অব্যাহত দরপতনের প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করার দাবিতে মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা।
সোমবার মতিঝিল এলাকায় প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল ও বিক্ষোভের পর বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ এই কর্মসূচির ঘোষণা করে। এরপর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে থেকে আট বিনিয়োগকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, “সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আমাদের হরতাল চলবে।”
পুঁজিবাজারবান্ধব মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সরকারের ঘোষণা করা প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশীদ চৌধুরী বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল করবো। পুলিশ বাধা দিলে তা প্রতিহত করা হবে।”
তিনি জানান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ইত্তেফাকের মোড়, দৈনিক বাংলার মোড়, নটরডেম কলেজ ও দিলখুশা পর্যন্ত এলাকা হরতালের আওতায় থাকবে।
পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবিতে টানা দরপতনের প্রতিবাদে সোমবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে রাস্তায় বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা। টানা দরপতনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, ডিএসই কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকে দায়ী করে শ্লোগান দেন তারা।
বেলা দেড়টার দিকে তারা এক বিনিয়োগকারীর প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিলও করে। লাশের খাটিয়াসহ মিছিলটি শাপলা চত্বর পর্যন্ত গিয়ে আবার ডিএসইর সামনে ফিরে আসে। মিছিলের কয়েকজন ঝাড়ু হাতেও বিক্ষোভ দেখায়।
বিক্ষোভকারীরা দুপুর তিনটায় প্রতীকী জানাজা পড়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের কাছ থেকে খাটিয়া কেড়ে নেয়। এরপরই মঙ্গলবার মতিঝিল এলাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত হরতালের ঘোষণা দেয় বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।
বিক্ষোভকারীরা এরপর মিছিল নিয়ে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) দিকে যেতে চাইলে প্রথম পুলিশ বাধা দেয়। পরে মিছিলটি এসইসি, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর হয়ে আবার ডিএসইর সামনে আসে।
বিনিয়োগকারীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখায় ডিএসইর সামনে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিলে বিকেল সাড়ে ৪টায় আবার যান চলাচল শুরু হয়।
এ সময় বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশীদ চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকসহ আট বিনিয়োগকারীকে আটক করেছে মতিঝিল থানা পুলিশ।
মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরমান আলী জানান, হরতালের ডাক দেওয়ায় তাদের আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
পুঁজিবাজারে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিনিয়োগ করার সুযোগ নিয়ে ‘বিভ্রান্তির’ মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক গত সপ্তাহের চার কার্যদিবসে ১৬৭ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ কমে যায়। এরপর রোববার এক দিনেই সূচক কমে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ বা ২৩৬ পয়েন্ট।
সোমবার সূচক আরো ৭১ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৬৩৮ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে বেলা ১২টার দিকে ডিএসইর সামেনে বিক্ষোভ শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা।
পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে চট্টগ্রামেও বিক্ষোভ করেছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।
সোমবার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ শফি মোটরের সামনে চট্টগ্রাম ইনভেস্টরস ফোরামের ব্যানারে অর্ধশতাধিক বিনিয়োগকারী সমাবেশ করে।
সমাবেশ থেকে বক্তারা বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন মৌখিকভাবে না করে লিখিতভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।
এছাড়া পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের ধারা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বক্তারা অবিলম্বে পুঁজিবাজারবান্ধব মুদ্রানীতি চালুর দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফোরামের যুগ্ম আহবায়ক সরোজ চৌধুরী সুলভ, খোরশেদ আলম মিলন, চন্দন চৌধুরী, বোরহান উদ্দিন প্রমুখ।
অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে ঢাকার বিনিয়োগকারীদের কর্মসূচির সাথে সমর্থন জানিয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রামেও কর্মসূচি পালন করা হবে বলে ফোরাম নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
তথ্যসূত্রঃ বিডিনিউজ