somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিশাচর

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




দুঃস্বপ্নের একেকটি রাত কেটে যায়! স্বপ্নদ্রষ্টা তখনো সজাগ । মৃদু তন্দ্রা ঘুমের জগতে নিয়ে যাওয়ার আগেই, রেটিনায় প্রতিফলিত হয় স্নিগ্ধ একফলক রশ্মি । তারপর সূর্যের তেজ বাড়তে থাকলে তার অস্তিত্বে ভাটা পড়ে । এরপর নিশিফুলের সেই মাতোয়ারা সুবাস আর পাওয়া যায়না । দেখা যায়না শুভ্র ফুলের হাল্কা মসৃণ পাপড়ির ক্লিভেজগুলো ।

আমার স্বপ্নগুলো আসলে কিছুটা ফ্যাজমিডের মত । স্বপ্নের আড়ালে লুকিয়ে থাকে একটা জীবন্ত এ্যালার্ম ঘড়ি । খুব ছোটবেলায় যখন জ্বরের প্রকোপে প্রলাপ কতাম, চারপাশের জড়বস্তুগুলোও তখন প্রাণশক্তি ফিরে পেত । ঘরের কোণার উবুজুবু ভাঙ্গা ছাতাটা ডাঁট বের করে শকুনের মত গা ঝাড়া দিত । পট পট শব্দ শুনে আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখতাম অদ্ভুত এক প্রাণী । ভয়ংকররূপে সে আবির্ভূত হতো আমার হেলূসিনেশনের জগতে । মাঝেমধ্যে আবার সবকিছু কেমন উলটপালট লাগত । অনুভূতিটা ব্যক্ত করার মত নয়! তবে অনেকটা গোলকধাঁধার মত । পৃথিবীটা যেন একটা মস্ত জট পাকানো সুতার বল । তার মাথাটা আমি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিনা ।

প্রতিটি রাত শুরু হয় সুখকর অনুভূতি নিয়ে । কল্পজগতের আনাচে কানাচে, অলিতে গলিতে লুকিয়ে থাকা সুর, বোটকা গন্ধ আর নেশা সবই উপভোগ্য । মাঝেমধ্যে সস্তা ব্রোথেলের নতুন পণ্য কিংবা মোড়ের পানশালায় উৎকট পানীয় দুটোকে একই বিশেষণে বাঁধতে ইচ্ছে করে । মাঝেমধ্যে নেশাগ্রস্থ শরীরটাকে ঘুমের চাদরে জড়াতে ইচ্ছে করে । কিন্তু ঘুম আর আসেনা । আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি! চোখটা বন্ধ করে সবকিছু অনুভব করি । আমার নিঃশ্বাস, হৃৎপিণ্ডের মৃদু আলোড়ন, বাতাসের আলতো ছোঁয়া । কখনো দূরের রাস্তায় হাইড্রলিকের কর্কশ শব্দ, ল্যাম্পপোস্টের আশে পাশে ঝিঁঝিঁ পোকার একঘেয়ে গান; সবই অন্যজগতের মনে হয় । সময়ের প্রতিটি মুহূর্তের দৈর্ঘ্য আমাকে নিয়ে যায় এক রহস্যময় জগতে ।
আমি ঘুমাতে চাই । কিন্তু ঘুমবতী ধরা দেয়না । সুখের জায়গায় দুঃখ এসে হানা দেয় ।
অজস্র স্বপ্ন আমার চোখে । চোখের পলক ফেললেই স্বপ্ন কাঠামোগুলি পরিবর্তন হয়ে যায় । দেয়ালে বেড়ে ওঠা ফার্নগুলা শুকিয়ে ঝরে যায় । আমার ভেতরে ওরা বসবাস করে; আমাকেই পরিবর্তন করে । আমি ওদের ল্যাবরেটরির গিনিপিগ । ধীরে ধীরে আমার ভেতর পরিবর্তন আসছে । খুব সুক্ষভাবে । কিন্তু সুস্পষ্টমাত্রা নিয়ে । ক্রমেই আমি একটা অন্য প্রাণীতে রূপান্তর হচ্ছি । জানিনা । কিংবা স্বপ্ন!

অন্ধকার ভালো লাগে আমার! একেবারে নিকষ কালো অন্ধকার নয় । আধোকালো অন্ধকার । সাদা-কালোর একটা অসংলগ্ন মিশ্রণ । এরকম অন্ধকারে কারো সামনে কষ্ট করে মেকি হাসিটা ঝুলিয়ে রাখা লাগেনা । চোখে চোখ রেখে কথা বলাও লাগেনা, কিন্তু দেহভঙ্গি স্পষ্ট বুঝা যায় । এই সুবিধাজনক পয়েন্ট আর কোথায় পাবেন বলুন তো? আমরা প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যাই । দিনের পর দিন বছরের পর বছর । কিন্তু কখনো একঘেয়েমিতে ভুগিনা । একই মুখ, একই চেহারা, একই দৃশ্য বার বার প্রতিফলিত হয় আমাদের লেন্সে । কিন্তু কুশীলবরা নির্বিকার । এ চলমান দৃশ্যে কোন দিক নির্দেশনা লাগেনা, নেই কোন প্রযোজনার প্রয়োজনীয়তা । সেন্সর বোর্ড আর রিহার্সালের কোনো বালাই নেই । সবচেয়ে বড় কথা হল এখানে একেকজন পাকা অভিনেতা কিংবা আভিনেত্রি; কোন দর্শক নেই! কিংবা যারা এক্টর তারাই দর্শক ।

