এই ভোটার আইডি কার্ড তথা জাতীয় পরিচয়পত্রে বেশ কিছু তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
সামনের পৃষ্ঠে কার বহনকারী ব্যক্তির নাম (বাংলায় ও ইংরেজি),পিতার নাম,মাতার নাম,জন্মসাল,ছবি,স্বাক্ষর এবং ১৩ (কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৭) ডিজিটের একটি নাম্বার দেয়া আছে।
পেছনের পৃষ্ঠায় কার্ড বহনকারী ব্যক্তির ঠিকানা,কার্ডপ্রদানকারী কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর,কোনো কোনো ক্ষেত্রে বহনকারী ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ এবং একটি বার কোড রয়েছে।
কার্ডের সামনের পৃষ্ঠায় ছাপানো এই ১৩ (বা ১৭) সংখ্যার কোডনম্বরটি কোনো র্যান্ডম নাম্বার নয়। এটি প্রতিটি কার্ড বহনকারী ব্যক্তির জন্য ইউনিক নম্বর যা অন্য কার্ড বহনকারী ব্যক্তির থেকে সম্পূর্ন আলাদা হবে।
*১৭ সংখ্যার কার্ডের ক্ষেত্রে প্রথম ৪টি সংখ্যা জন্মসাল নির্ধারন করে।
*১৩ সংখ্যার কার্ডের ক্ষেত্রে, প্রথম দুটি ডিজিট নির্ধারন করে ব্যক্তি যে জেলার ভোটার।
*৩য় ডিজিটটি নির্ধারন করে ব্যক্তিটি উক্ত জেলার কোন অংশের ভোটার।একে বলা হয় আর.এম.ও কোড।
এই ৩য় ডিজিটটি
-৯ হলে সেই ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশন এলাকার ভোটার।
-৫ হলে সে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভোটার।
-৪ হলে সে অন্যান্য আওতায় পড়বে।
-৩ হলে পৌসরসভার বাইরের এলাকার ভোটার।
-২ হলে সে পৌরসভা এলাকার ভোটার।
-১ হলে সে পল্লী এলাকার ভোটার।
*৪র্থ এবং ৫ম ডিজিটদ্বয় উক্ত ব্যক্তির থানা বা উপজেলা কোড নির্ধারন করে।
*৬ষ্ঠ ও ৭ম-এই দুটি ডিজিট নির্ধারন করে উক্ত ব্যক্তির ইউনিয়ন কোড(পল্লীর জন্য) অথবা ওয়ার্ড কোড (সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা)।
*সর্বশেষ ৬ টি ডিজিট উক্ত ব্যক্তি ভোটার আইডি ফর্ম পূরন করার সময় সেই ফর্মটির নম্বর নির্ধারন করে।
অর্থাৎ,নাম্বারটি একেবারেই সিম্পল কিছু একটা নয়,যা ইচ্ছেমত বসিয়ে ভোটার আইডি তৈরী করা সম্ভব।
অথচ কিছু প্রতারক চক্র বেশ কিছুদিন ধরেই এই ভোটার আইডি জাল করে চলেছে।
নিচের প্রথম ছবিটিতে দেখুন।
বড় করে দেখুন ১৩ সংখ্যার ভুয়া কার্ড নাম্বার বসিয়ে দিব্যি একটি জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে ফেলা হয়েছে। যিনি বানিয়েছেন,১৩ সংখ্যার অর্থ সঠিকভাবে জানা না থাকার কারনে ভুল এলাকার কোড নাম্বার প্রথম দুই ডিজিটে বসিয়ে দিয়ে ধরা পরেছেন। তাছাড়া ফন্ট খেয়াল করলে দেখা যাবে , বেশ বড় আকারের ফন্ট যা নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় ব্যবহার ব্যবহার করে না। ইন্টারেস্টিং তথ্য হচ্ছে , এই জাল ভোটার আইডি বানানোর সময় সাহায্য নেয়া হয়েছিল এই মহিলারই স্বামীর আসল ভোটার আইডি কার্ডের ।
বড় করে দেখুন
