প্যান্ডেমোনিয়াম ( কল্প কাহিনী)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
একটি প্রজাপতি ছটপট করছে ঘাসের ওপর । নির্জন বিকেল, বিস্তীর্ণ মাঠের এক পাশে কাশফুলের ছড়াছড়ি । হালকা একটু বাতাস ছুঁয়ে দিয়ে গেলো প্রজাপ্রতির রঙিন ডানাদুটো । ডানাগুলো পিটপিট করে বারকয়েক কাঁপল যেন । কি আশ্চর্য !! প্রজাপতিটা উড়ে চলে গেলো, বায়ুস্তরে একটা আঁকাবাঁকা ঢেউয়ের ছাপ রেখে! কিন্তু বেশিদূর যেতে পারলো না বেচারা । গিয়ে বসেছিলো একটা কাঠগোলাপের ডালে; গুপ্তঘাতকের মত শিকারী লিজার্ডটা ডালের সাথে সবুজ বুক মিশিয়ে একটু একটু করে এগোচ্ছিল । উত্তেজনায় খুব ধীরে ধীরে লেজ নড়ছে শিকারির ।তারপর অপেক্ষা...... ।
অকস্মাৎ বিদ্যুৎগতিতে ছুটে আসে ভেজা আঠালো জিব । ক্রমশ টেনে নিয়ে যেতে থাকে অন্ধকার মুখগহ্বরের দিকে । পিত্ত রস ধীরে ধীরে পাচক করে তোলে তার তুলক পতঙ্গ দেহ এবং খসখসে ডানাদ্বয় ।
*
বিষণ্ণ আর হতাশার জড়াজড়িতে মনোগর্ভে যে জাইগোট সৃষ্টি হয় তার নামটা জানা নেই ইরিনার । তবে সেই জাইগোট ভ্রূণে রূপান্তরিত হলে সে বুঝতে পারে এর নাম অস্থিরতা । হাতের কাছে ভিডি ডিভাইসটা বেজে ওঠে হঠাৎ, কিন্তু রিসিভ করে না ইরিনা । ওপর প্রান্তে ক্লিওন চেষ্টা করেই যায় ।
#
ডঃ নরম্যান ক্রাউন ল্যাবে গিয়ে দেখেন টেবিলের ওপর একটা ফাইল পড়ে আছে । ফাইলটা খুলতেই একটা মেসেজ চোখে পড়ল ।
“আমাকে আপনি হয়ত চিনবেন । নর্থ ডাকোটার বেল রিসার্চ সেন্টারে আমরা একসাথে কাজ করেছিলাম, মনে আছে? যাই হোক; সম্প্রতি আমি গোপনসূত্রে আপনার কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর গবেষণা সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছি । কিন্তু আমি অনুমান করতে পারছি আপনি কি নিয়ে রিসার্চ করছেন ।
এই মহাবিশ্ব এবং আমাদের জীবনচক্রের আর্কেনাম খুঁজে বের করাটা কিন্তু অত সহজ নয় । যদি কেউ করতে পারে তবে সে ঐশ্বরিক রহস্যও পেয়ে যেতে পারে । প্রোবাবিলিটি, টাইম ও স্পীড নিয়েই আমাদের এই প্রাইমারী ইউনিভার্স । আমার দীর্ঘ জীবনে এ নিয়ে আমি অনেক গবেষণা করেছি । কিন্তু এর ফলাফল যে কতটা বিমুখ সেটা কল্পনাযোগ্য নয় । তাই আমি ঠিক করেছিলাম এর মূল সূত্রগুলো কাউকেই জানতে দেবো না, পুড়িয়ে ফেলবো । কিন্তু যখনই আমি আপনার সাফল্য ও অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত হলাম, তখনই বুঝতে পারলাম শত চেষ্টা দ্বারাও এটা গোপন রাখা যাবেনা সত্য । রহস্য একদিন উন্মোচন হবেই; এ প্রজন্মে না হলে পরের প্রজন্মে । তারচেয়ে এক প্রজন্মে আগে হওয়াটাই ভালো, কি বলেন? তাই আমি এই অটল সিদ্ধান্তে স্থবির থেকে আমার জীবনের সকল গবেষণা ও রিসার্চের ফলাফলগুলো আপনাকে দিয়ে গেলাম । মনে রাখবেন এগুলো শুধু ধ্বংসই বয়ে আনবে । কিন্তু এটাও মনে রাখবেন ধ্বংসই কিন্তু সৃষ্টির মৌলিক ধারাপাত । এক প্রজন্ম উন্নতির শিখরে পৌছায় আরেক প্রজন্ম কে মাড়িয়ে ! ধ্বংস মানেই মৃত্যু নয়, আর মৃত্যু মানেই সবকিছুর শেষ নয় । বরং শুরু” ।।
