সেদিন রাস্তায় টং দোকানের সম্মুখে একটি দুর্ঘটনা ঘটে । চেষ্টা করেও আমি আর বাকি চা টুকু গলাধঃকরণ করতে পারলাম না! জীবনে এই প্রথম আমি একটি বীভৎস মৃতদেহ দেখি, পড়ে আছে রাস্তার পাশে । রক্তিম ছিন্ন পোষাকে তার পিষে চলা যন্ত্রণার দাগ । যে কোনো কেমিক্যালই সেই দাগ কাপড় থেকে তুলে ফেলতে পারবে কিন্তু মন থেকে নয় । চশমা পরিহিতা সেই রূপসী কি ভুলতে পারবে তার নিজের দুর্ভাগ্যের কথা? নিথর মৃত দেহটি ছিল একজন ষোড়শীর । তার কপাল আর নাকের অন্তর্বর্তী স্থানে ফ্রেমের ছাপ, ঠোঁটের কোণে লালের শ্লেষ মিলিয়ে গেছে । হয়তো রক্তের কিংবা লিপস্টিকের । ছিন্ন পোশাক, অসংবৃত সংস্করণ আমার জৈবিক অনুভূতিগুলোকে তাড়িত করেনা আজ । বরং কিসের এক অবিস্মিত প্রলংকারি সংজ্ঞা অবাধ্য অনুভূতিগুলোকে সংকুচিত করে রাখে । আমি আজ নির্ভয়ে রাস্তা পারাপারের প্রতিযোগিতায় সোচ্চার হবোনা, বরং আবালবৃদ্ধ আমজনতা থেকে দূরে সরে গিয়ে বহুমূত্রীয় রোগীদের মত ওভারব্রিজ ব্যবহারে সচেষ্ট হবো । সামনে একজন চশমা পরিহিতা মেয়ে । তার পড়নে লেনিয়েন্ট জিন্স আর টপস । মেয়েটি ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পাড়ি দিচ্ছে । আমার বুকের ধড়পাকানি বেড়েই চলল; এই বুঝি গাড়িটা এসে ওকে ধাক্কা মেরে চলে গেলো । কিন্তু না, সে সহজেই রাস্তা পেরিয়ে গেছে । আমি আমার জায়গায় স্থির ।
ফুট ওভারব্রিজ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সিটবেল্ট, হেলমেট ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তাগুলো আমাদের দেশের ত্যাঁদড়েরা যেমন বুঝে না বুঝে একরকম স্কিপ করে যায় তেমনি কেউ কেউ আবার সেগুলোকেই ডিফেন্স হিসেবে আঁকড়ে ধরে । আমিও সেই কেউ কেউরই দলে । অবশ্য আকস্মিক ঘটে যাওয়া সেই দুর্ঘটনার পরে ।
ইদানীং দূরের বস্তুগুলো কেমন ঝাপসা ঠেকে । তাই মাইনাস ফিগারের একটা চশমা নিতেই হলো । যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে ভেবে মোটা ফ্রেমের চশমা নিয়ে ফেললাম । বাহ্ ! কি চকচকে দেখা যাচ্ছে সব; ডিভিডিরিপের দিন শেষ, এখন ব্লুরে প্রিন্টের যুগ ।
সার্বক্ষণিক দশমণ ওজনের একটা ঠুলি পরে থাকাটা অস্বস্তির চরম সীমায় পৌঁছে গেছে ইতোমধ্যে । আবার না ইউজ করলে ক্লাসের প্রোজেক্টর আলো ছাড়া আর কিছুই রিপ্রেজেন্ট করেনা । বস্তুত এই ড্যিলেমায় পড়ে আমি শুধু ক্লাসের ক্ষেত্রে চশমা ইউজ করি আর বাকিসময় ডিভিডি প্রিন্টেড ভিশন নিয়েই ভালো থাকি । আমার এই আকস্মিক পরিবর্তন এবং সাবধান প্রবণ সেন্সকে সুযোগ সন্ধানীরা খোঁচা মারতে ভুলল না । হাবিবের সাথে দেখা হলেই শুনতে হয় একগাল, কীরে শালা শেয়াল থেকে মুর্গী হইয়া গেলি যে! এরকম হাজারো বাক্য উপেক্ষা করে আমি আমার পথেই চলি । কিন্তু ইদানীং যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে কত আর সহ্য করা যায় ! যখন দেখি সহপাঠী মেয়েরাও তাদের দলে সামিল হয়ে আমার এই উদ্যোগকে নন্দলাল বলে পরিহাস করে, হাস্যরসে পরিণত করে । মোটা ফ্রেমের চশমা নাকি আমার ফেইসের সাথে যায়না !
