বাংলাদেশের নাফিজ কেন এই এই কাজ করতে গেল? আর কে কে আছে নাফিজের পেছনে? পরবর্তিতে কোনো বাংলাদেশী ষ্টুডেন্ট ভিসার জন্য দাড়ালে আমেরিকা ভিসা দেবে কি? এর পরিণতি কি? এই এক নাফিসকে ঘিয়ে সকলের এই প্রশ্ন এবং তীব্র ঘৃনা আর ক্ষোভ এখন ঘুড়পাক খাচ্ছে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে। আসলে এই সব কিছুর মূলে আর কিছু বা অন্য কেউ?
এফবিআই এজেন্ট, নিউইয়র্ক পুলিশ সূত্র এবং নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে জানা যায়, ফেসবুকে মার্কিন বিদ্বেষী স্ট্যাটাস লিখে প্রথমে এফবিআইয়ের নজরে পড়েন নাফিজ। ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি আল-কায়েদার নেটওয়ার্কে কথা চালাচালি করতেন। এ কর্মকান্ড টের পেয়ে নাফিজের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে উদ্যোগী হন এফবিআই এজেন্ট। জানা যায়, দুইজন বাংলা ভাষাভাষী এফবিআই এজেন্ট নাফিজের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। এরপর জুলাই মাসে নাফিজ একজন এফবিআই এজেন্টের সঙ্গে ম্যানহাটানের সেন্ট্রাল পার্কে প্রথম দেখা করেন। এরপর কুইন্সের একটি হোটেলে তাদের ফের বৈঠক হয়। নাফিজ যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের হামলা করার কথা প্রকাশ করেন। তার কথা রেকর্ড হতে থাকে। নাফিজ ঐ বন্ধুর (এফবিআই এজেন্ট) কাছে প্রথমে আত্মঘাতী হামলাকারী হিসাবে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক উড়িয়ে দেয়ার কথা বলেন। পরে তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে ঘুরে এসে তিনি এ কাজ করতে চান। ঐ এজেন্ট তাকে জানান, আত্মঘাতী হামলাকারী না হয়ে সেলফোন ডিভাইসের মাধ্যমে বিস্ফোরক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক উড়িয়ে দেয়া যায় এবং এরপর তিনি বাংলাদেশেও ফিরে যেতে পারবেন। বন্ধুবেশী এফবিআই এজেন্টের পরামর্শে এই পথই বেছে নেন নাফিজ। বুধবার সকালে সেলফোন ডিভাইসের মাধ্যমে বিস্ফোরক দিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক উড়িয়ে দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন নাফিজ, মামলার শুনানির পর তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সারাজীবন জেলেই কাটাতে হবে বলে আইনজীবীরা জানান। নাফিজ বাস করতেন নিউইয়র্ক শহরের জ্যামাইকা এলাকায় হিলসাইড এবং ১৭০-৩৩ অবস্থিত একটি বাড়ির দোতালায় থাকতেন। তিনি এ বছরের জানুয়ারি মাসে স্টুডেন্ট ভিসায় নিউইয়র্কে লেখাপড়া করতে আসেন জানুয়ারীতে ২০১২।
নিউইয়র্ক পুলিশ বলছে, নাফিস আসলে এফবিআইয়ের পাতা ফাঁদে পা দেন। তার ওপর নজর রাখা হচ্ছিল গত জুলাই থেকেই। ভ্যানটি চালিয়ে আসার সময় যে লোকটি তার পাশে ছিলেন, তিনি আসলে এফবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা—যাকে নাফিস চিনতে পারেননি।
ব্রুকলিন ফেডারেল কোর্টে নাফিসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শিক্ষা ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসেন নাফিস। এ যুবক সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য বিশ্বস্ত লোক খোঁজা শুরু করার পর গত জুলাইয়ে এফবিআইয়ের নজরে পড়েন। এফবিআইয়ের কৌঁসুলিরা বলছেন, নাফিস যোগাযোগ করেছিলেন এমনই একজনের সঙ্গে, যে এফবিআইর সোর্স হিসেবে কাজ করে এবং তাদের তথ্য সরবরাহ করে। এরপর থেকে তাকে পর্যবক্ষেণে রাখা হয় এবং ছদ্মপরিচয়ে এফবিআইয়ের একজন এজেন্ট বোমা বিক্রির নাম করে তার কাছে একেকটি পঞ্চাশ পাউন্ড ওজনের কুড়িটি ব্যাগ বিক্রি করে—যেগুলোতে আসলে বোমাসদৃশ কিছু বস্তু ছিল, কোনো বিস্ফোরক ছিল না।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নাফিস এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তছনছ হয়ে যায়। প্রথমে তিনি চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করতে। এরপর তিনি রিজার্ভ ব্যাংক, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাল্টিমোরে সেনাবাহিনীর স্থাপনায় বোমা হামলার পরিকল্পনা করেন। তার এ পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে সহযোগী সেজে এফবিআই কর্মকর্তারাই তাকে ২০ ব্যাগ ‘নকল’ বিস্ফোরক সরবরাহ করেন—যাতে তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা যায়।
আলজাজিরা বলছে, আল কায়দার হয়ে নাফিস তার জীবন উত্সর্গ করতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে তিনি যা করছেন তা আল কায়দার হয়েই করছেন এবং আত্মঘাতী হামলার আগে তিনি তার পরিবারের সবাইকে শেষ বারের মতো দেখতে চেয়েছিলেন।
নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, যাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ঝুঁকি বলে মনে করা হয় তাদের তুলে ধরতে কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা সর্বশেষ মডেল অনুসরণ করেছেন। এক্ষেত্রে এফবিআইয়ের এজেন্ট ও ইনফরমার এ ধরনের অপারেশন চালাতে নাফিসকে উত্সাহিত করেছেন, তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন, অর্থ দিয়েছেন, এমনকি হামলা চালাতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পর্যন্ত সরবরাহ করেছেন। এ বিষয়টি এখন আদালত দেখবে। তবে তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা হচ্ছে এখন। সমালোচকরা মনে করছেন উপযুক্ত সরকারি সহায়তা ছাড়া এমন একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারত না নাফিস।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কারণে সাংবাদিকদের জানান, এ হামলা পরিকল্পনা ও গ্রেফতারের বিষয়টি এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে অবহিত করা হয়েছে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে মোমেন জানান, নাফিস নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকায় বসবাস করতেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। এদিকে নাফিসের গ্রেফতারের ঘটনায় নতুন করে অস্বস্তিতে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীরা। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বাংলাদেশী-আমেরিকানদেরও নানা ধরনের ধকল পোহাতে হয়। এরপর জর্জিয়ায় দুটি সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রের ঘটনায় আদালতে দোষীসাব্যস্ত হয়ে কারাগারে যান এহসানুল ইসলাম সাদেকী ও মোশারফ হোসেন নামের দুই বাংলাদেশী। বুধবার ম্যানহাটানে নাফিস গ্রেফতার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে এটিই সবচেয়ে আলোচিত খবর হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উঠে আসায় নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে।
সুত্র: লিঙ্ক
@সুলতান মির্জা ।