somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাশিয়ান কবি ভ্লাদিমির মায়কোভস্কি’র কবিতার অনুবাদ ও আত্মহত্যা প্রসংগ

০১ লা জুলাই, ২০১১ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১/

একটা পেরিয়ে গ্যাছে ঘড়ির কাটা

একটা পেরিয়ে গ্যাছে ঘড়ির কাটা, তুমি নিশ্চয়ই শুয়ে পড়েছ ।
রাতজাগা দুধালো বৃত্তের স্রোতস্বীনিতে বয়ে যায় রুপার লহর ।
আকস্মিক বার্তায় তোমাকে ঞ্জাগরিত কিংবা উৎকন্ঠিত করার
কোন অভিপ্রায় আমার নেই, যদিও আমার কোন ব্যস্ততা নেই,
এবং তারা সবাই যেভাবে বলে, ঘটনার নথিপত্র স্তগিত করা হয়েছে ।
জীবনের যাতাকলে ভালোবাসার নৌকার হয়েছে ভরাডুবি
সময় এসেছে তোমার-আমার ছাড়াছাড়ির, তবে কি প্রয়োজন
দুজনের অতীতের দুঃখ, যন্ত্রণা ও ক্ষতগুলোকে কাটাছেড়ার ।
বিস্মিত নয়নে চেয়ে দ্যাখো পৃথিবীর শুনশান নৈঃশব্দ্য ।
আকাশের বেদীতে তারাদের অর্ঘ্য নিবেদন করে রাত ।
এমন সময়, একজন জেগে উঠে কথা বলে
সময়, ইতিহাস এবং বিশ্বলোকর সাথে ।

(১৯৩০)

(কবিতাটি আত্মহত্যার পর তার নোটবুকের কয়েক পেজ স্ক্রিবল লাইনের মাঝে পাওয়া গিয়েছিল, ধারনা করা হয় এই কবিতাটি তার At the top of my voice কবিতাটির ধারাবাহিকতায় লিখা )

২/

জ্যোৎস্নালোকিত রাত

সেখানে চাঁদ থাকবে,
এরই মাঝে উদীয়মান
এক টুকরো,
আর এখন পুর্নিমার চাঁদ ভাসছে শূণ্যে...
সম্ভবত সে-ই ঈশ্বর
ঐশ্বরিক ঐশ্বর্যমন্ডিত
রুপোর চামচ,
সুপের বাটিতে খুজে ফেরে তারার মাছ ।

(১৯১৬)

৩/

শোন!

শোন!
অবশেষে, তারারা যদি আলো ছড়ায়
তবে নিশ্চিত, কেউ তাদের প্রয়োজন বোধ করেছিল
কেউ হয়তো কামনা করেছিল আকাশে তাদের উপস্থিতি
তবে কেউ নিশ্চয়ই মনেপ্রানে চেয়েছিল
মুক্তোদানার নিঃসরন ।

এবং মুহুর্মুহু নিঃশ্বাসের শব্দ,
শেষ বিকেলে ধুলিঝড়ের ঘূর্ণাবর্তে পাক খেতে খেতে
সে ত্বরিতে ছুটে যায় ইশ্বরের কাছে,
এরই মধ্যে বিলম্বিত, এইভেবে সে ভীতসন্ত্রস্ত হয়
এবং অঝোরে কেঁদে কেঁদে
ইশ্বরের মাংসল হাতে চুম্বন করে,
এবং তারার উপস্থিতির নিশ্চয়তা অনুনয় করে
বলতে থাকে, তারাহীনতার বিষাদ হবে অসহনীয় ।
অতপর, উদ্বিগ্নতায় সে পায়চারী করতে থাকে
দৃশ্যত, সে ছিল শান্ত ।
এবং কাউকে বলে উঠলো
‘অবশেষে সব ঠিকঠাক,
কিছুতে তোমরা ভীতসন্ত্রস্ত নও,
তাই নয় কি?