সিরিয়াল নং খেয়াল করলেই দেখবেন, (২য় ছবি) স্বামীটির আসল ভোটার আইডি কার্ডের প্রথম ৮ টি ডিজিট সম্পূর্নভাবে মহিলার নকল আইডী কার্ডের প্রথম ৮ ডিজিটের সাথে মিলে গেছে। স্বামীর ঠিকানা নারায়নগঞ্জ হবার কারনে তার আইডি কার্ডের প্রথম দুই ডিজিট ৬৭,নারায়নগঞ্জ পৌরসভার ভোটার বিধায় ৩য় ডিজিটটি ২ । অন্যদিকে মহিলার ঠিকানা দেয়া বরগুনা ( ১ম ছবি) হলেও তারও ভোটার আইডি শুরু হয়েছে ৬৭ দিয়ে (আসল হলে হবার কথা ০৪) ।এবং কার্ডেই দেখা যাচ্ছে তার ঠিকানা পৌরসভা এলাকায় নয়,সুতয়াং ৩য় ডিজিটটি কোনোভাবেই ২ হতে পারে না।
,বড় করে দেখুন
ঘটনা এই একটিই নয়। নিচের ছবিতে দেখুন আরো একটি জাল ভোটার আইডি তৈরীর প্রমান।
বড় করে দেখুন
এই মহিলা একইভাবে জাল ভোটার আইডী তৈরি করেছিলেন। একইভাবে জাল ভোটার আইডি তৈরির সময় বেশ কিছু ভুল হয়েছিল,যারই ফলশ্রুতিতে এই জাল কার্ডটিও ধরা পড়ে । এই ব্যক্তি নিজের ঠিকানা দেখিয়েছেন জয়পুরহাট। অথচ তারও নকল ভোটার আইডির জেলা কোডের স্থানে আসল জেলা কোড ৩৮ (জয়পুরহাট) এর স্থলে বসিয়ে দেয়া হয়েছে ৬৭ (নারায়নগঞ্জের) কোড । অন্যদিকে আইডি কার্ডে প্রদত্ত ঠিকানা টাইপের সময় বেশ দৃষ্টিকটূভাবেই উপরের লাইন আর নিচের লাইনের ফন্টের গরমিল দেখা গিয়েছে । জাল ভোটার আইডি বানানোর সময় জন্মসালে অবশ্য একটু হিসাবে ভুল হয়ে গিয়েছিলো জালকারীদের । তারা জন্মসাল দেখিয়েছে ১৯৯২ এবং কার্ড প্রদানের তারিখ দেখিয়েছে ২০০৮ । অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন তাদের মহৎ কার্যে অনুপ্রানিত হয়েই ১৬ বছর বয়সেই কার্ড প্রদান করে দিয়েছেন – এমনটা হয়তো জালকারীরা দেখাতে চেয়েছিলেন।
জাল ভোটার আইডির আরেকটি উদাহরন দেখুন নিচের ছবিতে।
বড় করে দেখুন
১৩ সংখ্যার ডিজিট নিয়ে অজ্ঞতার প্রকাশ,যা কিনা এ ধরনের জাল কার্ড ধরতে আরেকটি শাপে বরের উদাহরন।
ঠিকানা দেয়া আছে সিরাজগঞ্জ । সেক্ষেত্রে ১৩ সংখ্যার কার্ড নাম্বারটি শুরুই হবে ৮৮ দিয়ে। অথচ এখানে এই ব্যক্তির কার্ড নাম্বার শুরু হয়েছে ২০ দিয়ে,যা কিনা সিরাজগঞ্জের কোড নয়।
বড় করে দেখুন
তাছাড়া ৩য় ডিজিটে লেখা ৯ সংখ্যাটি সিটি কর্পোরেশন এলাকা নির্দেশ করে। অথচ সিরাজগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকা নয়। পেছনের সরকারি লোগোটি একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, অন্য সব আসল আইডি কার্ডের তুলনায় এই লোগো আকারে বেশ খাটো এবং ভিন্ন। কার্ডের বর্ডার লাইন আসল সরকারী কার্ডের তুলনায় বেশ মোটা । একইসাথে স্বাক্ষরের স্থানে বেশ স্পষ্ট করে স্বাক্ষর করা,যা কিনা পেইন্ট বা এই জাতীয় কোনো সফটওয়্যারের সাহায্যে করা হয়েছে বলে ধারনা করা যায় ।
এইখানে এরুপ জাল ভোটার আইডির মাত্র কয়েকটির উদাহরন দেয়া হলো ।এইরকম আরো বেশ কয়েকটি জাল ভোটার আইডির সন্ধান পাওয়া গেছে। জানা গেছে,মিরপুর এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো(নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর )তে মাত্র ৩০০ টাকার বিনিময়ে এইসব জাল ভোটার আইডি তৈরি করে দেয়া হচ্ছে।