আমিও তাদের মধ্যে একজন । তবে এক্টিংটা আমি বেশ ভালোই পারি মনে হয় । আবার একজন মনযোগী দর্শক হিসেবেও আমার ভূমিকা অনন্য । শুধু ঘাড়ের সংযোগস্থলের ডিস্কটা নড়ে যাবার পর থেকে আমার চারপাশে তাকাতে একটু কষ্ট হয় । পুরো শরীরটাসুদ্ধ ঘুরতে হয় । তারপরও আমার তেমন কোন সমস্যা হয়না । হ্যারোল্ড যদি পারে তাহলে আমি পারবোনা কেন? ও হ্যারোল্ড হচ্ছে আমার প্রিয় চরিত্র! না না বাস্তব দুনিয়ার নয় । বাস্তব দুনিয়ার এই চলচিত্রের ভেতর আরেকটি চলচিত্রে ।
গতকাল রাতে আমি আবার সেই আগের লোকটাকে স্বপ্নে দেখি! এবার সে একটা হাড্ডি কাটার ধারালো চপার নিয়ে আমাকে ধাওয়া করে । তারপর আমার আর কিছুই মনে নেই! লোকটার চেহারাও ভুলে গেছি । শুধু এইটুকু মনে আছে, তার মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি । এই লোকটার অত্যাচারে আমি শান্তিতে ঘুমাতেও পারিনা । স্বপ্ন নাকি সেটাই যেটা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না তাহলে আমারটা তো রীতিমত উচ্চবিত্ত স্বপ্ন, হে হে । নাকি স্বপ্ন সেটা যেটা মানুষ জেগে জেগে দেখে! এরকম একটা স্বপ্নও আমার আছে জানিনা সেটা কবে পূরণ হবে । সেই প্রত্যাশাতেই আমার এই নিশাচর বনে যাওয়া ।
আজকেও বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দেড়টা বেজেছে । বাসায় আমি একাই থাকি । খাওয়া দাওয়া করি বাইরের রেস্টুরেন্টে । তারপর যাই বারে । ঝাঁঝালো তরলের প্রভাবে যখন নিজেকে একটু হালকা মনে হয়, তখন মন চাইলে মাঝেমধ্যে শহরের ধনী ক্লাবগুলোতে একটু ঢুঁ মেরে আসি । সেখানে কোনকিছুরই অভাব পড়েনা । যা চাই তা পাওয়া যায় । কারণ আমার আছে টাকা । তারপরও আমার মনে সুখ নাই ।
কিন্তু আজ এমন এক ঘটনা ঘটেছে । যার কারণে আমার মনে আবার সুখ ফিরে আসতে শুরু করেছে । আমি আজ দেখা পেয়েছি আমার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের! এমন এক জায়গায় এমন এক পরিস্থিতিতে যা আমি কল্পনাও করতে পারিনি । বার থেকে মাতাল অবস্থায় ফেরার পথে আমি দেখতে পাই সেই সাদা গাড়িটা । কিন্তু গাড়ি থেকে লোকটাকে বের হতে দেখেই আমার নেশা ছুটে যায়! বুকের ভেতর অবিরাম হৃদপিণ্ডের হাতুড়ী পেটার শব্দ শুনতে পাই । গাড়িটা পার্ক করা ছিল একটা হসপিটালের সামনে । প্রৌড় লোকটি গাড়িতে উঠে পড়তেই সেটি হারিয়ে যায় । হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নই আমি । ঘাড়ের মুভমেন্টে সমস্যা থাকলেও আমার রিফ্লেকশন একজন সুস্থ মানুষের চাইতে অনেক বেশি । ফলে আন্দাজ করতে সমস্যা হয়নি গাড়িটা বনানীর দিকেই গেছে । অথচ পুরো বনানী আমি চষে ফেলেছি আগেই । কোনভাবেই এই বুড়ার ঠিকানা বের করতে পারিনি । তারমানে বুড়া এখন উত্তরার আশেপাশেই থাকে । কারণ এইসব ধনাঢ্য লোকেরা কিছু নির্দিষ্ট এরিয়াতেই থাকে । যেমনঃ উত্তরা, বনানী, ধানমণ্ডি, গুলশান ইত্যাদি ।
আমি হসপিটালের রিসিপশনে গেলাম । যেতে যেতে উপলব্দি করলাম প্রতিবন্ধীরা যে কতটা অসহায়! এই উপলব্দিটা আমার শুরুতে যেরকম ছিল এখন আর ওরকম নেই । অনুভূতিগুলোও ভোঁতা হয়ে গেছে । মানুষের করুণার দৃষ্টিগুলোকে অগ্রাহ্য করে এখন আমি নিজেকে স্পেশাল একজন মনে করি । কারণ মানুষ আমাকে কোনকিছুতে সন্দেহ করেনা । বরং আমিই সবাইকে প্রভাবিত করতে পারি নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে । ঐ যে বলেছিলাম অভিনয়টা আমি খুব ভালোই পারি । ঠিক ঐভাবেই আমি রিসিপশনের মহিলাটাকে পটিয়ে ফেলি । রিসিপশনিস্ট সত্যি সত্যিই আমাকে হাসানাত সাহেবের আত্মীয় মনে করে সব ডিটেইলস বলে দিলেন । একটুও সন্দেহ করলেন না যে, আত্মীয় হয়েও কিছুই জানে না, হাহ! জানতে পারলাম হাসানাত সাহেবের স্ত্রী এখন হসপিটালে । ছেলেমেয়েরা তাঁর সাথে থাকেনা ।

দুঃস্বপ্নটা গতরাতে আবার আমাকে ধাওয়া করেছিল । এইবার লোকটার আরেকটু ডিটেইলস আমি মনে রাখতে পেরেছি । প্রতিবারই আমি যখন তার মুখোমুখি হই তখন প্রাণপণে চেষ্টা করি লোকটার চেহারা মনে রাখতে । যদি কখনো বাস্তব জীবনে তার সাথে দেখা হয়ে যায়! তখন যেন চিনতে পারি । কিন্তু প্রতিবারই ঘুম থেকে উঠে আমি ভুলে যাই লোকটি দেখতে কেমন ছিল । তখন থেকে আমি স্টেপ নেই প্রতিবারই তার চেহারা অল্প অল্প করে মনে রাখার । আর মনে রাখার কিছু সিম্পটোমস তার মুখমণ্ডলে বিদ্যমান ছিলই । মানুষের চেহারা মনে রাখবার উপায় নিয়ে আমি ইন্টারনেটে অনেক ঘেঁটেছি । শেষে এই পদ্ধতিটা বেশ কাজে দিয়েছে । এইবার খুঁজে পেয়েছি তার চোখের ঠিক নিচেই একটা সূক্ষ্ম কাটা দাগ আছে । লোকটি আমাকে খুব বিশ্রীভাবে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেছে । প্রতিবাদে আমি কিছুই বলতে পারিনি । আমার মুখ কেউ যেন টেপ দিয়ে এঁটে দিয়েছিল ।