সেদিন পত্রিকা উল্টাতেই চোখে পড়ল ষোল সতেরো বয়সের একটি মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে রাজধানীতে । স্থানীয়রা জানায় এটি নিতান্তই একটি সড়ক দুর্ঘটনা কিন্তু তদন্ত কমটির লোকজন মতপ্রকাশ করে এটি একটি মার্ডার কেইস । মেয়েটিকে খুন করে এনে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে; তার শরীরে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে !!
অসম্ভব ! ধক করে ওঠে আমার বুক । আমার এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে সেদিনের সেই বিভীষিকাময় মুহূর্ত । তবে যা ভেবেছি পুরোটাই কি মিথ্যে ? কিন্তু তা হতে পারেনা । আমি নিজে পর্যবেক্ষণ করেছি তার ক্ষত বিক্ষত দেহ । ছিন্ন বস্ত্র, রাঙ্গাগাত্র এ সবই কি মিথ্যে ? হতেই পারেনা । আচ্ছা মেয়েটির নিস্তেজ মহার্ঘ্য বস্তুগুলো কি আমার স্থিতিশীল মনোগহীনে অর্ঘ্য আরোপ করতে পেরেছিল ? মনে হয়না । তাহলে এ মেয়ে ধর্ষিতা নয়, সাধারণ দুর্ঘটনা; মার্ডারও কিনা সন্দেহ । কারণ তার আকর্ষণ ক্ষমতা সীমিত । যদিও মেয়েটি রূপসী কিন্তু যৌনাবেদনময়ী নয় । আমার এই উদ্যোগ, ত্যাগ বিফলে যাবে তা আমি কখনই হতে দিতে পারিনা । তদন্তে আমাকে নামতেই হবে । ছেলেবেলার তিন গোয়েন্দা, শার্লক আর এখনকার ফেলু মিত্তির আমাকে কোন হেল্প করতে পারলনা । বিভিন্ন পত্রিকা কলাম ইত্যাদি ঘেঁটে যা জানতে পারলাম, মেয়েটি রাজউকের স্টুডেন্ট । বয়স আঠারো যা তার ফিজিক্যাল গ্রোথের সাথে বেমানান । হাতিরপুলে তাদের নিজস্ব বাসা আছে, ওর বাবা একজন ব্যবসায়ী এবং বিশিষ্ট বাড়ীওয়ালা । ও; মেয়েটির নাম সামিয়া । আমাকে আরও জানতে হবে ।
রাজউক থেকে কয়েকটা ছেলে বের হচ্ছে । স্টাইলিশ দাঁড়ি, পিঠে ব্যাগ, চোখে চশমা, হাতে বাজু এই ধরনের ছেলেপেলেদের সাথে কথা বলতে আমার একটু অস্বস্তি লাগে । তারপরও আমি এগিয়ে গিয়ে ওদের একজনকে ডাক দিলাম । কেমন একটা বুনো দৃষ্টিতে তাকাল ওরা । কাছে এগিয়ে আসলো মোটা ছেলেটি ।
কি হইছে? কোনো সমস্যা ??
না, ইয়ে মানে … আপনারা কি সেকেন্ড ইয়ারে পড়েন ?
তা দিয়া আপনার কি? আবে হালায় সামিয়ার খোঁজ নিবার আইছে, পাশের আরেকজন বলে ওঠে । তাইলে ফুটেন; আপনের আগে আরো অনেকেই খোঁজ নিয়া ফালাইসে ।
নিরুৎসাহিত হয়ে আমি আবার ফিরে আসি । কত টিভি চ্যানেল নিউজপেপারের লোকজন আসে তার কোনো হিসাব আছে! যেভাবেই হোক মেয়েটির বাসার ঠিকানা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে । আমি চলে আসি সেই পরিচিত চিরচেনা টং দোকানের বেঞ্চিতে ।
ধূমায়িত চায়ের কাপে চুমুক বসাতে বসাতে একপর্যায়ে টংয়ের মালিক কে জিজ্ঞাস করে ফেললাম, আচ্ছা মামা গত সপ্তায় রাস্তার ঐ পাড়ে যে একটা লাশ পাওয়া গেসিল মনে আছে?