পড়ে কিছুই বুঝলেন না নরম্যান । তবে এটা বুঝা যায় লোকটি মৃত্যুর আগে জীবনের স্বাদ মিটিয়ে গেছে । নইলে সে মৃত্যু নিয়ে এতটা উদগ্রীব হতো না । কিংবা হতে পারে জীবনের বিতৃষ্ণা আর ব্যর্থতার গ্লানি তাঁকে ঠেলে দিয়েছে জীবন মৃত্যুর এক দোদুল্য সমপ্রান্তিক অবস্থানে । কিংবা এর বিপরীতও হতে পারে । কি মনে করে আজকের পত্রিকাটা উল্টে দেখলেন তিনি, চোখের কোণায় ধরা পড়ল অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুখবরটি ।
ডঃ হার্মান গতকাল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন; মর্গে তাঁর রক্ত ও অস্থি পরীক্ষা করে বিষাক্ত ক্যামিকেল পাওয়া গেছে ।
অনেকক্ষণ নড়াচড়া করতে পারলেন না তিনি । অবশেষে দীর্ঘশ্বাসটা ফোঁস করে দানা বাঁধা অজগরের মত ফুসফুসের গুহা থেকে নাসিকাগ্রন্থের টানেল বেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে । এরকম আত্নবিশ্বাসী ও সবল মনের একজন মানুষ কিভাবে এরকম আত্নহন্তারক পন্থা বেছে নিল? নিজেকেই প্রশ্ন করলেন যেন নরম্যান । ভেবে কূলকিনারা করতে পারলেন না ।
বিষাদ নিয়ে ফাইলের পরের পৃষ্ঠাগুলো উল্টে দেখতে লাগলেন তিনি । তার পরের কয়েক পৃষ্ঠা ধরে শুধু জটিল সব সমীকরণ । আর স্থির থাকতে পারলেন না তিনি, তৎক্ষণাৎ এগুলো সল্ভ করতে বসে গেলেন । শৈশব থেকে এই স্বভাব নিয়ে চষেছেন নরম্যান; যেকোনো জায়গায় কোনও প্রবলেম দেখলেই সল্ভ করতে বসে যাওয়া । না করা পর্যন্ত ঘুম আসবেনা । এই একবসাতেই রাত পেরিয়ে বিকেল হয়ে এল । নরম্যান চলমান রাশিগুলোর কিছু ডিফারেনশিয়াল মান পেলেন । কিন্তু এতে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না কিছুই, বিরক্ত বোধ করতে লাগলেন তিনি; আর তখনই টের পেলেন প্রচণ্ড ক্ষুদা পেটের মধ্যে ড্রাম বাজাচ্ছে । খেতে যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে তাঁর মনে পড়ল সম্ভাব্যতা, গতি, বল ও সময় নিয়ে প্রাইমারী ইউনিভার্স ! সম্ভাব্যতা মানে কোয়ান্টাম ফিজিক্স আর বাদবাকি গতি সময় ও বল হচ্ছে রিলেটিভিটি ।
কফির মগ প্যাডে রাখতে গিয়ে অসাবধানতা বশত সেটি ভূপতিত হয়ে ছড়িয়ে যায় চারপাশে । স্প্লিন্টারগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ নরম্যান । মস্তিষ্কের কোষগুলোতে হঠাৎ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ স্পার্কখায় যেন । ভাঙ্গা টুকরো গুলো ন্যাচারালই যে ক্রিটিকাল পাথ সৃষ্টি করেছে তা পর্যবেক্ষণ করে তিনি পান এক যুগপৎ সমীকরণ ! প্রত্যেকটি ভাঙ্গা টুকরোর ভর বের করলেন এবং উচ্চতা অনুযায়ী গতিও নির্ণয় করলেন । সেই সাথে সময়; একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে নির্দিষ্ট ভরসম্পন্ন দৃশ্যমান বস্তুটির পতন ঘটতে কতক্ষণ সময় লেগেছে? উত্তর বের করে ফেলেছেন নরম্যান । মাত্র .৩৩ মিলি সেকেন্ড !
