somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নির্বাক স্বপ্ন
চিন্তা প্রসবের বেদনা মগজব্যাপী স্থায়ী হওয়ার আগেই কলম ধরতে হতো। মাথার মধ্যে জমে থাকা ভয়ংকর সব চিন্তাগুলোকে পরিণতি দেয়া মত শব্দ কোনো কালেই ছিল না।তারপরও সেই সব গল্প লেখতেই হতো,যেগুলো লেখার পর শান্তিতে ঘুমানো যায়।

বই আরণ্যক

০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
বিভূতিভূষণের বাবার নাম ছিল মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়।মহানন্দ বাবু ছিল পন্ডিত মানুষ।সংস্কৃত ভাষায় বেশ দখল ছিল তার।তিনি গান লিখতেন।গাইতেন ও।তার ঘরজুড়ে বই আর বই।আর সাহিত্যও করতেন তিনি।বিভূতিভূষণের এস্থেটিক সেন্সটা এসেছে পারিবারিকভাবেই।একেবারে উত্তরাধিকার যাকে বলে।মহানন্দ বাবু মৃত্যুশয্যায় বিভূতিভূষণের কাছে আঙ্গুরফল খেতে চেয়েছিলেন।গ্রামদেশ, বিভূতিভূষণ বাবার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারেন নি।আর নিজেও মরার আগপর্যন্ত আঙ্গুরফল খান নি।অদ্ভুত না?
২.
এই তথ্যটা পেয়েছিলাম বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত আরণ্যক উপন্যাসের ভূমিকাতে।জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা।আরণ্যক উপন্যাসটা আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শেষ করেছি।ঠিক যেভাবে শেষ করেছিলাম অপরাজিত।মাসরুর আরেফিনের সাক্ষাৎকারের বইটাতে উনি বিভূতিভূষণের আরণ্যক আর চাঁদের পাহাড় উপন্যাসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।প্রশংসা করার মতন উপন্যাস বটে।কাল রাতে ধরেছি চাঁদের পাহাড়।কি সুন্দর বই!বিভূতিভূষণ পড়ছি আর আফসোস করছি এতোদিন পড়ি নি বলে।সেই কবে পথের পাচাঁলী পড়েছিলাম।সাত আট বছর তো হবেই।আমার পড়ার আগে পথের পাচাঁলী বইটা দেবজিত ধার করে নিয়েছিল।ফেরত দেয়ার সময় বলেছিল, বইটা একপাতা করে পড়েছি আর আফসোস করেছি শেষ যাচ্ছে বলে।ওর পড়ার কিছুদিন বাদেই আমি পড়ি।আমার মনের অবস্থাও দেবজিতের মতনই ছিল।কিন্তু কেন জানি পথের পাচাঁলী শেষ করে বিভূতিভূষণের অন্যকোনো বই ধরি নি।তখন খুব সম্ভবত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ে মত্ত ছিলাম।কঠিন সব বই পড়ার জেহাদ নিয়েছিলাম।
৩.
গত বছর কৌতূহলবশত আদর্শ হিন্দু হোটেল বইটা কিনেছিলাম নীলক্ষেত থেকে।কারণ তার কিছুদিন আগে ইন্দুবালা ভাতের হোটেল বইটা পড়েছিলাম।অনেকটা তুলনা করার মানসেই হয়তো সেটা কিনেছিলাম।আদর্শ হিন্দু হোটেল পড়ে তো আমি রীতিমতো হতভম্ব।পুরো বইটাই আজিমপুরের লোকাল বাসে বসে পড়া।আমি এক প্রকার ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।মনের সব গোমড় চলে গিয়েছিল।মনে হয়েছিল জীবনটা কি সুন্দর!লড়াই টা চালিয়ে যেতে হবে নিজের সাধ্যমতো।সব না পাওয়ার হাহুতাশ নিয়ে অন্ধকার ঘরে কান্না করার জন্যে তো মা আমায় এতো বড় করে নি,ছিচকাদুঁনে মত আফসোস করার জন্যে তো বাবা আমায় পড়াশুনা করায় নি।
৪.
তখন থেকে তক্কেতক্কে ছিলাম নতুন উদ্যমে বিভূতিভূষণ শুরু করার।কিন্তু এতো বই লাইব্রেরী থেকে এনে রেখেছিলাম যে বিভূতিভূষণের বিভূতিটা আর গায়ে মাখাতে পারছিলাম না।এই বছর অন্য বই পড়ার মাঝেই সাতপাঁচ না ভেবে অপরাজিত শুরু করে দেই।অপরাজিত একেবারে ছোট উপন্যাস নয়।বেশ বড়ো ল্যান্ডস্কেপ।ফেব্রুয়ারী মাস জুড়ে শত ব্যস্ততার মধ্যেও এই বইটা পড়ি।রিক্সায়,বাসে,বইমেলায়,রাতে ঘরে। সাধ্যমত দাগাই।লাল কলম দিয়ে।কতো বার যে চোখ ভিজেছে,শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেছে ইয়ত্তা নেই।ঠাকুর কে বারবার বলি, আমায় যেন অপুর মত শক্তি দেয়।সাহস দেয়।
