somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাত ধোয়া

২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
গল্পটা করোনা কালের আগের



আজ আয়াজের খুব খুশি লাগছে। বলতে গেলে খুশির দিন। বাসায় গিয়ে আম্মুকে কখন সে ঘটনাটা বলবে তাই অস্থির। পথে ফিরতে ফিরতে সে খানিক পর পর আব্বুর দিকে তাকিয়ে হাসে আর বলতে থাকে, কেমন লাগে, কেমন লাগে? মজাটা বুঝো।
ব্যাপারটা সামান্য। আয়াসের আব্বুর কাছে স্বাভাবিক হলেও আয়াসের কাছে তা অস্বাভাবিক।
একটা ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটা ছোট হলেও আয়াজের সামনে ঘটায় সে ওটাকে বোঝাতে পারছে না ঠিকমতো। তার কাছে অন্যরকম লাগে। আবার একে একেবারে ছোট করে দেখারও উপায় নাই। সে কল্পনাও করতে পারে না তার আব্বাকে ওভাবে কেউ বকা দেবে। তাও তার সামনে।
তবে বিষয়টা সাধারণ হলেও মানতেই হবে ছোট বড় সবার জন্য শিক্ষনীয় বটে।
আসলে তার আব্বাকে কেউ বকা দিতে পারে সেটা তার ধারণায় ছিল না। তার আব্বাই তো তাকে প্রতিদিন হাত ধোও, হাত ধোও করে এটা ওটা বলতে থাকে। এছাড়া এটা করো না ওটা করো, ওটা করো না এটা করো Ñ করে করে কত্ত কিছুতে খালি বলেই যায় যায়।
হাত ধুইছি না বললে বলবে হাত ধুতে হবে।
হাত ধুইছি বললে আবার দেখতে চায় কই দেখি ভালো করে ধোয়া হইছে কি না?
দেখালে বলে দুই হাত কি ঠিকমতো ধোয়া হইছে?
এরকম একটার পর একটা।
আব্বু বাসায় থাকলে তিনবেলা খাওয়ার আগে এভাবে তাকে জেরার মধ্যে পড়তে হয়। তবে রাতে প্রায় প্রতিদিন এই কথাগুলো তাদের দুই জনার মধ্যে হয়ে থাকে।
আজ আয়াসের আব্বা গিয়েছিল তার এক বন্ধুর বাসায়। তাকে নিয়ে গিয়েছিল। বন্ধুর আম্মা তাকে ডেকেছিল। জরুরি প্রয়োজন আছে। আয়াস ওসব বোঝে না। তার তো সাথে থেকে ঘুরাঘুরি। বন্ধুর আম্মার সাথে তার অনেকক্ষণ কথা হচ্ছিল।
এর মধ্যে বন্ধুর বোন নাস্তা রেডি করতে থাকে। বন্ধুর আম্মাও মেয়েকে বারবার বলছিলেন নাস্তা রেডি হলো কি না। মেয়েও কথার ফাঁকে ফাঁকে টেবিল সাজিয়ে ফেলে।
বন্ধুর আম্মা মানে আয়াসের দাদী আর বোন মানে ফুফু। আয়াস ততক্ষণে তাদের সবার সাথে মিশে গেছে। এঘর ওঘর করে টেবিলে এসে বসেছে সবার সাথে।
আয়াসের সমবয়সী একটা বাবুও সে বাসায় আছে। আয়াসের জন্য সেটা বাড়তি আনন্দের। সব মিলে সবারই সময়টা ভালোই কাটছে।
এরমধ্যে বারবার তাগিদ দেওয়া হয় খাবার রেডি, ডাইনিং টেবিলে আসতে।
বড়রা গল্পের মধ্যে ডাইনিং টেবিলে এসে বসে। আয়াস আসে ওই বাবুটাকে সাথে নিয়ে।
কয়েক প্রকার খাবারের মধ্যে গরুর গোস আর নান রয়েছে। গোস-নান খেতে হলে হাত দিয়েই খেতে হবে। মিষ্টি জাতীয় কিছু হলে চামচ দিয়ে খাওয়া যেত। সুজি, পিঠাও আছে টেবিলে। যার যেটা পছন্দ হবে খাবে।
আয়াসের আব্বার ঝাল জিনিসই বেশি পছন্দ। সে তাই নান দিয়েই শুরু করবে। সে সেদিকে হাত বাড়ায়।
যেই নানের এককোনায় হাত দিয়ে ছিঁড়তে যাবে ওমনি বন্ধুর আম্মা বলে উঠলেন, হাত ধুয়েছ?
কণ্ঠে কিছুটা শাসন আর স্নেহের সুর।
একটু থমকে যায় আয়াসের আব্বা। তারপর স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নেয়।
না ধুইনি, বলে আরো কি যেন বলতে যাচ্ছিল তবে খুব আস্তে আস্তে।