ঐ নির্দিষ্ট বস্তুটির গতিবেগ কে ভর দ্বারা গুণ করলেন তিনি, বর্তমানের হাইস্পিড সুপার কম্পিউটারে এতে সময় লেগেছে .৩৭ মিলি সেকেন্ড । স্তব্ধ হয়ে গেলেন নরম্যান ! আমরা সুপার কম্পিউটারের চাইতেও অনেক গতিতে অগ্রসর হচ্ছি ! তারমানে আমাদের সময় খুব দ্রুত চলছে । সুপার কম্পিউটারকে যদি একটা ইউনিভার্স ধরি তাহলে সেখানে সময় হবে আরো স্লো । কিন্তু তা কি করে সম্ভব!! হতবম্ভ হয়ে গেলেন নরম্যান । উই আর টেম্পোরারি । তাহলে ডঃ হার্মান ও কি এই একই জিনিস উপলব্দি করে গেছেন? এখন যদি এই থিওরিটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যায় তাহলে একটা গ্যাঞ্জাম বেঁধে যাবার সম্ভাবনা আছে । হার্মান সাহেব কি এটাকেই ধ্বংসযজ্ঞের সংজ্ঞা দিয়ে বুঝাবার চেষ্টা করেছেন? আর ভাবতে পারলেন না নরম্যান । তাঁর এই ক্ষুদ্র মগজে এই বিশাল ব্যাপারখানা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার মত প্রয়োজনীয় মজুদ নেই । তবে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছেন, এখনো সময় হয়নি জানানোর ।
মাথাটা ঝিম ঝিম করছে, অবসন্ন দেহ লুটিয়ে পড়তে চাইছে, ক্লান্তির সাথে সাথে শারীরবৃত্তীয় জৈবিক প্রয়োজনীয়তাগুলোও তাদের দাবী উত্থাপন করে চলছে । কিন্তু নরম্যানের একাগ্রতা, চিন্তা চেতনা ও মনোনিবেশের স্বৈরাচারী প্রতিনিধি দল নির্বিচারে তাদের গুলিবর্ষণ করতে থাকে। ফলে তারা তাদের অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে উধাও হতে থাকে । কিন্তু কতক্ষণ; দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সামান্য ম্যাচের কাঠিও হয়ে ওঠে বিধ্বংসী শেল !
প্রচন্ড উত্তেজনায় একটা হার্ট বিট মিস করেন নরম্যান; বুকে ব্যথা নিয়ে তিনি ঘুমুতে যান । দীর্ঘদিন পর একটা পরিপূর্ণ পরিতৃপ্তির ঘুম দিলেন । আর জাগলেন না । সারাজীবনের নিদ্রাঘাটতি পুষিয়ে নেবার একটা সুযোগ মিলে যায় ।
*
ক্লিওন ভয়েজ মেসেজ পাঠিয়ে ইরিনাকে জানিয়ে দেয় সে কোথায় অপেক্ষা করছে । ক্লিওন অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে পড়ে । আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে লাস্যময়ী করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলো না, জাস্ট সিল্কি চুলগুলোয় একটু আঁচড় দিয়ে নিলো ।
গ্লোরিয়া পার্কের এককোণায় ক্লিওনকে একা একা বসে থাকতে দেখলো সে । চোখে থ্রিডি অটো প্রোজেকশন গ্লাস । ইরিনা আসতেই সে গ্লাসটা খুলে ফেলল ।
তোমার আসতে দেরি হবে ভেবে টাইম পাস করছিলাম, মুভিটার আর একটু বাকি আছে, তবে আর দেখতে ইচ্ছা করছে না; জঘন্য !!
ইরিনা কিছু বলছে না দেখে গলা খাঁকারি দিলো ক্লিওন, কি হয়েছে মন খারাপ?
ইরিনা বিরক্ত চোখে তাকালো । দেখে আন্দাজ করতে পারছো না?
হয়েছেটা কি বলবে তো ।
কি হয়নি তাই বলো । আজকে আমি ড্যাডির ক্রিস্টাল রিডারে কিছু পুরানো ডকুমেন্টের অনুলিপি খুঁজে পাই । বলা হয়ে থাকে এগুলো অনেক আগের, অন্তত দুশো বছর আগের ।
বলো কি? ইন্টারেস্টিং তো! বলে ওঠে ক্লিওন । তারপর?
কথার মাঝখানে কথা বলবে না তো, বিরক্ত হয় ইরিনা ।
তারপর আমি এগুলো পড়তে গিয়ে দেখি এনসিয়েন্ট ইংলিশে লেখা । তারপরও কিছু কিছু বুঝতে পেরেছি । কিন্তু শেষ করার আগেই হঠাৎ ড্যাডি এসে দেখে ফেলে । আমার হাত থেকে কেড়ে নেয় জিনিসটা; আমি কি এমন মহাপাপ করে ফেলেছি? আড়চোখে দেখে ক্লিওন মাথা নাড়িয়ে সায় দিচ্ছে ।
আচ্ছা যেটুকুই পড়েছ, কি জানতে পারলে? কৌতূহলী হয়ে ওঠে ক্লিওন ।
কিচ্ছু না । পুরোটা জুড়েই জটিল সব অংক আর সমীকরণ; আক্ষেপের সুরে বলে ওঠে ইরিনা ।
তাই নাকি? খুশি হয়ে ওঠে ক্লিওন । আমার ধারণা এগুলো জটিল কোন আলফাবেটিক কোড । আদি পৃথিবীর রহস্য! তাহলে একদিন চুরি করে ক্রিস্টালের ডকুমেন্টগুলো কপি করে ফেলো । তখন দেখা যাবে কি সেগুলো ।
তুমি তো মড়া ইঁদুর দেখলেও এতে রহস্যের গন্ধ পাও! বিদ্রূপ করে বলে ইরিনা । চুপসে যায় ক্লিওন । অনুতপ্ত হয় ইরিনা, প্লীজ ডোন্ট মাইন্ড বেইবি; তোমাকে হার্ট করার ইচ্ছা ছিলো না আমার ।
আই ডোন্ট কেয়ার, মুখ ঝামটা দিলো ক্লিওন । আমি শুধু চাই তুমি যে ভাবেই হোক ঐগুলো উদ্ধার করবে ।
তুমি কি ভাবছ আমি তা করিনি? আমার ফ্ল্যাশজেক্টরে সব সংরক্ষিত করা আছে । ড্যাডির পায়ের শব্দ শুনেই আমি সেগুলো কপি করতে থাকি । তবে কি সেগুলো, কিসের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে সেটা উদ্ধার করতে পারলাম আর কই?