কোন লাশ মামা? ঐ যে মাইয়া মাইনসের লাশ?
হ্যাঁ, হ্যাঁ এক্সেক্টলি ।
আর কইয়েন না মামা । মাইক্রোটা ব্রেক চাইপা ধরসিলো তারপরও ধাক্কা লাইগা মাইয়া পইড়া যায় রাস্তায় । ব্যাস এক্সিডেন্ট একটা ঘইটা গ্যালো ।
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই আমি । আপনি নিজের চোখে দেখসেন মামা?
দোকানদার কেমন একটু মিইয়ে গিয়ে বলে, ঠিক আমি দেখি নাই । তবে আমার ভাইগ্না দেখসে । ওনার ভাইগ্না পাশেই সিগারেট বিক্রি করে । মামা আফনে আবার এসবে আইছেন ক্যান? আফনে থাকবেন লেখাপড়া নিয়া, ভার্সিটি নিয়া । এসবে জড়াইবেন না, খুব খারাপ জিনিস । পুলিশ সন্দেহ করতে পারে ।
দোকানদার কি আমাকে সাবধান করে দিলো না থ্রেট দিলো বুঝতে পারলাম না । চায়ের বিল মেটাতে গিয়ে দেখি পাঁচশো টাকার নোট ছাড়া আর ভাংতি কিছু নেই । দোকানি অবশ্য বলল পরে দিলেও অসুবিধা নেই । কিন্তু নাছোড়বান্দার মত আমি গাঁইগুই করলাম, ভাংতি আমার লাগবেই । দোকানি তার ভাইগ্নাকে দিয়ে পাঠালো ভাংতি আনার জন্য । কিন্তু সে ফিরে এসে বলল, ভাংতি দেয় না ।
কি!! শালা চুদানির পোলা ভাংতি দিবো না মানে, তর বাপে দিবো । মানিক্কা তুই থাক আমি ভাংতি লইয়া আইতাছি । দোকানদারের আকস্মিক উগ্রতায় আমি বিস্মিত । সম্বিৎ ফিরে এলো ওনার ভাইগ্নার ডাকে ।
ভাইজান আফনে ক্যান বইয়া রইছেন আমি সেইডা জানি । মামা আফনের লগে মিছা কইসে ।
তাই নাকি?
হ’ ভাইজান । গত দুদিন আগে এক পার্টি আইসা এই মোড়ের যত দোকান আছে বেবাকেরে ট্যাকা দিয়া গেছে । আর কইছে পুলিশ জিগাইলে যাতে কয়, মাইয়াডা গাড়ির তলে পইড়া মরসে । মামা আইতাছে । এসব কথা কাউরে কইয়েন না । পরে আমি ভাংতি নিয়ে চলে আসি ।
একের পর এক বিস্ময় নিস্তব্দ করে দিচ্ছে দেখি । কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে অজগর বেরিয়ে আসার জোগাড় । নাহ্! আমার পক্ষে আর তদন্ত করা সম্ভব নয় । পরক্ষনেই ভেঙ্গে পড়া শরীরে নতুন উদ্যম ভর করে । অবাধ্য অনিয়ন্ত্রিত সত্ত্বাটা আমার দৃষ্টি পরিস্ফুট করে । জন্মান্তরের সাঁটানো চোখের অদৃশ্য অস্বচ্ছ ঘোলা চশমাটাকে সরিয়ে দেয় নিমিষেই । দশ মণ ওজনের চশমাটা চোখে দিয়ে আমি নতুন মনোবলে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ি কাজে । ইন্টারনেট, ফেইসবুক এবং বিভিন্ন সামাজিক ওয়েবসাইট ঘেঁটে ঐ মেয়ের ঠিকানা বের করে ফেলি ।
অনেক ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে যথাসময়ে আমি উপস্থিত হই ওদের গলিতে । দারোয়ান বসে বসে ঝিমুচ্ছিলো, ডাক দিতেই আড়চোখে তাকাল । আমি জিজ্ঞাস করলাম সামিয়ারা কয়তালায় থাকে । দারোয়ান বিরক্ত হয়ে বলল, ওরা বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে । হতাশার পঙ্গপাল আরো একবার গ্রাস করলো আমাকে ।
তারপর বের হতে না হতেই দেখলাম ষণ্ডামার্কা একলোক আমাকে ইশারা করছে । ভয়ে ভয়ে কাছে গেলাম ।
আপনে কে ভাই? এইখানে কি করেন?
