somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘলা

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মেঘলা পর্যটন মোটেলে উঠেই গোটা বান্দরবানের নিসর্গ ক্ষণিক অনুমান করা যায় বৈকি
আমিও বুঝে নিলাম তোমার ছড়ানো কেশের ঘ্রাণে উড়ছে রাতের শুভ্রতা
বোঝাই যাচ্ছিল দূর কোনো অচেনার মাঝে লুকিয়ে যাচ্ছে দিনের আলো
কোনো আমন্ত্রণে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে পাহাড়ি উদারতা আর
রাতের নেকাবে ঢাকা পড়ছে আরক্তিম গোধূলি
রাত কেবল হচ্ছিল
না পূর্ণিমা না অমাবশ্যার আলো ছড়ানো পরিবেশ।

রাতের জানালা খোলা চিত্রল প্রজাপতির উৎসবের স্রোত আর ঢেউ ভাঙা উষ্ণতা
মেঘলা জেগে থাকে প্রকৃতির অসীম উদারতা নিয়ে।
ভিড় ঠেলে আসবে রাতের সহোদর ...

রাত হাঁটছিল গভীরের দিকে
মেলার রসদ সাজিয়ে বসেছে আকাশ জুড়ে অগণিত তারা
তারা কি আর গোণা যায়, তবে চেনা যায় সাতকানিয়ার কিশোর থেকে
সদ্য তারুণ্যে ঝুঁকে পড়া তোমার চাহনিতে লুকানো প্রেম আর চোখের
তারার মধ্যে জেগে থাকা প্রেমিকার মুখচ্ছবি।
শাহাবুদ্দীন তোমার নির্বাক চাহনির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছিল
বাংলাদেশ
ওই চোখের তারার ভিতর আশার তারাগুলো জ্বলছিল অনবরত
তোমার উদম শরীর ছুঁয়ে নেমেছিল জলেরধারা
সাংগু থেকে চক্রবাকের মতো শিরায় শিরায়
অতঃপর তীব্র আকর্ষণে ছুটে চলা বঙ্গোপসাগরের বুক বেয়ে চতুর্মুখী দিগন্তের পানে।




প্রলম্বিত সীমানা ছেড়ে লুণ্ঠিত হয়ে আছে প্রকৃতির সৃজন
তোমার তৃষ্ণার নীড় তুর পাহাড়ের টান স্পর্শ করে জেগে থাকে প্রকৃতির ঠোঁট চুরি করে
পাহাড়, পাহাড়ের দেহ জেগে থাকে অনন্ত প্রেমের সুধা বিলিয়ে দিতে।

বন্ধু যুগিয়েছিলাম রাতে -
মেঘলার ত্রিমোহনীতে খাজা গরিব নেওয়াজ হোটেলের তেল চিটচিটে
টেবিলগুলো আর বন্ধুর গায়ে ঘামের চিটচিটে ভাব - কোনো পার্থক্য ছিল না
আসবাবগুলো প্রকৃতির শুকনো রূপান্তর
তুমি প্রকৃতির জ্যান্ত উদাহরণ শাহাবুদ্দীন! বন্ধু আমার
আজকের বাংলাদেশে মফস্বল প্রতীক
পৃথিবী স্নন ছেড়ে উঠে এসেছে রৌদ্রলা ঘাটে।









একটা গল্প বলি
গল্পটা ছিল সত্যি।
শাহাবুদ্দীনের হোটেলে প্রথম রাত্রের অতিথি হয়েছিলাম
পর্যটন মোটেলে বাহারী খাবার রেখে তোমার আতিথ্যে
খাদ্য তালিকায় রেখেছিলাম দেশি মুরগীর ভূনা অথবা সুরুয়া ঝোল
সাদা ভাতের সাথে ডাল আর ভর্তার আলু। মুরগী অবশ্য এই ক্রমাগত রাতে
শহর থেকে আনতে হবে। সমস্ত খরচ আমাদের। নগদ সওদার রসদের সাথে
ঘামের বাড়তি এনামও ছিল প্রস্তাবনার তালিকায়। আমরা তিনজন
হোটেলের শাহাবুদ্দীন ও সালাহউদ্দিন আজ আমাদের মেহমান।
এত সবের পরও তাদের কষ্টের ঘাম ও সুন্দর নিসর্গের নগদ উচ্চমূল্য মিলিয়ে
হিসাবের খাতা না মিলাতে পারায় সে অবশ্য রাজি হয়নি
আমাদের উদরপূর্তি করিয়ে তৃপ্তি দিতে।
জিজ্ঞেছিলাম, কেন?
বলেছিল, বুঝে আসে না?
কেন? কোনো উত্তর না দিয়ে ফেলফেল করে চেয়েছিল
হিসাব মেলাতে পারেনি।