আরিব্বাস! গুড জব লেডি । এ কথাটা আগে বললেই তো পারতে । উদ্ধার করতে পারো নি, তাই এত মন খারাপ? ব্যাপার না । কই ফ্ল্যাশজেক্টরটা দাও, এখনই ক্রিপ্টোগ্রাম গুলো ডিসাইফার করে দিচ্ছি । আর তর সইছেনা ক্লিওনের ।
কিন্তু ওটা তো আনতে ভুলে গেছি । ঠিক আছে মেইল করে দেবো তোমাকে ।
বাসায় এসে দেখে ইরিনা ছোটো ভাই দ্রাউসের মন খারাপ । জিজ্ঞাস করে জানতে পারে সে ওর ত্রিমাত্রিক মুক্ত প্রোগ্রামটা নষ্ট হয়ে গেছে । কেন?
দেখনা আপু হাই ডেফিনেশনের গ্রাফিক্সে এত কষ্ট করে এনিমেটেড প্রজাপতিটা ক্রিয়েট করলাম । আর শালা লেমিনের গিরগিটি আমারটা কে খেয়ে দিলো । ও আবার বলে কি এটা নাকি ভার্চুয়াল ইকোসিস্টেম ।
তোদের এইসব প্যাঁচাল আমি কম বুঝি । আমার কাছে এসব বলতে আসবি না । বিরক্ত হয়ে সরে যায় ইরিনা ।
আরে শোন না, এই প্রোগ্রামের নিজস্ব স্বকীয়তা আছে । পেছনে থেকে বলতে থাকে দ্রাউস । আমরা সবাই একটা করে সাবজেক্ট শেয়ার করলাম । আর এতেই তৈরি হয়ে গেছে একটা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড । বুঝলি, সবই প্রযুক্তি ।
অনেক রাতে ক্লিওনের ফোনোডিভাইস আর্তনাদ করে ওঠে । ডকুমেন্টটি এক্সট্রেক্ট করে ভি এম ডি স্ক্রিনে ইঞ্জেক্ট করে ক্লিওন । সিনাপ্সুঘুঁটিয়াটা অন করে দিয়ে এবার নিবিষ্ট চিত্তে মনোনিবেশ করে এতে । সফটওয়্যারের সাহায্যে এনসিয়েন্ট ইংলিশ কে নতুন ভার্সনে ট্রান্সলেট করে নেয় । পড়তে সুবিধা হচ্ছে এখন ।
পৃথিবীর সকল এনসাইক্লোপিডিয়া দিয়েও এর সমাধা করতে পারলো না ক্লিওন । শুধু এটুকু বুঝতে পারলো ব্যাপারটা নিয়ে তুমুল হৈচৈ হবে পৃথিবীতে । অনেকক্ষণ চিন্তা করে ক্লিওন আবিষ্কার করলো, এর সমাধান একজনই করতে পারে । তা হচ্ছে এ যুগের জন ন্যাশ বলা হয় যাকে, ডঃ ল্যুভনস্কি ।
পরেরদিন খবর নিয়ে জানতে পারে ক্লিওন, ডঃ ল্যুভনস্কি জরুরী একটা সেমিনারে গেছেন । ওনার পাবলিক মেইলে জিনিসগুলো পোষ্ট করে দিলো ক্লিওন । ইরিনাকে ফোন করার জন্য ডিভাইসটা হাতে নিতে না নিতেই ফোন বেজে ওঠে । ইরিনা!
