কিছুদিন আগে আমার প্রিয় এক ব্লগার এই নামে এক পোষ্ট দিয়ে সবাই সচেতন করার প্রয়াস নিয়েছে। ভাল উদ্দ্যেগ। আমি ও অনার সাথে একমত। উনি আসলে ওনার লেখনীতে যে ভাবে হেফাযতের নাম তুলে এনেছে তাতে গা শিউরে ওঠার মতই। সব ই ঠিক আছে কিন্তু যে ব্যাপারটা জনাব লিসানী খুব চাতুরতার সহিত এড়িয়ে গেছে সেটা হল মসজিদ আক্রমন, শহীদ মিনার ভাঙ্গচুর এগুলো কিন্তু জামাতের পাশাপাশি আওয়ামীলীগ ও করে। কই নিরপেক্ষতার আওয়াজ তুলে কেন জনাব লিসানী একবারো আওয়ামীলীগের দিকে আঙ্গুল তুললনা?
কেন জনাব লিসানী? যে কাজে হেফাযত কে আপনি ধুয়ে দিলেন সেই বা তার থেকে বেশী দায়ী হয়ে আওয়ামীলীগ আপানার চোখে ধোয়া তুলসীপাতা?
জনাব লিসানী আপনি আপনার লেখার দ্বিতীয়ভাগে ওই একই অভিযোগ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এনেছেন যেটা আপনি আপনার প্রথম ভাগে করেছেন। অথচ আপনি কিন্তু একবার ও বললেন না এই সরকারের আমলে তার আজ্ঞাবাহী পুলিশ কিভাবে পাখির মত গুলি করে মানুষ মেরেছে। আপনি বলেছেন হেফাযত বোমা মেরে আহত করেছে অথচ আওয়ামীলীগ যে ১৭১জন কে মেরে ফেলল তখন কোথায় ছিল আপনার এই জ্বালাময়ী লেখনী
তৃতীয় ভাগে আপনি দেখাতে চাইলেন ইতি সাধারন কওমী মুসলিম জনসাধারন না বুজে জামাত কে রক্ষা করেছে, কিন্তু তাদের ধর্মের নামে উস্কিয়ে দিল কারা? কারা নাস্তিকতা কে সামনে এনে দিল? সেই আওয়ামীলীগ। যারা নিজেদের দলের রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের বাচানোর জন্য আস্তিক নাস্তিক ইস্যু তৈরী করে এদেশের সাধারন ধর্মপ্রান মানুষগুলোকে বন্ধুকের মুখে ঠেলে দিল।
এরপরের অংশে যেয়ে আপনি বিরাট করে ইনিয়ে বিনিয়ে তালেবানদের কাহিনী নিয়ে আসলেন। বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানের ভৌগলিক অবস্থান যে একনা সেটা আপনাকে তো আর আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুজিয়ে দিতে হবে না। আর তালেবান তৈরী হবার জন্য ভৌগলিক আর রাজনৈতিক অবস্থান একটি বড় ব্যাপার সেটি আপনি অত্যন্ত সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন। একেই বলে জ্ঞানপাপী।
আপনি বিরাট বিরাট প্যারায় আফগানিস্তানে মাদ্রাসায় যে ট্যাঙ্ক আর মেসিনগানের ছবি আঁকা থাকে তাদিয়ে কি বুজাতে চেয়েছেন? কোনখানে বাংলা এই বর্তমান পরিস্থিতে আফগানিস্তানের সাথে সম্পর্ক আছে? হেফাযতে ইসলাম তাদের একদিনের শান্তিপূর্ন দাবী আদায়ের কর্মসূচী দিয়ে তাদের জায়গায় ফেরত গেছে? যেটা এমনি আওয়ামীলীগ ও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।
আপনার পুরা লেখনীই বর্তমান সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে একটি কাল্পনিক তালেবান ভীতি জাগিয়ে তোলার প্রয়াস। আচ্ছা তাও না হয় মেনে নিলাম। হেজাযত বাংলাদেশকে তালেবান বানাবে সেক্ষেত্রে এই তালেবান ইস্যুকে কারা সুকৌশলে সামনে নিয়ে আসল তাদের নিয়ে আপনার এক লাইন ও নেই। কেন?
শুনুন জনাব লেসানী আপনি ধর্ম নিয়ে সুন্দর সুন্দর বিশ্লেষন দেন। ভাল লাগে। কিন্তু আপনার রাজনৈতিক মতাদর্শ যদি এই ধর্মের লেবাসে হালাল করতে চান তাহলে কি ভাবে হবে?
প্রাক কথন
এখন শুধু বাংলাদেশ না, সারা দুনিয়ার মানুষের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। পশ্চিমা ষ্ট্যান্ডার্ডে ওদেশের মানুষ আমাদের মত সাব ষ্ট্যান্ডার্ডের মানুষদের নিয়ে চিন্তা করে না। কিন্তু ওদেশের রাজনৈতিক নেতারা সরকার প্রধানরা কিন্তু ঠিকই খেয়াল রাখে। কারন একটা প্রায় ব্যার্থ রাষ্ট্র হওয়ার পরও শুধু মাত্র বিশাল জনগোষ্ঠীর কারনে এরা আমাদের নজরে রাখতে বাধ্য। গত কয়েকদিনের ঘটনাগুলো কিছু পর্যালোচনা করি দেখবেন সামনে কি হবে হচ্ছে খুব সহজ়ে তার হিসাব নিতে পারবেন।
শাহবাগ ডেড হর্স
শাহবাগের মধু কাজে লাগাতে ব্যার্থ এই সরকারের একটি মারাত্মক ভূল চাল ছিল। দেশের ৮০% মানুষ যখন শাহবাগে একাত্তা ঘোষনা করল হাসিনা সরকার ছাগল দিয়ে হালচাষ করতে চাইল। দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু নামে অভিহিত ডাঃ ইমরান তার তাইজুদ্দীন আহমেদ, কামরুল ইসলাম, নজরুল ইসলামদের নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীর সাথে বেঈমানী করে আওয়ামীলীগের দালাল সেজে সারা দেশের মানুষের অনুভূতি নিয়ে রাজাকারী করল।
প্রধানমন্ত্রী কি করল?
