মুখের দিকে দেখি
শহীদুল জহির
পিডিএফ বই খুঁজতে গিয়ে “আবু ইব্রাহীমের মৃত্যু” বইটা সামনে আসে। অপরিচিত লেখক, তাও নামালাম। কারণ বইয়ের নামটা বেশ মনে ধরে। এরপরে একটানা পড়ে শেষ করলাম। তারপর ঘাটাঘাটি করে দেখি শহীদুল জহির একজন ক্ষণজন্মা সাহিত্যিক। মাত্র অল্প কয়েকটি লেখায় মুক্তিযুদ্ধ ও দৈনন্দিন জীবনের স্বরূপ যেভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছেন, তা আমাকে মোহবন্ধ করে রাখে। আমি শহীদুল জহিরের ব্যাপারে আক্ষেপ করি আহা! আরো যদি লিখতে পারতেন।
“মুখের দিকে দেখি” উপন্যাসটা বেশ অদ্ভুত এক বর্ণনায় শুরু হয়। “ভূতের গল্লির চানমিঞা হয়তো বান্দরের দুধ খাওয়া পোলা, কারণ যারা এই ঘটনার সাক্ষী, যেমন মামুন/মাহমুদের মা মিসেস জোবেদা রহমান, তাদের ২৫ নম্বর বাড়িতে বেড়াতে গেলে এবং কথার প্রসঙ্গ চানমিঞার দিকে মোড় নিলে সে এই কথাটা জানাতে ভুলবেই না যে, ওতো বান্দরের দুধ খাইছিল, এবং এ বিষয়ে সন্দেহ করলে সে অবশ্যই তর্ক করবে এবং প্রয়োজনে ঝগড়া।”
উপন্যাসে অনেকগুলো চরিত্র কিন্তু প্রত্যেকেই স্বাধীন ভাবে বিরাজ করে। কারো উপর কারো নির্ভরশীলতা নাই। চানমিঞার উপর জুলি ফ্লোরেন্সের যে আবেগ তা আবার একটু স্বচ্ছল পরিবারের চানমিঞার বন্ধুরাই মানতে পারেনা।
জোবেদা রহমান যুক্তি দিয়া বোঝার আগেই প্রবৃত্তি দিয়া অনেক কিছু বুঝতে পারা মহিলা হয়েও মামুনের হারিয়ে যাবার খবর শুনে বুদ্ধির মাথা খেয়ে যখন মামুনের জন্মদাগ দেখে নিশ্চিত হয় যে তার পোলা মামুন হারায় নাই। বহুকাল পরে তাদের উঠোনে আবার হারিয়ে যাওয়া মামুনের আগমন পাঠকের মাথা নড়বড়ে করে দেয়।
আমরা যখন দেখি যে মামুন হারিয়ে গিয়ে আসমান তারা হুরে জান্নাতের খরকোশ হয়ে যায়। তখন ট্রাকের শ্রমিকরা মামুনের মা’কে খবর দেয় যে মামুন গত রাতে হারিয়ে গেছে। মামুনের মা তখন অবাক হয়ে বলে যে মামুন তো হারায় নায়। তখন ট্রাক শ্রমিকরা আরো জোর দিয়ে বলে যে মামুন হারিয়ে গেছে। জোবেদা বেগম তখন এক বিপদেই পড়ে। তখন মামুনকে ডেকে এনে তার জন্মদাগ চেক করে নিশ্চিত হয় যে মামুন হারায় নায়। কিন্ত আবার দেখি যে মামুন তখন হারিয়ে গিয়ে আসমান তারা হুরে জান্নাতের খরকোশ হয়ে আছে।
এভাবে একই মুখকে দু’ভাবে দেখেও শেষ পর্যন্ত বহুমুখের সমাবেশে আবার তাদের ভিন্ন মুখোশে দেখি ।
এরই মাঝে মুক্তি যুদ্ধে পুরান ঢাকার মানুষের বিপন্ন অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করে আমাদের উপন্যাস শেষে এসে হতাশ হতে হয়। লেখক কেন জানি তাড়াহুড়ো করে শেষ করে দেয়। কিন্তু তখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর আমরা পাইনা। আয়নার সামনে দাড়িয়ে তখন নিজেকেই প্রশ্ন করি মামুন নাকি খরকোশ কে আসল?