৫.
মজার ব্যাপার হলো অপরাজিত শেষ করেই কিন্তু আমি আরণ্যক ধরতে পারি নি।কারণ অপরাজিত শুরু আগে থেকে শাহাদ্দুজ্জামানের একটা সাক্ষাৎকারের বই পড়ছিলাম।সেটা শেষ করতে হলো।আর আছে,ব্যভিচারীর মত এর মাঝে হুমায়ন আজাদের একটা প্রবন্ধের বই পড়েছিলাম।আরো পড়েছি মাহমুদুল হকের নিরাপদ তন্দ্রা,তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবি।স্ট্যান্টবাজি করে শাহাদুজ্জামানের আমার দীপেশ আবিস্কার বইটা শুরু করেছিলাম,দীপেশ চক্রবর্তীর সন্মানে লেখা সময়ের কুয়াশা নামের এক গ্রন্থ উন্মোচনের অনুষ্ঠানের আগের রাতে।দীপেশ চক্রবর্তীর কাজ কে আর একটু ভালো করে বুঝার জন্যে।কুড়েঁমির জন্যে এক রাতে বইটা শেষ করতে পারি নি।তবে শাহাদুজ্জামানের বইটা প্রতি আমি চিরঋণী হয়ে থাকবো আমার সাথে দীপেশ দার চিন্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যে। এই বইটা আমার নতুন করে চিন্তার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
৬.
সেই গ্রন্থ উন্মোচনের অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখা নাফিস সাদিকের সাথে।তাএ সাথে বসেই মোহাম্মদ আজম থেকে শুরু করে দীপেশ চক্রবর্তীর লেকচার শুনলাম।নাফিস ভাইয়ের সাথে যখনই দেখা হয় আমার মধ্যে একটা অপরাধ বোধ কাজ করে। তার লেখা ঋতুপর্ণ ঘোষ: চলচ্চিত্র,জীবন ও সাক্ষাৎকার বইটা পড়ি নি বলে।নাফিস ভাই আমার বন্ধু মানুষ।তার চেয়েও বড়ো কথা তিনি একজন বিনয়ী পাঠক এবং পরিশ্রমী লেখক। সেই নাফিস ভাইয়ের লেখা বই এখনো পড়ি নি সে তো রীতিমতো বৈষ্ণব পাপ!প্রোগ্রামের পরের দিনই অনেকটা পণ করে তার বইট কিনে আনি এবং পড়া শুরু করি।বইয়ের প্রতিটা পাতায় তার ইন্টিগ্রিটি চোখে পড়ে।খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসে ছিলাম, কোনো খুঁত বের করার জন্যে।তবে কিছুই পাই নি।এই বই পড়ে নতুন করে ঋতুপর্ণকে সেলিব্রেট করার উপলক্ষ পেলাম।
৭.
এই কটা বই শেষ করে পরে পুনরায় বিভূতিভূষণে ফিরে এলাম।আরণ্যকের মধ্য দিয়ে।বেকার সত্যচরণের সাথে আমিও চলে গেলাম লবটুলিয়া'য়, বইহারে।সত্যচরণের মাধ্যমে বিভূতিভূষণ বাবু যে আমায় কতো বিচিত্র মানুষের সাথে যে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন!রাজু পাঁড়ে,ধাতুরিয়া,ধাওতাল সাহু,মটুকনাথ পাঁড়ে,যুগলপ্রসাদ,কুন্তা,মঞ্চী,রাজকুমারী ভানুমতী। আরো কতো!
আরণ্যক শুধু মাত্র একটা উপন্যাস নয়।তার চেয়েও ঢের বেশি।আরণ্যক শেষ করেছি গত পরশু।কাল সারাদিন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা বই পড়লাম।উদ্যানে বসে।কাল রাতেই শুরু করেছি চাঁদের পাহাড়।সে এক আরেক এডভেঞ্চার। আফ্রিকার জঙ্গল,ব্লাক মাম্বা,মানুষখেকো সিংহ আর আমাদের সাহসী শঙ্কর।ছত্রিশ পাতার মত পড়েছি।শঙ্কর আপাতত ডিয়েগো আলভারেজের সেবাযত্ন করছে।আমি সেই ফাঁকে লেখতে বসেছি।
৮.
একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম,আমার লেখালেখি না করলে আমার তেমন ক্ষতি হবে না।তবে পড়াটা বন্ধ করে দিলে হয়তো দমটা আটকে যাবে।আবার সেটা না ও হতে পারে।কই অনেকেই তো পড়ে না।লেখা না।তারাও তো দিব্যি আছে।সুখেই আছে হয়তো।
অনেক বকেছি।এখন বিদায় হই।জয় হোক বিভূতিভূষণের,জয় হোক তারাশঙ্করের, জয় হোক মাহমদুল হকের,জয় হোক হুমায়ুন আজাদের,জয় হোক দীপেশ চক্রবর্তীর,জয় হোক শাহাদুজ্জামানের, জয় হোক মাসরুর আরেফিনের,জয় হোক নাফিস সাদিকের।সাথে আমারও?

