সেই ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে একটি নিরংকুশ বিজয়ের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ ও জঙ্গিবাদ সমর্থক জোটসরকারকে হঠিয়ে আপনার ক্ষমতায় আরোহন,আপনি 'ডিজিটাল বাংলাদেশের' স্বপ্ন দেখাবার পাশাপাশি অঙ্গীকার করেছিলেন আমাদের দেশকে লোডশেডিংমুক্ত করার,বলেছিলেন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য সহনশীলপর্যায়ে আনার কথা,বলেছিলেন আইনশৃঙ্খলার উন্নতির পাশাপাশি আরো অনেক অঙ্গীকারের কথা।চারদলীয় জোটসরকারের জঙ্গিবাদে সহায়তার পাশাপাশি 'খাম্বা' দূর্নীতি থেকে মুক্তি চেয়েছিলাম আমরা।আমার তখনও বুঝিনি ''খাম্বা''র চেয়ে বড় 'এলাহী' কারবার শুরু হয়ে যাবে আপনার হাত ধরেই।
আপনি ক্ষমতায় আসলেন,বিশালাকারের মন্ত্রীসভায় বেশ কিছু নতুন মুখ দেখলাম আমরা।বাগাড়ম্বরপূর্ন মন্ত্রীসভার পাশাপাশি আপনি একটি উপদেষ্টা পরিষদও খুলে বসলেন।আমরা জনসাধারন দিনদিন ''উপদেষ্টা বড় না মন্ত্রী বড়'' নামক পূর্নদৈর্ঘ্য ছায়াছবি বাধ্যতামূলকভাবে দেখতে থাকলাম।এদের মাঝে তৌফিক এলাহী সাহেব একাই আমাদের গরীব দেশের গরীব অর্থনীতি প্রায় পথে বসিয়ে দিয়েছেন।
বাগাড়ম্বর দিয়ে শুরু,চলেছে মিথ্যা স্বপ্ন দেখানো:
ক্ষমতা গ্রহনের বছরেই আপনারা বাস্তবতা বাদ দিয়ে শুরু করেন অলীকস্বপ্ন দেখানোর প্রক্রিয়া,২০১২ সালেই লোডশেডিংমুক্ত বাংলাদেশের কথা শুনতে থাকি। ২০১১ সালে এসে বলেছিলেন ২০১৩ সালের মাঝে লোডশেডিংমুক্ত বাংলাদেশের কথা,এখন বলেছেন ২০১৪ সালে লোডশেডিংমুক্ত এবং বিদ্যুত-উদ্বৃব্ধের দেশে পরিনত করার কথা।কিন্তু এখনও ঘাটতিই দূর হয়নি,প্রতিদিনই ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে লোডশেডিং চলছে।
২৯৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত যুক্ত হবার কথা জোরেসোরে প্রচার করেছেন।কিন্তু কাজীর গরু কেতাবেই রয়ে গেছে,আর সেই কেতাব অনুযায়ী আপনারা এই তিন বছরে (৬ই জানুয়ারী ২০০৯ হতে ৬ই জানুয়ারী ২০১২) পর্যন্ত সময়ে প্রকৃতপক্ষে যুক্ত করেছেন ১৪১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুত!(৩৫৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন,২০০৯ এবং ৪৯৭৭ মেগাওয়াট উৎপাদন ৬ইজানুয়ারী,২০১২)।
একের পর এক নতুন নিয়মের বেড়াজালে বন্দী জনগন:
শুরুতেই আপনারা পৃথিবীর উন্নত অনেকদেশের অনুকরনে বাংলাদেশে শুরু করলেন ডেলাইট সেভিং নামক এক পদ্ধতির ব্যবহার,ঘড়ির কাঁটা আগানো পিছানো খেলায় শিশুদের প্রায় রাতের অন্ধকারেই স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা হলো,কর্মজীবি বাবা মায়েদের দৈনন্দিন জীবনের বারোটা বাজিয়ে ২০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত সাশ্রয়ের ব্যবস্থা হলো।সেই বিদ্যুত আসলেই কতটুকু সাশ্রয় হয়েছিলো তা মানুষরা না বুঝলেও (!) ক্ষমতাসীনদের মন্ত্রীরাই বুঝেছিলেন।সুতরাং 'জনদুর্ভোগের' কথা চিন্তা করে ঠিকই বাতিল করে দিয়েছিলেন।
এখানেই আপনাদের এক্সপেরিমেন্ট শেষ হয়নি।