রিসিভ করতেই উত্তেজিত বাক্যালাপ কানে আসে ওর, ডিসপ্লে স্ক্রিনে ইরিনার ভীতসন্ত্রস্ত মুখ দেখা যাচ্ছে । ইরিনা ফুফিয়ে বলা শুরু করলো, ভয়ঙ্কর কান্ড ঘটে গেছে, ড্যাডিকে কারা যেন গুলি করেছে ! তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো ।
যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব এসে পৌঁছায় ক্লিওন । যতদূর জানতে পারলো গুলি লেগেছে কাঁধে এবং পেশী ছিঁড়ে সেটি বেরিয়ে গেছে । ওনার জ্ঞান ফেরেনি এখনো । এখন ওর একটাই কাজ উদ্বিগ্ন মেয়েটিকে সান্ত্বনা দেয়া । কিন্তু অশান্ত ইরিনা আরো উত্তেজিত হয়ে পড়ে ।
আমি জানি আজ কেন ড্যাডির এ অবস্থা । ডকুমেন্টগুলোর জন্যই ওরা তাঁকে গুলি করেছে । তুমি সেগুলো সল্ভ করতে পেরেছিলে? আকস্মিক প্রশ্ন করে ইরিনা ।
এক মুহূর্তের জন্য ঘাবড়ে যায় ক্লিওন । পরমুহুর্তেই পাল্টা প্রশ্ন করে, ওরা কারা? তুমি কি কিছু গেস করতে পারছ?
ওরা সিক্রেট এজেন্সের লোক । অনেক আগে থেকেই আমাদের গতিবিধির ওপর লক্ষ্য রাখা শুরু করে । ড্যাডি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন এরকম সাঙ্ঘাতিক কিছু ঘটে যেতে পারে । কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটে গেলো সব, বলে আবার ফুফিয়ে কাঁদতে শুরু করে ইরিনা ।
ক্লিওন বুঝতে পারছে না ডকুমেন্টগুলো ডঃ ল্যুভনস্কি কে দেওয়াটা ঠিক হয়েছে কিনা ।
ডঃ ল্যুভনস্কির সেক্রেটারি অন্যান্যদিনের মতই বিরস মুখে মেইল চেক করছে । মুখ ঘুরিয়ে সে বলে ওঠে; স্যার কেউ একজন সমাধান চেয়ে সাহায্য চেয়েছে, বলেছে এটা আর্জেন্ট ।
ল্যুভনস্কি বলেন, বাদ দাও তো । এরকম কতজনেই কত রিকোয়েস্ট চেয়ে পাঠায় । আর গুরুত্বপূর্ণ কিছু না পেলে ক্লোজ করে দাও ।
স্যার আপনি তো প্রতিদিন এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি মেইলটি বাছাই করে পড়েন, আজকে পড়বেন না?
মানা করতে গিয়েও বলে ফেলেন, তোমার কাছে যেটা সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট মনে হয়েছে সেটাই দাও দেখি ।
হাতের একঝটকায় ক্রিস্টাল মনিটর থেকে ছোট্ট স্ক্রিনে ডকুমেন্টটি ট্র্যান্সফার করে ফেলে সেক্রেটারি । এই নিন স্যার, এটাকেই মনে হচ্ছে লাকি ।
ল্যুভনস্কি হাত বাড়িয়ে ডিসপ্লেটা নিলেন । চোখ বুলাতে শুরু করলেন । ক্রমেই তাঁর আই মুভমেন্ট র্যাতপিড হতে লাগলো, শ্বাস প্রশ্বাসের গতিও প্রখর হতে শুরু করেছে । প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে স্টাডি চেম্বারে চলে গেলেন তিনি ।
পরেরদিন; ল্যুভনস্কি সোসাইটিতে সমীকরণগুলো নিয়ে তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনা চলছে । প্রত্যেকেই নিজস্ব ভিউপয়েন্ট থেকে মতামত দিলেন । আবারো এক্সপেরিমেন্ট হলো, কিন্তু ফল অপরিবর্তিতই থাকল ।
এই মার্বেলটি আড়াই মিটার উচ্চতা থেকে নিচে পড়তে সময় লেগেছে মোট .২৫ মিলি সেকেন্ড । যেহেতু মার্বেলটি গোলাকার, বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী চাপ এর গতিতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি । তাই সমভরের অন্যান্য বস্তুর চেয়ে এর গ্র্যাভিটি ফোর্স আরো বেশি আসবে । যাই হোক এর ভর আর গতির গুণফল বের করতে বর্তমান যুগের নিউরাল কম্পিউটারের সময় লেগেছে .৩৮ মিলি সেকেন্ড ।
নিঃশ্বাস ফেলতে ভুলে গেছে সবাই । অসম্ভব! এর মানে কি? কেউ একজন বলে ওঠল । আমাদের আধুনিক শক্তিশালী উন্নত প্রযুক্তির কম্পিউটার তৃতীয় প্রজন্মের একটি নিম্নবিত্ত কম্পিউটারের চেয়েও দুর্বল?
