somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার খোলা চিঠি

২৯ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রদ্ধেয় মা

আসসালামু আলাইকুম।

পরিবারের সবাইকে আমার সুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি সকলে আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। আমি ও আপনাদের নেক দোওয়ায় ভাল আছি।
পর সামাচার
আপনাদের ছেড়ে ঢাকায় আসলাম দীর্ঘ দিন হল। যোগাযোগ আগের মতন আর হয়না। অনেকটা শহুরে ব্যস্ততা আর কিছুটা আমার ঢিলেমির কারনে। কল-কব্জার এই শহরে মানুষ গুলো সর ধাতব বনে গেছে। আমিও নিজেকে মানিয়ে নিতে পুরো দস্তুর ধাতব বনে গেছি। জীবন যুদ্ধে আজ পরাজিত । রণ সংগ্রামে কান্ত। সম্মুখে অন্ধকার । আশার আলো আজ মরিচীকার মত । তারপরও জীবন তো আর থেমে থাকেনা-যে ঘরে মুখ বুজে বসে থাকব । জীবন-চাকা অনবরত ঘুরতেই থাকে চলমান ঘড়ির কাটার ন্যায়। ভোররেলা লাল টুকটুকে সুর্যের আগমন জানিয়ে দেয় তোমার কাজ শুরু । এরপর সারা দিনের ব্যস্ততা -– সন্ধ্যা বেলার কান্ত শ্রান্ত দেহ-মন নিয়ে পড়ার টেবিলে বসি। পড়া আর হয়না, নানা চিন্তা আর দুনিয়ার ব্যস্ততায়। দুইজন টিচারের কাছে পড়ে বাসায় ফিরতে রাত বাজে সাড়ে এগারটা কি বারেটা। এরপরও ভাবি আজকের কোন কাজটি যেন রয়ে গেছ! ভাবতে ভাবতে আর আগামি দিনের পরিকল্পনায় কখন যে ঘুমিয়ে যাই ঠিক বলতে পারবনা। সকালে উঠে সেই একই ছকে বাঁধা জীবন। চার পাশের এই গন্ডি ভেদ করে বেরিয়ে যেতে পারিনা। যখন কাজের চাপে নিজের জন্য একটু বিনোদন , একটু খোলা হাওয়া,মুক্ত বাতাস আর আপনজনদের সময় দিতেও সুযোগ পাইনা , তখন নিজেকে নিয়ে ভাবি - আসলে আমরা কি স্বাধীন নাকি পরাধীন ? প্রশ্ন গুলো বারবার ঘুরপাক খায় আমার মনে । নিজেকে তখন শান্তনা দেই ”জীবন টা এমনই” বাধার প্রাচীর ডিংগিয়েই অপারে যেতে হয়। বন্ধুর গিরি পথ মাড়িয়েই আলোর দিশা পাওয়া যায়। তাই আমি প্রতিনিয়ত ছুটছি। ছুটছি ঘুর্নিঝড় আইলা আর সিডর এর মত। জীবনের মানে বুঝার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি চুড়ান্ত সফলতার।
এতন শুধু স্বার্থপরের মত নিজের কথাই বল্লাম। আপনাদের কোন খোজ খবর তো নিলাম না। প্রথমেই মা অপনার খবর কেমন ? আপনার অসুস্থতার কথা আমাকে পীড়া দেয়। আমি শুধু একটা কথাই বলব , আপনার এখন সূচিকিৎসা দরকার । প্রয়োজনে আপনি ঢাকায় এসে আমাদের বাড়ীতে থেকে এর এর একটা সমধান করবেন। আর আংকেল কেও আমার কিছু বলার ছিল , উনি কেন আপনাকে নিয়ে ঢাকায় আসেনা । সর্বপরি আমি চাই দ্রুত সু-চিকিৎসা।
আশরাফুল – শাফীন কে ভুলতে পারিনা শত ব্যস্ততায়ও। আজও মনে পড়ে ফেলে আসা দিন গুলির কথা। যখন নগর জীবনের কোন শারিরীক মানুষীক ব্যস্ততায় পর্যদুস্ত হয়ে যাই , তখন একান্ত নিরালা মনে হারিয়ে যাই দুর অতীতে। ভাবতে ভাল লাগে কোন মধুর সৃতি নিয়ে। আশরাফুল আর শাফীন যেন মনি-মুক্তার মত দ্যুতি ছড়ায় আমার ভাংগা মনে । আলো জ্বালিয়ে দেয় নিভে যাওয়া প্রদীপে। চোখের সামনে ভাসে আশরাফুলের পুকুরে দাপাদাপি , বড়শী নিয়ে মাছ ধরা আর চিরচেনা,সেই হাসি - হাসি মুখটা। আর শাফীনের মিষ্টি মধুর ডাক আমার কানে এসে বিঁধে ঝংকার এর ন্যায়। মাঝে মাঝে ভাবি ওর ভাইয়া ভাইয়া ডাক শুনতে হলেও আমাকে পাড়ি দিতে হবে এই বিশাল পদ্মা। সত্যি কথা বলতে কি ওর ভাইয়া ডাক আমাকে খুব বেশী ইমোশনাল করে দিত। এমন আকুল ভাবে কোন ডাক আমি কখনো শুনিনি। অন্তর থেকে আসা সেই ডাক আমাকে ব্যাকুল করে দিত। আমি সুখের সাগরে ভাসতাম। দুঃখ আমার পাশ কাটিয়ে চলে যেত। আজ সেটা সুদূর পরাহত। আমি বুঝতাম না আল্লাহ কেন এই পৃথিবীতে দুঃখের পাশে সুখ দিয়েছেন । বেদনার মাঝে আনন্দকে বিলীন করে দিয়েছেন। আজ আমি সেটা বুঝতে পেরেছি, মানুষের জীবন টা ঘুর্ণায়মান চাকার মত, যার একপাশে সুখ আর অন্য পাশে থাকে দুঃখ। সেই চাকা জন্মের পর থেকে সুখ আর দুঃখের পালা বদল করে ঘুরতেই থাকে ঘুরতেই থাকে অনবরত। একদিন তার যাত্রা শেষ হয়, মুসাফেরী জীবনের অবসান ঘটে মৃত্যুর মাধ্যমে। নাহ! খুব বেশী ফেলসফীর কথা বলে ফেল্লাম। সুখের কথা বলি , ভাবির খবর কি ? আশা করি ভাল। গতবার বিদায়ের আগে বলে গিয়েছিলাম , তার যেন যতœ নেওয়া হয়। ঠিক মত খাবার আর মন- মানুষিকতার বিনোদন হয়। সাস্থের প্রতি সকলের সজাগ থাকতে হবে। কোন ভাবেই তার প্রতি অবহেলা করা যাবেনা। আমার বন্ধুবর মইন ভাই কে নিয়ে বিশেষ চিন্তায় আছি , দেখি তার ব্যপারে কিছু করা যায় কিনা। আমার মনে হয় তাকে দেখে শুনে বিদেশ পাঠালেই ভাল হবে। আমি অবশ্য একটা ব্যবসার কথা তাকে বলেছি , এতে তার সম্মতিও পেয়েছি , তবে আমার মনে হয় সেটা আমার পরিার আগে সম্ভব হবেনা। সর্বপরি আমাদের অবস্থা ভাল। গতকাল শুনলাম, নানা নানু ঢাকায় ঈদ করছেন। নানার অসুস্থতার জন্যও আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করি , আল্লাহ যেন তাকে পরিপূর্ণ সুস্থ করে দেন। কথা বলতে বলতে পত্র দীর্ঘায়িত করে ফেলেছি , তবুও কথা শেষ হয়নি। মনে মনে ভাবি যদি একদিন মন ভরে কথা বলতে পারতাম ! এই লেখা যখন আমি লিখছি , আমার চোখের সামনে তখন আপনার মুখচ্ছবি। আপনার হাসিমাখা মুখটা দেখে দীর্ঘ সময় না খেয়ে নির্ঘাত কাটিয়ে দেওয়া যাবে। আপনি কিন্তু কষ্ট করে হলেও আমাকে নিজের হাতে পত্র লিখে দিবেন।



