জগতের কাছে প্রশ্ন...ক্লাস সিক্সের একটা বাচ্চার বয়স কত থাকে? শিশু বলিব? নাকি কিশোর-কিশোরী বলিব? নাকি তরুন-তরুনী বলিব? ষষ্ঠ শ্রেণির "শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য" পুস্তকের চতুর্থ অধ্যায়কে (৩৮-৫১ পৃষ্ঠা) কেন্দ্র করিয়া আমার সকল আলোচনার অবতারনা।
আগ্রহী হইলে বইটি এখান হইতে ডাউনলোড করুন
যাই হোক, তাহাদের আর ক্ষুদ্রজ্ঞান করিবার জো নাই। আগে 'বড়দের' বিষয় বলিয়া যেসব চাপিয়া যাইতাম তাহা এইবার শিক্ষকরা স্বয়ং 'হাতে-কলমে' শ্রেণিকক্ষে শিখাইয়া দিবেন। আহ্ ভাবিতেই প্রসন্নবোধ করি। লুকাইয়া লুকাইয়া পঠিত রসময় গুপ্তের 'চটি' আর অন্তরালে থাকিবেনা। 'অহেতুক' অপরাধবোধে আচ্ছন্ন হইবে না কোমল শিশুমন! কেননা, রতিলীলা তো এখন শিক্ষারই বিষয়ই বটে! আপনি কিন্তু অযথাই ভীত হইতেছেন!
শিশু সন্তান একহাতে কনডম আরেক হাতে কামসূত্রের বই লইয়া ঘরে আসিলে তেড়িয়া যাইয়েন না আবার। ওগুলো শিক্ষার আধুনিক সরঞ্জাম ! কেবল সনাতনী চিন্তা করিলেই হইবে না। মাল্টিমিডিয়াতেও বিষয়টি শেখান উচিৎ। কাজেই নীলক্ষেতের পর্নো সিডির হকারদের পুলিশি হয়রানী বন্ধের আশু পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। ভারী ভারী বইয়ের দোকানের পাশাপাশি তাদেরকেও স্থান করিয়া দেওয়া হইক। কেননা তাদের হাতেই রইয়াছে সকল গুপ্ত ধাঁধার সচিত্র সামাধান।
আমরা ছিলাম বেজায় মূর্খ! দশম শ্রেনীতে উঠিয়াও নিজ দেহ নিঃসৃত তরলের নাম জানিতাম না। কতিপয় দুষ্ট বালক কহিত "মাল", ইত্তেফাকের হোমিও বিজ্ঞাপনে কহিত "ধাতু"। কোন পথে শিশু ভূমিষ্ট হয়, তা লইয়া রীতিমত হাতাহাতি বাঁধিয়া যাইত। ভাবিলেও হাসি পায়...খেক খেক :!> আর এখকার ষষ্ঠ শ্রেণির বালক-বলিকারা এই দেহ তরলের নাম সহ এর কার্যপ্রণালীও নখদর্পনে নিয়া নিতেছে। ভালো তো...ভালো না?!