হাফশার্ট পড়ে অফিস করা থেকে শুরু করে কলকারখানা বন্ধ করে রাখার আহবান জানানো,যানবাহনের চাকা বন্ধ করে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখার নিত্য নতুন নিয়ম ,এক ধাক্কায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যত বাঁচানোর উদ্ভট কথা বলে সর্বত্র শীততাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বন্ধের নির্দেশ (যদিও সরকারী নির্দেশ সরকারী সচিবালয়েই মানা হয়নি ) ।এসব বন্ধ বন্ধ খেলার মাঝে স্কুল-কলেজ-ব্যাংক-অফিসের জন্য আলাদা সময়সূচী প্রনয়নের মত তুঘলকি সিদ্ধান্তও আমরা জনসাধারনকে দেখতে হয়েছে,শুনতে হয়েছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষন করে প্রায় ৩০ % বিদ্যুত সাশ্রয়ের মতন আজব উদ্যোগের কথাও ! উর্বরমস্তিষ্কের সরকারী নীতি প্রনেতাদের মাথা থেকে একের পর এক বিদ্যুত সাশ্য়ের কথা শুনে আর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করে জনসাধারনের ভোগান্তিই বেড়েছে,লোডশেডিংয়ের চলতে থাকাটাই তার প্রমান।
গুটিকয়েক সোলার প্যানেল ব্যবসায়ীর সুবিধার্থে নিয়মও করা হলো,প্যানেল না বসালে বিদ্যুত সংযোগ পাওয়া যাবে না,প্রচুর দাম দিয়ে কিনে কিছুদিন না ঘুরতেই এখন পরিষ্কার,কোনো কাজেই লাগেনি এই বাধ্যবাধকতা।
বিদ্যুত সাশ্রয়ে এসব অর্থহীন উদ্যোগের পাশাপাশি ৫৫ লাখ বাতি বিতরন করা হয়।বলা হয়েছিলো প্রায় ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সাশ্রয় হবে,তবে নিম্নমানের চাইনিজ বাতি সরবরাহের মাধ্যমে একশ্রেনীর দুর্নীতিবাজেরা লাভবান হলেও জনসাধারনের কোনো লাভই হয়নি,প্রথম সপ্তাহেই প্রায় ৩৩ শতাংশ বাতি নষ্ট মতান্তরে ৮০ শতাংশ বাতি নষ্ট হয়ে গিয়েছে,আর এভাবেই বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে লুটপাটই ঘটেছে।সেটা কি আপনার অজানা?
অতঃপর,কুইক রেন্টাল:
বিদ্যুত ও জ্বালানী মন্ত্রনালয়ের প্রধান আপনি,মাননীয় প্রধানমন্ত্রি।নামে একজন প্রতিমন্ত্রী আছেন,কিন্তু পুরো মন্ত্রনালয়ই যেন চালাচ্ছে উপদেষ্টা তৌফিক এলাহী।মাগুরছড়া ও টেংরাটিলার গ্যাসফিল্ডে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে তারই কারনে বাংলাদেশ বিদেশী কোম্পানীর কাছে থেকে কোনো ক্ষতিপূরন আদায় করতে পারেনি।দুইদিনেই দেশে বিদ্যুতের নহর বইয়ে দেয়ার আশা দেখিয়ে সকল বিশেষজ্ঞের নিষেধ অগ্রাহ্য করে একেরপর এক কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টের অনুমোদন দেয়া শুরু হলো।সরকারের স্বার্থ উপেক্ষা করে কতিপয় ব্যবসায়ী আর সরকারের ভেতরের কয়েকজন লোকদের লুটপাটের ব্যবস্থা করতেই ২০০৯ এর অক্টোবরেই ৩৩টি কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টের অনুমোদন দিয়ে দিলেন,৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের মূলা ঝুলিয়ে।বিশেষজ্ঞরা প্রতিবাদ করলেন,কারন কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টে ব্যবহৃত হতে যাওয়া মেশিনগুলো জরাজীর্ন এবং পুরাতন-সুতরাং কর্মক্ষমতা কম থাকায় ভর্তুকি বেড়ে যাবে,কোনো লাভ হবেনা।তার চেয়ে এক্সিস্টিং বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোকে যুগোপযোগী করলে বেশি লাভজনক হবে। কে শোনে কার কথা ! চুক্তি ঠিক হলো,সরকার এইসব বেসরকারী বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট ৯.৭৫ টাকা হতে ২২ টাকা কিনে বিক্রি করবে,এবং এই উচ্চমূল্যের বিদ্যুতকেন্দ্রের বেশিরভাগই চলবে তেলে!সবই আপনি দেখেছেন!