ব্যাপারটাকে একটা লজিকে দাঁড় করানো যেতে পারে, বলে উঠলেন একজন তরুণ কম্পিউটার প্রকৌশলী ।
কি সেই লজিক? জিজ্ঞাস করলেন একজন প্রবীণ পদার্থবিদ ।
আপনি বলুন তো দেখি, ২৯ × ১২ কত হয়? কাউন্টার এটাক করে বসল যুবক ।
অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন প্রবীণ । খেঁকিয়ে উঠলেন, পেয়েছেন কি আপনি?
প্লীজ রাগ করবেন না, আপানাকে হেনস্তা কোন ইচ্ছাই আমার নেই । শুধু একটা জিনিস প্রমাণ করতে যাচ্ছি ।
প্রবীণ মনে মনে অনেকক্ষণ চেষ্টা করে থতমত খেয়ে আরেকজন গণিতবিদকে জিজ্ঞাস করলেন, আপনি বলুন তো কত হয়?
অনেকক্ষণ হিসাব করে তিনি বললেন ৩৩৮ । গুণ করে দেখা গেলো একটুর জন্য হয়নি । উত্তর হবে ৩৪৮ ।
তরুণ প্রকৌশলী আবার বলতে শুরু করলেন তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, জটিল সব চিন্তা ভাবনা এবং প্রযুক্তি নির্ভরতা আমাদের মস্তিষ্কের ফান্ডামেন্টাল নিউমারিক্যাল ফাংশন অকেজো করে দিচ্ছে । আসলে প্রযুক্তি আমাদের গতি দিয়েছে ঠিকই কিন্তু করে তুলছে বিকলাঙ্গ ।
একই জিনিস কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও বলা যায় । নিউরাল কম্পিউটার দিয়ে এরকম গুণ ভাগ কে করতে যায় বলুন? বেচারা এতে অভ্যস্ত নয়, আপনারা যেমন নন ।
তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে আমাদের গতি প্রকৃতি নিউরাল কম্পিউটারের চেয়েও ফাস্ট? বিদ্রূপ করে বলল একজন । বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করতেই আমার রোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে, বললেন ল্যুভনস্কি ।
এই ডকুমেন্টটা শীঘ্রই গভমেন্টের সিকিউরিটিতে রেখে দিতে হবে । কারণ এই আর্টিকেলটা পাবলিশ হওয়ার পর এর ওপর হামলা আসতে পারে । সবার মতান্তরে এই ডকুমেন্টের সংশ্লিষ্ট সব কিছু সেন্ট্রাল ব্যাংকে রাখার জন্য এপ্লিকেশন করা হলো ।
হাউ টেরিবল! আর্টিকেলটা পড়তে পড়তে আনমনে বলে ওঠে ইরিনা । ত্বকে চিমটি কেটে ককিয়ে ওঠে সে । বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে । আমাদের সময় এত কম! আমরা এত স্পিডি! ভাবাই যায়না । কিন্তু দেখো, সময় আমার একদমই কাটতে চায় না । বলে হাঁসা শুরু করলো সে ।
সায় দেয় ক্লিওনও । বলেছিলাম না, এটা নিয়ে পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি হবে । মানুষ এখন যে কোনো অপরাধ করতে কুণ্ঠা বোধ করে না । টেররিস্টরা প্রকাশ্যে হামলা চালাচ্ছে, ধর্ষকরা প্রকাশ্যে রেপ করছে । আইন শৃঙ্খলা ওদের দমিয়ে রাখতে পারছে না । এইতো সেদিন এক ছিনতাইকারী স্বগতোক্তি করে দু দিনের জীবনে আনন্দ ফুর্তি যা ইচ্ছা তা করার । প্রতিবেশী দেশগুলো অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী দেশগুলোতে হামলা চালাচ্ছে, তেল খনিজ, রিসোর্স যা পাচ্ছে প্রিডেট করছে, ধর্মীয় উপসনালয়গুলো পরিণত হচ্ছে ভাগাড়ে । যে যেখানে পারছে সেখান থেকে লুটপাট চালাচ্ছে । একটা নারকীয় স্থানে পরিণত হচ্ছে পৃথিবীটা ।
শুনে একটুও ঘাবড়ালো না ইরিনা । বরং তেজস্বিনীর মত ফুঁসে উঠলো আরো । আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে ক্লিওন । শীঘ্রই, সময় কম ।
অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো ক্লিওন, কি করতে যাচ্ছ তুমি?
বর্তমানের এই শঙ্কটময় অবস্থাতে যে কেউ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে পারবে, তারা স্বেচ্ছায় সম্ভাষণ জানিয়েছে; সাহায্য চেয়েছে আমাদের । তুমি কি সাহায্য করতে প্রস্তুত?