শোন!
যদি তারারা আলো ছড়ায়-
তবে নিশ্চিত, কেউ তাদের প্রয়োজন বোধ করেছিল
তবে, তাদের উপস্থিতি অপরিহার্য
এভাবেই প্রতিটি সন্ধায়
অন্তত একটি তারা
দালানের চুড়ায় উদিত হবে ।

(১৯১৪)

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও আত্মহত্যাঃ

গত শতাব্দির শুরুতে রুশ বিপ্লবের অন্যতম পথিকৃত মায়াকোভস্কিকে বলা হয় রাশিয়ান কবিতার 'raging bull' । ওভারকোট আর হ্যাট মাথায় দীর্ঘদেহী মানুষটি পুঁজিবাদী সমাজের শোষণ, মানুষে মানুষে অসাম্যের কথা বলেছেন । তার কবিতা অনূদিত হয়েছে পৃথিবীর নানান দেশে, নানান ভাষায়। অসাধারণ সুন্দর আবৃত্তি করতেন মায়াকোভিস্ক । তার কবিতায় রয়েছ এক ধরনের বিমর্ষ চিৎকার । তার কবিতায় সে চিৎকারগুলো কাগজবন্দী শব্দে পরিনত হয় আর শব্দগুলো সৃষ্টি করে গভীর অর্থদ্যোতনা । আর সমাজে একজন আর্টিস্টের ভুমিকাকে তিনি পুনঃসংজ্ঞায়িত করেছেন, নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন ।

১৮৯৩ সালের ১৯ জুলাই প্রখ্যাত লেখক, কবি, নাট্যকার ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি সোভিয়েত রাশিয়ার জর্জিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন । ১৪ বছর বয়সেই মায়াকোভস্কি সক্রিয়ভাবে সোশ্যালিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯০৬ সালে তার বাবার অকাল মৃত্যুর পর তিনি মা ও দুই বোন সহ মস্কোতে চলে আসেন । মস্কোয় মায়াকোভস্কি মার্কসিস্ট সাহিত্যের প্রতি ঝুঁকে পড়েন । ১৯০৮ সালে বিধ্বংসী কর্মকান্ডের জন্য ১১ মাস কারাগার যাপনকালে তিনি প্রচুর বই পড়েন । তখুনি তিনি কবিতা লিখা শুরু করেন জেলযাপন কালে । তার কবিতায় সমাজবাদের জোরালো সুর রয়েছে । সে বছরই তিনি মস্কো আর্ট স্কুলে ভর্তি হন যেখানে তিনি রাশিয়ান ভবিষ্যবাদী আন্দোলনের অনেকের সাথে পরিচিত হন । লেলিনের বোলসেভিকের(RSDLP) সমর্থক ছিলেন তিনি । তিনি ছিলেন গতিশীল ব্যক্তিত্বের অধিকারী জাতীয় বীর । তার পলিটিক্যাল কবিতা কৃত্রিম উপদেশাত্মক ছিল না, বরং তা ছিল impressionistic । অক্টোবর রেভ্যুলিউশনের পর তিনি ছিলেন সোভিয়াত রাশিয়ার গুরুত্বপুর্ন প্রতিনিধিস্থানীয় পথপ্রদর্শক ।

প্রকৃতি তাকে যতটা না উদ্ভুদ্য করেছিল তার চেয়ে প্রযুক্তি তাকে বেশি আলোড়িত করত । তার আত্মজীবনীর বর্নায় রয়েছে আলোকিত রাতের শহরের রিভেটের ফ্যাক্টারি দেখে তার উপলব্ধি "lost interest in nature. Not up to date enough." । কবিতা গুলো ছিল অনেকটা স্বীকারোক্তিমুলক । তার কবিতার অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল ভালবাসায় প্রতিদানহীনতা, অপ্রাপ্যতা, দুর্ভাগ্য, বিষাদ । তিনি ছিলেন সুদর্শন ও বিখ্যাত কবি । নারীরা স্বভাবতই তার প্রতি আসক্ত হত । ১৯১৫ সালে লিলিয়া ব্রিকের প্রেমে পড়েন, লিলিয়া ব্রিককে বলা হয় ‘muse of Vladimir Mayakovsky’ । অসিপ মাক্সিমোভিচ ব্রিক ছিল লিলিয়া ব্রিকের স্বামী । আবার অসিপ ছিল মায়াকোভিস্কর প্রকাশক । "The Backbone Flute" কবিতাটি তিনি লিলিয়া ব্রিককে উৎস্বর্গ করেন ।

ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ মায়াকোভিস্কর জীবনের শেষ বছরটি ছিল ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ। ১৯২৯ সালের ১৩ মে, রেসের মাঠে অসিপ এর মাধ্যমে তার পরিচয় হয় অভিনেত্রী ভেরোনিকা পোলানস্কায়া এর সাথে । শেষ বছরটিতে তিনি ভেরোনিকা পোলানস্কায়ার প্রেমে পড়েন। সম্পর্কের টানপোড়েন তাকে ভীষণরকম বিমর্ষ, অধৈর্য আর বিপর্যস্ত করে তোলে । পোলানস্কায়াও ছিল বিবাহিত । ১৯৩০ সালের শুরুর দিকে ইয়ানশিনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের করে এবং থিয়েটার ছেড়ে দিয়ে তাকে বিয়ে করার কথা বলেন মায়াকোভস্কি । এপ্রিলের শুরুতে ‘nervous exhaustion’ এর কারনে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয় । ১৯৩০ সালের ১২ এপ্রিলে তাদের কথা হয় যে এর পরের দু-দিন তাদের মাঝে শুধু ফোনালাপ হবে । ১৩ এপ্রিল বিকালে পোলানস্কায়া এর সাথে কিছু অসস্তিকর ঘটনা ঘটে তার । পোলানস্কায়ার ভাষ্যমতে সে সময় মায়াকোভিস্ক নিযের শিল্পভাবনার শক্তি নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে । ১৪ তারিখ সকাল সাড়ে আটটার দিকে মায়াকোভিস্কর সাথে পোলানস্কায়া দেখা হয় । এরপর সকাল ১০:১৭ তে মায়াকোভিস্ক রিভলবারের গুলিতে আত্মহত্যা করেন ।

লিলি ব্রুকের ভাষ্যমতে সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি তার মাঝে স্বভাবজাত ছিল । এছাড়াও তার আত্মহত্যার অনেক কারন বিভিন্ন রেফারেন্সে উল্লেখ রয়েছে । ১৯২৯ সালে তিনি তাতিয়ানা নামের এক মডেলের প্রেমে পড়েছলেন । তাতিয়ানা একজন ফ্রেঞ্চকে বিয়ে করার ঘটানায় তিনি ব্যাথিত হন । ফিউচারিষ্ট দ্বারা গঠিত Left Front of Art (LEF) এর সাথে RAPP এর দ্বন্দ সে সময় প্রকট হিসাবে দেখা দেয় । এর সাথে ১৯২৮ সালে তার ‘The Bedbug’ বা ‘The Bathhouse’ নাটকদুটি ততকালীন কমুনিজমের আদর্শ ও বাস্তবতার দ্বন্দ্বকে উপস্থাপন করে যা সুবিধাভোগী আমলাদের উদ্গিগ্ন করে । যে আদর্শের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন তার অবনমন তাকে ব্যাথিত করে । ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় ছিলেন তিনি । এসব বিবেচনা করে অনেকে তার মৃত্যুকে গুপ্তহত্যা হিসাবেও গন্য করেন ।

সুইসাইড নোটে তিনি লিখেনঃ

“Do not blame anyone for my death and please do not gossip. The deceased terribly dislike this sort of thing. Mamma, sisters and comrades, forgive me - this is not a way out (I do not recommend it to others), but I have none other. Lily - love me…Comrades of VAPP - do not think me weak-spirited. Seriously - there was nothing else I could do.”

তার মৃত্যুর পর সারা রাসিয়ায় শোক নেমে আসে । ১৫০০০০০ মানুষের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান!

১৯১৫ সালে মায়কোভস্কি মেক্সিম গোর্কিকে তার ‘ক্লাউড ইন ট্রাউজার্স’ কবিতা থেকে কিছু পংতি আবৃতি করে শুনিয়েছিলেন । । তার মৃত্যুর পর গোর্কি লিখেছিলেনঃ

‘I liked his verses and he read very well: he even broke into sobs, like a woman, and this alarmed and disturbed me. He complained that a human being is ‘divided horizontally at the level of the diaphragm.’ When I told him that in my opinion he had a great but probably hard future, and that his talent called for a lot of work, he answered gloomily, ‘I want the future today,’ and again, ‘Without joy I don’t need any future, and I feel no joy.’ He behaved very nervously and was clearly deeply disturbed. He seemed to speak with two voices, in one voice he was a pure lyricist, in the other sharply satirical. It was clear that he was especially sensitive, very talented, and—unhappy

=============


রাশিয়ান থেকে ইংরাজী অনুবাদের জন্য অনুসরিতঃ


লিঙ্ক-১

লিঙ্ক-২
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:২৮
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×