somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশিষ্ট বাঙালি সংগীতস্রষ্টা, কবি এবং বাংলা থিয়েটারের জনক গিরিশচন্দ্র ঘোষের ১৭১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা থিয়েটারের স্বর্ণযুগের প্রাণ পুরুষ,বাংলা থিয়েটারের জনক গিরিশচন্দ্র ঘোষ। তিনি ছিলেন একাধারে সঙ্গীতজ্ঞ, কবি, চিত্রনাট্যকার, ঔপন্যাসিক, মঞ্চ নাট্য নির্দেশক এবং অভিনেতা। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের প্রভাবে তিনি প্রথম গান এবং কবিতা লিখতে শুরু করেন। পরে নাট্য মঞ্চের সাথে যুক্ত হলে নাটক লিখতে শুরু করেন। সীতার বনবাস ,সীতাহরণ , জনা ,বলিদান , সিরাজ উদ দৌলা , মীরকাশিম ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য নাটক। তার হাত ধরে বহু অভিনেতা অভিনেত্রী বাংলা থিয়েটারে এসেছেন, বাংলা থিয়েটারকে করেছেন সমৃদ্ধ। তাদের মধ্যে অন্যতম বিনোদিনী দাসী। যিনি মাত্র ১২ বছর বয়েসে বাংলা নাটকের জগতে প্রবেশ করেন এবং ২৩ বছর বয়সে অবসর নেন। বাংলা নাট্যমঞ্চের যুগস্রষ্টা নট ও নাট্যকার এবং রঙ্গমঞ্চ পরিচালক গিরিশচন্দ্রের জীবন বাংলাদেশের রঙ্গালয়ের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ১৮৪৪ সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতার বাগবাজারে জন্ম গ্রহন করেন না্ট্যকার গিরিশ চন্দ্র ঘোষ। আজ তাঁর ১৭১তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে নাট্যপরিচালক ও মঞ্চাভিনেতা গিরিশচন্দ্র ঘোষকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ফুলেল শুভেচ্ছায়।


নাট্যকার গিরশিচন্দ্র ঘোষ ১৮৪৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার বাগবাজারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম বাবা নীলকমল ও মা রাইমনি। তিনি ছিলেন তাঁর পিতামাতার অষ্টম সন্তান। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এবং পণ্ডিত হলেও গিরিশচন্দ্র ঘোষের কোন বিশেষ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলনা। গিরিশচন্দ্র ঘোষের প্রাথমিক শিক্ষাজীবন স্থানীয় এলাকার বিদ্যালয়ে শুরু হয়। পরে গৌরমোহন আঢ্যের বিদ্যালয় ও হেয়ার স্কুলে লেখাপড়া করেন। ১৮৬২ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। তবে পরবর্তীকালে একান্ত নিজস্ব চেষ্টায় তিনি ইংরেজি ভাষা ও হিন্দু পুরাণ বিষয়ে বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। এরপর তিনি ‘অ্যাটকিন্সন টিলকন’ কোম্পানির হিসাবরক্ষণ বিভাগে শিক্ষানবিস হিসেবে যোগ দেন। গিরীশ ঘোষের মন প্রচণ্ড দ্রুতগতিতে এবং অদ্ভুত ভাবে চিন্তা করতে পারতো। তার চিন্তা কিংবা আইডিয়া বা শব্দাবলী তাৎক্ষনিক লিখে রাখার জন্য তিনি দেবেন্দ্র নাথ মজুমদারকে সেক্রেটারি নিয়োগ দেন। দেবেন্দ্র সারাক্ষণ তারকাছে তিনটা পেন্সিল প্রস্তুত রাখতেন, দোয়াত কলম রাখতেন না। কারণ কলমে কালি ভরার মত সময়টুকুও তিনি পেতেন না। কোন কথা বুঝতে না পেরে পুনরায় জিজ্ঞেস করলে গিরীশ রেগে যেতেন, কারণ তাতে তার চিন্তায় বিঘ্ন ঘটতো। তাই কোন শব্দ বুঝতে না পারলে তার নির্দেশ অনুযায়ী দেবেন্দ্র সেখানে ডট বসিয়ে যেতেন, যাতে পরে জেনে নিতে পারেন।