নিঃসন্দেহে এইভাবে জাল ভোটার আইডি কার্ড ছড়িয়ে পড়াটা অশুভ লক্ষন। বেশ কয়েকটি কাজে ভোটার আইডি কার্ড আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে লাগছে। ব্যাংক একাউন্ট খুলতে,মোবাইল সিম ক্রয়,পাসপোর্ট তৈরী,কর্মস্থলে বয়সের ভেরিফিকেশন,ব্যক্তির অথেন্টিকেশন,জমি ক্রয় বিক্রয়,বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রত্ব ইত্যাদি অনেক কাজেই ভোটার আইডি কার্ড দরকার পড়ছে।বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কোনো ব্যক্তিকে সনাক্তের নিরাপদ এবং তুলনামূলক এক্যুরেট উপায় এই ভোটার আইডি কার্ড। বাংলাদেশের একজন ভোটদানে সক্ষম ও প্রাপ্তবয়স্কতার নির্নায়ক ভোটার আইডি কার্ড একজন ব্যক্তির পরিচয়। এইভাবে জাল ভোটার আইডি কার্ড সহজলভ্য হয়ে পড়ায় ভুয়া ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করে অর্থ লেনদেন থেকে শুরু করে অবৈধ কাজে সিম কার্ড ক্রয় করে হুমকি দেয়ার মত অনেক অপরাধই ঘটানো সম্ভব। নির্বাচনের মাত্র এক বছর আগেই এইভাবে জাল ভোটার আইডি কার্ড ছড়িয়ে পড়াটা সাধারন কোন ঘটনা নয় এবং এই বিষয়ে গাফিলতি দেখানোর ফল কোন ভালো কিছু বয়ে আনবে বলে মনে করিনা । নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি,আপনারা দ্রুত জাল ভোটার আইডি সনাক্ত করে জাল ভোটার আইডি তৈরীকারি প্রতিটি ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনবেন।
___________________________________________________________
(একইসাথে জাল ভোটার আইডি কার্ড সনাক্তকরনের উদ্দেশ্যে সকলের অবগতির জন্য বিভিন্ন জেলার কোড নং উল্লেখ করে দেয়া হলো -
1 বাগেরহাট
3 বান্দরবান
4 বরগুনা
6 বরিশাল
9 ভোলা
10 বগুড়া
12 ব্রাহ্মণবাড়িয়া
13 চাঁদপুর
15 চট্টগ্রাম
18 চুয়াডাংগা
19 কুমিল্লা
22 কক্সবাজার
26 ঢাকা
27 দিনাজপুর
29 ফরিদপুর
30 ফেনী
32 গাইবান্ধা
33 গাজীপুর
35 গোপালগঞ্জ
36 হবিগঞ্জ
38 জয়পুরহাট
39 জামালপুর
41 যশোর
42 ঝালকাঠি
44 ঝিনাইদ্হ
46 খাগড়াছড়ি
47 খুলনা
48 কিশোরগঞ্জ
49 কুড়িগ্রাম
50 কুষ্টিয়া
51 লক্ষীপুর
52 লালমনিরহাট
54 মাদারীপুর
55 মাগুরা
56 মানিকগঞ্জ
57 মেহেরপুর
58 মৌলভীবাজার
59 মুন্সিগঞ্জ
61 ময়মনসিংহ
64 নওগাঁ
65 নড়াইল
67 নারায়নগঞ্জ
68 নরসিংদী
69 নাটোর
70 চাঁপাইনবাবগঞ্জ
72 নেত্রকোণা
73 নীলফামারী
75 নোয়াখালী
76 পাবনা
77 পঞ্চগড়
78 পটুয়াখালী
79 পিরোজপুর
81 রাজশাহী
82 রাজবাড়ী
84 রাঙ্গামাটি
85 রংপুর
86 শরীয়তপুর
87 সাতক্ষীরা
88 সিরাজগঞ্জ
89 শেরপুর
90 সুনামগঞ্জ
91 সিলেট
93 টাঙ্গাইল
94 ঠাকুরগাঁও )
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৬