ভালোবাসা ও এক্সপাইরেশনের গল্প ...........
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
*** শান্ত এর ডায়েরী ***
আমি শান্ত। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন তিনটা। প্রথমত, যেদিন আমার জন্ম হয়েছিলো; দ্বিতীয়ত, যেদিন সে জন্মেছিলো; আর সবশেষে, যেদিন "আমি" আর "সে" মিলে "আমরা" হয়েছিলাম। জানতে চান, "সে" কে? আমার শুষ্ক বুকের মরুভূমিকে সবসময় ভালোলাগা দিয়ে আদ্র করে রাখা এক বৃষ্টি ... না, না, বৃষ্টি না, বর্ষা।
*** বর্ষা এর ডায়েরী ***
আমি বর্ষা। শীতকালে সাধারণত বৃষ্টি হয় না, তারপরও আমি শীতকালের কোন এক বৃষ্টির দিনে জন্মেছিলাম। আমার নামটা সেজন্য হয়তো বৃষ্টি হতে পারতো, কিন্তু কিভাবে যেন বর্ষা হয়ে যায়। আমার অবশ্য বর্ষা নামটাই বেশি পছন্দ। তো যাই হোক, এক বর্ষাকালে কোন এক বৃষ্টির দিনেই শান্ত এর সাথে আমার প্রথম দেখা।
*** শান্ত এর ডায়েরী ***
সেদিন সকাল থেকে অঝোর-ধারায় বৃষ্টি পড়ছিলো। তার মধ্যেই কাকভেজা হয়ে আমি ভার্সিটিতে পৌঁছাই। গিয়ে দেখি ক্লাসে স্টুডেন্ট আমি সহ মাত্র ৩ জন; এই অল্প উপস্থিতিতে টিচার ক্লাস নিবে না। আর এদিকে বৃষ্টিতে ভিজে সর্দি লেগে গেছে। এক মগ ব্লাক কফি খাওয়া খুব বেশি প্রয়োজন। তাই কফিশপ।
*** বর্ষা এর ডায়েরী ***
বাসায় আজ বাবা-মা নেই, এই সুযোগ। ইচ্ছামতো বৃষ্টিতে ভিজলাম, ভিজে ভিজে ঠান্ডা লেগে গেছে; এবার বাসার পাশের কফিশপে একমগ কফি খেয়ে বাসায় ফেরা যাক। কফিশপ এত সকালে সাধারণত ফাঁকা থাকে, তার উপর আজ বৃষ্টির দিন। কিন্তু না, আমার মত এক ভেজাকাক অলরেডি সেখানে বসে কফি খাচ্ছে।
*** শান্ত এর ডায়েরী ***
"Love at first sight" - মনে হয় একেই বলে।
মেয়েটির দিকে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে গেলাম।
"Blinded by the beauty of her face,
Destroyed by the grace of her innocence"
কি করে মেয়েটার সাথে পরিচিত হওয়া যায়!
erm ..... erm .... erm .... আইডিয়া!
কফির বিল দেওয়ার সময় ভাব করবো মানিব্যাগ আনতে ভূলে গেছি। তারপর লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে মেয়েটির কাছে সাহায্য চাইবো, তারপর কফির বিল পরে দেওয়ার কথা বলে কন্ট্যাক অ্যাডড্রেস।
.... প্রেম মানে না জাত-কূল, আর এ তো সামান্য একটু ছোট হওয়া!
*** বর্ষা এর ডায়েরী ***
শান্তকে প্রথম দেখায় কেন যেন ভালো লেগে গেলো। বৃষ্টিভেজা এলোমেলো চুল, কেমন যেন মায়াভরা চেহারা। বিপদে পড়ে ছেলেটা যখন সাহায্য চাইলো, তখন আর না করতে পারলাম না।
তারপর দু-একদিন ফোনে কথপোকথন, একে একে ফ্রেন্ডশিপ। ঠিক এক বছর পর এই দিনে শান্ত আমাকে জানায় তার ভালোলাগার কথা, ভালোবাসার কথা।
*** শান্ত এর ডায়েরী ***
আমরা আমাদের ভালোলাগার মূহুর্তগুলো শেয়ার করতাম সবসময়। কয়েক মাইল দূরত্বে থেকেও মাঝে মাঝে দেখা হতো। কথা হতো ম্যাসেঞ্জারে, ই-মেইলে, ফেসবুকে, সেলফোনে। বৃষ্টি হলে বৃষ্টির জল স্পর্শ করতাম আর তার সাথে কথা বলতাম। দূরে থেকেও এক আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে একসাথে এক আকাশের তারা দেখতাম।
"Twinkle Twinkle Little Star,
Do You Know That I Love Her,
Up Above The World So High,
Take Care Of Her, If I Die ..."