ভীতসন্ত্রস্ত ক্লিওন একটি মেয়ের এই চেতনা বোধ দেখে নিজেকে আর ফিরিয়ে নিতে পারলো না । যাই হোক নিজেকে কাপুরুষ প্রমাণ করার কোনো ইচ্ছা নেই ওর ।
দূরে কোথাও বিস্ফোরণের আওয়াজে পুরো জগত কেঁপে উঠলো যেন । ইরিনা আর ক্লিওন দৌড়ে গিয়ে যোগ দেয় সামরিক ক্যাম্পে । তাদের হাতে নির্দ্বিধায় তুলে দেয়া হয় শক্তিশালী বিধ্বংসী মারণাস্ত্র ও এটমিক ব্লাস্টার, সেই সাথে আরো প্রয়োজনীয় ও প্রতিরক্ষামূলক ইন্সট্রুমেন্ট। শক্তিশালী কিছু আধুনিক ট্যাংক ও রণকৌশলী রোবটও তাদের দলে শামিল হয় । গড়ে ওঠে ধ্বংসযজ্ঞ, পৃথিবীর ইতিহাসের এক জঘন্য ও ভয়ঙ্কর তীব্র মুহূর্ত । ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা ।
হঠাৎ একটা স্প্লিন্টার শেল এসে আঘাত করে ইরিনাকে । হাত থেকে এটমিক ব্লাস্টারটা ছুটে পড়ে ঝুলতে থাকে কোমরের সাথে । সবকিছু কেমন নিস্তব্দ আর স্থির হয়ে যায় এক মুহূর্তের জন্য । ইরিনা কোনো ব্যথা অনুভব করছে না এখন আর । ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসে । ক্রমেই ঝাপসা হতে শুরু করে সবকিছু । কোলাহল মিলিয়ে যেতে থাকে । সবকিছু যেন শূন্যে উবে যেতে থাকে । পড়ে থাকে এক নির্জন খোলা প্রান্তর । তারপর সেটিও উবে যায় । অনুভূতিহীন অন্ধকার শূন্যতায় নির্জীব হয়ে পড়ে থাকে ইরিনা, যেখানে নেই কোনো অনুভূতি, নেই কোনো ইন্দ্রিয় । শুধু আছে অস্তিত্ব । এটাই বোধহয় মৃত্যু, কিংবা মৃত্যুর পরের জীবন । কতক্ষণ কেটে গেছে জানে না ইরিনা, হয়তো এক দিন, এক মাস, এক বছর কিংবা হাজার লক্ষ বছর; কী আসে যায় তাতে? সময়ের কোনো হিসাবই নেই এখানে, সময় যেন স্থির হয়ে আছে এই অন্ধকূপে ।
অকস্মাৎ দূরে একটা জোনাকির মত মিটমিটে আলো রেটিনায় রিফ্লেক্ট করে ইরিনার । নিশ্চিহ্ন গাড় অন্ধকারে এইটুকুকেই আলোকবর্তিকার বিস্তীর্ণ জোয়ার বলে মনে হয় ওর কাছে । মিটমিটে আলোটা ক্রমেই কাছিয়ে আসছে, উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে । যেন দীর্ঘ নাঘুমো রাত শেষে প্রতীক্ষিত সূর্য উঁকি দিচ্ছে, চারিদিক আলোকিত করে । কোলাহলও ক্রমেই বেড়ে উঠছে ।
অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নিজেকে সে আবিষ্কার করে একটি খোলামেলা নির্জন প্রান্তরে । প্রকৃতি এখানে বড্ড মনোরম । সারি সারি কাশফুল, পাখির কলতান সবকিছু কেমন স্বপ্নিল মনে হচ্ছে । পায়ের নিচে শিশির ভেজাঘাসের স্পর্শানুভূতি পাচ্ছে এখন সে, বাতাসের ঝাপ্টা ওর স্নিগ্ধ চুল নিয়ে খেলা করে কিছুক্ষণ, একটা ঘোরের মধ্যে থেকে ইতস্তত হাঁটতে থাকে ইরিনা । শূন্য এই পৃথিবীতে ও শুধু একা । হাঁটতে হাঁটতে আরো দূরে চলে যায় সে । মাঠের শেষ প্রান্তে পৌঁছে পা বাড়াতে গিয়েই ঘটে যত্তসব বিপত্তি । একটা বিপরীত মুখী ফোর্স কিংবা বিকর্ষণ শক্তি ওকে বাড়তে দেয় না সামনে । সকল শক্তি দিয়েও পেরে ওঠেনা ইরিনা ।
ওর কর্ণবিবরে বেজে ওঠে হঠাৎ এক অজানা দ্বৈত কন্ঠ, জেগে ওঠো ইরিনা । চমকে উঠে সে, আশে পাশে কেউ নেই । আবারো সেই একই কন্ঠ । ভয়ে চিৎকার করে উঠে সে, কে? জবাব নেই । আবারো বলে উঠে ইরিনা, কে আপনি? কেন আমাকে নিয়ে খেলছেন?