সালে গিরিশচন্দ্র ঘোষ কর্মজীবনে ১৮৭৬ সালে ‘ইন্ডিয়ান লীগ’-এর হেড ক্লার্ক ও ক্যাশিয়ার পদে, পরে পার্কার কোম্পানির হিসাবরক্ষকের পদে যোগদান করেন। ১৮৭৭ সালে স্বরচিত ‘আগমনী’ নাটক ‘গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার’-এ অভিনীত হয়। পরে তিনি এ রঙ্গালয়ের ম্যানেজার নিযুক্ত হন (১৮৮০)। ১৮৮৩ থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত তিনি স্টার, এমারেল্ড, মিনার্ভা, ক্লাসিক ও কোহিনুর ইত্যাদি রঙ্গালয় পরিচালনা করেন। ১৯০৮ সালে তিনি মিনার্ভা থিয়েটারের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন এবং আজীবন এ পদে সমাসীন ছিলেন। গিরিশচন্দ্র প্রায় চল্লিশটি নাটক রচনা করেছেন এবং ততোধিক সংখ্যক নাটক পরিচালনা করেছেন। পৌরাণিক, ঐতিহাসিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে রচিত ও পরিচালিত নাটকের সংখ্যা মোট ৮০টি। সামাজিক নাটক লেখার ক্ষেত্রে ও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি সীতার বনবাস লিখেছিলেন এক রাতে, সধবার একাদশী’র জন্য ২৬ টা গানও লিখেছিলেন এক রাতে। তার বোন দেবমাতা বলেছিলেন, অন্যতম শ্রেষ্ঠ ৬ অ্যাক্ট নাটক বিল্ব্যমঙ্গল লিখেছিলেন মাত্র ২৮ ঘণ্টায় এবং নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে এক বসাতে। বাংলা থিয়েটারের স্বর্ণযুগ মূলত তাঁরই অবদান। স্যার এডুইন আর্নল্ড এর বিখ্যাত কাব্য Light of Asia গ্রন্থটি সেকালে অনেক মহাপুরুষকে অনুপ্রানিত করেছিল ! বাংলায় এই গ্রন্থটির নির্ভর করে শ্রী গিরিশ চন্দ্র ঘোষ রচনা করেছিলেন বুদ্ধদেব চরিত নাটকটি ! এই নাটকটি সর্বপ্রথম মঞ্চস্থ হওয়ার সময় শ্রী লঙ্কার বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক এবং জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ নেতা শ্রী অনাগরিক ধর্মপাল ছিলেন দর্শক হিসেবে ! এই অভিগ্যতার উপর তিনি পরবর্তিতে তাঁর ডায়েরিতে লিখেছিলেন ‘বাঙালিরা বুদ্ধকে খুব সম্মান করে ডাকে বুদ্ধদেব বলে ! আর্নল্ড এর Light of Asia যেমন বিশ্বব্যাপী বুদ্ধের নাম এবং অমর কাহিনী পৌঁছে দিয়েছিল গিরিশ ঘোষের বুদ্ধদেব চরিত ও বাঙালির মধ্যে বুদ্ধের প্রতি নতুন ভাবে আগ্রহ সৃষ্টি করতে অনেক অবদান রেখেছে ! বাংলায় বুদ্ধ ধর্মীয় চর্চার ইতিহাসেও গ্রন্থটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।


(স্বামী অদ্ভুতানন্দ, মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত ও শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যান্য শিষ্য ও ভক্তদের মাঝে গিরিশ চন্দ্র ঘোষ)
ভিন্ন রূপে দেখলে, গিরিশচন্দ্র ঘোষকে বলা যায় শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের ক্ষমতার রুপায়নের এক অনন্য উদাহরণ। কলকাতায় ন্যাশানাল থিয়েটার নামে তাঁর একটি নাট্য কোম্পানি ছিল। ১৮৭২ সালে তিনিই প্রথম বাংলা পেশাদার নাট্য কোম্পানি ন্যাশানাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর নটী বিনোদিনীকে নিয়ে তিনি স্টার থিয়েটারে চৈতন্যলীলা নাটকটি মঞ্চস্থ করেন। রামকৃষ্ণ পরমহংস এই নাটক দেথতে এসেছিলেন। এরপর তিনি তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার সাথে সাক্ষাতের আগে গিরিশ ছিলেন কুখ্যাত মদ্যপ ও স্বেচ্ছাচারী, বেপরোয়া, সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধাচারি, বিশৃঙ্খল জীবনাচরণে অভ্যস্ত এক বিদ্রোহী। কিন্তু তা সত্ত্বেও জীবনের পরবর্তী ভাগে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসের এক বিশিষ্ট শিষ্য হয়েছিলেন এবং শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম অন্তরঙ্গ শিষ্যে পরিণত পরিনত হেয়েছিলেন। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে, কিভাবে শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসার পর গিরিশ চন্দ্রের নৈতিক পরিবর্তন ঘটে এবং তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠতম শিষ্যদের একজন হয়ে ওঠেন।


জন্ম মাসেই ১৯১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী এ মহান অভিনেতা ,নাট্যকার, নির্দেশক কলকাতায় মুত্যুবরন করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৮ বছর। আজ তাঁর ১৭১তম জন্মবার্ষিকী। বিখ্যাত নাট্যকার, নাট্যপরিচালক ও মঞ্চাভিনেতা গিরিশ চন্দ্র ঘোষের জন্ম দিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×