যাও হাত ধুয়ে আসো। তিনি আবার বললেন। বেশ স্বাভাবিকভাবেই বললেন। বললেন, বাইরে থেকে এসেছ না।
আয়াসের আব্বা আস্তে উঠে যাচ্ছে বেসিনের দিকে।
আয়াস ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। প্রথমে সে অবাক হয়েছিল বেশ।
তিনি আবার বললেন, জানো না বাইরে থেকে আসলে হাত ধুতে হয়।
জ্বি বলে ততক্ষণে আয়াসের আব্বা বেসিন পর্যন্ত চলে গেছে।
তিনি আরো বললেন, দুই হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নেবে। বেসিনে সাবান আছে। তিনি নিজে বেসিন দেখিয়ে দিলেন।
এরকম কিছু ঘটতে পারে তা আয়াসের ধারণার বাইরে। তার আব্বাকে সে কখন এটা নিয়ে কিছু বলবে তার জন্য ছটফট করে। তার আব্বা যখন হাত ধুচ্ছিল তখন সে বেসিনের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
এই কথাগুলো আয়াসকে খুবই অবাক করে। আয়াস পুরো বিষয়টি খেয়াল করেছে। সে তখন শুধু বলেছিল, আব্বু তুমি হাত না ধুয়ে খাচ্ছিলা।
সে মিটমিট করে হাসে আর বলতে থাকে, ভালো হইছে। নিজে হাত ধোয় না ঠিকমতো আবার আমাকে বলে। আমি তো প্রতিদিনই হাত ধুই। দুই হাত ধুই সাবান দিয়ে। আর নিজে? বলেই তার আব্বার দিকে আঙুল তুলে জোরে হাসা শুরু করে।
সে কিছুটা নিচু স্বরে কথাগুলো বলছিল যাতে অন্যরা না শুনতে পায়। কিন্তু হাসির আওয়াজটা চাপা রাখতে পারে না।
আয়াসের হাসি শুনে বাসার সবাই আয়াসের দিকে তাকায়। আয়াস লজ্জা পায়।
তার কাছে ওই দাদীর কথাগুলো খুব কড়া শাসনের মতো লাগে। তার আব্বাই তার কাছে সব। কিন্তু তারও উপরে যে কেউ তার আব্বাকে কিছু বলতে পারে, শাসন করতে পারে, বকা দিতে পারে এটা তার জানা ছিল না। কল্পনায় ছিল না।
ব্যাপারটা আয়াসের মনে ভিতর ঘুরপাক খেতে থাকে। ফেরার পথে সে তাই সুযোগ মতো তার আব্বাকে একটার পর একটা কথা বলে যাচ্ছে।
বলে, দেইখো আম্মু শুনলে কি বলে। বড়দের কথা শুনতে হয়। আমি দেখো না তোমার কথা শুনি।
আয়াসের আব্বা গম্ভীর একটা ভাব ধরে।
আয়াস নিজে নিজে হাসে। কখনো কখনো জোরে জোরে হাসতে থাকে।
সে তার আব্বার অবস্থা দেখার জন্য বারবার তার দিকে তাকাতে থাকে। আব্বা লম্বা বলে নিচ থেকে চেহারা ভালো করে দেখা যায় না। সে লাফিয়ে লাফিয়ে মাথা উচুঁ করে দেখার চেষ্টা করে।
ওই দাদীটা কিছুক্ষণ আগে কত সুন্দর করে সবার সাথে গল্প করছিল। হাসছিল। দেখে দেখে চলে যাচ্ছিল আয়াস। মাঝে মাঝে হাসির শব্দ শুনে না জানি কি হচ্ছে উঁকি দিয়ে তা দেখে যাচ্ছিল।
তার এখন নতুন ভাবনা শুরু হয়। সে ভাবে সত্যি সত্যি হাত ধুতে হয়। দাদী জানল কি করে যে খাওয়ার আগে হাত ধুতে হয়? আব্বু তো ঠিকই বলে, পরিষ্কার পরিচ্ছন হতে হয়। হাত না ধুলে রোগ জীবানু হাতে বাসা বাঁধে। সে হাত মুখে গেলে জীবানুও মুখে যায়। মানুষের অসুখ হয়।
তাহলে সব বড়রাই কি একই কথা বলে?
আব্বু তাহলে আমাকে হাত ধুতে বলে ঠিকই করে।
সে নিজের মনে মাথা দোলায়।
আয়াস ঠিক করে, এখন থেকে সে রোজ হাত ধোবে। হাত না ধুয়ে কিছুই খাবে না। বাহির থেকে এসে আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নেবে। ময়লা, অপরিষ্কার হলে হাত ধুয়ে নেবে।
সবাইকে বলবে, এই তোমরা সবাই খাওয়ার আগে, বাহির থেকে আসলে সব সময় ভালো করে হাত ধুয়ে নেবে।
সব সময় হাত ধোবে। ভালো করে হাত ধোবে।

