এখনকার টিভি সিরিজগুলো বেশ জনপ্রিয় । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সিরিজগুলো খুব বড় । সিজন থাকে বেশি এবং পৌনে এক ঘণ্টার এপিসোডগুলোর সংখ্যাও কম নয় । কাজেই ব্যস্ততার জন্য অনেকেই টিভি সিরিজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন । যদি এমন হত টোটাল সিরিজ একটা কিংবা দুটা সিজনেই শেষ!
সম্প্রতি দেখা এরকম দুটো টিভি সিরিজ যা শেয়ার না করে পারা গেলনা ।
১। ব্যান্ড অফ ব্রাদার্সঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে সাজানো দশটি এপিসোড নিয়েই পুরো সিরিজটি করা হয়েছে । ডি-ডে নিয়ে যত মুভি বলেন, টিভি সিরিজ বলেন; ব্যান্ড অফ ব্রাদার্সই সেরা আমার কাছে । এর নির্মাণ, দৃশ্যপট, কাস্টিং সবমিলিয়ে যতটাসম্ভব বাস্তবসম্মত করার চেস্টা করা হয়েছে । প্রত্যেকটা এপিসোড শুরুর আগে ওয়্যারহিরোরা তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন । তাই এটাকে বায়োগ্রাফিকাল হিস্টোরি বললেও ভুল হবেনা!
এবার আসি, কাহিনীতে ...
ইউ এস প্যারাট্রুপারস ‘ইজি কোম্পানি’ পুরোপুরি প্রস্তুত ফ্রান্সের নরম্যান্ডি আক্রমণ করার জন্য । কোম্পানি আরো আছে- ফক্স কোম্পানি, ডগ কোম্পানি ইত্যাদি । কিন্তু এখানে ভিউপয়েন্টে থাকে ইজি কোম্পানি । ল্যুটান্যান্ট উইন্টারস আর নিক্সনের নেতৃত্বে টিম এগিয়ে যায় যুদ্ধের সম্মুখে । ইজি কোম্পানির আছে প্রস্তুতি, ট্রেইনিং, ধৈর্য এবং কৌশল । অবশ্য ক্যাপ্টেন সোবেলের মত এরকম জাঁদরেল ট্রেইনারের হাতে পড়লে যে কেউই ডিসিপ্লিন কি জিনিস তা অচিরেই শিখে যায় । কিন্তু ক্যাপ্টেন সোবেল সৈনিকদের সার্বিক দিক দিয়ে উপযোগী করে তোলার জন্য যথেষ্ট ছিলেন না । উপরন্তু গম্ভীর এবং একগুয়ে স্বভাবের । সিরিজের একটা পর্বে দেখা যায়, উইন্টারস ক্যাপ্টেন সোবেলকে স্যালুট দেয় কিন্তু তার কাছ থেকে কোন প্রত্যুত্তর পায়না । তখন উইন্টারস সোবেলকে বলে, ‘captain sobel we salute the rank, not the man’ এই সিরিজের দ্বিতীয় সেরা উক্তি!
