সামুর ইতহাসে 30258737তম পোস্ট লিখতে বসেছি। জানি না, সেটা কি আবেগে পড়ে, নাকি বিবেকের তাড়নায়। মাঝেমধ্যে দেশের চলমান ঘটনাগুলো দেখলে/পড়লে হতাশ হয়ে পড়ি। নতুন প্রজন্মকে দেখে নিশ্চুপ হয়ে যাই। নিজেকে কেন জানি অপরাধী মনেহয়। ওদের এক সুন্দর আগামী দিতে না পারার ব্যর্থতায়। সুকান্তদার সেই কবিতা মনে পড়ে,
তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার॥
ঠিকভাবে প্রতিবাদও করতে পারিনা আমরাঃ
চলমান একটা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করি- মইনুল হোসেন লাইভ অনুষ্ঠানে বেফাঁস একটা মন্তব্য করেছে। সেটা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৮টা মামলা হয়েছে। [প্রথম আলোর(২৭.১০.১৮) শেষ পাতা দেখুন।] মইনুল/ভাট্টির মধ্যে কে কত বড় সাধু আর কে কত ছোট চোর সেই বিষয়ে কথা বলতে আমি আসি নি। সচেতন মানুষ তাদের সম্পর্কে জানে। আমি জাস্ট আইন ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কিছু কথা বলবো--
১. উন্নত বিশ্বে ও আন্তর্জাতিক মানবাধীকার মানদন্ডে মানহানি একটা লঘু অপরাধ(দেওয়ানী মামলা)।
২. অপরাধ প্রমানিত হলে শাস্তি হবে শুধু অর্থদন্ডে। মানে কারাদন্ড হবে না।
৩. মানহানির অপরাধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা জামিন না দিয়ে আটক রাখা অকল্পনীয়।
মানহানি সম্পর্কিত আমাদের আইনঃ
১. এটা একই সাথে দেওয়ানি ও ফৌজদারি অপরাধ।
২. এর সর্বচ্চ শাস্তি, দুই(২) বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড।(মামলা অবস্য কয়েক বছর ধরে চলতে পারে)
৩. ফৌজদারি কার্যবিধির ২নাম্বার তফসিল অনুসারে এটি জামিনযোগ্য[দন্ডবিধির ৫০০ধারায়], আমল-অযোগ্য এবং আপোসযোগ্য অপরাধ। (আবার পড়েন)
৪. ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৮ধারা অনুসারে মানহানি মামলা করার অধিকার রয়েছে শুধু সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির।(আইন অনুযায়ী মইনুলের বিরুদ্ধে আমি/আপনি মামলা করতে পারবো না।)
৫. ফৌজদারি কার্যবিধির ২০৫ঘ ধারা অনুসারে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই বিষয়ে থানায় এবং আদালতে দুটো ভিন্ন মামলা হলে আদালতের মামলাটি স্থগিত থাকে।["নো পারসন শুড বি ভেক্সেট টোয়াইস" নামে ন্যায় বিচারের যে সূত্র রয়েছে, তাতে একটি ঘটনায় একাধিক মামলার কোন অবকাশ নেই।]
.......
এর আগেও মানিদের মান নিয়ে টানাটানির ঘটনায় একাধিক মামলা হতে দেখেছি। আমাদের বিচার ব্যবস্থাগুলো স্বাধীন হবে কবে?
গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টে একদল লোক লিমনের(র্যাবের গুলিতে যে পা হারিয়েছিল) হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। সেখানকার নারী-পুরুষদেরও জামাই আদর(!!) করে বের করে দেয়া হয়েছে। (বিস্তারিত-http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/2018/10/26/176087)। জানিনা এর জন্য একটার বেশী মামলা হয়েছে কী না। সম্ভবত হয় নি, হবেও না। (এখানে যে দেশপ্রেমীদের(!!) কোন স্বার্থ নেই)। এদেশে খুনের মত জঘন্য অপরাধেও আমরা সাধারণত একাধিক মামলা দায়ের করতে দেখি না। সেখানে মানহানির মত লঘু অভিযোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একাধিক মামলা আদালত গ্রহণ করে কোন যুক্তিতে? [দেশের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও দীর্ঘসূত্রীতা তো আছেই]
এমন সুন্দর(!!) রাজনীতি যদি চলতেই থাকে, দেশের জনগন সচেতন না হয়, পুলিশ-প্রশাসন সৎ না হয়, বিচার বিভাগ নিরপেক্ষ না থাকে, সাংবাদিকরা মোসাহেবি না ছাড়ে, নেতারা দেশপ্রেমী হতে না পরে, ব্লগে শুধু লেখাই সার হবে।
আমরা কি 'সোনার বাংলা' গড়তে চাই? নাকি মগের মুল্লুক বানানোর পাঁয়তারা করছি?
সারমর্মঃ গণতন্ত্র মানে যা ইচ্ছে তা করা নয়: ড. কামাল(সূত্র-http://www.ittefaq.com.bd/politics/2018/10/26/175992.html)
[সাংবাদিকরা পেশাদারিত্ব ছেড়ে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করবে, টকশোতে তাঁরছেড়া প্রশ্ন করবে। আরেকজন বিবেকহীনের মত উগ্র মন্তব্য করবে। ক্ষমা চাওয়ার পরও কাদা ছোড়াছুড়ি হবে। সরকার প্রধান তুচ্ছ ঘটনায় মামলা করার জন্য নারীদের উষ্কে দেবে। তিলকে তাল বানিয়ে মামলা হবে হালিকে হালি। আইনমন্ত্রীও আইনকে বুঝতে চাইবেন না। এদিকে ড. কামাল আইন বুঝাতে এসে, নিজেও বিএনপির সাত দফাকে সমর্থন করবেন।(এর কয়েকটা বিচার বিভাগ অবমাননার সামিল)। ওবায়দুল কাদের হঠকারিতা করে বলবেন, "সাত দফার এক দফাও মানা যাবে না"। এসব কি গনতন্ত্র? এসব কি সুস্থ রাজনীতির লক্ষণ?
প্রশ্নফাঁস জেনারেশন তার উত্তর দিক....
আইনের ধারা বিষয়ক তথ্যসূত্রঃ http://www.judiciary.org.bd/law-and-rules
আগ্রহীরা পড়তে পারেন- মাসুদা ভাট্টি - এর বাংলা ব্লগ ।সামু
বি. দ্রঃ ২৬/১০/১৮তারিখে প্রথম আলোতে প্রকাশিত অধ্যাপক আসিফ নজরুলের(ঢাবি) সম্পাদকীয় থেকে কিছু অংশ টাইপ করেছি।(অাইন বিষয়ক লেখাগুলো।)
.
[ফ্লাডিং-এর কারণে পোস্টে মন্তব্য সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছে। ]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৩৩