বাংলাদেশের 'অকৃত্রিম বন্ধু' বলে দাবী করে আসা ভারতের 'বন্ধুত্বে'র সাম্প্রতিক নিদর্শন এই ভিডিওটি।বাংলাদেশি এই ২২ বছরের তরুন চাপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা।সুত্রে প্রকাশ , 'গরু চোরাচালানকারী' সন্দেহে মুর্শিদাবাদের কাহারপাড়াবর্তী সীমান্তের ফাঁড়িতে এই যুবককে ভারতীয় 'বন্ধু' বিএসএফ-এর সদস্যরা আটক করে।ঘুষ প্রদানে রাজি না হওয়ায় তারা বাংলাদেশী এই যুবককে প্রথমে মারধর করে,তারপর যৌনাঙ্গে পেট্রল ঢেলে দিয়ে নির্যাতন করে।ভারতীয় 'বন্ধুত্বে'র চরমপন্থী প্রেম নিবেদনের যথার্থ প্রকাশই বটে!
বিশ্বের সবচেয়ে বড় 'গনতান্ত্রিক' দেশের এরুপ প্রেম নিবেদন নিজের দেশেই নতুন কিছু নয়। আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব হলে মানবতা লংঘনের সকল ভব্যতা ও সীমারেখা অতিক্রম করা শিখবে,এটা মেনে নিলেই আমাদের মত ছাপোষাদের চলে যায়।
কিন্তু সমস্যাটি তখনই হয়,যখন 'স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয়রা সাহায্য না করলে আমাদের জয়লাভ করা সম্ভব হতোনা'-বলে বলে মুখে ফেনা উঠিয়ে ফেলা ভদ্রলোকেরা নিজ দেশ বাংলাদেশের প্রতি ভারতের শিষ্টাচার বহির্ভুত আচরন দিন দিন সহ্য করে চলেছেন,মনে মনে ভারতের উদ্ধত আচরনকে জায়েজ করেও ফেলেছেন। আর এই সমস্যাটি চূড়ান্ত আকার ধারনা করে তখনই,যখন এইসব ব্যক্তিরা আমাদের ক্ষমতার কেন্দ্রে বিচরন করেন।
অপমান নতুন নয় !
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে আসা প্রায় সকল সরকারই কিছু মাত্রায় ভারততোষন নীতি অবলম্বন করে এসেছেন।কিন্তু 'উপদেষ্টা ভিত্তিক' বর্তমান সরকার যেন পন করেছেন,ভারতের স্বার্থ রক্ষায় তারা অন্য যেকোনো সরকারের তুলনায় চরমভাবে উদার হবেন।
আমাদের মাননীয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারনে আমাদের দেশে বসেই ভারতীয় সাবেক হাইকমিশনার পিনাকবাবু আমাদের টাউট ও বাটপার বলে দিতে পারেন,সামান্য এক সহকারী হাইকমিশনার এ.কে.গোস্বামী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে কটুক্তিও করে চলতে পারেন,পাকিস্তানের হাইকমিশনার ধৃষ্টতা ও অবমাননা করতে পারেন মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ! মেরুদন্ডহীন আমরা !
আমাদের দেশের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শিষ্টাচার বহির্ভুত মন্তব্য করে বসলেন মনমোহন সিং!ঘৃন্য জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক বানিয়ে দিলেন দেশের এক চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠীকে!আমাদের মৌলবাদী বানিয়ে প্রচার করে চলেছেন বহির্বিশ্বে,চাকুরীক্ষেত্রে নিজেরা প্রবেশ করছেন আমাদের তাড়িয়ে ! এসো বন্ধু আমার !
নিজেদের মৃত্যুফাঁদ তৈরী করছি অন্যের আশ্বাসে!
দেশের স্বার্থরক্ষার দ্বায়িত্ব নিয়ে যারা আমাদের দুঃখী দেশটার ভাগ্য পরিবর্তনে এসেছেন,তারা কি এক অজানা কারনে টিপাইমুখে দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়ায় কিছু দেখতে না পেলেও এটা জানেন বাঁধ তৈরী হচ্ছেনা.... অথচ গোপনে চুক্তিও হয়ে যায় !! সেই সর্বনাশা বাঁধ তৈরীর কাজ এগিয়ে চললেও আমরা উদ্বেগ জানাই না ,কারন 'বন্ধূ' দেশ ভারত আমাদের বারবার আশ্বস্ত করেছে,তোমার কোনো ক্ষতি হতে দেবোনা বন্ধু ! ।
সেই বন্ধুদেশের প্রধানমন্ত্রীও যখন ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে বলেন,'টিপাইমুখে বাঁধ হবেই' , তখনও আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির প্রকাশ পায় পানিসম্পদমন্ত্রীর টিপাইমুখে বাধ হলেও বিচলিত না হবার সংবাদে। আশ্বাস নামক বায়বীয় ফলফলাদি পেয়েই সন্তুষ্ট থাকেন আমাদের উপদেষ্টা রিজভী,কোনো তথ্যপ্রমান লাগেনা, 'বন্ধুত্ব' কি কখনো তথ্যপ্রমান দিয়ে হয় ?
