প্রত্যুষের যমুনা তটিনীর পবন উপভোগ করিতে করিতে দূর্যোধন খেয়ালিকায় হারাইয়া যাইতেছিল।অহো .... হসিনিপুর শাসনে বড়ই আনন্দ ! স্বর্গের অপ্সরা কারিনিকে স্মরন করিয়া গান ধরিলো, ''ওয়ানাবি মাই ছম্মক ছাল্লো..... হোওওও ও !!''.... কারিনির রুপসুধা বড়ই মনোহর , ডায়াল করিয়া দেখিতে হইবে ফ্রি আছে কিনা !
''প্রভু,একখানা কথা ছিলো !'' , অকস্মাৎ হাজিরা দিলো দিপিকামিনী।
দিপিকামিনীকে দেখিয়া দূর্যোধনের মন আরো উদাস হইয়া গেলো,''এই পুষিতেছি অন্দরমহলে.... দিপিকামিনী আর দুঃশহালা !! যাহ শ্লা !! '' -ভাবিয়া দীর্ঘশ্বাস বাহির হইলো তাহার.... নাহ! কারিনিকে ডায়াল করাটা জরুরী!
''বলিয়া ফেলো'', হুকুম করিলো দূর্যোধন।
''প্রভু ,অদ্য বৈকালিক সভায় কিন্তু 'কাঠাঁল' উদ্বোধন করিবার কথা ছিলো।'' , বলিলো দিপিকামিনী।
দূর্যোধন থতমত খাইয়া গেলো। ''কাঠাঁল তো সুমিষ্ট ফল.... উহার উদ্বোধন আমি কেনো করিবো ? ''- রাগে গজগজ করিলো দূর্যোধন।
''প্রভু,এই কাঠাঁল যুধিষ্ঠিরের কাঠাঁল নহে, ইহা একখানা গননাযন্ত্র.... পাশা খেলিবার পূর্বে আপনি ঘোষনা দিয়াছিলেন না? হসিনিপুরের সকল শিশুর হস্তে একখানা গননাযন্ত্র ধরাইয়া তাহাদের ইজি কাজে বিজিটাল বানাইবেন?'' -স্মরণ করাইয়া দিলো দিপিকামিনী ।
''ওহ হাঁ !! বয়স হইয়াছে,বুঝিলে? স্মরন থাকেনা আজকাল । তো ,'কাঠাঁল' -এরুপ নাম দিলে কি বুঝিয়া ? '' জিজ্ঞাসিলো দূর্যোধন।
দিপিকামিনী সাগ্রহে বলিলো,''আজ্ঞে স্টিভানন্দের নাম তো শুনিয়াছেনই... বড়ই বিজ্ঞ ব্যাক্তি.... কত নাম ডাক তার !!''
দূর্যোধন হাঁ করিয়া রহিলো,স্টিভানন্দের নাম সে ইহজীবনেও শোনে নাই।কিন্তু ইহা প্রকাশ পাইতে দেওয়ার বান্দা সে না। বলিলো,'' হাঁ হাঁ... কত ডিনার করিয়াছি একসাথে, চিনিবো না কেনো ? কি হইয়াছে ? ''
দিপিকামিনী বলিলো,''উহার বিখ্যাত একখানা যন্ত্রে আপেলের সাথে মিল রাখিয়া আমরা ইহার নাম দিয়াছি 'কাঠাঁল'...। হসিনিপুর কত উন্নত ,নামে নামে ঠোক্কর না খাইলে ধরিত্রীর মানুষ কিরুপে বুঝিবে যে আমরা কত আধুনিক হইয়া উঠিতেছি?''
দূর্যোধন খুব খুশি হইলো,বেশ বিদুষী রমনীকে তাহার অন্দর মহলে ঠাই দিয়াছে!!কত বিদেশি রাজ্যের লোকজনের খবর রাখে সে! ভাবিয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করিলো,বলিলো , ''চলো চলো,উদ্বোধন করিয়া আসি!!কিন্তু খেয়াল রাখিও... দাড়িপুত্র যেন কাঠাঁল এর মোড়ক না খাইয়া ফেলে !দাড়িপুত্র যুধিষ্ঠির কাঠাঁল পাতার যম !!''
বেশ হইহুল্লোড়ের মাঝেই কাঠাঁলের উদ্বোধন হইলো,গুটিকয়েক শিশুর হাতে 'কাঠাঁল' তুলিয়া দেওয়া হইলো।মহানন্দে দূর্যোধন ঘোষনা দিলো-এখন হইতে শিশুরা পুস্তকের বদলে 'কাঠাঁল' লইয়া বিদ্যালয়ে যাইবে! অন্তর্জালের শিক্ষায় শিক্ষিত হইয়া এক এক যজ্ঞমুণি হইবে।একই সাথে খালদার্জুন আর যুধিষ্ঠির যদি কুরুক্ষেত্রের বিচার লইয়া ঝামেলা করার চেষ্টা করিলে তাহাদের মাথায় কাঠাঁল ভাঙিয়া দাড়িতে আঠা-টাও মাখাইয়া দিবার উদাত্ত আহবান জানাইলো দূর্যোধন।
সভার শেষমূহুর্তে দুই একজন ব্যবসায়ী গাঁকগাঁক করিয়া কিছু একটা হট্টগোল পাকানোর চেষ্টা করিতেছিলো,তবে পাইক ও বরকন্দাজগন তাহাদের দুদ্দাড় করিয়া প্যাভিলিয়নে পাঠাইয়া দিতে সংকোচ বোধ করিলোনা।
অদ্য প্রভুত উন্নতি ঘটিয়াছে হসিনিপুরের-ভাবিতে ভাবিতে দূর্যোধন নিদ্রা যাইবার অবকাশ করিলো।
এমন সময় বিকট শব্দে দূরালাপনী বাজিয়া উঠিলো।
''কে?'' জিজ্ঞাসিলো দূর্যোধন।
''প্রভু .....দুঃশহালা !! '' উত্তর আসিলো অপরপ্রান্ত হইতে।
বিরক্তস্বরে দূর্যোধন জিজ্ঞেস করিলো,''কি হইয়াছে?''
''প্রভু,অদ্য বৈকালে উদ্বোধনকৃত গননাযন্ত্র শিশুদের পরিবর্তে কিছু বয়স্ক লোক লইয়া গিয়াছে।ইহা কুরুক্ষেত্র পরবর্তী বিচার বাধা দিবার ষড়যন্ত্র হইতে পারে! উহাদিগকে কি ঠ্যাঙাইয়া নিয়া আসিবো ?? '' - সাগ্রহে জিজ্ঞাসিলো দুঃশহালা।
কিয়ৎক্ষন চুপ থাকিয়া কি যেন ভাবিলো দূর্যোধন,অতঃপর বলিলো,''নাহ ,থাকুক ! শেয়ারে কত মুদ্রা পোঙামারা খাইয়াছে,তাহা হিসাবের জন্যও গননাযন্ত্রের প্রয়োজন আছে।!''
............................................................................................
একইসাথে চতুর্মাত্রিকে প্রকাশিত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:০৮