somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈপরীত্যের ক্রমবর্ধিষ্ণু পদার্পণ

১৩ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদা আমাদের বর্ণিত গফুর ভাই একগাদা স্ক্রিপ্ট নিয়ে হাজির প্রকাশক মহোদয়ের বহুমূল্যে নির্মিত সুসজ্জিত সুউচ্চ দালানটিতে । প্রথমেই সালাম, কুশলাদি এবং বার কয়েক কমন কাশির ওপর নির্ভর করে অতীব ম্রিয়সুরে গফুর ভাই তার আসার উদ্দেশ্য ব্যাক্ত করলেন । প্রকাশক আন্দালিব হোসেন তাঁর চক্ষুদ্বয় পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতা থেকে না তুলেই জিজ্ঞাস করলেন, কি চাই?

গফুর ভাইয়ের উৎসাহের আগুনে কিছুটা পানির ছিটা পড়লো । ‘ব্যাপার না’ এই রকম মনোভাব ধরে রেখে তিনি আরো একটু ধাবমান হবার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

স্যার, আপনি গত পরশুর প্রথম আলো পত্রিকায় আমার ‘শ্রেয়’ কলামটি পড়ে বলেছিলেন ... গফুর ভাই কে এখানেই থেমে যেতে হয় ।
হয়েছে হয়েছে_ চিনেছি আপনাকে । আপনি তো আব্দুল করিম ভুঁইয়া তাই না?
স্যার, আব্দুল গফুর ভুঁইয়া । অত্যন্ত বিনীতভাবে পরিশুদ্ধ করে দিলেন তিনি ।
প্রকাশক সাহেবকে মোটেই বিচলিত মনে হলো না । অনেকক্ষণ পর তিনি আগন্তুকের দিকে চোখ তুলে তাকালেন ততক্ষণে তাঁর পত্রিকা পড়া শেষ হলো । গফুর ভাই তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে । আন্দালিব সাহেব মহাবিরক্ত হলেন ।
আপনারা যে কি আমি বুঝিনা । কবি সাহিত্যিকদের মাথায় মনে হয় ঘিলু একটু কমই থাকে । আপনাকে এসব নিয়ে বাসায় আসতে বলেছে কে?
স্যার, আপনিই তো সেদিন বলেছিলেন সোজা বাসায় চলে আসতে । বলে এমন ভাব করলেন যেন মুখ ফস্কে কথাটা বের হয়ে গিয়েছে । আন্দালিব সাহেব এমনভাবে তাকালেন যেন গফুর ভাই মহাপাপ করে ফেলেছেন ।

তা দিন আপনার কাগজ গুলো । গফুর ভাই স্ক্রিপ্ট গুলো তাঁর হাতে দিলেন এবং বললেন, স্যার মে আই হ্যাভ এ সিট ?
প্রকাশক সাহেব মনে হয় তা শুনতে পাননি । আজকাল মাইক্রোসফটের যুগে কেউ আর হ্যান্ডরাইটিং করে না । যার ফলে কারো ব্যাক্তিজীবন সম্পর্কে কিছু ধারণাও করা যায়না’ স্ক্রিপ্ট দেখতে দেখতে বললেন তিনি ।
স্যার আপনি মনে হয় ডিটেকটিভ ফিকশন বেশী পছন্দ করেন’ নিজস্ব ভাবগম্ভির বজায় রেখে অতি সাবধানে কথাটা বললেন গফুর ভাই ।
খানিকক্ষণ ফতুয়া জিন্স পরা উস্ক খুস্ক চুলের আটাশ বছরের যুবকটির দিকে তাকিয়ে থাকলেন আন্দালিব সাহেব । ধীরে ধীরে মাথা নাড়িয়ে বললেন ঠিকই ধরেছো ।

মনে মনে খুশি হলেন গফুর ভাই । ভেবে নিলেন প্রকাশক সাহেব তাকে আপন করে নিয়েছেন তুমি’র মাধ্যমে।
স্ক্রিপ্ট গুলোর পাতা একটার পর একটা উল্টাচ্ছেন আর বার বার হাতঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন প্রকাশক সাহেব । তারপর বিরক্ত হয়ে হঠাৎ বলে ওঠলেন, আজকে আর পারবো না; আপনি দু দিন পরে আমার সাথে দেখা করুন ।
গফুর ভাই খুশি মনে ফিরছিলেন । প্রকাশক সাহেব ডাক দিয়ে ফেরালেন তাকে । বললেন বাকি স্ক্রিপ্টগুলো নিয়ে যান ।