ভার্সিটির ফ্যাকাল্টি রুমে বসে ক্লাস শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ডঃ ফয়জুল হাসানাত । এমন সময় সিকিউরিটি এসে জানালো তাঁর একজন ছাত্র নাকি দেখা করতে এসেছে । হাতে সময় কম তাই ডঃ হাসানাত নিষেধ করে দিলেন । সবেমাত্র সন্ধ্যা হয়েছে । আর দশমিনিট পরেই ক্লাস শুরু করতে হবে । একটা টেস্ট নিতে হবে আজকে । ক্লাসে গিয়ে তাঁর মনটা খারাপ হয়ে গেল । স্টুডেন্টদের এক তৃতীয়াংশই পরীক্ষার ভয়ে ক্লাসে আসেনি আজকে । আজকালকার ছেলেমেয়েগুলা বড্ড ফাঁকিবাজ । এত যত্ন করে পড়ান তিনি, তারপরও ওরা ক্লাস মিস দেয় । নাহ! এবার একটু কঠোর হতে হবে । মাঝেমধ্যে একটু কঠোর না হলে ছেলেমেয়েরা মাথায় উঠে যায় । সামনে মিডটার্ম; ওরা কিছুই দিতে পারবে না পরীক্ষায় । ভাবনা চিন্তা করে তিনি ঘোষণা দিলেন, এই টেস্টে যারা অংশগ্রহণ করবেনা সামনের মিডটার্মে তারা দশ মার্ক কম পাবে । সপ্রসন্ন নয়নে তিনি উপস্থিত স্টুডেন্টদের দিকে দৃষ্টি বুলালেন । এদেরকেও বেশ প্রফুল্ল মনে হচ্ছে । অনুপস্থিতদের কথা চিন্তা করে এরা মনে মনে খুব আনন্দ পাচ্ছে আর নিজেদেরকেও সৌভাগ্যবান মনে করছে । মুচকি একটা হাসি ফুটে উঠে ডঃ হাসানাতের ঠোঁটে । বেড়ালের লেজের মত ধবধবে সাদা গোঁপের অংশটাও সম্প্রসারিত হয়ে তাঁর এই চাপা উল্লাসে সামিল হয় । তিনি আবার ঘোষণা দিলেন, তোমরা কারা আজকের পরীক্ষাটা দিতে ইচ্ছুক । কয়েকজন বাদে সবাই হাত তুলল । তিনি এইবার ওই কয়েকজনকে দাড়া করালেন । তাদেরকে কারণ দর্শাতে বললেন । সন্তোষমূলক কোন জবাব পেলেন না । শুধু একজন বলেছে, তার মা অসুস্থ থাকায় সে প্রিপারেশন নিতে পারেনি । প্রফেসর সেটাও বিশ্বাস করলেন না । তাঁর কথা এই দশ নম্বরের একটা টেস্ট দিতে প্রিপারেশন লাগেনা । তাই যাদের পরীক্ষা দিতে আপত্তি ছিল কিন্তু তারপরও এসেছে; এই সাহসিকতার পুরষ্কার হিসেবে তারা পাবে পাঁচ নম্বর করে আর যারা প্রস্তুত হয়েই এসেছে তারা পাবে দশে দশ । কথা শেষ করার আগেই পুরো ক্লাস উল্লাসে ফেটে পড়ে । তিনি অবাক হয়ে বললেন, তোমরা এত আনন্দিত কেন? টেস্ট নেইনি তাই! বোকার হদ্দ; আমি তো টেস্ট নিয়েই ফেলেছি । ঐ অনুযায়ী মার্কসও বণ্টন করে দিয়েছি ।

ভার্সিটি রিলেটেড কাজগুলো শেষ করে প্রফেসর যখন বাড়ি ফেরার জন্য তাঁর গাড়িতে উঠতে যাবেন ঠিক তখনই কোত্থেকে একজন উষ্কখুষ্ক ছেলে দৌড়িয়ে এলো তাঁর গাড়ির কাছে । তিনি অলরেডি উঠে গেছেন গাড়িতে । জানালার কাঁচ উঠানোর আগেই ছেলেটি মাথা ঢুকিয়ে দেয় জানালা দিয়ে । ঠিক ঐ মুহূর্তেই ড্রাইভার ইঞ্জিন স্টার্ট দেয় । স্যার ... স্যার বলে চিৎকার করতে থাকে ছেলেটি । প্রফেসর ভড়কে যান প্রচণ্ড । একে তো উষ্কখুষ্ক, তার ওপর হঠাত কোত্থেকে এসে উদয় হয় অচেনা এক ছেলে । তারচেয়ে বড় কথা সে এসেই আক্রমণাত্মকভাবে গাড়িতে মাথা ঢুকিয়ে দেয় । কেন? কোন উদ্দেশ্যে? দুই সেকেন্ডও চিন্তা করলেন না প্রফেসর । তাঁর নির্দেশে বাধ্য ড্রাইভারও পা দাবড়িয়ে দেয় এক্সেলেটরে । ছেলেটি প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে ছিটকে পড়ে রাস্তায় । অনেক মানুষের ভিড়ে একজন ভার্সিটি পড়ুয়া তরুণও দেখল রাস্তার পাশে ঘাড়ভাঙ্গা আরেক তরুণের দেহ । ঘটনার আকস্মিকতায় ছেলেটি থরথর করে কেঁপে উঠে । শেষে তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে মাথা ঘুরে পড়ে যায় ও ।

ডঃ ফয়জুল হাসানাত, ঢাকা ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির প্রফেসর । অল্পবিস্তর রাজনীতিও করেন । টিভিতে বিভিন্ন টকশো অনুষ্ঠানের অন্যতম অতিথি এই ডঃ হাসানাত । ভবিষ্যতে মানুষের মঙ্গলের জন্য সমাজসেবার কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান ।
সুতরাং এরকম একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে বড় বড় লইয়াররা তাঁকে ফোন করা শুরু করে দিল । সাক্ষী প্রমাণও জুটে গেলো । ছেলের হতদরিদ্র পরিবার মামলার পেছনে টাকা খরচ করে নিঃস্ব হয়ে গেলো । আদালত ডঃ হাসানাত কে বেকুসুর খালাস দিলো আর নিরীহ ছেলেটির কপালে জুটল সন্ত্রাসবাদের নির্মম অপবাদ । তার নামে নাকি অনেকগুলো মামলা আছে পুলিশের ডাইরিতে । ছেলেটির মা অসুস্থ থাকাকালীন সময়েই এই খবর শুনে বিরহ কাতরে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন । শেষে চলে যান পরপারে ।



