয়ে রাত টা কাটিয়ে দিয়েছে, হলে যার বেডে অন্য কারো ঘুমানোর অনুমতি ছিলনা। এক রুমে ৪ টি ফ্যানের ব্যবস্থা ছিল। যাই হোক অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে ২০০৫ এর জুলাই এর শেষ দিকে সেতু বাংলাদেশের ইতিহাসে (স্বাধীনতার পরে) প্রথম ছাত্র হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে রীট মামলায় জয়ী হয়। মামলার রায়ে সেতুর উপর অর্পিত সাজা অবৈধ ঘোষিত হয়।
শুনে আমরা যেন আকাশ হাতে পেলাম, ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীরা উল্লাস করলো, স্বাগতম জানালো, অভিনন্দন জানালো এবং ঘোষনা করলো সেতু ক্যাম্পাসে ফিরলে সম্বর্ধনা দিবে।
সেতুর আসতে কয়েকদিন দেরী হলো, মামলার রায়ের কপি তোলাসহ কিছু কাজ সেরে ১ সপ্তাহ পরে ও ক্যাম্পাসে এলো এবং ও যে ঐ দিন ক্যাম্পাসে আসবে আমরা কেই জানতাম না। কেউকে কিছু জানতে দেয়নি। যখন শুনলো সবাই ওকে সম্বর্ধনা দিতে চায় ও আপত্তি করলো। এবং কোন হৈচৈ করতে নিষেধ করলো।
সেতু ক্যাম্পাসে ফিরে এলো ঠিকই কিন্তু সেই সেতুকে যেন আমরা আর খূঁজে পাচ্ছিলাম না। কারন ওর জীবন থেকে তখন হারিয়ে গেছে একটা বছর আর সেই সঙ্গে সব স্বপ্ন। সেতু আর আগের মত প্রাণ খুলে হাসেনা, মাতিয়ে রাখেনা বন্ধুদের আড্ডা।
প্রথমে কারনটা আমরা বুঝে উঠতে পারিনি, পরে জানতে পারলাম আর্থীক অনটন ওর সঙ্গে আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে গেছে, যারা ওর সঙ্গে মামলার কাজে কোর্টে যেত তারা হিসাব আগষ্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মোট সাড়ে আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে সেতুর, অনেক টাকা ধার ও করেছে। অথচ ওর ওই দূর্দিনে ওকে মোবাইলে কর করলেও কেটে দিয়ে কলব্যাক করতো ও। কখন ও কেউকে বুঝতে দেয়নি ভিতরে ওর কত কষ্ট।
সেতু ক্যাম্পাসে ফিরে আবার নতুন করে রেজিষ্ট্রেশন করে পরীক্ষা দিলো থিসিস ও শেষ করলো। তারপর গ্রাজুয়েশন শেষ করে হন্যে হয়ে চাকুরী খুঁজতে লাগলো, আমরা বললাম মাস্টার্সের কথা শুনে শুধু অবাক হয়ে তাকালো যেন মাস্টার্সের নাম ও কখন ও শোনেনী বা শোনা পাপ।
অবশেষে একটি স্থানীয় এনজিও তে কর্মজীবন শুরু করলো এবং তারপর নিজের মোবাইল নাম্বার টা পাল্টে ফেললো, অনেকদিন পর্যন্ত কারো সাথে কোন যোগাযোগ করেনি।
এদিকে রীট মামলায় জিতলেও নিম্ন আদালতে তখন ফৌজদারী মামলা বিচারাধীন যেখানে ও জামিনে আছে এবং প্রতি মাসে ২ বার আদালতে হাজিরা দিতে হয়, মামলার তারিখ জানতাম শুধূ আমি আর দূর্ভাষী, দেখা করতাম ওর সাথে সত্যি খুব কষ্ট হতো ওর জবিন দেখে।
চলবেঃ