জনগনের আগে বন্ধুর স্বার্থ ?
ট্রানজিট নিয়ে কি লুকোচুরিই না খেললেন আপনারা ! আমরা বোকা জনগন শুধু দেখেই গেলাম।বাংলাদেশেকে সিঙ্গাপুর,ব্যাংকক,উপমহাদেশের ব্যবসার কেন্দ্রস্থলে পরিনত করে ফেলবেন বলে মধুর কথা শুনিয়েছিলেন,বলেছিলেন ট্রানজিট দিয়েই বাংলাদেশের যাবতীয় আশা আকাঙ্খা আর সব দাবী মেটাবেন ,টাকা আর ডলারে ছেয়ে যাবে বাংলাদেশ- আপনারা লাভ করার উচ্চাশা দেখালেন ।আপনাদের আরো কজন দেশপ্রেমিক হুংকার দিয়ে এগিয়ে আসলেন,তারা জীবন দিয়ে হলেও ট্রানজিট দেবেনই।অকুতোভয় দেশপ্রেমিক পেয়েই কিনা আপনারা আর অপেক্ষা করতে চাইলেন না -অনেক কষ্টে নাকি ৪০ বছর ট্রানজিট না দিয়ে থেকেছেন। শেষপর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক লাভ ভারতের স্বার্থের প্রতি LOVE-এ পরিনত হয়েছে,কেউ অস্বীকার করতে পারবেন ?
বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করতে মাশুল ছাড়বেন না বলে ঘোষনাও দিয়ে দিয়েছিলেন।তবে কিছুদিনের মাঝেই নতজানু হয়ে খুবই শরমিন্দা হলেন,বন্ধুদেশের কাছ থেকে কি আর মাশুল চাওয়া যায় ? ?আমাদের LOVE কি এতই কমে গেছে ?
কত সুবিধা লাগে তোমার বন্ধু ?
বাংলাদেশের খাদ্যসংকটে বাড়িয়ে দেয়া বন্ধুত্বের হাতটি সহসাই গুটিয়ে নিয়েছিল ভারত।কম মূল্যে ৫ লাখ টন চাল আমদানীর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে বসেন মহান বন্ধু!পাটপন্য রপ্তানীর ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভুতভাবে শুল্ক আরোপ করে বন্ধুত্বের উষ্ণছোঁয়াও বইয়ে দিয়েছে,সেই উষ্ণতার ছোঁয়া আমাদের মত গরীব জনগনের কাছে উত্তপ্ত লৌহশলাকার মত লাগলে তা আমাদেরই দোষ।
তাই উত্তপ্ত দন্ডের ছ্যাঁকা খেয়েও আমাদের নীতিনির্ধারকরা বন্ধুত্ব এবং নতজানুতা প্রকাশ করতেই মহান ভারত ছাড়া অন্য কোথাও পাট রপ্তানী না করার সার্কুলার জারী করেন।শুধু তাতেই আপনারা থেমে থাকেন নি-পর্যটন জাহাজ কে নিয়মবহির্ভুতভাবে ট্রানজিট দিয়ে,কোনো কোনো ক্ষেত্রে ট্রানজিট ফি মাফ করে আমাদের বন্ধুত্ব রক্ষা করতে হয়েছে।
আমাদের জলসীমায় নির্বিঘ্নে মাছ ধরছে ভারতীয় জেলেরা,আমাদের শোধনাগারনির্মানের দরপত্র পাচ্ছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান,আমাদের নৌবন্দরের অবকাঠামো নির্মান করার দ্বায়িত্ব পাচ্ছে তারা ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,আপনিতো ভারতীয় ছবি প্রদর্শন না করার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে চলচ্চিত্রকর্মীদের আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিলো,তবে কেন বাংলাদেশের হলে ভারতীয় ছবি প্রদর্শন করা শুরু হয়েছে ? ভারতের মাটিতে এখনও আমাদের দেশী কোনো চ্যানেল প্রদর্শন হয় না, আমাদের ক্রিকেট টীমকেও ভারতে আমন্ত্রন জানানো হয়না , নিজেদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশের একটি হয়েও পরিবেশদুষনকারীকয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প চালুর সমঝোতা স্মারকে রাজি হয়েছি,তোমাদের শতচাকার ভারী লরি পার করার জন্য বালুর বস্তা ফেলে হত্যা করেছি তিতাস নদীকে--- আর কোন কোন বিষয়ে আমরা ছাড় দেবো ?