শাহবাগের মধুটা একবারে গিলতে যেয়ে গলায় বিষম লাগিয়ে ফেলল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী নিয়ে যে আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনা যে কখনই আন্তরিক ছিল না এটা খুব সহজ়ে প্রতীয়মান। যুদ্ধাপরাধী ইস্যু নিয়ে তারা আর একবার নির্বাচনী বৈতরনী পার হবার স্বপ্ন দেখছিলো। যদি আন্তরিক থাকত, তাহলে ক্ষমতার সিংহাসন একক নিরাংকুশ করতে ত্তত্বাবধায়ক ইস্যুর মত যতটা তৎপর ছিল তার যদি ২০ ভাগের একভাগ ও এই যুদ্ধাপরাধী বিচারে আন্তরিক হোত তাহলে অনেক আগেই এই ইস্যু শেষ হয়ে যায়। রাজীব দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহীদ ঘোষনা করে এদেশের সাধারন মানুষের আবেগে প্রচন্ড আঘাত করে।
তাতেই বা কি হল?
হয়েছে, অনেক কিছু হয়েছে তারমধ্যে অন্যতম এদেশের ধর্মপ্রান আপামার জনসাধারনকে আওয়ামীলীগ নিজেদের মুখোমুখী দাড় করিয়ে দেয়। যে শাহবাগের আবেগ কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনা পাশার ছক উল্টে ফেলে দিচ্ছিল, সেই শেখ হাসিনা পরিস্কার ভাবে শাহবাগের বোজা ঝেড়ে ফেলে দিতে একবিন্দু দ্বিধা করেনি। শেখ হাসিনাই আবার বলে রাজনীতিতে আবেগের কোন স্থান নেই।
আবেগই কাজে দেয়
যে জামাতের নেতারা জানের ভয়ে ভীত মুরগীর ছানার মত দৌড়াচ্ছিল। ধর্মপ্রান মানুষদের আবেগ কাজে লাগিয়ে সেই জামাত এখন বিপুল বিক্রমে ঘুরে দাড়িয়েছে আপনাদের ভাষ্য মতে হেফাযতে ইসলামের ছদ্মবেশে জামাত এসে আন্দোলন পরিচালনা করছে। আচ্ছা আপনাদের বক্তব্যই সঠিক বলে ধরে নেই হেফাযতে ইসলাম জামাতের বি টীম। এই কথার প্রমান স্বরূপ আপনারা আল্লামা শাফী সাহেবের নামে রাজাকারের প্রমান আনলেন।
এক নজরে এই সরকারের আমলে কারা রাজাকার
আল্লামা শাফী সাহেব রাজাকার = অথচ সবাই জানে এদের বেশীর ভাগ নীতিই জামাতের বিপরীত।
ডঃ ইউনুস রাজাকার = কারন সে প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন।
ডঃ কামাল রাজাকার = কারন সে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করেছিল।
কাদের সিদ্দীকী রাজকার = কারন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মারা যাবার পর প্রতিবাদ স্বরূপ সেই এক মাত্র ব্যাক্তি যে কিনা হাতে অস্ত্র নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। এখন কার স্বঘোষীত মুক্তিযোদ্ধাদের মত খন্দকার মুস্তাক সরকারে যোগ দেয়নি।
টুপি পাঞ্জাবী পরিহিত মানুষ মাত্রই রাজাকার = অথচ ভূলে যাই এই টুপি পাঞ্জাবী আমাদের ঐতিহ্যগত ইসলামিক লেবাস।
রাজাকার কথাটি এই আওয়ামীলীগ সরকার এত খেলোভাবে ব্যবহার করছে যে, আজকে রাজাকার কথাটা উচ্চারন করলে আর সেই ঘৃনিত আবেদন তৈরী করতে পারে না।
কি ভাবে করবে? আওয়ামী ভাষ্যমতে আজকে দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষ রাজাকার।
এখন এই সব রাজাকার বাইরে কেন?
এই যে পাচকোটি রাজাকারের হিসাব দিলাম এরা বাইরে কেন? এদেরকে কেন ধরা হচ্ছে না? আল্লামা শাফী সাহেব যদি রাজাকারই হোন তাহলে এতদিন কিছু শুনলাম না কেন? যাক তারপরো বিশ্বাস করলাম আল্লামা শাফী রাজাকার। আওয়মীলীগের দাবী অনুযায়ী আমরাও আল্লামা শাফীকে গ্রেফতারের দাবী জানাই।
আওয়ামীলীগ ভাল করেই জানে, আল্লামা শাফীর ধারে কাছে যেতে পারবে না। কারন আল্লামা শাফী রাজাকার না।
দেশে আজ অরাজকতা চলছে।
সারা দেশ কে আজকে জামাত শিবির আর রাজাকার রাজাকার খেলায় ফেলে আওয়ামীলীগ মেতেছে এক নষ্ট রাজনীতিতে।
ব্যাঙ্কগুলোতে চলছে আজ হরির লুট।
আওয়ামী নেতাদের পুত্র, কন্যা পরিজনদের আজকে এয়ারপোর্ট পারাতে ব্যাস্ত।
সাগরে ২৭ জেলের লাশ পাওয়া যায় কিন্তু তার কোন ফলোআপ নেই।
এইভাবে আর কতদিন বাংলাদেশ চলবে?