এখনকার স্মার্ট লোকে বলে, আমাদের এইসব আধুনিক শিক্ষা দেয়া হয় নাই। এইসব বিষয়ে সঠিক জ্ঞান আমাদের ছিল না। তাই অকথা কুকথা শুনিয়া ভুল পথে পা দিয়াছি। স্বাভাবিক বিষয়কেই অস্বাভাবিক বলিয়া ভ্রম হইতো। এখন আর সেই সুযোগ নাই। তারা সঠিক উপায়ে সঠিক কাজ করিবে...মাঝে মাঝে পর্ণ ছবি দেখিয়া ঝালাইয়া লইবে সব প্রক্রিয়া ঠিক আছে কিনা। আপনি কিন্তু আপত্তি করিতে পারিবেন না। কোন যুক্তিতে করিবেন? ছাপার অক্ষরে পড়িতে যদি সমস্যা না থাকে তবে দেখিতে কি সমস্যা? দশবার পড়িবার চাইতে একবার দেখিলেই তো বেশী ভাল মনে থাকে। এইটা তো আমি-আপনি শিশুকাল সন্তানদের শুনাইয়া আসিলাম।
থামুন থামুন...হতাশ হইবেন না। আপনাকে আশাবাদী করার উপাদানও এর মাঝে আছে। যেমন এখন আপনাকে দাদা/দাদী বা নানা/নানী হইতে বার্ধক্যে উপনীত হইতে হয়। কিন্তু, ঠিক মত শিক্ষাটি চালু হইলেই দেখিবেন, ছোট ছোট শিশুরাও মা-বাবা হইয়া তাক্ লাগাইয়া দিতেছে। জামাই/বৌ পালিবার ঝামেলা নাই। সব চুল কাঁচা থাকিতে থাকিতেই নাতি-পুতি লইয়া লুটোপুটি করিতে পারিবেন। শুনিয়া খুশি হইবেন যে, যৌন শিক্ষার অগ্রপথিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে "টিনেজ প্রেগনেন্সি" আগের হইতে বহুগুনে বাড়িয়া গিয়াছে। সেখানে স্কুলগুলাতে কনডম ডিসপেন্সার থাকে। যখনই পঠিত বিদ্যা ঝালাইয়া নেবার দরকার পড়ে বা যৌবন জাগিয়া ওঠে, একখানা নিরাপত্তা বেলুন সংগে লইলেই চলে। বই পড়িয়া আর কত শিখিব...একটু-আকটু চর্চারও তো দরকার!
একজন যৌন শিক্ষায় শিক্ষিত গর্বিত 'পিতা'।
বিস্তারিত পড়ুনঃ
পশ্চিমে প্রম নাইটে বা ডেটিং-এ গেলে অভিভাবকরাই সন্তানের হাতে কনডম গুঁজিয়া দেন। আপনি পারিবেন কী? যেসকল দেশে এইডস মহামারী আকার নিয়াছে, সেখানে কি প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়া হয় না? যেখানে সমকামীতা সাধারণ বিষয় সেখানে কি যৌন শিক্ষার অভাব আছে? বাল্যবিবাহ কিংবা গর্ভপাত নিষিদ্ধ হইলেও টিনেজ প্রেগনেন্সির ব্যপকতার মূল কি যৌনতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকা? জানিয়া খুশি হইবেন, উপরোক্ত সমস্যা সংকুল দেশে অতি শৈশব হইতেই প্রজনন স্বাস্থ্য সর্ম্পকে সম্যক ধারণা শিশুদের দেয়া হয়।
আমি দাদা একজন চরম কুপমন্ডুক মানুষ ! নতুন যে কোন কিছু গ্রহণেই আমার বেজায় আপত্তি! তবে, আমি কেবল বলিতে চাই...সবকিছুরই একটি বয়স আছে কিনা! আর এগুলো সর্বসম্মুখে আলোচনার মাঝে আমি কোন কৃতিত্বও খুঁজিয়া পাই না। সকলের গোপন বিষয় শ্রেণিকক্ষে আলোচনা করিলে কি সুফল হইবে, তাহা আমার মত অর্বাচীনের পক্ষে বোঝা মুষ্কিল!! তবে বোধ করি, শিশুদের এই শিক্ষা দেবার চাইতেও বেশী জরুরী অভিভাবককে সচেতন করা, যাহাতে সন্তানদের সাথে সহজ সম্পর্ক গড়িয়া তোলার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে অনেক কিছুই শেয়ার করিতে পারেন।
