somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তবে কি স্বাধীনতা বিক্রি করে স্বাধীনতার দায় শোধ দিতে হবে?

০৯ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আওয়ামীলীগের ভারতের তোষন নীতি কবে থেকে এর মূল খুজতে গেলে আপনাকে একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের সাথে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের একটি গোপ্ন চুক্তি হয়। এ ব্যাপারে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের দিল্লী মিশন প্রধান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী মাসুদুল হক কে একটি সাক্ষাতকার দেন যেটি তার “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে র এবং সি আই এ” বিশদ ভাবে সন্নিবেশিত আছে।

শোনা যায় এই চুক্তিতে সই করে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুর্ছা গিয়েছিলেন। চলুন দেখি কি ছিল সেই সাত দফায়ঃ

১। প্রশাষনিক বিষয়ঃ যারা সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছে তারাই শুধু মাত্র প্রশাসনিক পদে নিয়োজিত থাকতে পারবে। বাকীদের শূন্য জায়গা পূরন করবে ভারতীয় নাগরিক বৃন্দ।

২।সামরিক বিষয়ঃ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করবে। ১৯৭২ সনের নভেম্বর মাস থেকে প্রতি বছর এ সম্পর্ক পুনরীক্ষনের জন্য দু দেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্টিত হবে।

৩। সামরিক বাহিনীঃ বাংলাদেশের নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী থাকবে না। অভ্যান্তরীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মুক্তিবাহিনীকে কেন্দ্র করে একটি প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠিত হবে। (রক্ষী বাহিনী নামে পরে যেটা তৈরী হয়)

৪। ভারত-পাকিস্তান সর্বাত্মক যুদ্ধ বিষয়কঃ সম্ভাব্য ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে অধিনায়কত্ব দেবে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান। এবং যুদ্ধ চলাকালীন সময় মুক্তি বাহিনী ভারতীয় বাহিনীর অধীন থাকবে।

৫। বানিজ্য বিষয়কঃ খোলা বাজার ভিত্তিতে চলবে দু দেশের বানিজ্য তবে বানিজ্যর হিসাব নিকাষ হবে বছর ওয়ারী এবং যার যা প্রাপ্য সেটা পরিশোধ করা হবে ষ্টার্লিং পাউন্ডে।

৬। পররাষ্ট্র বিষয়কঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রশ্নে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে আর যতদুর পারে ভারত এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে।

৭। প্রতিরক্ষা বিষয়কঃ বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ক দায়িত্ব গ্রহন করবে ভারত।


এই ছিল সাত দফা চুক্তি, আমি এই চুক্তি নিয়ে কোন মন্তব্য করলাম না আপনাদের কাছ থেকে মন্তব্য আশা করি।

“সম্ভাব্য ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে অধিনায়কত্ব দেবে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান। এবং যুদ্ধ চলাকালীন সময় মুক্তি বাহিনী ভারতীয় বাহিনীর অধীন থাকবে” এই অনুচ্ছেদের কথা মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে জানানো হলে তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর প্রতিবাদে তিনি রেসকোর্সে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান বয়কট করেন।

পরবর্তী কালে এই সাতটি চুক্তি সামান্য পরিমার্জন করে ১৯৭২ সালের ১৯শে মার্চ বঙ্গভবনে বিশাল মহাসমারোহে ২৫ সালা “বন্ধুত্ব সহযোগিতা ও শান্তি চুক্তি” নামে স্বাক্ষতিত হয় ইন্দিরা ও শেখ মুজিবের মধ্যে। ততকালীন বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ইহাকে “দাসত্ব” চুক্তি নামে আখ্যায়িত করে।

ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত হতে বিশ মাইলের মধ্যে অবস্থিত এলাকায় অবাধ বানিজ্য প্রচলনের মানসে ২৭শে মার্চ ১৯৭২ সালে সীমান্ত অবাধ বানিজ্য চুক্তি সম্পাদন মুজিব সরকারের আর একটি বিরাট কলঙ্কময় অধ্যায়।

আরো ন্যাক্কার জনক অধ্যায় সূচিত হয় ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে দীল্লী শীর্ষ সন্মেলনে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ বেরুবাড়ী ইন্দিরার পদ যুগলে নৈবদ্য হিসাবে সমর্পন।