ইন্টারনেটে ডঃ হাসানাতের প্রোফাইল ঘেঁটেও তাঁর বর্তমান ঠিকানা বের করতে পারলাম না । দেওয়া আছে সেই পুরানো ঠিকানাই । নেই কোন ফোন নম্বর আর যোগাযোগের অন্য কোন মাধ্যম । এই মুহূর্তে আমার জায়গায় হ্যারোল্ড হলে ঠিকই বের করে ফেলত তাঁর আদ্যোপান্ত । তাহলে আমি পারবো না কেন? সেও তো আমার মতই একজন ইনটেলিজেন্ট প্রতিবন্ধী । হা হা ... জোকসটা মনে হয় খুব সস্তা হয়ে গেছে । ইনটেলিজেন্ট প্রতিবন্ধী । সবে মাত্র নয়টা বাজে । এত তাড়াতাড়ি আমি এর আগে কখনোই বাসায় ঢুঁ মারিনি । এ সময়ে বাসার পরিবেশটা কেমন থাকে তাও জানিনা । বাতাসের তালে দেয়ালে নকশা করা পত্রপল্লবীর ছায়ানাচন উপভোগ করা যাবে কিনা কে জানে! কিংবা সামনের বাসার অল্পবয়স্ক মেয়েটির রাত জাগা ফোনালাপ শুরু হয়েছে কিনা খুব জানতে ইচ্ছে করে । কিন্তু এখন যাওয়া যাবেনা বারান্দায় । কাজ পড়ে আছে, গুরুত্বপূর্ণ কাজ । যেভাবেই হোক ডঃ হাসানাতের সাথে যোগাযোগের একটা মাধ্যম খুঁজে বের করতে হবে । কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না । সব আগের নম্বর যেগুলো এখন আর তিনি ইউজ করেন না । পুরো দুই ঘণ্টা ধরে সময় নষ্ট করলাম কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না । ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিজেকে দেখলাম । ধকলটা তাহলে শরীরের উপর দিয়ে বেশ ভালোভাবেই যাচ্ছে । গত তিনদিনের না কামানো খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে কেমন যেন বুনো মনে হচ্ছে নিজেকেই । এক্ষুনি শেভটা সেরে ফেলা দরকার । যেই শেভ করতে যাবো হঠাত করে বিদ্যুতের মত আমার একটা জিনিস মনে পড়ল । গতকালকে যখন হসপিটালের রিসিপশনে ডঃ হাসানাত সম্পর্কে জানতে চাইলাম তিনি তখন আমার নাম আর মোবাইল নম্বর টুকে রেখেছিলেন । নিশ্চয় তার কাছে ডঃ হাসানাতেরও নাম এবং মোবাইল নম্বর থাকবে । আর দেরি করলাম না আমি । শেভ না করেই বেরিয়ে পড়লাম ।
রিসিপশনে সেই আগের মহিলাটা নেই! তার জায়গায় আজকে একজন পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের যুবককে দেখা যাচ্ছে । এতক্ষণ মনে মনে গুছিয়ে নিয়েছিলাম ঐ মহিলা আমাকে দেখলে চিনতে পারবে এবং তার কাছ থেকে সুবিধা লুটতে তত বেগ পোহাতে হবেনা । কিন্তু এখন দেখি অন্য প্ল্যান করতে হবে । তত চিন্তা ভাবনা না করে সহসা এগিয়ে গেলাম রিসিপশনের দিকে । কারণ Sometimes the best plan is to plan nothing;
হ্যালো ব্রাদার বলেই একগাল হাসি দিলাম । রিসিপশনিস্ট আমার দিকে একটু বিরক্তি নিয়ে তাকালো । তারপর বলল, জি বলেন ।
-আমি বললাম গতকালকের একটা সিরিয়াল ছিল ।
কার নামে?
-নাসির, মানে আমার নামে ।
রিসিপশনিস্ট ছেলেটা আরো বিরক্ত হয়ে ধমকের সুরে বলল, আরে ভাই কোন ডাক্তারের নামে?
-ঐ যে অর্থোপেডিক্সের কনসালটেন্ট; কি যেন নাম? অন্ধকারে ঢিল মারলাম একটা!
অর্থোপেডিক্সের তো দুইজন আছে । ডঃ কিবরিয়া খান আর ডঃ বরেন্দ্র দেবনাথ ।
-আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম ডঃ কিবরিয়া খান ।
রিসিপশনিস্ট সিরিয়ালের খাতাটা খুঁজে না পেয়ে নিচের ড্রয়ারে খুঁজতে লাগলো । এই ফাঁকে আমি ভিজিটরদের তালিকাটা দেখতে লাগলাম । আগের পৃষ্ঠায় গতকালকের গুলোও পেয়ে গেলাম । কিন্তু এগুলোর কোনটাতেই ডঃ ফয়জুল হাসানাত নামে কোন নাম খুঁজে পেলাম না । নাহ! নেই । এরই মধ্যে রিসিপশনিস্ট ব্যাটা টের পেয়ে গেছে আমি ওর ভিজিটিং লিস্টটা দেখছি ।
আপনি কে? আর আপনার আসল মতলবটা কি বলুন তো ভাই?
-আমি কে! সেটা কোন বিষয় না । বিষয় হচ্ছে আমি কাকে চাচ্ছি । এখন আপনার দায়িত্ব হচ্ছে আমি যাকে চাচ্ছি তার কাছে পৌঁছার একটা ওয়ে তৈরি করে দেয়া । মানে আমাকে হেল্প করা । সো, হেল্প মি প্লীজ । আমি ডঃ হাসানাতকে চাচ্ছি । উনি গতকালকে এখানে ভিজিট করে গেছেন । তাঁর কোন ফোন নম্বর আপনার কাছে থাকলে আমাকে দিন ।
রিসিপশনিস্ট ছেলেটা বেকুবের মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে । তারপর নরম গলায় বলে, ডঃ হাসানাত নামে কেউ এখানে বসেন না ।

হতাশ হয়ে বেরিয়ে এলাম । রাতের শহরটাকে বড্ড নির্জীব মনে হয় । এখন মাত্র সোয়া এগারোটা বাজে । একটা সিগারেট ধরিয়ে রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে নিজের অজান্তেই মনে মনে বলতে লাগলাম, নিশিফুল,,, নিশিফুল,, নিশিফুল । দুই বছর আগে এই একই জায়গায় দেখা হয়েছিলো নিশিফুলের সাথে । মেয়েটির আসল নাম জানা হয়নি কখনো আমার । সে ছিল একজন প্রস্টিটিউট । সেদিন তার জীবনের কাহিনী শুনে নিজের জীবনের কিছুটা মনে পড়ে যায় । অনেকটা মিল পাওয়া যায় তার সাথে আমার । যেমনঃ তার বাবার অকাল মৃত্যু, মায়ের অন্যলোকের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়া । মামার কাছে বড় হওয়া । নিশিফুল বলেছে সে নাকি শুরুতে এরকম ছিলোনা । কি একটা মানসিক ব্যাধির পর থেকে সে দিনে একরকম আর রাতে আরেক রকম করে চলে! এরপর আমি নিশিফুলকে আর কোনদিন খুঁজে পাইনি । কোথায় হারিয়ে গেলো সেই মায়াবী চোখের মেয়েটি ।
হঠাত প্রচণ্ড আঘাতে আমি চোখে অন্ধকার দেখি । উফ্! দুই চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে যন্ত্রণায় । মাথাটা ধরেছে ভীষণ । আরেকটা ঢিল এসে পড়ার আগেই আমি সরে যাই । ফুটপাতে শুয়ে থাকা এক পাগল অনবরত কি যেন বলছে আর একটু পর পর ঢিল মারছে অজানা উদ্দেশ্যে । ঢিলটা ঠিক আমার বাঁ চোখের নিচ বরাবর লেগেছে । ফুলে গেছে জায়গাটা । কোনমতে টিস্যু দিয়ে চেপে ধরে আছি । বাসায় গিয়ে জীবাণুনাশক লাগাতে হবে ।