প্রধানমন্ত্রী,আপনি জানেন,বিনা টেন্ডারে এইসব প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে,অন্যদিকে এদের জামাই আদরে রেখে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে,অ্যদিকে এই ফার্নেস অয়েল পাচার হয়ে কোথায় যাচ্ছে ,পত্রিকা মারফত জানার কথা নয় কি?কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৫০ মেগাওয়াটের উৎপাদন দেখিয়ে বিল জমা দিচ্ছে,অথচ প্রকৃতপক্ষে উৎপাদন করেছে ৪০ মেগাওয়াট!!সরকারী অর্থ ধ্বংসের এই মহোৎসব আপনার চোখে পড়ে না?
বিপিসি আর পিডিবি এই কুইক রেন্টালের কারনে ধুঁকছে।ক্রমাগত ভর্তুকি দিতে দিতে দুইটি প্রতিষ্ঠান এখন ধ্বংসের মুখে।প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি লাগছে বিদ্যুতকেন্দ্রের তেল কেনার জন্য,আর সেই উৎপাদিত বিদ্যুত বেশি দামে বেসরকারী কুইক রেন্টালের কাছ থেকে কিনে কম দামে গ্রাহককে দিতে গিয়ে সঙ্গীন অবস্থার মাঝে পড়েছে পিডিবি।এই তিন বছরে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে,এই ধারায় চলতে থাকলে আগামী দুই বছরে লাগবে আরো প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি ।এই টাকাটা এখন কিভাবে আসবে? আপনার সরকার এখন এই জনগনের গলা এবং পকেট কাটার ব্যবস্থা করেছেন,ভর্তুকি কমিয়ে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে অর্থ সংকট ঘোচানোর এক মহতী কাজ শুরু করেছেনএত এত অর্থ নষ্ট হচ্ছে,লুটপাট হচ্ছে,তারপরও ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের পরিবর্তে বড় বেইজ লোড প্ল্যান্ট স্থাপনে আপনাদের অনাগ্রহের কারনটা ঠিক কোথায় ? আমরা জানতে চাই- বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম বছরটি বিদ্যুত খাতে কোন কাজই হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, সরকার দায়িত্ব নেয়ার আগে থেকেই বিদ্যুত সঙ্কট থাকলেও প্রথম বছর কোন কাজ না হওয়াটা রহস্যজনক (*** ) কোন মহলের স্বার্থের বলি হয়ে আমরা ভুগছি?বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর খুনীদের বাঁচাতে দায়মুক্তি বিল দেখেছি আমরা,দেখেছি অপারেশন ক্লিন হার্টের পর দায়মুক্তি বিল আনতে,অবিশ্বাস্যভাবে আমরা দেখলাম এই তৌফিক এলাহীর মদদপুষ্ট দুর্নীতিগ্রস্ত কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টকে বাঁচাতে সংসদে দায়মুক্তি বিল আনা হয়েছে!সাংসদেরা এখন কুইক রেন্টালের বিপক্ষে বলছেন,সংসদীয় কমিটিও সেটা স্বীকার করেছেন,তারপরও দায়মুক্তি?