পুনশ্চ ১- নাফিস ভাই লেখাটা যদি আপনার চোখে পরে তবে বলছি,বইটাতে আমার মায়ের নামে একটা অটোগ্রাফ দিবেন কেমন? মা ঋতুপর্ণ ঘোষের সিনেমা ভারি পছন্দ করে।আমার ধারণা আপনার বইটা তার খুব ভালো লাগবে।আর আপনার থেকে কাচ্চি বিরানীও পাওনা বহু দিন থেকে।কুত্তার কাচ্চি না।খাসীর কাচ্চি।
পুনশ্চ ২ - লেখাটা একেবারেই কথা বলার ঢংয়ে লেখা।কোনোভাবেই আমার বইপড়ার ফিরিস্তি নয়।আর লোকের কাছে বলে বেড়ানোর মত বই এখনো পড়ে উঠতে পারি নি।কম্মিন কালে পারবো ও না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৯:৪১
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৫০

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩



গতকাল ছিলো বাংলা নববর্ষ।
সকালে এক জরুরী কাজে আমি উত্তরা গিয়েছিলাম। আমার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা। কিন্তু দেরী করে ফেললাম। আজ বাসার সবাই মাওয়া যাবে। সেখানেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই সময়ের কিঞ্চিৎ ভাবনা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭

বাক স্বাধীনতা কিংবা যা মনে আসছে তাই লিখে বা বলে ফেলছেন, খুব একটা ব্যাক স্পেস চাপতে হচ্ছে না এখন, তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোন দল নির্বাচিত হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: অপেক্ষা (১ম পর্ব)

লিখেছেন শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭

ফকির আবদুল হাই সাহেবের সাথে পরিচয় হয় যখন আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখন। খুবই আধ্যাত্মিক আর রহস্যময় মানুষ। পেশায় একজন অধ্যাপক। অধ্যাপনা ছেড়ে আধ্যাত্মিকতা করেন, ফকির নামটি তার নিজস্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ১০ জনের একটা গ্রুপ আছে। আমরা বেশীরভাগ সময়ই সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। গত তিনদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো বিএনপির... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের মডেল মসজিদ প্রকল্প: রাজনীতি, প্রতারণা ও সমাজের প্রতিচ্ছবি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৪


২০১৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়। ইসলামপন্থীদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তারা ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানোর পথ বেছে নেয়। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা সরকারকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×