প্রতিদিন একই স্বপ্ন কারো কাছে আতঙ্কের আবার কারো কাছে কৌতূহলীদ্দপক । প্রথম প্রথম ভয় লাগত আমার! চিৎকারের সাথে ঘুম ভাঙত । এখন আর তেমন ভয় লাগেনা । শেষ স্বপ্নটা দেখেছিলাম ভোররাতের দিকে । মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাঁড়িওয়ালা লোকটি এবার একটা চেইন স নিয়ে আমাকে আক্রমণ করে । তারপর ঘুমটা ভেঙ্গে যায় । মজার ব্যাপার হচ্ছে এইবার আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেও মনে রাখার মত কোনো উল্লেখযোগ্য ডিটেইলস খুঁজে পাইনি । তবে লোকটির চোখদুটো ভালো করে লক্ষ্য করেছি । মানুষের চোখ দেখে আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি । উজ্জল চোখজোড়া! সেখানে নেই কোনো ক্রোধ, জিঘাংসা! ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগলো আমার কাছে ।

ডঃ হাসানাতের গাড়ির মত একটা গাড়ি মনে হয় দেখলাম রেস্টুরেন্টের বাইরে! খাওয়ার সময়ও দৃষ্টি সজাগ রাখি আমি । খিদে নষ্ট হয়ে গেছে আমার । আবার বুকের ভেতর সেই ড্রাম পেটানোর শব্দ । খাবার পর্ব অর্ধসমাপ্তি রেখে বিল চুকিয়ে বেরিয়ে এলাম । কিন্তু গাড়িটার আর হদিস মিলল না! চারপাশে কোথাও নেই । কি ভুতুড়ে কাণ্ড! মুহূর্তের মধ্যেই হাওয়া হয়ে যায় গাড়িটা বার বার । ডঃ হাসানাত বার বার ধরা দিয়েও পিছলে যাচ্ছে । ধ্যাত, বাসায় চলে যাওয়াই ভালো । একটা হলুদ ক্যাবে উঠে পড়লাম । ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগেই আমার চোখ কানা করে দিলো একজোড়া হেডলাইট । আমাদের ক্রস করে সাদা গাড়িটা ছুটে গেলো পেছনে । ড্রাইভারকে চিৎকার করে বললাম, ফলো করো । সে ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে বলল, কোনটা স্যার? এইমাত্র যেটা আমাদের ক্রস করেছে । আর বলতে হলনা । ড্রাইভার স্টিয়ারিং ঘুরিয়েই ক্ষিপ্ত গতিতে গাড়ি ছুটালো । ড্রাইভারের বয়স মাঝামাঝি; তবে রক্ত গরম বুঝাই যায় ।
ঠিক পাঁচগজ সামনে গাড়ি থেকে নামলেন ডঃ হাসানাত । বয়স এখন ষাটের কোঠায় । একসময় পলিটিক্স করতেন, টকশো গুলোতে মাতিয়ে রাখতেন আবার পত্র পত্রিকায় কলামও লিখতেন । এখন আর এসবে জড়ান না নিজেকে ।



আজকে আমি প্রফুল্ল চিত্তে বাসায় ফিরলাম । আমার স্বপ্ন পূরণের আর মাত্র একটি ধাপ বাকি । সেটা হচ্ছে ডঃ হাসানাত কে শেষ করে দেওয়া । এ কয়দিন খুব ধকল গেছে । ব্যস্ততায় শেভ করারও সময় পাইনি । খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো খুব চুলকাচ্ছে । ওয়াশরুমের আয়নার প্রতিবিম্বটা কেমন যেন অচেনা লাগছে । আবার চেনা চেনাও মনে হচ্ছে । চোখের নিচের কাটা জায়গাটা শুকিয়েছে । চোখগুলো মনে হয় যেন কোটরে ঢুকে যাচ্ছে । সবই অনিদ্রার ফল, রুটিন অনুযায়ী না চলার কারণ । যাই হোক ... আজকে রাতে ভালো একটা ঘুম দিতে হবে । অনেক কাজ বাকি আছে । প্লান করতে হবে, জিনিসপত্র যোগাড় করতে হবে । কিন্তু মনে হয়না উত্তেজনায় আজকে আর ঘুম আসবে ।
আমার প্রাথমিক প্লান হচ্ছে বুড়া খাটাশটাকে কিছুদিন স্টাডি করা । যেমনঃ তার প্রতিদিনকার রুটিন, কয়টায় বের হয় আর কয়টায় বাসায় ফিরে । তারপর ছুটির দিনগুলোতে সে কি করে । তার বাসায় ফ্যামিলির আর কে কে থাকে ইত্যাদি । যত কম থাকে ততই ভালো আমার জন্য । বুড়া একলা থাকলে আজই যেতাম । আমি এখনো শিওর না সে পুরোপুরি একা নাকি আরো কেউ আছে । সুতরাং ধৈর্য হল সফলতার পূর্বশর্ত । আমি ধৈর্যের পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হতে চাই ।