আর কি পেলে তোমরা আমাদের হত্যা করা বন্ধ করবে ?
সীমান্তে হত্যা আজ থেকে চালাচ্ছেনা ভারত।কোনো সরকারই শক্তভাবে এর প্রতিবাদ করেনি,আর ভারত চালিয়ে গেছে বাংলাদেশিদের নির্বিচারে হত্যা করা । কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রেখেছে তারা,কুপিয়েছে সীমান্তের বাংলাদেশীদের।নিরীহ বাংলাদেশীরা কখনো বিএসএফ নামক জন্তুদের ফুলের টোকাও দেয়নি,অথচ বিএসএফ বারবার আক্রান্ত হবার মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাঙালীদের হত্যা করেছে,চিরায়তভাবেই আশ্বাস দিয়েছিলো সীমান্তে হত্যা বন্ধের ।অথচ কিছুদিন পার না হতেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করেছে আমাদের নাগরিককে।শক্তভাবে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের অভাবের সর্বশেষ নিদর্শন হলো বাংলাদেশের যুবকের বিএসএফ কর্তৃক নিগৃহীত হবার এই ভিডিও।
নীতিনির্ধারকেরা ,দয়া করে মেরুদন্ড সোজা করুন
বন্ধুত্ব রক্ষার দায় কোনো একটি পক্ষের নয়।ভারতের প্রতি বন্ধুত্ব রক্ষা করার দায় শুধু আমাদেরই নয়।আন্তর্জাতিক,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক-সকল ক্ষেত্রেই ভারত আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরন করে আসছে,আমাদের নাগরিকদের বিনা অপরাধে হত্যা করে চলেছে।আপনারা জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকার,'বন্ধুত্ব' রক্ষা করতে গিয়ে ভারতের 'প্রভুমূলক' আচরন আমরা কেন সহ্য করবো ?
তরুন প্রজন্মের একটি সদস্য হয়ে আমরা আমাদের দেশের সম্মানকে অন্য কোনো দেশের কাছে ভুলুন্ঠিত হতে দেখতে পারি না।১৯৫২,১৯৬৯,১৯৭১,১৯৯০ এর বীরের জাতি বাঙালী কেন অন্যায়ভাবে নিপীড়নের কাছে নতজানু হয়ে থাকবে ?
আমাদের অধিকার আছে,আপনাদের প্রশ্ন করার।আমাদের অধিকার আছে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে মাথা উচুঁ করে থাকার।কেন আপনারা শক্তভাবে প্রতিবাদ করছেন না ? কেন প্রতিকার করছেন না ?কেন আপনাদের বিভিন্নভাবে ভারতের অন্যায় সব কাজ আর আবদার মেনে নিতে হয় ? আমরা কেন আমাদের দাবী তাদের কাছ থেকে আদায় করে নিতে পারিনা? কেন পারিনি ?
বিএসএফএর সকল নির্বিচার হত্যাকন্ডের প্রতিকার করুন,না পারলে পদত্যাগ করুন,শুধু শুধু মন্ত্রীর পদ বাগিয়ে দেশের টাকা নষ্ট করে বিদেশে ঘুরলে চলবেনা।তরুন সমাজ কিন্তু এখন আর বিরোধীদলীয় নেত্রীর 'ধর্মভিত্তিক দল' 'ভারতীয় জুজু'র ভয় অথবা ক্ষমতাসীন দলের নেত্রীদের 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের' বাধাগ্রস্থের কথায় ভুলবেনা।তরুন সমাজ অনেক ,অনেক বেশি সচেতন।
সময়ও খুব বেশি নেই,জনগনের অধিকার ও সম্মানরক্ষার দ্বায়িত্ব না নিলে ভোটেই তার ফল প্রতিফলিত হতে সময় নেবেনা।
________________________________________________
@ইন্ডিয়া টুডে' র সংবাদ।
@হিন্দুস্তান টাইমস'র সংবাদ।
@বিবিসি'র সংবাদ।
@এনডিটিভি'র সংবাদ
পুনশ্চ:এই ঘটনার পরও থেমে থাকেনি বিএসএফ-এর ঔদ্ধত্য।ভারতীয় চোরাকারবারীরা ধরে নিয়ে যায় বিজিবির এক সদস্য কে,এই প্রসঙ্গে মাননীয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী'র ধারনা বিজিবি'র সদস্যই ' কোনোভাবে' বিএসএফ-এর কাছে আশ্রয় নেন।অন্যদিকে ,এতকিছুর পরও মাননীয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেছেন 'সীমান্তের ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিত নয়' !সেই খুশীতেই কিনা কে জানে,বিএসএফ আরেকটি বাংলাদেশী যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে। বেশ !
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৬