ঘুম ভাঙ্গতেই আবীর আড়চোখে ঘরের আবহাওয়া বুঝতে চেষ্টা করলো। গুনগুনের শব্দে কান পাতলো। অনু রান্নাঘরে গান গাইছে! তারমানে আবহাওয়া অনুকূলে আছে। অনুর মন ভালো থাকলে সে এভাবে গান গায়। গতরাতের কথা তাহলে কিছুই মনে রাখেনি অনু। তবু সাবধান হওয়া ভালো। আস্তে আস্তে বিছানা ছাড়লো আবীর। বাথরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলো মুখে গোঁফ-দাঁড়ির জঙ্গল হয়ে গেছে। গত দুইদিন শেভ করা হয়নি।
শেভ করে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে বাথরুম থেকে বের হলো আবীর। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে, আয়না দিয়ে রান্নাঘরের অবস্থা পর্যবেক্ষন করলো সে। এখান থেকে পুরো রান্নাঘর দেখা যায়। নাস্তার টেবিলে ডাক পড়লো, তার। অনুর দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে চেয়ার টেনে বসে পড়লো সে।
-নাস্তা শেষ করে কিছুক্ষন বসো। তোমার সাথে কথা আছে।
অনুর গলার স্বরে চমকালো আবীর। মনে মনে বললো, সামথিং ইজ রং। এই বাক্যটি মনে মনে কয়েকবার আওড়ালো সে।
-আশা করি শুনতে পেয়েছো।
আবীর এবার কিছুটা ধাতস্থ হলো।
-কি বলবে, নাস্তা করতে করতেই বলো। শুনতে পাচ্ছি।
-আচ্ছা। ঠিক আছে। মন দিয়ে শোন। তোমার সাথে আমার আর থাকা সম্ভব না। কাল রাতে যা হলো, তা নতুন কিছুনা। এরকম চিৎকার করে তুমি আশেপাশের মানুষকে অনেক আনন্দ দিয়েছো। মদ অনেকেই খায়। কিন্তু কেউ তোমার মতো চিৎকার চেঁচামেচি করেনা। নিজের বউকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেয়না। সন্তান হয়না, সেটা আমার দোষ না। তোমার দোষ।
হাত তুলে অনুকে থামালো আবীর।
-দেখো অনু, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইবোনা। চাইলেই তুমি হইচই করে তুলকালাম করবে। তারচেয়ে তুমি যা ভালো মনে কর, তাই কর। তোমাকে কি দিয়ে আসতে হবে?
- না আমি একাই যেতে পারবো।
নাস্তার টেবিল থেকে উঠে, অফিসের জন্য রেডী হলো আবীর। বাসা থেকে বেরোবার আগে, ড্রেসিং টেবিলের উপর কিছু টাকা রেখে গেলো অনুর জন্য।
আবীর বাসা থেকে বের হয়ে যাবার পর অনু অনেক্ষন ধরে কাঁদলো। আবীর তাকে একবারের জন্যও আটকালোনা! ফোলা চোখ নিয়ে নিজের ব্যাগ ঘোছালো, অনু। ব্যাগ ঘুচিয়ে বাসা থেকে বের হবার সময় আবার বুকের ভেতর থেকে কান্না উথলে এলো, অনুর। এই মানুষটাকে সে ছেড়ে যেতে পারবেনা। কিছুতেই না। বিছানায় ব্যাগ ছুঁড়ে দিয়ে বিছানার এক কোনে বসতেই সমস্ত কান্না সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়লো চোখের বেলাভূমি জুড়ে।
আজ আর অফিসে মন বসছেনা আবীরের। অনু চলে যাবে! খুব ইচ্ছে করলো, অনুকে আটকাতে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে কয়েকবার কল দিতে যেয়ে থেমে গেলো। লজ্জায় আর কল দেওয়া হলোনা অনুকে। বিকেলে অফিস থেকে বের হয়ে আজ আর বারের দিকে গেলোনা আবীর। চলে গেলো, ছবির হাটে। এ ছবির হাট পুরোটা তার আর অনুর স্মৃতিময়। ভার্সিটি লাইফে সে আর অনু কত বিকেল ঘুরে বেড়িয়েছে এই উদ্যান জুড়ে। উদ্যানের প্রতিটি গাছ যেনো চেনা। প্রতিটি গাছের শিকড়ে তার আর অনুর কত কথা লুকিয়ে আছে। অনেকরাত পর্যন্ত ছবির হাটে বসে থেকে বাসার দিকে পা বাড়ালো সে। বাসার লিফটে উঠতেই একরাশ শূন্যতা গ্রাস করে নিলো তাকে। লিফট থেকে বের হয়ে দেখলো, বাসার দরজায় তালা নেই। অনু তালা দিয়ে যায়নি। নবে চাবি ঢুকিয়ে মোচড় দিয়ে ঘরে ঢুকে দেখলো অন্ধকার ঘর। আজ আর কেউ নেই আলো জ্বলানোর।
বেডরুমে পা রাখতেই একটা শরীর উড়ে এলো তার উপরে। কেঁদে ভাসিয়ে দিলো তার শার্টের বুক। মুখটাকে বুক থেকে তুলে, আবীর চেনা ঠোঁটগুলোতে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।