সবাই কে ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।



সবাই ভাল থাকুক এই প্রত্যাশায়
নুরুল হক


এই চিঠিটা আমি আমার মার কাছে এই কুরবানীর ঈদ এর পূর্বে পাঠিয়েছিলাম। এটাই আমার প্রথম চিঠি , যা আমি আমার আন্টির কাছে পাঠিয়েছি, যাকে আমি আম্মু বলেই সম্বোধন করে থাকি। এ যুগের আমরা সাধারনত চিঠি লেখায় অভ্যস্ত না , যেখান একমিনিট কথা বলেই মনের ভাব বিনিময় করা যায়, সেখানে দীর্ঘ সময় বসে বসে চিঠি লেখা ,তার পর সেটা আবার পোষ্ট করার ঝামেলা কে পোহাতে যায় বলুন ? তার পরও আমি সাহস করে লিখেই ফেল্লাম একখানা চিঠি আমার এই কাঁচা হাতে। অসুন্দর হলে ক্ষমা করবেণ আমাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম বিহীন বিশ্ব গড়ার চেষ্টা বিশ্ব জনসংখ্যা অনেক কমিয়ে দিবে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫০



নেতানিয়াহু বলেছে তাদের সাথে অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্র আছে। সে মুসলিম বিশ্বকে বড় রকমের হুমকি দিয়েছে। সে গণহত্যা চালাচ্ছে। আত্মরক্ষায় মরিয়া মুসলিমরাও গণহত্যা চালাবে। তখন আর সভ্যতার বাণীতে কাজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মিরর ডোল, নিজের মনের অশান্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

ব্লগার মিরর দৌলাকে বলছি।
আপনাকে কিছু কড়া কথা আজ বলবো। ব্লগে বর্তমানে আপনার কোন অবদান নেই। সামুর যে ব্লগপেইজটা আপনি চালান, সেখান থেকে সব পোষ্ট আপনি ড্রাফটে নিয়েছেন। সেটা আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এত হট্টগোল এত সুরাসুর এখানে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:২৬



নিত্যতই লেগে থাকে হট্টগোল, রাজপথে জায়গা নেই,
হাঁটতে গেলেই মানুষের ধাক্কায় হারাই খেই,
বিশৃঙ্খল নগরীর বুকে স্বার্থপরতার বসবাস;
এখানে মাটিতে পা ফেললেই বুকে মুহুর্মূহু দীর্ঘশ্বাস।

বাস, কার, রিক্সা, ভ্যা ন, ম্যা ক্সি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপিনামা - যে যায় লংকায় সেই হয় রাবণ ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১


জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল আত্নপ্রকাশ করেছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) কে নিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে এই দল গঠিত হয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

হারিয়েছি অনেক কিছু....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৪

হারিয়েছি অনেক কিছু....

আমি প্রতিদিন নিয়ম করে বেশ কয়েক কিলোমিটার হাটি। তবে ইদানিং হাটাহাটিতে অপ্রত্যাশিত ছন্দপতন হচ্ছে! এই যেমন, হাটাহাটির টার্গেট মিসিং! যে পথে হাটার কথা, সে পথে না গিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×