
এই যে লোকটার কথা লিখছি, লোকটা এখন বিখ্যাত হয়ে গেছে। উনার নাম ও ছবি উল্লেখ করে ডেইলি মেইল, নিউয়র্ক টাইমস এর মত পত্রিকা আর্টিকেল ছেপেছে। নিউজটি পড়লাম তাই শেয়ার করলাম। পত্রিকাটি লিখেছে,
ডা.রায়হান চৌধুরী (৫১) নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে থাকতেন পরিবার পরিজন নিয়ে। কাজ করতেন ব্রুকলিনের ইহুদী মালিকানাধীন মাইমানডিস হাসপাতালে এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে।ডাক্তারি ছাড়াও ক্লিনিক ও ফোন কার্ড কোম্পানির ব্যবসা করে বছরে আয় ছিল কমপক্ষে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
২০০৬ সালে স্ত্রী এবং যথাক্রমে ৮, ৬ ও ২ বছরের তিন সন্তানকে অসহায় অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে ফেলে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসার আগে তিনি গোপনে বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে এবং জমানো সব অর্থ তুলে নিয়েছেন। দেশে ফিরে তিনি বাস করতে থাকেন বিলাসবহুল এপার্টমেন্টে। একটা নতুন বিয়ে করেন এবং নতুন স্ত্রীকে নিয়ে সুখেই কাটাচ্ছিলেন নতুন জীবন।
নিজেদের থাকার কোন জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে ডা.রায়হান চৌধুরী স্ত্রী শারমিন ছোট্ট তিন সন্তানকে নিয়ে ওঠেন একটি আশ্রয়কেন্দ্রে।পরে তার স্ত্রী এ নিয়ে মামলা করেন।

ছবিতে শারমীন ও তার তিন সন্তান
মামলায় উল্লেখ করেন ডা. রায়হান চৌধুরী ৯ লাখ ৭৫ হাজার ডলারে তার বাড়ি বিক্রি করে দেয় এবং অন্যান্য সব জমানো সব অর্থ তুলে নেন ২০০৫ সালের শেষের দিকে। এর পরই পালিয়ে পাড়ি দেন বাংলাদেশে। দেশে ফিরে ঢাকায় একটি বিলাসবহুল বাসায় অবস্থান করতে থাকেন। অন্যদিকে তিনি ব্রুকলিনের বাড়ি বিক্রি করে দেয়ায় ক্রেতার লোকজন সেই বাসা থেকে শারমিনের মেডিকেল ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট ও গহনাসহ যা পেয়েছে তার সবই নিয়ে যায়। তারা শারমিনকে তার সন্তানদের সহ বাসা থেকে বের করে দেয়। এ অবস্থায় শারমিন গৃহহীনের জন্য নির্ধারিত একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই পান। তিনি ছেলেমেয়েদের নিয়ে পড়েন কষ্টের সমুদ্রে। আইনি সহায়তা চান রাষ্ট্রের কাছে। এ খবর আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নজরে যায়। তারা গত ১২ই অক্টোবর কাতার থেকে ডা. রায়হান চৌধুরী ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের এক বিমানবন্দরে অবতরণ করামাত্র আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
তদন্তকারীরা চোখ রাখেন ডাঃ রায়হান চৌধুরীর ওপর। গত ১২ই অক্টোবর কাতার থেকে ডা. রায়হান চৌধুরী ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের এক বিমানবন্দরে অবতরণ করামাত্র আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের লোকজন তার হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও জনসেবা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের টমাস ও’ডোনেল জানান,দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস কে আমরা আগেই খবর পেয়েছিলাম ডাঃ রায়হান আসছেন। ফলে তিনি বিমান থেকে নামার পরই আমরা তাকে আটক করি। এ সময় তিনি ছিলেন শান্ত। ভাবখানা এমন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন এসেছেন।

ডাঃ রায়হান চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে ফেলে আসার পর শারমিন অনন্যোপায় হয়ে বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন। এ আবেদনের শুনানিসহ কার্যক্রম এগিয়ে চলতে থাকে। এমন সময় রায়হান জানিয়ে দেন এরই মধ্যে তিনি শারমিনকে তালাক দিয়েছেন এবং নতুন বিয়ে করেছেন। শারমিনের আইনজীবী লরেন্স গ্রিনবার্গ বলেন, এমন দাবি করে রায়হান ঢাকার একটি বিলাসবহুল এপার্টমেন্টে বাস করতে থাকেন তার নতুন স্ত্রীকে নিয়ে।
ওদিকে শারমিন একজন চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ পেয়ে যান। বিয়ের আগে তিনি ছিলেন গাইনি বিশেষজ্ঞ। বিয়ে করে সেই ক্যারিয়ারে ইতি ঘটান। ততদিনে তিনি একটি এপার্টমেন্টের মালিক হন। এখন তার সন্তানরা পড়াশোনা করছে। তাদের ভরণপোষণের জন্য মাসে ৯৬৮০ ডলার দিতে অস্বীকৃতি জানান রায়হান, যদিও তার বছরে আয় ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার। তিনি ব্রুকলিনে মেইমোনাইডস মেডিকেল সেন্টারে এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্লিনিক ও ফোন কার্ড কোম্পানির ব্যবসা ছিল তার।
গত বছর বিচারক শারমিনের তালাকের আবেদন গ্রহণ করেন। এ সময় বিচারক তাদের সম্পত্তি অর্ধেক-অর্ধেক ভাগাভাগি করে নিতে রায় দেন। এ রায় কার্যকর হলে শারমিনের পাওয়ার কথা ১০ লাখ ডলার। গত ১৫ই অক্টোবর ডাঃ রায়হানের বিরুদ্ধে শুনানি হয়। তখন বিচারক ৫ লাখ ডলারে তাকে জামিনে মুক্তি দেন। কিন্তু তিনি ওই পরিমাণ অর্থ নিয়ে যেতে পারেননি বলে তাকে আলেকজান্দ্রিয়ায় কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য ব্রিটেনের দ্যা মেইল এবং দ্যা নিউইয়র্ক টাইমসের সুবাধে ডাঃ রায়হান চৌধুরী এখন আমেরিকা সহ সারা বিশ্বের অন্যতম ঘৃণিত পিতার স্বীকৃতি পেয়েছে।
সুত্র: দ্যা ডেইলি মেইল