নিক্সন আর উইন্টারসের মধ্যে ভালো সম্পর্ক । তবে পার্থক্য একটাই, একজন অতিরিক্ত মদ্যপান করে আর আরেকজন মোটেই না । যুদ্ধে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মেডিক টিম । আমি মনে করি এরাই সবচেয়ে গুরুদায়িত্ব পালন করে, টাচ অফ এঞ্জেল! প্রবল গুলিবর্ষণের মধ্যেও নিজের তোয়াক্কা না করে অন্যকে বাঁচানোর জন্য ছুটে যাওয়া, আহতদের সারিয়ে তুলতে প্রাণপনে চেষ্টা করা । যুদ্ধের ভয়াবহতা আর মানুসিক চাপের মধ্যেও এরাই করে যায় এঞ্জেলের কাজ এবং তাদের নেই কোন নিজস্ব ডিফেন্স । অন্যেরা কভার দিলে এরা ছুটে যায় আহতদের কাছে ।
কয়েকটা মিশন খুবই ভয়াবহ ছিল! বিশেষ করে বেলজিয়ামের বাস্টগনে । বরফঞ্চলের মাঝে ওদের ছিলনা কোন শীতবস্ত্র, খাদ্য আর যথেষ্ট এ্যমো । শত্রুদের এলোপাথাড়ি আক্রমণে অনেকে প্রাণ হারায়, কিংবা বিকলাঙ্গ হয়ে যায় ঐ মিশনে । তবে তারচেয়ে ভয়ংকর দৃশ্যটি অপেক্ষা করছে সামনে । যুদ্ধ শেষে ওরা একটা বিশাল ক্যাম্প খুঁজে পায়, যেখানে পড়ে ছিল হাজার হাজার ইহুদীদের পচিত, গলিত দুর্গন্ধময় বীভৎস লাশ । তার মধ্যে যারা বেঁচে আছে । তাদের অবস্থা আরো বেহাল, লাশের চেয়েও বীভৎস! কঙ্কালসার দেহধারীরা জম্বির মত এগিয়ে আসতে থাকে; কাড়াকাড়ি করে খাবারের জন্য । দৃশ্যটি ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর । পুরো যুদ্ধের ভায়লেন্সকেও ছাপিয়ে গেছে এই নির্মম দৃশ্য! পরে ওরা হিটলারের প্রাসাদ আর মূল্যবান সব আসবাবপত্র উদ্ধার করে ।
শেষের সেরা উক্তিটি দিয়ে শেষ করছি ...
Grandpa, were you a hero in the war?
Grandpa said, “No!.... but i served in a company of heroes.”
গ্র্যান্ডপা ছিলেন তাঁদেরই মধ্যে একজন ওয়্যারহিরো । গ্র্যান্ডপার পরিচয় জানতে হলে দেখে ফেলুন সিরিজটি । না দেখলে পস্তাবেন ।
২। রোমঃ
জুলিয়াস সিজারের কাহিনী আর তৎকালীন প্রাচীন রোমের ডার্টি পলিটিক্স নিয়ে মাত্র দুটি সিজনে সম্পন্ন একটি দারুণ সিরিজ । একসময়ের বন্ধু ‘পম্পে ম্যাগ্নাস’ আর ‘গায়াস জুলিয়াস সিজার’ পরিণত হয় শত্রুতে । ক্ষমতার লোভ আর ডিপ্লোম্যাসি পুরানো মধুর সম্পর্ককে তিক্ত করে তোলে । সিজারের ক্রমাগত রাজ্য দখলের লড়াই এবং পরিশেষে গল রাজ্যের শাসক বনে যাওয়াকে অনেকেই ভালো চোখে দেখতনা । তারা সিজারকে অভিহিত করত ডিক্টেটর বলে । রিপাবলিকান উপদেষ্টারা সিজারকে দোষারোপ করে ক্ষমতার লোভে উন্মত্ত নেকড়ে কিংবা ডেস্ট্রয়ার অফ দ্যা রিপাবলিক বলে । গায়াস সিজার কঠোর হলেও ছিলেন বিচক্ষণ । পম্পে তাঁর শত্রু হলেও তাঁর প্রতি তিনি ছিলেন যথেষ্ট উদার ।