অতীতে যৌনতার বিষয়ে আমাদের মাঝে একধরণের Taboo কাজ করিত। বিধায় এ নিয়া আলাপচারিতা বা ভাবনাকেও নিষিদ্ধ মনে হইতো। এতে জগৎ হইতে খুব যে পিছাইয়া পড়িয়াছি তা কখনো মনে হয় নাই, কিংবা যৌন ধারণার অভাবে যে কুসঙ্গে পড়িবার সম্ভাবনা আছে তা-ও দেখি নাই! বরং কিছুটা স্বচ্ছ ধারণার অভাব, এই সকল প্রি-ম্যাচিউর এডাল্টহুড হইতে দূরে রাখিয়াছে।
এইবার বইয়ের প্রসংগে আসি। বইটির ৩৯, ৪১, ৪৫, ৪৬ পৃষ্ঠায়, বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের ঘুমের মধ্যে বীর্যপাতের কথা বলা হইতেছে। স্বাভাবিকভাবেই বীর্য শব্দটি কিশোরীদের মাঝে একধরণের কৌতুহল তৈরী করিবে। উহা দেখিতে কিরুপ, কিভাবে নির্গত হয় তাহা জানিতে চাওয়া নিশ্চই দোষের কিছু নেই। আবার, ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪৫ পৃষ্ঠায় মেয়েদের ঋতুস্রাব ও স্যানেটারী ন্যাপকিন ব্যবহার বিষয়ে বলা হইয়াছে। ইহাও কি বাড়ন্ত ছেলেদের কৌতুহলের সঞ্চার করে না? কখন-কিভাবে ইহা ঘটে তা নিশ্চাই জানা যাইতে পারে, কেননা পাঠ্য বইতে যে দিয়া দিয়াছেন! প্যাডই বা কিভাবে পড়িতে হয়, তাও তো একটি জটিল বিষয়!! ৪৭, ৪৮ পৃষ্ঠায় অনিরাপদ ও অবৈধ যৌন সর্ম্পকের কথা বলা হয়। এইবার যদি আপনার ছেলে মেয়ে জানিতে চায়, যৌন সর্ম্পক কি? কিভাবে করিতে হয়? কিভাবে করিলে উহা নিরাপদ? কি বলিবেন শুনি? আমি জানি, আপনি স্মার্ট একজন বাবা-মা। কিন্তু আমি নই। কিছুদিন আগেও বিআরটিসি বাসে কনডমের ছবি দিয়া লেখা থাকিত "এইডস প্রতিরোধে নিরাপদ মিলনে কনডম ব্যবহার করুন"। যেখানে এই ব্যপারে স্বামী-স্ত্রী'র পারষ্পরিক বিশ্বস্ততাকে প্রধান্য দিবার কথা ছিল, সেই স্থলে বেলুন লাগাইয়া যথেচ্চারে উৎসাহিত করা হইতেছে...!?! যাই হোক, শিশুদের চোখে কি উহা পড়ে নাই? আমার খুব জানিতে মন চায়, এ বিষয়ে বাচ্চাদের প্রশ্নের উত্তরে বাবা-মা'রা কি বলিয়াছেন ।
আমি মনে করি, যৌনতা জীবের আদিমতম প্রবণতা। পিপিলিকা হইতে অতিকায় নীল তিমি সকলেই জিনে এই বেসিক ইন্সটিংক্ট লইয়া পৃথিবীতে আসে। ইহার জন্য কোন শিক্ষার প্রয়োজন হয় না। যে পাগল ঠিকমত মল-মূত্রও ত্যাগ করিতে পারে না, বিবাহ করাইয়া দিলে ঠিকই সন্তানের জন্ম দিয়া ফেলিবে। ইহা শিক্ষা বা ধারণা নিরপেক্ষ। আর যদি জোর করিয়া এই শিক্ষা দিতে চান তবে উপরোক্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বিবেচনায় রাখিতে হইবে। এতক্ষণ ধরিয়া অনেক অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করিয়াছি। পড়িতে বিব্রতবোধ করিলে নিজগুণে ক্ষমা করিবেন। আমি মানিয়া লইতেছি যে, আপনি উদার কিন্তু আমার সীমাবদ্ধতা রহিয়াছে। কাজেই, আপনি আমার সাথে নির্দ্বিধায় দ্বিমত-ত্রিমত পোষণ করিতে পারেন।
তবে অবশেষে একখানা আর্জি করি, অতীতে আমাদের বিজ্ঞান বইতে "এসো নিজে করি" নামে একখানা বিষয় থাকিত। তত্ত্বীয় জ্ঞান একটু বাস্তবে ঝালাইয়া নেওয়া আর কি...। এক্ষেত্রেও কি করা যায় না? খেক খেক...। তাইলে ষোল কলা পূর্ণ হইতো...
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:১৯