আমি বললাম, কিছুনা ।
ঐ মিয়া ভদ্র ভাষায় কথা বলেন । কিছু না করলে ঐ বাসায় গেছিলেন ক্যান?
অভদ্রতা কি করলাম নিজেও জানিনা , তবে চুপ থাকাটাই শ্রেয় বলে মনে হল । পরক্ষনেই মনে হল- না, ভয় পেলে চলবেনা । সত্য আমাকে উদ্ঘাটন করতেই হবে । এ লোক হয়তো আমাকে সাহায্য করতে পারবে কিংবা সে যে পুলিশের লোক নয় তাই বা কে জানে । হয়ত আড়াল থেকে লক্ষ্য রাখছে- কে আসে কে যায় ।
সাহস করে বলেই ফেললাম, ভাই আমি সামিয়ার মৃত্যুরহস্য সম্পর্কে তদন্ত করছি ।
আপনে কি পুলিশের লোক ?
কেন জানি মিথ্যে বলে ফেললাম, হ্যাঁ ।
লোকটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল আমার দিকে ।
ফাইজলামো করেন? চেঁচিয়ে উঠলো লোকটি ।
জী? ......
ভাগেন এইখান থেকে ।
আমি স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম ।
ঐ হালা কথা কানে যায়না? তেড়ে আসতে লাগলো এবার লোকটি । আমি আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালাম না । পেছনে শুনতে পেলাম লোকটি চেঁচাচ্ছে, আর কোনদিন যদি ধারেকাছে দেখি সাইজ কইরা ফালাইমু কইয়া দিলাম ।
সান্ধ্যকালীন চা আড্ডায় আমি কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছিলাম না । আমার মন পড়ে আছে সামিয়ার দিকে । কি সুন্দর নিষ্পাপ মুখখানা, বার বার নাড়া দেয় মনকে । ক্লান্ত লাগছে খুব, দৌড়াদৌড়ী করেই সারাদিন গেলো । কি লাভ হলো? সবটাই পণ্ডশ্রম । সম্বিৎ ফিরে আসিফের ডাকে, কিরে বিল দিবিনা? আজকে তুই দিয়ে দে মামা পকেট একদম খালি, বললাম ওকে ।
হইসেটা কি তোর বলতো? দেখে তো মনে হয় দুইরাত ঘুমাস নাই, হাবিব সুধায় ।
আর বলিস না দোস্ত । সামিয়ার কেইস, ঐ যে মেয়েটা রাস্তার ধারে যার লাশ পাওয়া গেসিলো ।
আস্তে ... বলে চারপাশে তাকিয়ে আসিফ নিচু স্বরে বলা শুরু করে, এসব কথা এরকম খোলা জায়গায় বলবি না । আর ভুলেও সামিয়ার নাম মুখে আনবি না । শালার লাইফটাই নষ্ট কইরা দিলো থার্টি ফার্স্ট নাইট ।
মুহূর্তে চক্কর দিয়ে ওঠে আমার মাথা । আমার মনে পড়ে সেদিন ছিল নতুন বছরের প্রথম দিন । যেদিন সামিয়ার লাশ পাওয়া যায় । ক্যান দোস্ত ? থার্টি ফার্স্ট নাইটে কি হইসিল?