তেল গ্যাস বিদ্যুতের মূল্যের উর্ধ্বযাত্রায় নাকাল জনতা:
কুইক রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য ফার্নেল তেল আমদানিতে ব্যবহৃত রিজার্ভ ডলারের ক্রমাগত ব্যবহারে ক্রমান্বয়ে টাকার বিপরীতে ডলারের মান বাড়তেই থাকলো।আপনারা কুলিয়ে উঠতে নাপেরে সেই ভার চাপিয়ে দিলেন এই গরীব জনগনেরই কাঁধে!ঠিক করলেন,ভর্তুকিই তুলে দেবেন ! গেল বছর মে,সেপ্টেম্বর, নভেম্বর ও সর্বশেষে ডিসেম্বরে মোট ৪ বার বাড়িয়ে দিলেন তেলের দাম।কোনো আলোচনা ছাড়াই,নির্বাহী আদেশে হুট করে মধ্যরাতে প্রতিবারই দাম বাড়ালেন আপনি !আমাদের বেতন বাড়েনি,কিন্তু বর্ধিত ভাড়া চাপিয়ে দেয়া হলো।
একই সাথে বিদ্যুতের দাম বাড়ালেন ৩ বার,সাথে সিএনজির দাম ২ বার।সাথে পানিও বাদ গেলোনা মূল্যস্ফীতির চাপ পড়ে নাভিঃশ্বাস ফেলতে মরিয়া আমরা আবিষ্কার করলাম,খাদ্যবহির্ভুত পন্যে মুল্যস্ফীতি বিগত ১৬ বছরের মাঝে সর্বোচ্চ !সামান্য কয়েকটা টাকা উপার্জনকারী অধিকাংশ নাগরিকের আয়ের পুরোটাই চলে যাচ্ছে যাতায়াত,বাড়ি আর বিদ্যুত ভাড়ায়-হাতে হাত ধরে বেড়ে গিয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম।প্রচন্ড গরমে বিদ্যুত থাকছেনা-সেই মহামূল্যবান বিদ্যুত,যার জন্য আজ বাংলাদেশের অর্থনীতির এই দুরাবস্থা।
আপনারা এখন পর্যন্ত কি করেছেন,আমাদের দুর্দশা লাঘবের জন্য?
তারপরও থেমে থাকছেনা বাগাড়ম্বর:
বিদ্যুতের এই দুরাবস্থায় সাংসদেরা নিজেদের এলাকায় যেতে উদ্বিগ্ন হলেও আপনি,প্রধানমন্ত্রী যেন সবকিছুকে খুব কম গুরুত্বের সাথে হালকাভাবে নিচ্ছেন,রসিকতা করছেন,বিদ্যুত বন্ধের হুমকিও দিচ্ছেন।অন্যদিকে তৌফিক এলাহী গং আরো পিকিং প্ল্যান্টের চুক্তি করেছেন।জনসাধারনের বিদ্যুতের দাবিতে সৈয়দ আশরাফ সাহেব যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর ষড়যন্ত্র খুঁজে পেলেন,আপনিও বা বক্তব্য না দিয়ে থেমে থাকবেন নাকি ?বারবার বিরোধিদলের উপর দায় চাপিয়েছেন,২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই!ক্ষমতা গ্রহনের বছরেই ২০০৯ সালে আপনি বললেন বিদ্যুত সংকটে জামাত-জোট সরকারের সংশ্লিষ্টতা আর বিদ্যুতখাতে লুটপাটের কথা-আমরা বিশ্বাস করলাম।আবার ২০১০ সালেও যখন একই সুর তুললেন,আমরা আবার ভাবলাম-হলেও হবে!কিন্তু আপনি ২০১১ সালেও একই সুরে গাইতে থাকলে আপনাদের বাগাড়ম্বরতা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকেনা,শুধু সংকট নিরসনে আসলেই সদিচ্ছা আছে কিনা,তা নিয়ে সন্দিহান হই।আপনারা ক্ষমতায় থাকার পরও আপনার দলীয় নেতারা বিদ্যুত সংকটের পিছনে বিরোধী দলের হাত ঠিকই খুঁজে পায়।মানুষ গ্যাস পায় না,বিদ্যুতহীন খাম্বার মতন গ্যাসহীন পাইপলাইন বসানো দেখে আমরা আশান্বিত হয়ে উঠবো,এমনটা বোকা সেজে আছে জনগন?হয়তো অমনটা বোকা ভাবেন বলেই আবুল মাল মুহিত সাহেব নিজের কাছে নিজেদেরই ক্ষমতা হস্তান্তরের সুখস্বপ্নে বিভোর থাকেন!বিদ্যুত আনার জন্য তৌফিক এলাহীর কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর বদলে দীর্ঘস্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করে আমাদের আশার বানী শুনিয়েছেন,বলেছেন কঠিন শর্তে হলেও বন্ধু ভারতের কাছ থেকে বিদ্যুত আনবেন,কিন্তু সে বিদ্যুত এখনো আসেনি,বরং নেপাল হতে করিডোরের মাধ্যমে আনতে চাওয়া বিদ্যুত বন্ধু ভারত ঠেকিয়ে দিয়েছে ।বলেছিলেন মিয়ানমার থেকেও বিদ্যুত চাইবেন,চাইবেন সর্বনাশা টিপাইমুখ বাঁধ তৈরী হলেও । কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের প্রাপ্তিটা কি,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?কৌশলে বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ করে রাখা ?
