somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষা ব্যবস্তা: সম্ভাবনা বনাম সমস্যা

১৮ ই মে, ২০০৮ ভোর ৫:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইংরেজী মাধ্যমের পড়ালেখার প্রতি একেকজনের একেকরকম দৃষ্টিভঙ্গি। কারো মতে, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাব্যবস্হাই উত্তম এবং সারা দেশে এটাই অনুসরন করা উচিত। আবার কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যমের কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই। এধরনের মনোভাবের কারণ মূলত: তাদের একপাক্ষকিক দৃষ্টিভঙ্গি অথবা অভিজ্ঞতার অভাব। আসলে কিছু পরিবর্তন আনতে পারলেই এই শিক্ষাব্যবস্হা বর্তমান যুগের বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের উ‌পোযোগী হয়ে উঠবে।


ইংরেজী মাধ্যমের বেশ কিছু ভালো পদ্ধতি আছে, যেগুলো অনুসরন করলে সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্হারই উন্নয়ন হবে। যেমন, কিছু কিছু ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত কোনো অর্ধবার্ষিকী বা বার্ষিকী পরীক্ষা হয় না। এর বদলে প্রতিদিন ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। এর কারন হল, এতো অল্প বয়সে ছাত্রছাত্রীদের কচি মনের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকা। বাৎসরিক পরীক্ষা থাকলে, একটা পরীক্ষা অর্থাৎ একদিনের কর্মকান্ডের উপর তার ভবিষ্যত নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এর ফলে ঐদিন যদি ছাত্রছাত্রীর কোনো কারনে শরীর খারাপ হয়ে পড়ে অথবা টেনশনে প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারে তাহলে তার সারা বছরের পরিশ্রম মাটি হবে। এর পরিবরতে প্রতিদিনকার পড়ালেখা যদি মূল্যায়ন করা হয়, তাহলে যেমন নিয়মিত পড়ালেখা করার অভ্যাস হয়ে উঠবে, তেমনি অসুস্হ থাকার কারনে সারা বছরের পড়ালেখার ফলাফল খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে না।

ইংরেজী মাধ্যমের আরেকটি ভালো গুন হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে তোলায় সাহায্য করা এবং একই সাথে ভবিষ্যতের জন্য তাদেরকে তৈরী করে তোলা। আমাদের বাংলা মাধ্যমে খুব কমই (বলতে গেলে শুন্য) গ্রুপ পজেক্ট করতে দেয়া হয়ে থাকে। এতে করে একে অপরের সাথে কাজ করার অভ্যাসটি গড়ে উঠে না। ভবিষ্যতে তাই বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে তাই বন্ধুত্বপূর্ন পরিবেশের চেয়ে প্রতিযোগীতাই বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু ইংরেজী মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলোতে কিন্তু সম্মিলিত প্রজেক্টের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। এতে করে ছাত্রছাত্রীরা যেমন একে অপরের সাথে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে তেমনি একে অপরের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে যা নাকি একা একা করলে অজানাই থেকে যেত।

আরেকটি ভালো দিক হলো, প্রতিটি ইংরেজী বিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের অনুদান দেয়ার প্রথা চালু রয়েছে। এতে করে মেধাবী অথচ কিছুটি অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। ঢাকা শহরের খুব কম বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোতে এই প্রথা চালু আছে।

ইংরেজী মাধ্যমের পাঠ্যসূচী বাইরের উন্নত দেশ থেকে আসে। এতে অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে যা নাকি সনাতনী বাংলা মাধ্যমের পাঠ্যসূচিতে নেই। এইসকল বিষয়ের বইগুলোও প্রায় নির্ভুল। এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা শুদ্ধ জ্ঞান লাভ করে থাকে। ইংরেজী মাধ্যমের পাঠ্যসূচীর একটি বিশেষ সুবিধা হল, নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রয়োজনের আলোকে পাঠ্যসূচী পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের এমন কিছু পড়তে হয় না, যার বাস্তবে কোনো প্রয়োগ নেই। ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষাব্যবস্হা যে এদেশের শিক্ষাব্যবস্হার অনুরূপ তার প্রমান পাওয়া যায় বিভিন্ন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায়। ইংরেজী মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা খুব কম সুযোগ পেলেও, যারা পায় তাদের অবস্হান মেধা তালিকার উপরের দিকে। খুব কম সুযোগ পাওয়ার কারন হল, এই পরীক্ষাগুলো বাংলা মাধ্যমের পাঠ্যসূচী অনুযায়ী হয়ে থাকে। ফলে অনেক ছাত্রছাত্রীই একটু ঘাবড়ে যায় এতো বড় বাঁধা পার করতে পারবে কিনা তা চিন্তা করেই। কিন্তু একটু কঠোর পরিশ্রম করলেই খুব সহজে বাংলা মাধ্যমের পড়াও আয়ত্ত্ব করা যে সম্ভব, তার প্রমান সেই সকল মেধাবী ইংরেজী মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীদের সুযোগ পাওয়া।

