"কোন মানুষ যদি অন্যায় হত্যার ব্যপারে মুখ দিয়ে একটি কথাও উচ্চারণ না করে, তাহলে হাশরের দিন ঐ ব্যক্তির কপালে লেখা থাকবে, ঐ ব্যক্তি আল্লাহর দয়ার চাদর থেকে বঞ্চিত।" (আক্বিদাতুর রাসুল। ইমাম কুরতুবী)
আবার যে এ নিয়ে লিখবো, ভাবিনি! এসব নিয়ে ম্যাওপ্যাও করা ছেড়েছি অনেক আগেই। তখন থেকে উটপাখির বিদ্যেটা শিখে নিয়েছি, পপকর্ন খাওয়া শুরু করেছি। এতদিনে হয়তো ম্যাঙ্গো পিপলের তালিকায় নামটাও উঠে গিয়েছে। সেদিন হঠাৎ করেই উপরের লেখাটা চোখের সামনে পড়ল। মনটা কেমন খচখচ করছিল, তাই দু-চার লাইন লিখতে শুরু করলাম।(হাদিসটা সহিহ, না যঈফ এ নিয়ে ক্যাচাল না করি)
"মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি,
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।"
গানটির ভেতরের কথায় না গিয়ে, সোজা কথা বলি। ৭১এ তরুনরা অস্ত্র হাতে নিয়েছিল মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। দেশ থেকে সব শোষণ, বৈষম্য, অত্যাচার-অনাচার দুর করার জন্য। তারা নিজের জীবনের বিনিময়ে অত্যাচারিদের প্রতিহত করেছে, দেশের একটা ফুলও হায়েনাদের মাড়াতে দেয় নি। অথচ আজ স্বাধীন দেশে অস্ত্র হয়ে উঠেছে কান্নার কারণ। এখন অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে এক আতঙ্কের নাম, একটা পরিবারের হাসি কেড়ে নেবার মাধ্যম।
অন্যায় হত্যার পরিণাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
১। ‘’আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মুমিনকে হত্যা করে তার শাস্তি জাহান্নাম। যাতে সে স্থায়ী ভাবে থাকবে, তার উপর আল্লাহর ক্রোধ ও অভিসম্পাত। আল্লাহ তার জন্য মহাশাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন’’ (সুরা -নিসা ৪/৯৩)
২। ‘’এ কারনেই আমি বানী ইসরাইলের জন্য বিধান দিয়েছিলাম, যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা যমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারন ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে সে যেন তামাম মানুষকেই হত্যা করল। আর যে কোন মানুদের প্রান বাঁচালো, সে যেন তামাম মানুষকেই বাঁচালো।’’ (সুরা-মায়িদাহ ৫/৩২)
[বুদ্ধিজীবিরা(!!!) আবার আয়াতটির মনগড়া ব্যাখ্যা(আইএস রা যেটা করে) করবেন না]
অন্যায় হত্যার পরিণাম সম্পর্কিত কিছু হাদিসঃ
১। আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ "(কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম হত্যার বিচার করা হবে’’ (বুখারী ৬৫৩৩; মুসলিম ১৬৭৮)
২। আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ "মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তাকে হত্যা করা কুফুরি’’ (বুখারী ৬০৪৪)
৩। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, প্রাণ হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া আর মিথ্যা বলা, কিংবা বলেছেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া’’ (বুখারী ৬৮৭১; মুসলিম ৮৮)
৪। আবুল হাকাম আল-বাজালী (রহঃ) বলেন, আমি আবু সাইদ খুদরি ও আবু হুরায়রাহ (রাঃ)-কে বর্ণনা করতে শুনেছি, রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আসমান-যমিনের মধ্যে বসবাসকারী সকলে একত্রে মিলিত হয়েও যদি একজন মুমিনকে হত্যা করার কাজে শরীক থাকে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’’ (তিরমিযি ১৩৯৮)
তথ্যসূত্রঃ
Quran and Sohi Hadis (কুরআন এবং সহীহ্ হাদীস)
প্রশ্ন আসতে পারে, আল্লাহ তো মুমিনদের হত্যার বিরুদ্ধে বলেছেন, তবে কি অমুসলিমদের(ধরুন নাস্তিক ব্লগার) হত্যা করা বৈধ? না ভাই, অকারণে কোন প্রাণ হত্যা করাই বৈধ নয়। একজন লোক যত বড় অন্যায় করুক, আমি আপনি কাউকে হত্যা করার অধিকার রাখি না(চোর/ডাকাত সন্দেহে পিটিয়ে মারার ঘটনা অহরহ হচ্ছে)। এর জন্য দেশে প্রচলিত আইন আছে, বিচার ব্যাবস্থা আছে। বিচার বহির্ভূত কোন হত্যাকান্ডই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমাদের দেশের সর্বচ্চ আইন হচ্ছে সংবিধান! বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড সংবিধান পরিপন্থী(অনুচ্ছেদঃ ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৫) এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন(ধারাঃ ৭, ৮, ৯, ১০, ১১)। তবে শেষ কথা হচ্ছে "মগের মুল্লুকে সব কিছুই ঘটে" কোন রকম যুক্তি ছাড়াই।
সংযুক্তিঃ অনেক’ মৃত্যু না হলে বন্দুকযুদ্ধের বিরুদ্ধে বিবেক জাগে না আর
আমার ড্রাফট (২৮)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ১০:২৩