সাধু সাজার চেষ্টা করিস না, হাবিব বলল চোখ গরম করে ।
কিছু না বুঝে বোকার মত তাকিয়ে থাকলাম আমি । ঠিকই তো থার্টি ফার্স্ট নাইটে কি হইসিল ! একি !! মনে করতে পারছিনা আমি । একটা রাত বেমালুম উধাও হয়ে গেলো আমার স্মৃতিভান্ডার থেকে । আমি একদিন পরে একদিন পেছনে যেতে থাকি, রিওয়াইন্ড করতে থাকি সব । আসলে কি এমন ঘটেছিল সেদিন, যা আমার অবচেতন মন জানতে দিতে চাচ্ছে না আমাকে । বহুচেষ্টার পর আমার আবছাভাবে মনে পড়ে, আগের দিন আমরা প্ল্যান করেছিলাম । এই আমাদের শেষ সেমিস্টার, বছরের শেষ রাত্তিরে অন্য সবার মত একটু আনন্দ ফুর্তি না করলেই নয় । আমি কখনই ব্যাড এডিক্টেড ছিলাম না । এ নিয়ে সবাই একটু আধটু খোঁচা মারত ।
ফয়সাল আমাকে ব্রেইন ওয়াশ দিলো, আরে ব্যাটা এই জীবনে আর বাঁচবি কয়দিন । তার আগে জীবনের স্বাদটা নিয়া নে । একবার খাইলেই তো নেশা হয়না, তুই তো শুধু স্বাদটা চাখবি ।
নারে ভাই, আমার পিনিক হবার কোনো ইচ্ছা নাই । কি লাভ এসবে, কি উপকার আছে এই সাময়িক ঘোরগ্রস্থতায় ।
তাইলে তুই কিছুই জানস না । এই পৃথিবীতে ক্রিয়েটিভ বলে কিছু থাকতো? যদি হুইস্কি পাওয়া না যাইত? আমাদের জারিফ ইউ এস এ তে স্কলারশিপ পাইত? যদি না পুঁটলি না থাকতো । আরে বেটা অনিও তো ওয়েভার মিস করতো যদি না সে বাবার আশীর্বাদ নিতো । শেক্সপিয়র, হেমিংওয়ে আমাদের মধুসূদন ওরা আজ কি জন্য বিখ্যাত জানিস? মিড নাইট ইন প্যারিস মুভিটা তো দেখছস, নাকি?
এর পরে আর কোনো কথা থাকে না । আমি নিমরাজি হলাম । তারপর আর আমার কিছুই মনে নেই । আশ্চর্য!!
গুলশান বনানী সব চইষা ফেললাম । আর তুই কস তোর কিছুই মনে নাই । ফাজলামি করস ব্যাটা ? আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠে আবারো ।
গতকালকের পেপার পড়ছস?
আমি মাথা নাড়াই ।
সে মুচড়ে থাকা পত্রিকার কার্টিং টা আমার দিকে এগিয়ে দেয় । আমি লেখা গুলোর দিকে তাকাতে গিয়ে দেখি ঝাপসা লাগছে । হঠাত হাত দিয়ে দেখি চশমাটা নেই ! কষ্ট করে পড়লাম; ষোল সতেরো বয়সের একটি মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে রাজধানীতে । স্থানীয়রা জানায় এটি নিতান্তই একটি সড়ক দুর্ঘটনা কিন্তু তদন্ত কমিটি সংস্থা মতপ্রকাশ করে এটি একটি রেইপ কেইস । মেয়েটিকে ধর্ষণ করে এনে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে; তার শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে !!
আমূল পরিবর্তন এসেছে লেখাগুলোয় । আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি ।
এবার বাংলাদেশ প্রতিদিন কাগজের কার্টিংটা এগিয়ে দেয় ফয়সাল ।
আমি দেখি র্যাব সন্দেহ করেছে, আগেরদিন রাতে দুর্বৃত্তরা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে ভোরে গাড়ী করে এনে রাস্তায় ফেলে রাখে চলে যায় অবচেতন মেয়েটিকে । মেয়েটির বাবা শহরের একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি । তিনি পারিবারিক মানসন্মান রক্ষার্থে ব্যাপারটিকে ধামাচাপা দিতে গিয়ে বেআইনি পন্থার শরণাপন্ন হয়েছিলেন । মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়াটা বহু কষ্টে ঠেকালাম আমি ।
চশমা পড়ুয়া মেয়েটি কি দেখতে পায়নি ওদের গোপন অভিসন্ধি? নাকি আমারই মত জন্মান্ধ, অস্বস্তিকর একটা ঘোলা চশমা দিয়ে তাকিয়েছিলো সে ।
এই তোরা কি চশমা পরে ছিলি ঐদিন?
কী? অবাক হয় সবাই । তাদের দৃষ্টিতে আমি দেখতে পাই নিজের এবনরমাল সেন্সেবিলিটি ।
কি নিষ্ঠুর এই পৃথিবী । অদৃষ্টের এই অস্বচ্ছ ঘোলা কাঁচ তাদেরকে জন্মান্ধ করে রেখেছে । আসল সত্যটা কেউ জানতেও পারেনি । দশ মণ ওজনের একটা ভারী ফ্রেমের চশমা দিয়েই কি সকলে তাকিয়ে দেখে এসব ? জানিনা অস্বচ্ছ কাঁচের ওপারে কি রহস্য লুকিয়ে আছে, হয়তো এরকম আরো কোনো কুৎসিত অপ্রিয় নির্মম সত্য, কিংবা একটি সুন্দর পৃথিবী ।
___________
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