*** বর্ষা এর ডায়েরী ***
"Death won't touch you, it's too far,
How I wonder what you are,
You can see her when she'll fly,
Like a diamond in the sky ..."
সাদা-কালো একঘেঁয়েমী জীবনে শান্ত ছিলো আমার কাছে এক আকাশ রংধনু। মাঝে মাঝে আমরা সারা শহর রিক্সায় করে ঘুরতাম। আমার পেইন্টিং, আমার ফটোগ্রাফির একমাত্র মনযোগী দর্শক ছিলো শান্ত। সার-রিয়েলিস্ট পেইন্টিং খুব পছন্দ করতো সে; মাঝে মাঝে তার সাথে আর্ট এক্সিবিশনে যেতাম। ব্লারিং যে একটা আর্ট হতে পারে সেটা আমি তার কাছ থেকে শিখি। এস.এম.এস. আর ই-মেইল এর যুগেও শান্ত মাঝে মাঝে আমাকে চিঠি দিত। চিঠি না বলে গোটা গোটা হাতের অক্ষরে সবুজ কালিতে চার লাইনের কিছু কবিতা বলা যায়।
"গভীর রাতে থাকবো পাশে
করবে তুমি গল্প,
জোনাকিরা জ্বলবে সেথায়
বৃষ্টি হবে অল্প।"
................ আচ্ছা, বৃষ্টির সময় কি জোনাক জ্বলে !!!
*** শান্ত এর ডায়েরী ***
"ঝিঁঝিঁ-রা সব কইবে কথা
তুমি আমি চুপ-চাপ,
মাথার কাছে ঘাসের বুকে
পড়বে শিশির টুপ-টাপ।"
বর্ষা খুব অভিমানী। মাঝে মাঝে কারণে-অকারণে অভিমান করে বসে। এটা হয়তো তার ভালোবাসার একটা বর্হিপ্রকাশ। সময়মতো ঔষধ খাইনি বলে সেদিন বর্ষা আমার উপর কি রাগটাই না করলো। পরে ৩ টা এস.এম.এস. আর ১০ বার সরি বলে তার রাগ ভাঙ্গাতে হয়েছে। আচ্ছা বর্ষা, এই অল্পতেই তোমার এতো অভিমান, আমার প্রতি তোমার এতো ভালোবাসা। আমি যদি হঠাৎ করে মারা যাই তবে তুমি কি করবে বর্ষা ................
"Would you miss me if I died,
Would you kiss me if I cried,
Would you hold me tight,
Would you squeeze my hand
As my last breath left me,
Would you miss me in the night,
Cause I'm not there by your side,
Would you cry on my grave,
Would you leave flowers in summer
Crosses in winter,
Would you cry when someone speaks my name,
Would you put my picture in a frame,
Would you miss me if I died,
Could you wait to be by my side?"
...........................................................................
...........................................................................
...........................................................................
***************** দুই বছর পর ******************
"Everything in the world has an expiry date, even relationship" - আজ শান্ত আর বর্ষা দুজন দুই ভিন্ন পথের পথিক। পৃথিবীতে প্রতিদিন কতশত রোমান্টিক সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়, এ আর এমন কি। উইদাউট এনি এক্সপ্লেইনেশন, বর্ষা শান্ত এর সাথে ব্রেক-আপ করেছিল। সেদিন বর্ষা কোন কারণ ব্যাখ্যা না করলেও এখন শান্ত বুঝতে পারে কেন তার সম্পর্কটা আর টেকেনি। অর্থ-বিত্ত আর স্ট্যাটাস এর কাছে যেখানে মানবিকতা মাটির সাথে মিশে যায়, সেখানে একটা আবেগী ভালোবাসা নিতান্তই মূল্যহীন।
"There is a time for departure even when there's no certain place to go" --- মাঝে মাঝে এই আবেগী ভালোবাসার মতো শান্তর কাছে তার নিজের জীবনটাও মূল্যহীন মনে হয়। একদিন হাঁটতে হাঁটতে শান্ত চলে আসে লোকালয় থেকে অনেক দূরে, নিঃসঙ্গ এক খোলা মাঠে, যেখানে মাথার উপর খুঁজে পাওয়া যায় এক বিশাল নীল আকাশ। লম্বা লম্বা ঘাসের উপর শুয়ে পড়ে শান্ত। নির্মম বাস্তবতাকে তার জীবন থেকে অবসর দেয় সে; জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে পৃথিবীটাকে অনেক রঙ্গিন মনে হয়। চোখ বন্ধ করে বলতে থাকে --
Life must be so beautiful this time.
To lie in the soft brown earth,
with the long grasses waving above my head,
and listen to silence.
To have no yesterday and no tomorrow.
To forget the time, to forgive the life,
and to be at peace.
REST IN PEACE.
৩৭টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন