somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাদশা তোমায় সেলাম

২৮ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ূন আমহেদ নিয়ে পোষ্টটা দিয়েছিলাম কয়েকদিন আগে এই জাতি অধম এবং নির্বোধ হলেও, মহান ও উদার মনের অধিকারী..... সমরেশ মজুমদার লেখাটি পড়ে মনে হল। এতদিন পরে হলেও তারা যেন বুঝতে পেরেছে তাদের চেয়ে আমরা জাতী হিসাবে অনেক উদার মনের অধিকারী।

যে রাতে হুমায়ূনের মৃত্যুর খবর পেয়েছিলাম সেই রাত ছিল ঘনবর্ষার। হায়দ্রাবাদ শহর ভেসে যাচ্ছিল বৃষ্টির জলে। নিউইয়র্কে, যেখানে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছে হুমায়ূন সেখানেও চাঁদ ওঠার কথা নয়। চাঁদ দেখা গেছে তার পরের দিন। হুমায়ূনের ইচ্ছে ছিল চাঁদনী রাতে রুপোলি শাম্পানে ভেসে যাওয়ার। ইচ্ছেগুলো কেন যে পূর্ণতা পায় না!
পঁচিশ বছর ওর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম। দেখা না হলেও ছিলাম। ওর প্রবল ইচ্ছে ছিল কলকাতার বিশেষ একটি পত্রিকায় উপন্যাস লেখা- যেখানে তারাশংকর, সমরেশ বসুরা লিখে গিয়েছেন। মধ্যরাতের আড্ডায় ওকে বলেছিলাম, এখানে যে টাকা পাও তার সিকি ভাগও পাবে না। কি হবে লিখে? সে আমার হাত ধরে বলেছিল, টাকার দরকার নেই, আমার আজীবনের একটা ইচ্ছে পূর্ণ হবে। হুমায়ূন সেই কাগজে কয়েকবছর লিখেছিল। অথচ হুমায়ূনের মৃত্যুর পরে কলকাতায় দু-একটি কাগজ ছাড়া তথাকথিত বড় কাগজগুলো খবরটা পাঠকদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি। কেন এই উদাসীনতা? লক্ষ্য করেছি, বাঙালি হিন্দু পাঠক উপন্যাসে মুসলমান চরিত্র পেলে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। নামাজ, রোজা, আপা, দুলাভাই শব্দগুলো যেন তাদের উপন্যাসের রস গ্রহণে বাধা দেয়। অথচ বাংলাদেশের মুসলমান পাঠকরা অবলীলায় আমাদের উপন্যাসে কোনো তথাকথিত হিন্দু আচার থাকলে উদারতার সঙ্গে রস গ্রহণ করেন। তাদের কাছে উপন্যাসটির মানই শেষ কথা। বলতে দ্বিধা নেই, পশ্চিমবাংলার পাঠকরা এ বিষয়ে অত্যন্ত মৌনবাদী। সেই ভাবনা থেকেই বড় কাগজগুলো নির্লিপ্ত ছিল কিনা তা জানি না। শ্রদ্ধেয়কে শ্রদ্ধা জানানোর অক্ষমতা মানে নিজেকেই ছোট করা।
বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক (শরৎচন্দ্র এবং রবীন্দ্রনাথ মনে রেখেই বলছি) হুমায়ূন আহমেদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সে যদি প্রায় তিরিশ বছর ধরে বাংলাদেশে পাঠকদের বইকুনো না করত তাহলে সেখানে ভালো পাঠক তৈরি হতো না। আর সেটা সে করেছিল বলে আমাদের সহজে গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের মানুষ।
খুব শান্ত এই মানুষটির সমস্ত বৈদেশিক মুদ্রা নিউইয়র্কের হোটেল থেকে চুরি হয়ে গেল একদিন। সে উত্তেজিত হয়নি। আমায় বলেছিল, যে নিয়েছে তাকে আমি অনুমান করি। কিন্তু সে যেন স্বীকার না করে, তাহলে তার সঙ্গে কখনো কথা বলতে পারব না। আমি এ কথা প্রচারের পরই মানিব্যাগটি ফেরত এসেছিল।
বছরখানেক আগে একা আমি আর হুমায়ূন বসেছিলাম। হঠাৎ সে তার আফসোসের কথা বলেছিল। ব্যক্তিগত জীবনের কথা বলেছিল। আমি যদি নদীর একূল ওকূল বাঁধতে পারতাম!
সব ইচ্ছে এই জীবনে পূর্ণ করে যাওয়া যায় না। হুমায়ূনও পারেনি। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের এই মুকুটহীন বাদশা বাঙালির মনে থেকে যাবেন বহুকাল। লিখতে শুরু করার সময় হুমায়ূনের কি এই ইচ্ছেটা মনে আসেনি? এলে সেটাই সত্যি হয়ে থাকবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অদৃশ্য দোলনায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮



ভোরের রোদ্র এসে ঘাসের শিশিরে মেঘের দেশে চলে যেতে বলে
শিশির মেঘের দেশে গিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঘাসের মাঝে ফিরে আসে-
বৃষ্টি হাসে শিশিরের কথায়। তাহলে আমরা দু’জন কেন প্রিয়?
এক জুটিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লায় দেছে!

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯



আল্লায় দেছে। কথাটার মানে হচ্ছে- আল্লাহ দিয়েছেন।
হ্যা আল্লাহ আমাদের সব দেন। এই দুনিয়ার মালিক আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন শুধু মাত্র তার ইবাদত করার জন্য। কিন্তু মানুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া,... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর কেমন হলো ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৮


প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখনো চীন সফরে রয়েছেন। চীন সফর কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক হাইপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন সাসেক্সফুল সফর আর কোনো দলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×