আপনি বলছেন ,
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণকালে দেশের মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল শতকরা ১১ ভাগের বেশি, গত তিন বছর তা কমে ৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে। .... দুঃখিত,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,২০০৯ সালে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিলো ৮.৫১ এবং আপনার সরকারের তিন বছরের মাথায় তা বেড়ে ২০১১ সালে দাড়িয়েছিলো ১০.৬৩ শতাংশে,এখনো তা ৯.১৫ শতাংশে আছে ! মানুষ শুধু তেল আর বিদ্যুতের দাম নিয়ে একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্তের মাসুল তার ক্রমশঃ নিম্নমুখি জীবনের মানের বিনিময়ে পরিশোধ করে চলেছে,অথচ আপনি তারপরও বলছেন-অঙ্গীকারের চেয়ে বেশি কাজ করেছেন ?
ফুঁসে উঠছে জনতা :
বিদ্যুতের দাবীতে লক্ষীপুর,দাউদকান্দি,জামালপুর,নারায়নগন্জ,বরিশাল,নোয়াখালী,কিশোরগঞ্জ,চাঁদপুর,টাংগাইল,কুড়িগ্রাম,কালিয়াকৈর সহ বিভিন্ন স্থানে জনতা বিদ্যুতের দাবীতে হামলা করছে,এসব আপনার নজর এড়ানোর কথা নয়।এমনকি হাসপাতালও বাদ যায়নি, সাত বিভাগের বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুত থেকেও নেই,পত্রিকা মারফত এসব অনুসন্ধানে বের হয়ে আসলেও কোনো সুষ্ঠু সমাধান এখনো পাচ্ছেনা জনসাধারন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,আপনার হাতে আর মাত্র দেড় বছর সময় আছে।এরই মাঝে আপনাকে আকাঙ্খিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার পাশাপাশি বিদ্যুত ব্যবস্থায় উন্নয়ন,দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রন,সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি দমন,শেয়ার বাজারের স্থিতি আনয়ন সর্বোপরি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সাড়ে তিন বছরে এখন পর্যন্ত এমন কোনো উন্নতি হয়নি,যার কারনে আপনি বলতে পারেন অঙ্গীকারের চেয়ে বেশি কাজ করেছেন।বিদ্যুত খাতের দুরাবস্থার একটি অংশই এখানে বলা হলো।আমরা কাজই দেখতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,কথার ফুলঝুড়ি নয়।চারদলীয় জোটসরকারের দুর্নীতির বিচার জনগন ঘটিয়েছে বড়ই নির্মমভাবে,নির্বাচনের আগে পুত্রের কৃতকর্মের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েও পদে থাকতে পারেন নি বেগম খালেদা জিয়া।সুতরাং,কথার চেয়ে নিজেদের কাজেই প্রমান করুন,সময়েই আপনার কাজের বিচার ভোটে নির্ধারিত হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১২ বিকাল ৪:২৮