এবার আসা যাক কিছু সমস্যার দিকে। আগেই বলা হয়েছে, ইংরেজী মাধ্যমের পাঠ্যসূচী তৈরি হয় দেশের বাইরে। এর ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় তাতে অগ্রাহ্যই থেকে যায়। যেমন, ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষায় বাংলাদেশী ইতিহাস তুলে ধরা হয় না। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাস অত্যন্ত ঐতিহ্যপূর্ন। পলাশীর যুদ্ধ, পানি পথের যুদ্ধ এবং এই সকল যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত গন্যমান্য ব্যক্তিদের খুব কম কথাই শেখাবো হয়ে থাকে। কিন্তু অতীতকে না জানলে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন কখনো বাস্তবায়িত হবে না।

আমাদের বাংলাদেশীদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ন দুটি বিষয় হল একুশে ফেব্রুয়ারী এবং মুক্তিযুদ্ধ। একজন বাঙ্গালী হিসাবে এগুলো জানা আমাদের কর্তব্য। কিন্তু দু:খের বিষয় হল, পাঠ্যসূচীতে এগুলো নিয়ে খুব কমই আলোচনা করা হয়ে থাকে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা এগুলো সম্পর্কে জানতে পারে না।

বাংলাদেশের মানুষ ইউরোপের মানুষদের থেকে আলাদা। ইউরোপের মানুষেরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশীদের প্রতি নজর দেবার সময়ও তারা পান না। তাদের মাথায় সব সময় একটি চিন্তাই ঘুরপাক খায়, আর তাহল কি করে এই প্রতিযোগীতামুলক পরিবেশে নিজের অবস্হানটিকে আরো মজবুত করে তোলা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষেরা সম্পূর্ন ভিন্ন ধরনের। তারা আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের সাথেই সময় অতিবাহিত করতে চায়। একারনে সমাজের সবার সাথে তাদের সুসম্পর্ক থাকে। কিন্তু ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষা আমাদেরকে যৌথ পরিবার, আত্মীয়তা, প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ল প্রভৃতির গুরুত্ব সম্পূর্নরূপে অগ্রাহ্য করে। উল্টো, এই শিক্ষা ব্যবস্হার মধ্য দিয়ে ইউরোপ আমেরিকার ঐতিহ্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এর ফলে প্রম নাইট, ভ্যালেন্টাইন্স ডে প্রভৃতি অপসংস্কৃতি কিশোরকিশোরীদের প্রয়োজনের তালিকায় স্হান করে নিচ্ছে আর আমাদের ঐতিহ্য সময়ের সাথে গভীর গর্তের ভিতর হারিয়ে যাচ্ছে।

ইংরেজী মাধ্যমের পাঠ্যসূচীতে বাংলা আছে। কিন্তু তা যথেষ্ঠ নয়। একজন অষ্ঠম শ্রেনীর ছাত্র বা ছাত্রীর বাংলায় প্রচুর জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। বাংলাই একমাত্র ভাষা যার জন্য মানুষ জীবনের মায়া ত্যাগ করেছে। অথচ, আজ অনেক বড় বড় শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীরাই ঠিক মত বাংলা লিখতে পারছে না। বাংলা মাধ্যমের ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে যা পড়ানো হয়, ইংরেজী মাধ্যমে ৮ম শ্রেনীতেও সেই বাংলা পড়ানো হয় না। এটা আসলেই দুখজনক।

ইংরেজী মাধ্যমের আরেকটি সমস্যা হল, এক্ষেত্রে পড়ালেখার খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। তাই অনেক পরিবারের পক্ষেই তাদের সন্তানদের ইংরেজী মাধ্যমে পড়ানোর সুযোগ হয়না। এরফলে দেখা যায় যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই শুধু ইংরেজী মাধ্যমে পড়ে। আর তাদেরকে বিদ্যালয়ের বাইরেও পড়ার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করা হয়। এতে করে অনেক ছাত্রছাত্রীরাই ভুল পথে পা দেয়। তারা ভাবে, এই টাকা তো তাদের জন্যই। "টাকা যে অনর্থের মূল" এসত্যটি তাই ইংরেজী মাধ্যমেই বেশি দেখা যায়। এর ফলে তারা ঠিকমত পড়া লেখা করে না এবং নিজেদের ভবিষ্যতকেই অন্ধকার গুহোয় নিক্ষেপ করে।

আরেকটি সমস্যা হল, ইংরেজী মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা খুব দ্রুত মনে করতে শুরু করে যে, অভিভাবকতা তাদের অধিকারে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাই তারা তাদের অভিভাবকদের নিজেদের কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ না করার জন্য ব্যবস্হা গ্রহন করে থাকে। অথচ বাংলা মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ পর্যন্তই অভিভাবকের সন্তানদের পড়ালেখা এবং জীবন যাপনের প্রতি খেয়াল রাখেন। এতে করে সবশেষে, ছাত্রছাত্রীদেরই সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

সব কিছুই সমস্যা আর সম্ভাবনা মিলেই তৈরী হয়। মানুষকে শুধু তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হয়। আমরা যদি ইংরেজী মাধ্যমের ভুল ক্রুটি গুলো ঠিক করতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে এটিই একটি আদর্শ শিক্ষাব্যবস্হায় পরিনত হবে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×