উপরোক্ত চুক্তির আওয়ামী প্রতিবাদ স্বরূপ হয়ত আওয়ামী লীগ প্রশ্ন তুলতে পারে কই স্বাধীনতার পরতো ভারতীয় সেনাবাহিনী এই দেশে থাকেনি, বঙ্গবন্ধু তাদের ফেরত পাঠিয়েছে, তাদের অবগতির জন্য সামান্য কিছু তথ্যঃ

১। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব জ়ে এন দীক্ষিত ৪-৭-৯৫ সালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় তার লিখিত নিবন্ধ্যে প্রকাশ করে যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব চেয়েছিলেন যেন আরো এক বছর ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করে কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক প্রতি ক্রিয়ার আশংকায় এই প্রস্তাব মেনে নেন নি।

২। লেঃ জেনারেল জগজিত সিং আরোরা এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে নিখিল চক্রবর্তীর এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন “ভারতীয় বাহিনীর ইষ্টার্ন হেডকোয়ার্টার ছিল কোলকাতায়, ঢাকা অভিমুখে মার্চ করার আগে আমরা ভাবলাম ঢাকায় কতদিন থাকব? আমি ঢাকায় আমাদের অবস্থান নির্ধারন করলাম সর্বোচ্চ তিন মাস, এটা এই জন্যই ঠিক করলাম এর বেশী থাকলে আমরা আর লিবারেশন আর্মি হিসাবে অভিনন্দিত হব না পরিচিত হব অকুপেশনাল আর্মি হিসাবে ( দৈনিক ইনকিলাব ১২-৩-৯৪)

উপরোক্ত আলোচনায় পরিস্কার প্রতীয়মান হয় ভারতীয় বাহিনী নিজের গরজেই ভারতে ফিরে যায় কারো নির্দেশে না।

আওয়ামীলীগের এই রাজনৈতিক কালচারের পরম্পরায়, ফারাক্কা বাদ দেয়া হল যে কারনে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ মরুভূমি।

সীমান্তে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০০০ মানুষ মারা যায় অথচ এই আওয়ামী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন সীমান্তে নাকি বিএসএফ শুধু চোরাচালানীদেরই হত্যা করে।

নিকট অতীতে চাকমা বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষন দিয়ে তাদের অস্ত্র সরবারহ করে এই ভারত আমাদের দেশে অস্থিতিশীলতা চালাচ্ছিল এখনো বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের নামে সুযোগ বুজে পায়তাড়া চালায়।

আসলে আওয়ামীলীগ দের মতে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত ই যত নষ্টের গোড়া এই সীমান্ত না থাকলে এত মানুষ মারা যেত না, সীমান্ত না থাকলে কোন করিডোর এর প্রয়োজন হত না, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যাবহারের জন্য কোন দেন দরবার করতে হতনা। ভারতের ক্রমবর্ধমান জ্বালানী চাহিদার কিছুটা তাদের ভাষায় এপার বাংলার গ্যাস ও কয়লার সাহায্যে মেটানো যেত, ত্রিদেশীয় গ্যাস পাইপ লাইন দ্বিদেশীয় পাইপ লাইন হত, আমাদের অর্থমন্ত্রীতো ইন্ডিয়ায় যেয়ে পরিস্কার বলেছে দুই দেশে অভিন্ন মুদ্রা রুপি চালু হোক।

এত ঝামেলা আর ভাল লাগে না সে ক্ষেত্রে সীমান্ত উঠীয়ে দেয়া হোক আনুষ্ঠানিক ভাবেই আমরা ভারতের করদ রাজ্য পরিনত হই।

আর কতটুকু হলে আমরা ভারতীয় হব?

নারায়নগঞ্জের কনটেইনার টারমিনাল টেন্ডার হয় ভারতে যেটা আমাদের কোন মন্ত্রনালয় জানে না।মেগালয়ে যে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র হবার কথা সেটা পরিবেশগত বিবেচনা করে ভারতে না করে বাংলাদেশের রামপালে করা হচ্ছে কেন?

এই কেন গুলোর জবাব কিন্তু আপনাকেই দিতে হবে নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে। পাকিস্তান থেকে থেকে আমরা আলাদা হয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম একটি জাতি হিসাবে বেচে থাকার জন্য আওয়ামী দালালীতে কি আমরা আবার ভারতীয় করদ রাজ্যে পরিনত হব?

তবে কি স্বাধীনতা বিক্রি করে স্বাধীনতার দায় শোধ দিতে হবে?

১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×