পুরা এক সপ্তাহ ধরে আমি তাঁকে স্টাডি করলাম । কিন্তু তেমন কিছুই জানতে পারিনি । বুড়া টাইম মেইন্টেইন করে চলেনা । কখন বের হয় কখন আসে ঠিক নেই । অনেকটা আমার মতই বলা যায় । তবে এর মধ্যেও অনেক তথ্য যোগাড় করে ফেলেছি । যেমনঃ তিনি বাসায় একাই থাকেন এখন । তার স্ত্রী হসপিটালে ভর্তি এখনো । আর গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইকুইপমেন্টও যোগাড় করে ফেলেছি ।
এখন বাজে রাত সাড়ে আটটা । মানে সবেমাত্র সন্ধ্যা । প্ল্যান আমি আগেই করে ফেলেছি । আমার হাতের এই ব্যাগটাতে আছে একটা সবজী কাটার বড় ছুরি, হাড্ডি কাটার চপার, আর একটা চেইন স । সবই পেয়েছি ঐ বড় সুপার শপটাতে । এখন শুধু প্রস্তুতি আর অপেক্ষার পালা । রাত দশটার আগেই সঠিক জায়গায় পৌঁছে যেতে যাই ।
কিন্তু সময়ের হিসেবে মনে হয় একটু গরমিল করে ফেলেছি । বুড়া আসে রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটার ভেতরে । আমার পৌঁছাতে বেজে যায় দশটা বিশ । হাতে আর মাত্র দশমিনিট সময় আছে । এর মধ্যেই সিকিউরিটি গার্ড পান খেতে যাবে রাস্তার ওপাশের দোকানটায় । হাতে সময় পাবো আমি দেড় থেকে দুই মিনিট । ব্যাগটা হাতে নিয়ে নিতান্তই ভালো মানুষের মত বাড়ির গেটটাকে পাশ কাটালাম । খেয়াল করলাম সিকিউরিটি গার্ড এর মধ্যে এদিকে একবার তাকিয়েছে । পরে আবার সে মনোনিবেশ করলো পান দোকানীর খোশগল্পে । এটাই সুযোগ! তড়িঘড়ি করে দেয়ালের সাথে মিশে গিয়ে আস্তে করে গেটটা খুললাম । আলগোছে ঢুকে পড়লাম ভেতরে । আবার লাগিয়ে দিলাম গেটটা । কোন শব্দ হয়নি, কেউ খেয়ালও করেনি । পুরো ব্যাপারটাতে সময় লেগেছে সর্বোচ্চ দেড় মিনিট । ব্যাস, প্রতিটা এপার্টমেন্টে নাম লেখা আছে । সিঁড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে সাততলায় উঠলাম । দেখলাম দরজার পাশে লেখা আছে ডঃ ফয়জুল হাসানাত । ঘড়ি দেখলাম আর মাত্র পাঁচমিনিট সময় আছে হাতে । বুড়া যে কোনমুহূর্তেই এসে পড়তে পারে । সিঁড়ি ভেঙ্গে সাত তলায় উঠাটা কিন্তু কম পরিশ্রমের কাজ নয় । হাঁপাতে লাগলাম বেশ । তারপর মাষ্টার কী বের করে মোচড় দিলাম দরজায় । খুলল না । আবার দিলাম এইবার একটু খট করে একটা আওয়াজ এলো । এই আওয়াজটা এত মধুর লাগলো আমার কাছে! আহ! উত্তেজনা বুকের ভেতর কামান দাগাচ্ছে যেন । ভারী দরজাটা আস্তে করে খুললাম । ঢুকে পড়লাম বুড়ার সুসজ্জিত এপার্টমেন্টে । আনন্দে আমার এখন থৈ থৈ করে নাচতে ইচ্ছে করছে । এত আনন্দ রাখি কই! হঠাত বাইরে একটা পায়ের আওয়াজ শুনা যায় । ব্যাগটা নিয়ে আমি তাড়াতাড়ি এক গড়ান দিয়ে খাটের নিচে পৌঁছে যাই । দরজা খোলার শব্দ শোনা গেলো । তারপর পায়ের আওয়াজ । আবার দরজা বন্ধ হবার শব্দ । নিচ থেকে শুধু বুড়ার পায়ের অংশই দেখা যাচ্ছে । দেখলাম পা দুটো ধীরে ধীরে অন্যকক্ষের দিকে চলে গেলো । বুড়াটা ওয়াশরুমের দিকে গেছে তাহলে । আমি আস্তে আস্তে সরীসৃপের মত বের হয়ে আসি । কোনো শব্দ করা যাবে না । পা টিপে টিপে অন্য রুমে চলে যাই । সে রুমটা একটু অন্ধকার । পুরোপুরি অন্ধকার নয়! যেরকম অন্ধকারে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি ঠিক সেইরকম অন্ধকার । ব্যাগ থেকে চপারটা বের করে রেডি হয়ে রইলাম । দশমিনিট হয়ে গেলো ব্যাটা বের হচ্ছে না কেন! আরো পাঁচ মিনিট যাওয়ার পরে বুড়ো ফ্রেশ হয়ে বের হলো । আমি নিঃশব্দে পৌঁছে গেলাম তাঁর পেছনে । শেষ মুহূর্তে বুড়া মনে হয় টের পেয়ে যায়! ঘুরতে যাবে এমন সময় আমি চপারের উল্টোপিঠ দিয়ে জায়গামত আঘাত করি । ব্যাস, অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে আমার বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত শিকার । ডঃ ফয়জুল হাসানাত । এবার আমি শরীরটা টেনে নিয়ে একটা চেয়ারের ওপর বসালাম । ব্যাটা বুড়ো হলে কি হবে, ওজন হবে দুই মণ । ব্যাপক পরিশ্রম হয়েছে আমার তাঁকে চেয়ারে বসাতে । ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে এখন ঘুমুচ্ছেন বিখ্যাত প্রফেসর । একটু পরে অতল ঘুমের সাগরে ডুব দিবেন তিনি । তাঁর প্রশান্তির ঘুম দেখে আমার নিজেরই হিংসা হচ্ছে এখন । যার কারণে আমি ঠিকমত ঘুমাতেও পারতাম না, আর আমিই কিনা এখন তার সুখনিদ্রার কারণ । নাহ! তাকে ঘুমাতে দেয়া যাবে না আর । খুব কষ্ট দিয়ে তিলে তিলে একটু একটু করে খুন করব আমি তাকে । ব্যাগ থেকে ডাক্ট টেপ বের করে ভালো করে চেয়ারের হাতল আর পায়ার সাথে বুড়াকে আঁটকে দিলাম । এইবার তুমি ফাঁদে পড়েছ ঘুঘু । মাকড়শার জালে আঁটকে পড়া একটা ছোট্ট ঘৃণ্য মাছির মতই তুমি অসহায়! তার আগে তোমার জ্ঞান ফেরানো দরকার । নইলে এই জিনিসটা তুমি উপলব্দি করবে কিভাবে । টেবিলের ওপর একটা খালি জার আছে । ওটা নিয়ে গেলাম ওয়াশ রুমের দিকে । পানি ভরে নিয়ে আসার সময় হঠাত আমার চোখ পড়ে দেয়ালের আয়নায় । আঁতকে উঠি আমি; কাঁচের জারটা ছুটে পড়ে যায় আমার হাত থেকে । ভাঙ্গা টুকরোগুলো মসৃণ মেঝেতে পড়ে ছড়িয়ে যায় চারপাশে । আমি আতংকে চোখমুখ ঢেকে ফেলি । মনে মনে আশা করি এটা যেন একটা দুঃস্বপ্ন হয়! কিন্তু না । এটা স্বপ্ন নয়, বাস্তব! ভয়ংকর বাস্তব । যেকোনো দুঃস্বপ্নের চাইতেও অনেক বেশি তীব্র, ধারালো । আমার হাতের চপারটাও কিন্তু কম ধারালো নয় । এক আঘাতেই দিলাম আয়নাটাকে টুকরো টুকরো করে । উফ! অবিশ্বাস্য! আমার মেটামরফসিজটা আগে থেকে কেন বুঝা যায়নি? যাই হোক আই ডোন্ট কেয়ার । কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি সটকে পড়তে হবে এখান থেকে । বুড়ার গোঙ্গানি শুনা যাচ্ছে । গিয়ে দেখি বুড়া ভাম চোখ পিট পিট করে তাকাচ্ছে । মুখে ডাক্ট টেপ লাগানো তাই গোঁ গোঁ ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছে না সে । লেকচার দেওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়ালাম তার সামনে । তার মত করেই ।