১৫.০৯.২০১৯

বিষয়: #গল্প
ছবি: ইন্টারেনট

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:২৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একই শহরের দুই মসজিদে দুই দিনে ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৩

ডালাসের পাশে আমাদের Plano শহরের প্রধান দুইটি মসজিদের একটিতে (পৃথিবীখ্যাত East Plano ইসলামিক সেন্টার বা EPIC মসজিদ, যা ইয়াসির কাদির মসজিদ হিসেবে পরিচিত) গতকাল ঈদ উদযাপন করেছে। কিন্তু Plano'র আদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যারা সৌদি আরবের সাথে ঈদ করেছে আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামে দগ্ধ করবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৪:৪৬



সূরাঃ ৪ নিসা, আয়াত নং ১১৫ এর অনুবাদ-
১১৫। কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনদের পথ ব্যতিত অন্যপথ অনুসরন করে, তবে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতে মুসলিমরা কি আসলেই নির্যাতিত?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:৪৩

গুজব রটানো কত সহজ দেখেন! ফেসবুক থেকে নেয়া একসাথে সংযুক্ত এই ৩টি ভিডিও দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে কীভাবে গুজব রটিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো হয়। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যা, তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ প্রকল্প: ভণ্ডামির আরেক নমুনা

লিখেছেন নতুন নকিব, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪

শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ প্রকল্প: ভণ্ডামির আরেক নমুনা

রংপুর জেলা প্রশাসক অফিসের সামনে তৈরী মডেল মসজিদের ছবিটি উইকি থেকে নেওয়া।

বাংলাদেশে ইসলামের নামে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও বাস্তবে তার অনেকগুলোই... ...বাকিটুকু পড়ুন

AI-এর লগে গ্যাঁজাইলাম =p~

লিখেছেন জটিল ভাই, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১২

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(স্ক্রিনসট)

সামহোয়্যার ইন ব্লগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×