শাহাবুদ্দীন তোমাকে ধন্যবাদ। শহুরের হলে হয়ত ঘটনা উল্টা ঘটতে পারতো
যান্ত্রিক দাবিদাওয়ায় হয়ত আমরা অসহায় বোধ করতাম। অথচ
প্রকৃতির সারল্য ফুটে উঠেছিল তোমার ভিতর।

অগত্যা খোলা আকাশের নিচে উদরপূর্তির আকাঙ্ক্ষা তিরোহিত হয়ে পড়ে
বিকল্প খুঁজে উদ্যম প্রকৃতির মাঝে আমরাও অবাক হয়েছিলাম শাহাবুদ্দিনের সরল
শিহরিত স্বীকারোক্তি ‘বুঝে আসে না’তে
আমরাও বুঝতে অবাক হয়েছি তার হৃদয় খুঁড়ে।

রাতে হয়ত সেও নিসর্গের সৌন্দর্যকে ভয় পায় - না হলে কেন সে
সাহসী হয়নি চার কিলো দূরে গিয়ে বাজার খয়রাত করতে
আমরা তো তোমার বুকে মুখ গুজে চুষে নিতে চেয়েছি রাতের সৌন্দর্য
খাবারের দায়িত্ব নিয়েছিল সে আরো আন্তরিকতায়
এরকম অভিসারে নিরামিষভোজী প্রেমিকার মতো অবশেষে আমরা লুফে নিয়েছিলাম
তোমার রাঁধুনিতে আলু ভর্তা ডালের সাথে ডিম আর সিম চরচরির অমৃত সুধা।
আধা আলো আধা জোছনা
শীর্ণ হোটেলের ধুকধুক বৈদ্যুতিক বাতি
খোলা আকাশের নিচে টেবিল চেয়ার
দূরে থেমে থেমে শিয়ালের সংগীত
জীর্ণ হোটেল সংলগ্ন রাস্তার বুক চিরে ভোঁ ছুটে যাওয়া দূর পাল্লার দানব ট্রাক
সাংগু নদী থেকে উঠে আসা সদ্যøাত পরিবেশ
শুধু বলতে পারি, এক কথায় অসাধারণ।
বাংলাদেশ।

আমরা হারিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে নিরুদ্দেশ হয়েছিলাম
হারাতে চেয়েছিলাম মেঘলার অন্ধকারে।

সম্মানিত ভাবীগণ
ধন্যবাদ
আপনারা পরম আন্তরিকতায় বসেছিলেন আমার রাতের উদরপূর্তি করার আশায়
তৃপ্তিকর খাদ্য নিয়ে। আপনাদের ভালোবাসার দরদ সকালে নাস্তার টেবিলে উপচে পড়ছিল
পারভেজ ভাবী, জাহিদ ভাবী আর জাফরি ভাবীর মমতামাখা স্নিগ্ধ সকাল সুরভি ছড়াচ্ছিল
মাহমুদ ভাইর আনন্দ নিয়ে উপভোগ্য করে তুলছিল আজিমের ইতিহাস
রাশেদ, মাসনুন আর আমি ওমর সবাইকে নিয়ে
শাহাবুদ্দীন চোখের ভিতর মেঘলা থেকে দেখছিলাম সমগ্র বাংলাদেশ
পর্বত চূড়াগুলো ধ্বনিত হয়ে ফিরছিল
প্রকৃতি তুলে নিয়েছিল সব সৌন্দর্যের আঁধার।

এই রাত স্ফূর্তির সবটুকু শরাবের মতো ঢেলে দিয়েছিল আধো জোছনা দিয়ে
সবটুকু বিলিয়েছিল শিরি ফরহাদের মতো। দেখেছি
ঈর্ষার চোখ ঘুরে ঘুরে আসে
সে চোখ চায় ঈর্ষান্বিত সৌন্দর্য
সুন্দরীর চোখ চেখে নেয় আরেক সুন্দরীর লজ্জাহীন ঈর্ষা
মেঘলা, কে কার সৌন্দর্যের তারিফ করতে তসবীহ হাতে বসে আছে
নীলাচল, চিম্বুকের উচ্চশৃঙ্গ আর শৈলপ্রপাতের বান্দরবান।

ছবি: ওমর বিশ্বাস
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৩৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×