স্যার ... আজকের লেকচারটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ । মনোযোগ শুনবেন । কারণ এর পরে একটা টেস্ট আছে । হ্যাঁ, আট বছর আগেও এরকম একটা টেস্ট হয়েছিলো । নিয়েছিলেন আপনি । মনে আছে স্যার? না থাকারই কথা । সেদিন অনেকেই পরীক্ষা দিতে আসেনি কিংবা আসতে পারেনি । আসেনি এবং আসতে পারেনি এ দুটোর পার্থক্য নিশ্চয় আপনি বুঝতে পেরেছেন । কিন্তু আপনি সবাইকে নিয়ে জড়ো করলেন এক কাতারে । কারো কোন এক্সকিউজ মানেন নি । আপনার মনে আছে কিনা জানিনা! একজন স্টুডেন্ট দৌড়ে আসে আপনার গাড়ির কাছে । দৌড়ের গতি এবং উত্তেজনা দুটোই কন্ট্রোল করতে না পেরে সে হয়তো আপনার গাড়ির জানালা দিয়ে মাথাটা ঢুকিয়ে দেয় । কিন্তু আপনি শুনতে চাননি কিছুই । দুর্ভাগা আপনি জানতেও পারলেন না একজন নিয়মিত ছাত্রের পরীক্ষা না দিতে পারার কারণটা । যে ছাত্র কোনদিন ক্লাস মিস দেয় নাই, সে কেন পরীক্ষা মিস দিবে! এর কারণটাই সে আপনাকে সেদিন শুনাতে গিয়েছিলো । কিন্তু আপনি শোনেন নাই, উল্টা ঐ ছেলেটাকে সারাজীবনের জন্য প্রতিবন্ধী বানিয়ে দিলেন ।

প্রফেসর এবার আরো জোরে জোরে গোঁ গোঁ করতে লাগলেন আর মাথাটা এপাশ ওপাশ দোলাতে লাগলেন । কি আপনি স্বীকার করছেন না তাই তো! আচ্ছা দেখুন তো আমার চেহারাটা পরিচিত লাগে কিনা । না লাগারই কথা । কারণ এখন আমিই আমাকে ঠিকমত চিনিনা । আমি নাসির ... হ্যাঁ, আট বছর আগের সেই ছেলেটা যাকে আপনি খুন করতে চেয়েছিলেন । নিজে বাঁচার জন্য যাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়েছিলেন । শুনতে চাননি যার কোন এক্সকিউজ । সেদিন যখন জানতে পারেন নি । আজ জেনে নিন, ঐদিন আমার মা খুব অসুস্থ ছিলেন । আমার মায়ের মৃত্যুর জন্যও আপনিই দায়ী । প্রিয় প্রফেসর, আপনার এই চিরবিদায়ের দিনে একটা মানপত্র তৈরি করা উচিত ছিল । বড্ড ভুলোমনা আমি । পৃথিবীতে কেউ চিরদিন বেঁচে থাকেনা স্যার । একদিন না একদিন সবাইকেই মরতে হবে । এখন আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, হু আর ইউ টু জাজ? আমার সহজ উত্তর আমি একজন ভুক্তভোগী । কিন্তু আজ আমি উত্তর দেব আমি একজন এঞ্জেল অফ ডেথ । স্যার, আপনি জেনে অত্যন্ত খুশি হবেন যে আমি আপনাকে হুট করে মেরে ফেলব না । ধীরে ধীরে কষ্ট দিয়ে মারবো । অনেকটা সময় পাবেন আপনি বাঁচার । দেখুন, আপনি আমাকে এতটা আনন্দ দিচ্ছেন । আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আপনার জন্য; এই দেখুন বুকের ভেতর ড্রাম বাজছে । তার বিনিময়ে আমি কি আপনাকে হুটহাট করে মেরে ফেলতে পারি? নেভার । এই চেইন স টা দিয়ে আমি ইচ্ছে করলে আপনাকে এক নিমিষেই দু খণ্ড করে ফেলতে পারি । কিন্তু অতটা অকৃতজ্ঞ আর নির্দয় আমি নই । একি! আপনি দেখি রীতিমত নাচানাচি শুরু করে দিয়েছেন । ভয় পেয়ে গেলেন নাকি! ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই । আমি খুব যত্নসহকারে আপনাকে সৎকার করব । আপনি আপনার জীবনের শেষ লেকচারটা কি এখনি দিতে চান? বেশ আমার কোন আপত্তি নেই । তবে নিজেকে সংযত রাখতে চেষ্টা করবেন, কোন কাকুতি মিনতি কিংবা ইমোশনালি কথাবার্তা দিয়ে আমাকে টলাতে পারবেন না । সুতরাং বৃথা সময় অপচয় না করাই ভালো । নিন শুরু করুন এবার; ও আচ্ছা আপনার মুখে তো আবার টেপ মারা ।

প্রফেসর হাঁপাচ্ছেন খুব । তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা । তার বদলে জমে থাকা একগাদা লালা থুঃ করে ফেললেন নিচে । তাকালেন আমার দিকে । তার চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আতংক । তুমি আসলে একটা ভয়ংকর সাইকো! চিৎকার করে বলে উঠলেন তিনি । আমি কিছু বললাম না । প্রফেসর একটু সময় নিলেন ধাতস্ত হবার জন্য । তারপর নরম গলায় বললেন, তুমি কি আসলেই নাসির?

