পৃথিবীর ইতিহাসে মনে হয় বাঙালিরা কেবল একমাত্র আবালের জাতি। কেন বললাম ? অতি সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র মন্দির ও তাদের বসতিতে ইতিহাসের অন্যতম ঘৃন্যতম হামলার ঘটনা ঘটেছে। কে করেছে ? বা কারা করে থাকতে পারে ? এই বিষয় তা খুব স্পষ্ট। কেন স্পষ্ট ? আমরা বিভিন্ন সুত্র ধরে যা জানতে পেরেছি তা হলো, রামুর গঠনাটি ধর্মান্ধতার কল্যাণে ঘটেছে। আর আমরা সকলেই জানি ধর্মান্ধতা বা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সাথে প্রতক্ষ ও পরোক্ষ কে বা কারা জড়িত। কারা ইতিমধ্যে ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে এই দেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দিয়েছিল। কারা তাদের মা বোনদের ইজ্জত কেড়ে নিয়েছে। কাদের জন্য পূর্ণিমার মত মেয়েদের আত্তহননের পথ বেছে নিতে হয়েছিল। কারা কিছু দিন পূর্বে সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিন্দুদের উপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরিচালনা করার জন্য ইন্ধন যুগিয়েছিল। কারা ফটিকছরিতে মসজিদে নিজেরা ঝগড়া বাধিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর চড়াও হয়েছিল। দেখুন এত কিছু হচ্ছে বা হয়েছে এর মূলে কিন্তু ঘুরে ফিরে শুধু একটি রাজনৈতিক দলের নাম আসে। কারা তারা ? তারা হলো জামাত।
একটু পিছনের কথা বলতে হয়, বিএনপি নেত্রীত্তাধীন গত ২০০১ টু ২০০৬ শাসনামলের কিছু কথা। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে সারা দেশে সংখ্যালঘু দের উপর নেমে এসেছিল এক বিভীষিকাময় হামলা। যা লোকের মুখে শুনেছিলাম, যে একাত্তরে পাকি বাহিনীর লোকেরা এই রকম জুলুম করেছিল। তো সেই চিত্র স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখেছি ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে। তার পর একে ঘটে গেল বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গঠনা, যেমন, সিরিজ বোমার সিরিজ নাটক, বাংলা ভাইয়ের মত কুখ্যাত কুলাঙ্গারের উত্থান পদ চারনা, যে দিনের বেলায় মানুষ মেরে গাছের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখতো। ছিল নিষিদ্ধ সংগঠন হরকতুল জিহাদের প্রকাশ্য কার্যক্রম, জেএমবির মত পয়দাসিল একটি কুখ্যাত রাজনৈতিক সংগঠনের উত্থান। এত কিছুর পরে যখন সরকার পরিচালনায় খালেদা জিয়া হিমশিম খাচ্ছিলেন, তারপর তিনি শুরু করেছিলেন অপরেশন ক্লিনহার্ট নামের মিশন। মজার বিষয় ছিল তত্কালীন বিরোধী দল কে মোকাবিলা করার জন্য অপরেশন ক্লিনহার্ট এর মত কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
সে সময়কার কথা, তত্কালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী যখন বাংলা ভাই বিষয়ে কথা বলতেন, তখন এই খালেদা জিয়া (তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী) বলেছিলেন, কই আমরা তো কোনও বাংলা ভাই কে চোখে দেখিনা, শুধু তাই নয়, নিজামী ও মুজাহিদ কে দুই পাশে বসিয়ে কোনও এক সাংবাদিক সম্মেলনে খালেদা জিয়া দ্বাবি করেছিলেন বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি, বাংলা ভাইয়ের সাথে আওয়ামীলীগের সম্পর্ক রয়েছে। কথা শুনে তখন খুব আজিব মনে হতো। যে উনি এখন রাষ্টীয় ক্ষমতায় রয়েছেন অথচ বাংলা ভাইয়ের মত একটি কসাই এর জন্ম দিল আওয়ামীলীগ ? দেখুন অবাক কান্ড খালেদা জিয়ার সেই কথা গুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে তত্কালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বের হয়ে এসেছে অনেক জন গুরুত্ত্বপূর্ণ সব তথ্য, যেখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জামাত আর জামাত ইন্ধন দাতা হিসেবে, বিএনপি জড়িত ছিল। যাই হক পাঠক থাক সে কথা,
সেই নেত্রী সেই যত শুধু পরিবর্তন হয়েছে কিছুটা সময়। এখনো উনি আওয়ামীলীগ আতঙ্কে ভুগেছেন উনার প্রাণের প্রিয় জামাতের স্বপ্ন সাদ রক্ষার স্বার্থে। এখন উনি বলছেন আগামীতে উনি যখন ক্ষমতা আসবেন তখন জামাত কে সঙ্গে নিয়ে সংখ্যালঘুদের ক্ষতি বরদাশত করবে না বিএনপি । খালেদা জিয়া একবারের জন্য ও ভাবলেন না, যিনি রাস্ত ক্ষমতায় থেকে ইন্ধন দিয়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নির্যাতন পরিচালিত করেছে তিনি কোন মুখ দিয়ে সংখ্যালঘুদের উপর কোনও হামলা বরদাস করা হবে না বলছেন ? নাকি শুধু মাত্র আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সংখ্যালঘুদের নিয়ে স্টাম্কার্ড খেলার জন্য খালেদা এইসব কথা বলে বেড়াচ্ছেন ?