খেলা শেষ, এবার তোমার জেগে ওঠার পালা ইরিনা । অনেকক্ষণ পর জবাব আসে ।
আপনি আসলে কে? আর আমিই বা কোথায়? পাগলের মত চিৎকার করতে থাকে ইরিনা ।
আমি আমরা, আমি কেউনা আবার আমরাই সব; কোনটা চাও তুমি? তুমি এখন অবস্থান করছ একটি চতুর্মাত্রিক ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের ত্রিমাতৃক সীমানায় ।
মাথার ওপর বাজ পড়লেও এতটা চিৎকার করে না মানুষ যতটা না ইরিনা করেছে ।
তোমার ভোকাল কর্ড ছিঁড়ে ফেলা উচিৎ, বড্ড জ্বালাতন করছ । চিৎকার না করে কি জানতে চাও প্রশ্ন করো কেবল । বলে ওঠে দ্বৈত কণ্ঠটি ।
আমি কি জীবিত না মৃত?
উভয়ই । তোমার মস্তিষ্কটাই শুধু জীবিত । আর এটাই দরকার আমাদের । আমাদের এক্সপেরিমেন্টের জন্য পুরো বডিটা হচ্ছে বাহুল্য ।
কেমন যেন শিউরে ওঠে ইরিনা । বিশ্বাস করতে মন সায় দেয় না ।
শোনো মেয়ে, তোমরা অনেক আগেই পৃথিবীতে মরে গেছো । তোমাদের মস্তিষ্কের কিছু অংশ জীবিত ছিলো, কারো কারোটা আবার পুরোটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো । তোমাদের মেমরী আমরা সংরক্ষণ করি, মস্তিষ্কের কোষগুলো বাঁচিয়ে রাখি । তারপর সেগুলো দিয়েই তৈরি করি প্যান্ডেমোনিয়াম প্রোগ্রামটি । তুমি কি বুঝতে পারছো আমরাই তোমার গড? সময় সংক্ষেপণের সাথে সাথে তোমাদের প্রকৃতি এবং পরিবেশেরও পরিবর্তন ঘটাই । যার কারণে আসল সময়ের বিপরীতে সেখানে সময় অনেক অনেক দ্রুত চলেছে । আসল পৃথিবীর সময় অনুযায়ী তুমি বেঁচেছ মাত্র দু বছর ।
মাত্র দু বছর! এটা কি করে সম্ভব । আশ্চর্য হয়ে যায় ইরিনা । তাহলে এখন আমাকে নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কি? সহসা জিজ্ঞাস করে বসে সে ।
এখন আমাদের মূল প্রোগ্রাম থেকে তোমাকে ইরেজ করে ফেলবো । আপাতত তোমার কাজ শেষ । আমাদের এক্সপেরিমেন্টটা সফল হতে চলেছে । গুড বাই ইরিনা ।।
ইরিনা কিছু বলার আগেই টের পেলো ওর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে, অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে । সবকিছু কেমন দূরে সরে যাচ্ছে । শব্দ কোলাহল ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে । এ যেন এক শূন্য অনুভূতি । আসলে কোনো অনুভুতিও নেই এখানে, কিচ্ছু নেই শুধু আছে অস্তিত্ব । এ যেন অবিনশ্বর । এ যেন একটা শক্তি, যার ধ্বংস নেই, আছে শুধু রুপান্তর !
_________________
ইনডেক্স :
ভিডি ডিভাইস : ভবিষ্যতের অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা । কমিউনিকেশন প্যানেল ।
থ্রিডি অটো প্রোজেকশন গ্লাস : এই গ্লাস চোখে দিয়ে ত্রিমাত্রিক ছবি দেখা যায় ।
ক্রিস্টাল রিডার : ভবিষ্যতের অত্যাধুনিক কিন্ডেল । এক টুকরো কাঁচ যার সাহায্যে বই পড়া থেকে শুরু করে, গাণিতিক ফাংশন, ট্রান্সলেট সবই করা যায় ।
ফ্ল্যাশজেক্টর : পেন্ড্রাইভ জাতীয় তবে এরও কিছু নিজস্ব সিস্টেম আছে, সফটওয়্যার আছে ।
ভি এম ডি স্ক্রিন : ভিজুয়াল মাল্টি ডিভাইডার স্ক্রিন । এই স্ক্রিনে একটি প্রোগ্রামকে একই সময়ে ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপন করা সম্ভব ।
সিনাপ্সুঘুঁটিয়া : কোনো নির্দিষ্ট কাজ করার সময় মনোযোগ ধরে রাখার ও কাজের প্রতি আগ্রহ ধরে রাখতে যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয় । এটি কাজ করার সময় সিনাপ্সের ওপর প্রভাব ফেলতে থাকে ফলে বিরক্তকর কোনো কিছুও বেশ ভালো লাগে করতে ।
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কাঁঠালের আমসত্ত্ব
কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে
এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে । ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন