বিকালে ভাবের সহিত বাড়ীর পাশের মাঠে বসিয়া আরামের উত্তর দক্ষিন উপভোগ করিয়া বিড়ি ফুঁকিতেছিলাম।হঠাৎ ছোট ভাইদের দল আসিয়া বলিল “ভাইয়্যা আপনাকে আমাদের দলের হইয়্যা ক্রিকেট খেলিতে হইবে” । আমি অবাত এবং হতবাক হইয়্যাও নিজেকে একটু থমকাইয়্যা মুখের গম্ভীর ভাব আনিয়া বলিলাম “আমিতো খেলিতে পারিব না বাছারা,আমিতো জিন্স পরিয়া আসিয়াছি” ফাহাদ নামক এক ছোট ভাই প্রায় পাঁয়ে পড়িয়া বলিল (আসলে সামনে বসিয়া) “ভাইয়্যা আজ পাশের গলির লগে ৫০০ টাকা দরে ম্যাচ নিছি।আপনি না খেললে মান ইজ্জত পুরাই টালামাটাল হইবো”
আমিযে এহেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি এই জীবনে আর বুঝি নাই।কি আর করা ছোট ভাইদের আবদার রাখিতে গিয়া জিন্সখানা গুটাইয়্যা মাঠে নামিয়া গেলাম।টসে হেরে ফিল্ডিং করতে নামিয়া নিজে ইচ্ছা শর্টে দাড়াইয়্যা গেলাম।কিন্তু অধিনায়ক আসিয়া বলিল “ভাইয়্যা আপনি বাউন্ডারিতে যান,ওইখানে আপনার দরকার বেশী”।এবার গর্বে বুক কত ইঞ্চি ফুলিল মাপি নাই,তবে ফুলিয়াছে এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।গেলাম শর্ট কাভারের বাউন্ডারিতে।বাউন্ডারিতে দাড়াইয়্যা তীব্র তালি বাজাইতেছি।মনে মনে এক ওভার বল করার ইচ্ছাও পোষন করিতেছি।কিন্তু এক ওভার যায় দুই ওভার যায় আমারে বল করিবার কথা কেহ কহে না।মাঝে মাঝে হাত ঘুরিয়া বল আসিলে অন্যকে বল দিবার সময় বোলিং করিয়া বল দিয়া অধিনায়কের দৃষ্টি আকর্ষন করি।কিন্তু ওই ব্যাটা বোধহয় জীবনেও কচুর শাক খায়নি,তাই আমার স্টাইলিশ বোলিং চোখে পড়িল না।আফসোসের শ্বাস জোরে টানিয়া হাত তালির পাশাপাশি “গুড বোলিং,গুড ফিল্ডিং বলিয়া চিল্লাইতে লাগিলাম”।আমি নিশ্চিত এমন উৎসাহ পাইলে স্বয়ং পেলেও ৯০ মাইল গতিতে বল করিত !কিন্তু আফসোস বোলার বা অধিনায়ক কারো কোন হুশ হইতেছে না।১০ ওভারের খেলায় ১০ ওভার শেষ।কি আজগুবি বিষয় পুরো ম্যাচে আমার কাছে কোন বলই আসে নাই।
প্রথম ইনিংস শেষে দলের ড্রেসিংরুমে (মাঠের এক কোনায়) বিরিতে অগ্নুৎপাত করিতে করিতে কহিলাম “আমার মত ফিল্ডার যদি মাঠের প্রতিটি কোণায় কোণায় থাকিত তবে স্বয়ং শচীনেরও স্বাধ্য নাই বাউন্ডারি মারে।মারিবে কি আমার ভয়েতো ওই দিকে বলও আসে না !” আমার কথা শুনিয়া ছোট ভাইদের দলে মুখ চাপিয়া হাসির শব্দ আমার দৃষ্টি এড়ায়নি।ছোট বেলায় মা নাকি আমার অগোচরে আমারে বেশী করিয়া কচু শাক এবং সবুজ সবজি খাওয়াইয়্যা দিছে।যাহাই হোক এইবার ব্যাটিং করিবার পালা।ভাবিয়াছিলাম আমাকে কেউ একজন বলিবে “ভাই যান দলকে জিতাইয়্যা আসেন”।কিন্তু কেহ বলিল না।দুইজন ব্যাট করিতে নামিয়া গেল।এদিকে ড্রেসিং রুমে আমি আষাঢের গল্প ফাঁদিলাম।পুরো দলকে শুনাইয়্যা দিলাম আমার অতীত ব্যাটিং ইতিহাস।৩০ বলে অর্ধশতক,১০ বলে ৩০,৩ বলে ১৮সহ সবরকম গল্প শুনাইলাম।চাহিদা একটাই এরপর আমারে ব্যাটিংয়ে নামাও।কিন্তু না দুই উইকেট পতনের পরেও কেহ বলিল না “ভাই যান দলের হাল ধরেন”।ভাবিলাম বলদের হাল ধরার দায়িত্ব খারাপ নহে।কোন মতেই কিছুই হইতেছে না।৫ উইকেটের পতনের পর আর টিকিতে পারিলাম না।বাড়তি ব্যাটখানা হাতে লইয়্যা ছায়া অনুশীলন করিতে লাগিলাম।নানা রকম দৃষ্টি নন্দন শর্টের অভিনয় করিতে লাগিলাম।কিন্তু কিছুতেই কিছুই হইলো না।বুঝিলাম মূর্খদলের কাছে জ্ঞানীর কোন মূল্য নাই।১০ ওভারে টার্গেট ছিল ৭৩ রান।নবম উইকেটের পতন ঘটিল।আমি বেশ ভাব মারিয়া বসিয়া রহিলাম।কে একজন আসিয়া বলিল “ভাইয়্যা আপনিই শেষ ভরসা,১ ওভার তিন বল আছে রান দরকা ১৩।যান জিতাইয়্যা আসেন” মনে মনে বলিলাম সেইতো তোরা সোনা চিনিলি তবে কিঞ্চিত দেরীতে ।সেইটা ব্যাপার না শেষ পর্যন্ত তোরা সোনা বুঝেছিস সেইটাই বড় কথা।
ক্রিজে গিয়ে স্ট্যাম্প গার্ড লইলাম।মাঠে ফিল্ডার গুনিয়া লইলাম এবং তাহাদের অবস্থান দেখিয়া লইলাম।বোলার আম্পায়রকে অতিক্রম করিয়া বল করিল,ব্যাটটি আড়াআড়ি করে ঘুরাইয়্যা আলতো করে বলে লাগাইয়্যা দিলাম।এক রান।খুশীতে ব্যাট তুলিতে ইচ্ছা হইল।কিন্তু তুলিলাম না।জিতাইয়্যা তুলিব।
শেষ ওভার।স্ট্রাইকে আমি।রান দরকার ছয়খানা।ইহা আমার জন্য কোন ঘটনাই না।অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলটারে শেবাগের মত করিয়া স্কয়ার কাট করিতে চাহিলাম।শালার বল এমনভাবে ব্যাটে লাগিল সোজা পয়েন্টের বখাটে টাইপের এক ফিল্ডারের কাছে ক্যাচ এবং আমরা হারিয়াছি।ড্রেসিংরুমে ফিরিতে ফিরিতে ব্যাট বগলে লইয়্যা আফসোস করিতেছিলাম "আর কটা বল পাইলে প্রতিভাটারে একেবারে ক্লিয়ার কালো কালির অক্ষরে,সোলাইমানী লিপি ফন্টে প্রকাশ করিতে পারিতাম"
ড্রেসিং রুমের সকলে নাখোশ।তবে আমাকে কেহ ভৎসনা করিতেছে না।ভৎসনা করিতেছে আমার নন স্ট্রাইক এন্ডে থাকা ব্যাটসম্যানকে।ভৎসনাটা এরকম ছিল
-লাষ্ট বলে তোরে দুইরান নিতে কে কইছে? এক রান নিয়া তুই ষ্ট্রাইকে থাকতি।
-ওই বলদটারে খেলায় নিতে কে কইছে?
-আরে ম্যান ছিল না,শালারে দেখলাম মাঠে বইসা আছে তাই নিছি।
কাহাকে নিয়া কথা বলিতেছি ঠিক বুঝিলাম না।তবে নিজের ব্যাটিংয়ে আমি উৎফুল্ল।দুই বল খেলিয়া ১ রান।স্ট্রাইক রেট ৫০।খারাপ কি? বাংলাদেশ টেষ্ট দলে আবেদন করিব কিনা ভাবিতেছি।এসব ভাবিতে ভাবিতে মাঠ ত্যাগ করিবার আগে হঠাৎ করিয়া একটু আগে ছোটভাইতের সংলাপ মাথায় বাড়ি মারিল।মনে হইল “আরে আমারে দলে নিছে কারন ওদের ম্যান কম ছিল? তার মানে আমার প্রতিভা দেখে না? মুহুর্তেই মুখ থেইক্যা সাধু ভাষা চইলা গেছে।হালারা খেলা বুঝে কিচু?
শেষমেষ মনে মনে বলিলাম “নাদান পুলাপাইন দুএক খানা ছক্কা মারিয়া নিজেদের শচীন ভাবিতেছে,আমিতো কোচ টাইপের মানুষ।খেলার চেয়ে জানি বেশী,শিখাই বেশী।তারচে বড় ব্যাপার হইল পুরুষ (ম্যান) নাই বলিয়া আমাকে নিছে।অতএব আমি সামর্থবান পুরুষ (ম্যান)।
এর আগে ফুটবল লইয়্যাও এমন কাহিনী হইয়াছে।কি হইয়াছে দেখুন একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ,ম্যারাডোনা এবং আমি