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম ।

স্ট্রেঞ্জ! তুমি তাহলে বেঁচে আছো । তাহলে তোমার ফ্যামিলি আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে! তারা বলেছে ঐদিনের দুর্ঘটনায় তুমি ঘটনাস্থলেই মারা গেছো । এমনকি সাংবাদিক, মিডিয়ার কর্মীরা তোমার লাশের ছবি পর্যন্ত ছাপিয়ে ফেলেছে । তোমার ফ্যামিলি তোমাকে কবরও দিয়ে ফেলেছিল । অদ্ভুত! সবই কি সাজানো তাহলে? পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট, পুলিশের রিপোর্ট এতকিছু কিভাবে সম্ভব! যদি তুমি সত্যিই নাসির হয়ে থাকো । তাহলে ভেবে দেখ, ঐদিনের ঘটনা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো । অন্ধকারে আমি কিছু বুঝে উঠতে পারিনি । তার ওপর কোত্থেকে এসে উদয় হলে তুমি । তারপর করলে কি! সন্দেহমূলক আমার গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দিলে । যে কোন লোককেই আকস্মিক এই ঘটনা চমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট । তাই আমি মনে করেছিলাম কোন ছিনতাইকারী ।

আপনি মিথ্যে বলছেন প্রফেসর । কিংবা আপনাকে ভুল বুঝানো হয়েছে । আমি ঐদিন মারা যাইনি; আমার ফ্যামিলি বলতে শুধু মা আর বাবাই ছিল । তারা আপনাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসাতে যাবে কেন?

তোমার আরেকজন যমজ ভাই ছিল না? প্রফেসর জিজ্ঞাস করে ।

এইবার আমার মাথাটা একটু টলে উঠে । যমজ ভাই! আমার যমজ ভাই! অসম্ভব ।

হ্যাঁ তোমার আরেকজন ভাই ছিল আমার মনে আছে এখনো । কি যেন নাম? তোমার নাসির হলে ... ওর নাম নাসিফ ।

আমার শরীরের ভেতর দিয়ে যেন একটা বিদ্যুৎ বয়ে যায়! স্মৃতির ঢেউ ঝাপটা দিয়ে আবার চলে যায় । আমি ক্রোধে উন্মাদ হয়ে যাই । না আ আ ... আমার কোন ভাই টাই কিচ্ছু নাই । আমি একা । সারাজীবন একাই ছিলাম ।

প্রফেসর বলতে লাগলেন । এটা তোমার ভুল ধারণা । তুমি মানসিক রোগে ভুগছ । তুমি নাসির নও নাসিফ! লেট মি হেল্প ইউ । আমার চেনাজানা ভালো সাইকিয়াট্রিস্ট আছে । প্লীজ ...

হে হে ... প্রফেসর বড্ড চালাক তুমি । মনে করেছো আমাকে ভুলভাল বুঝিয়ে নিজে ছাড়া পেয়ে যাবে । তারপর সাইকিয়াট্রিস্টের নাম দিয়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেবে । অত বোকা নই আমি ।

বিশ্বাস করো, নাসির নামে যে ছেলেটি সে মারা গেছে । আমি নিজের চোখে দেখেছি । আর তুমি হচ্ছ ওর ভাই ।

না প্রফেসর মন ভোলানো গল্পে আমি বিশ্বাস করিনা ।
আমার রক্ত চড়ে গেলো । কিছুই যেন বিশ্বাস করতে পারছিনা । সবকিছু কেমন শূন্য মনে হচ্ছে । মনে হচ্ছে আবার প্রফেসর আমার নামে মিথ্যে অপবাদ দিতে চেষ্টা করছেন । সাইকোলজির প্রফেসর তো মানুষের মন ঘুরিয়ে ফেলতে পারেন । ব্রেইন ওয়াশও দিতে পারেন ভালোই । নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না । কে যেন আমার ভেতর থেকে শেষ চেষ্টা হিসেবে হাতের ধারালো চপারটা বসিয়ে দিলো তার মাথা বরাবর । এক ঝলক রক্ত সিক্ত করে দিলো আমায় । নেহ! এবার শান্তিতে ঘুমা । এখনো হাতে ধরা চপারটা কাঁপছে । পুরো শরীরই থরথর করে কাঁপছে । এ কি করলাম আমি! এত সহজেই মেরে ফেললাম ব্যাটাকে? বুকের ভেতরটা কেমন যেন শূন্য মনে হচ্ছে । জীবনে আর কোন লক্ষ্য নেই, উদ্দেশ্য নেই । এখন আমি একজন ভবঘুরে । গা থেকে বর্ষাতিটা খুলে ফেলে গিয়ে ঢুকলাম ওয়াশরুমে । নিজেকে ওয়াশ করে আবার বেরিয়ে আসার সময় দৃষ্টি গেল লেগে থাকা ভাঙ্গা কয়েকটুকরো আয়নার দিকে । একজোড়া উজ্জল চোখ সেখানে নেই কোন ক্রোধ, জিঘাংসা কিংবা নিষ্ঠুরতা!

নিজের পরিচয়টা আরেকবার নতুন করে জানতে ইচ্ছে হয় । আমি আসলে কে? যে নিশাচরের মত রাতভর বাইরে ঘুরে বেড়ায় । যার দিনেবেলার কোন স্মৃতিই মনে থাকেনা । অন্ধকারকে যে খুব ভালোবাসে । আসলে কে সে? আমি নিজেও জানিনা । হয়তো নাসিফ, নাসির দুই ভাইয়ের একজন! এখন বাসায় যেতে হবে তাড়াতাড়ি । আসলে তাড়াতাড়ি গিয়েও আর কি হবে! আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করে আছে নাকি? খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলো কয়দিন ধরেই বেশ যন্ত্রণা দিচ্ছে । সময়ের বড্ড অভাব ছিল এ কয়দিন । যেতে যেতে পেছন থেকে একটা গাড়ি হর্ন বাজায় । আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাই । গাড়ির ভেতর বসে থাকা লোকটাকে কেমন পরিচিত লাগে । ও আমি কি বলেছিলাম মাঝেমধ্যে আমি হেলূসিনেশনে ভুগি! এত রাতে বাইরে থাকাটা ঠিক নয়! বাসায় যেতে হবে!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৩৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×