মোটেই অমুলুক নয় দেখুন আজকের একটি খবর যা ওই রকম কিছুর ইঙ্গিত বহন করে, রামুর বৌদ্ধবিহারে হামলা বিদেশি কূটনীতিকদের তদন্ত প্রতিবেদন দিল বিএনপি বিষয়টা নিয়ে ভাবছি ক্ষমতার জন্য খালেদা জিয়া আর কত নিচে নামতে পারে। বলতে চাই, যে খালেদার ক্ষমতায় উনি এই দেশে ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনার কুল কিনারা বের করতে পারেনি, সেই খালেদা কী করে বিরোধী দলে থেকে ক্ষমতা বিহীন অবস্থায় রামুর গঠনার সঠিক একটি তদন্ত বের করে নিয়ে আসলেন ?
রামুর গঠনার নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে খালেদা জিয়া। জানিনা এই তদন্তের মূল্য কত ? তবে বিশ্বাস করি এই তদন্ত ধর্মান্ধ জামাত-শিবির কে সাথে নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কবচ। যাতে করে আন্তর্জাতিক সম্প্রধায় এর কাছ থেকে জামাত-শিবির একটি বৈধতা পায়। যে বিএনপি নেত্রী বলেছে জামাত-শিবির এর চেয়ে ভাল কোনও রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে নেই।
দেশের কথা চিন্তা করে দেখুন এই তদন্তের মূল্য কী ? আর খালেদার তদন্তের মূল্য গ্রহণযোগ্যতা কত খানি ? আমার মতের বিরোধীরা হয়তো একটু উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারেন, প্লিজ উত্তেজিত হবেন না, ধৈর্য ধরে শুনে যান। যে খালেদা জিয়ার বগলের নিচে রয়েছে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত জংগীবাদী ধর্মীয় রাজনৈতিক দল জামাত, কারণ রাজনৈতিক ভাবে জামাত পাকিস্তান ভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দল, জামাতের হেটকোয়াটার লাহোরে। পাকিস্তানে এখনো ধমীয় উপাসনালয়, গির্জায় প্রকাশ্য দিনের আলোয় নির্বিচারে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালায় এই জামাতীদের পাকিস্তান শাখার কর্মীরা হয় সেখানে এই জামাত নিয়ে খালেদা জিয়া কিসের ভিত্তিতে এত কনফিডেণ্ড হয়ে ভুল তথ্য সমৃদ্ধ তদন্ত প্রকাশ করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার সাহস দেখাচ্ছে ? খালেদা জিয়ার তদন্ত প্রতিবেদন এই মুহূর্তে কতটুকু গ্রহণ যোগ্য হবে ? যে তদন্তে জামাত কে রামুর গঠনার বাহিরে রাখা হয়েছে। কিছু ছাগীয়তাবাদীর মেতকার শুরু হয়ে যাচ্ছে, যে রামুর গঠনার সাথে জামাত-শিবিরের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই, কিন্তু বাস্তবিক হলো রামুর ঘটনায় জামাত-শিবির বার টেন্ডার এর ভূমিকায় অভিনয় করেছে, অর্থযাত ধর্মান্ধ তা কে ঢাল হিসেবে নিয়ে নিজে মাতাল না হয়ে অন্য কে মাতাল করে দিয়েছে। আর এই বিষয়টা কে খালেদা জিয়া নির্ভেজালের সার্টিফিকেট দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছে।
আচ্ছা ঠিক আছে ধরে নিলাম, রামুর গঠনার সাথে সরকারের যোগ সূত্রতা রয়েছে, খালেদার ভাষ্য মতে। কিন্তু খালেদার গত শাসনামলের বাংলা ভাই, জে এম বি, সিরিজ বোমা, ধর্মীয় সহিংসতা বিশেষ করে ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে সংখ্যালঘুদের উপর ইতিহাসের জগণ্যতম হামলা, সংখ্যালঘু নারীদের উপর পৈচাশিক হামলা, ভিবিন্ন মন্দির ও ধর্মীয় উপাসনালয় এর উপর হামলা এইগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন কী কখনো খালেদা জিয়া প্রকাশ করেছে ? আর প্রকাশ করে থাকলেও কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়েছিল ?
ইতিহাস সাক্ষী ওই সময় ও এই খালেদা জিয়া আওয়ামীলীগের উপর হামলার দ্বায়ভার চাপিয়ে দিয়েছে। এখনো চাপিয়ে চলেছে। এর নাম কী রাজনীতি ?
আজকে খালেদার সৈনিকেরা বিচার দিলেন কূটনৈতিকদের কাছে। আজব হইনি কিন্তু প্রশ্ন স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে রামুর গঠনা নিয়ে খালেদা আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি শুরু করে দিয়েছেন।
তাই সরকার কে পরামর্শ দিয়ে বলতে চাই এই বিষয়টি কে আমলে নিয়ে রামুর গঠনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এবং খালেদা জিয়ার চক্রান্ত কে প্রতিহত করুন।
@সুলতান মির্জা ।