মূল কাহিনী শুরু হয় ‘লুসিয়াস ভেরাস’ আর ‘টিটাস পুলো’ সিজারের রেজিমেন্টে নিজেদের সৈনিক হিসেবে পদার্পণ করার পর । এই দুজনকে সিজার যে কোন কাজে ভরসা করেন, বিশ্বাস করেন । অসম্ভবকে সম্ভব হয় এদের দ্বারা । দু জন দলে থাকলে জয় নিশ্চিত । কারণ তারা ভালো যোদ্ধা এবং ভাগ্যদেবতা নিজে তাদের সঙ্গে থাকেন । লুসিয়াস ভেরাস কর্তব্যপরায়ণ এবং রুলসের বাইরে একচুলও নড়েন না । এজন্য অনেকে তাঁকে কঠোর এবং একগুঁয়ে মনে করে । কিন্তু ভেতরে লুসিয়াস ভেরাস ছিলেন একজন ভালো মানুষ । ফ্যামিলির জন্য যেমন ডেডিকেটেড তেমনি কাজের ক্ষেত্রেও । কিন্তু এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তিনি তাঁর স্ত্রীকে হারান এবং তাঁর সন্তানেরা তাঁকে ভুল বুঝে । আর টিটাস পুলো আকৃতিতে যেমন বিশাল যুদ্ধক্ষেত্রেও তেমনই প্রমাণ দেন । একাই ছয় সাতজনকে ভূপতিত করার ক্ষমতা রাখেন । সাইজ এবং শক্তি দুই মিলিয়ে যত ভয়ংকরই হোক না কেন তাঁর চেহারার মধ্যে একটা ইনোসেন্ট ভাব আছে । একবার ওর জীবন বাঁচানোর পর থেকেই লুসিয়াস ভেরাসের সর্বসঙ্গী হয়ে যান পুলো । বিপদে আপদে সবসময় একজন আরেকজনের পাশে এসে দাঁড়ান । টিটাস পুলো বিয়ে করেন একজন স্লেইভকে । যাকে শত্রুপক্ষের হাত থেকে উদ্ধার করেন । কিন্তু হিংসার বশবর্তীর শিকারে পরিণত হয় ওর স্ত্রী!
ঐদিকে আতিয়া আর সার্ভিলা দুই সম্ভ্রান্ত পরিবারের দুইজন একজন আরেকজনকে দু চক্ষেই দেখতে পারে না । দুজনেই সিজারের পাণিপ্রার্থী । কিন্তু সিজারের দুর্বলতা থাকে একজনের প্রতি । এই নিয়ে পরস্পরের বাগবিতণ্ডা, কূটনীতি, প্রোপাগান্ডা চরম পর্যায়ে চলে যায় । একজন আরেকজনকে শেষ করে দিতে উঠে পড়ে লাগে । সমস্যা হচ্ছে সিজার সম্পর্ক গড়ায় রাণী ক্লিওপেট্রার সাথে, তার ক্ষমতা বৃদ্ধির লোভে । সার্ভিলা অফ দি জুনির ছেলে ব্রুটাস যোগ দেয় রিপাবলিকানদের দলে । আর আতিয়া অফ দি জুলির ছেলে অক্টাভিয়ান মনোনীত হয় ভবিষ্যৎ সিজার হিসেবে । অক্টাভিয়ান, পিচ্চি একটা ছেলে । কিন্তু এই বয়সেই সে যুদ্ধের স্ট্রেটেজি আর অন্যান্য বিষয়ে ব্যাপক পারদর্শী । সিজারের সেনাপতি মার্ক এন্থনির সাথে ওর মার যৌনসম্পর্ক ও কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা । অবশেষে গায়ান সিজারের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসে অক্টাভিয়ান সিজার । অক্টাভিয়ানের এই ক্ষমতায় বসাকেও মার্ক এন্থনি মেনে নিতে পারেন নি । তবে চতুর এবং তরুণ সিজার অক্টাভিয়ানের সাহায্য নিয়েই হারিয়ে দেয় অবশিষ্ট রিপাবলিকানদের । পরে মার্ক এন্থনির বিপক্ষেও যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে সে ।
প্রাচীন রোমের খুঁটিনাটি জিনিসগুলো খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই সিরিজটিতে । দর্শন, রাজনীতি, ডিপ্লোম্যাসি, গৃহযুদ্ধ, যৌনতা কিছুই বাদ যায়নি । মিথলজিক্যাল টিভিসিরিজগুলোর মধ্যে রোম অন্যতম ।