মুখের মাংসপেশিতে ঢিল পড়লো গফুর ভাইয়ের । হাঁসি হাঁসি মুখটা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলো । কিন্তু একটা সান্ত্বনা খুঁজে পেলেন এই দেখে যে একটা গল্পের স্ক্রিপ্ট রেখে দিয়েছেন প্রকাশক সাহেব । গল্পটা সম্ভবত “বৈপরীত্যের ক্রমবর্ধিষ্ণু পদার্পণ” ।


দু দিন পরের কথা । আন্দালিব সাহেব বসে আছেন প্রুফ রিডার মোস্তাহেজ আলীর সামনে । তিনি ক্যাসপারস্কি’র মত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়ার মাধমে ভুল ক্রুটি খুঁজে বের করছেন ।
যথাসময়ে গফুর ভাইয়ের উপস্থিতি প্রমাণ করে তিনি সময়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন এবং পলিটিক্সের সাথে যুক্ত নন’ আন্দালিব সাহেবের সূক্ষ্মবুদ্ধি অনুযায়ী ।

আকস্মিক প্রকাশক সাহেব ক্ষেপে উঠলেন, নিজেকে কি মনে করেন আপনি? বঙ্কিম নাকি লুৎফর রহমান ? মাঝে মাঝে এমন কঠিন বাক্য আবার বাচ্চাদের হাট্টিমাটিম টাইপে লেখা; অসহ্য !
গফুর ভাই চুপ করে রইলেন ।

কতক যুক্তাক্ষরের সমন্বয়ে নির্মিত কঠিন কঠিন বাক্য গঠন করলেই ভালো গল্প হয়না; একটি ভালো গল্প নির্ভর করে বিষয়বস্তু ও প্রাঞ্জলতার ওপর । ধ্রুপদি সাহিত্য চর্চা করতে হবে বুঝলেন? কঠিন কয়েকটি কথা দিয়ে নমনীয়তার ব্যাখ্যা দিলেন যেন আন্দালিব সাহেব ।
গফুর ভাই কি করবেন বুঝে উঠতে না পেরে বলে ফেললেন, স্যার ভুল ক্রুটি গুলো যদি একটু ফিক্স করে দিতেন ।
খেঁকিয়ে ওঠলেন তিনি, আমাকে প্রুফ রিডার পেয়েছেন নাকি? যান, নিয়ে যান এসব ছাই পাশ বলেই ছুঁড়ে ফেলে দিলেন হাতের স্ক্রিপ্ট । অন্য কারো কাছে যান । নিজ খরচায় ঝামেলা ছাড়াই বই প্রকাশ করতে পারবেন । আমার সুনাম নষ্ট করতে চাইনা । যা আছি তাই ভালো’ ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে লাগলেন প্রকাশক সাহেব ।
গফুর ভাই বুঝলেন প্রকাশক সাহেব তাকে আর আপন মানুষ মনে করছেন না । পরিচয়টা কি এখনই দেবেন কিনা তা চিন্তা করছিলেন তিনি । ভাবি তো বলেছিল তার বাবা খুবই উদার প্রকৃতির মানুষ ।
তার অনুরোধেই এভাবে হেনস্ত হওয়া । আর উদারতার পরিচয় পাওয়া ।

শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললেন, ঠিক আছে স্যার। শায়লা ভাবির কথাটা রাখতে পারলাম না বলে দুঃখিত । আসি, স্লামালিকুম ।
এই এই শোনো । উত্তেজিত কন্ঠ শোনা গেল পেছনে ।
ফিরে এলেন গফুর ভাই ।
তুমি কি শায়লার দেবর?
জি ।
বিখ্যাত ব্লগার জয়নাল হামিদ?
জি স্যার ।
তাহলে গফুরটা কে?
স্যার এটা আমার ছদ্ম নাম ।
বাবা তোমার সবগুলো স্ক্রিপ্ট আমাকে দাও । আমি বিনা খরচে পাবলিশ করে দেব ।
জী না স্যার । আমি এডভান্স ছাড়া এগুলো কোনো প্রকাশনা সংস্থায় দেব না ।

স্বভাবতই জয়নাল হামিদ খুবই চালবাজ গফুর ভাইয়ের চেয়েও । গফুর ভাইরা দ্বারে দ্বারে হেনস্ত হয়; আর জয়নাল হামিদরা কমেন্টস আর লাইকে প্রফুল্ল হয় ।

উৎসর্গঃ সামুর সকল ব্লগারগণ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:০১
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×