গরু একটি সামাজিক প্রাণী। ইহা আমাদের নানাবিধ উপকার ও অপকার করিয়া থাকে। ইহা একটি সামাজিক প্রাণী। সমাজের বিভিন্ন স্তর ও স্থানে ইহাদের বিচরন সর্বদা লক্ষণীয়।
গরুদের দুইটি পা, দুইটি হাত, একটি মগজ বিহীন মাথা ও সুদৃশ্য অপূরণীয় পেট রহিয়াছে। যাহাতে যতই ঠোসা হোক না কেন, তাহা পূরণীয় হইয়াও হয়ে ওঠে না। দেশে এবং বিদেশে গরু পাওয়া যায়। কিছু গরু দেশে থাকে। কিছু জাহাজে চাপিয়া প্রবাসে গিয়া ঘাস উৎপাটন করিতে থাকে। কিন্তু, কথায় আছে না? রসূনের কোয়ার পুচ্ছ এক স্থলে। সুতরাং, দেশ হোক আর বিদেশ, সকল একই খামারের গরু দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত হইতে "শীতকার" করিয়া তাহাদের উপস্থিতি ও তথাকথিত দুর্দশা জানান দেয়।
এতক্ষন ধরিয়া সাধু পেচাল পাড়িবার পরও যদি বিষয়টি পাঠকের বোধগম্য না হইয়া থাকে, তাহা হইলে এখনি আমাদের দলে আপনাকে আমন্ত্রন জানাই। জি হ্যাঁ, ইহাই আমাদের মুখ্য পরিচয়।
আমাদের খুলনায় বেশকিছু গরু ছিল, যেগুলি ঘাস চাবাইতে ও ভবিষ্যতের ঘাস চিবানোর ব্যাবস্থা করিতে শহর ছাড়িয়া মহা শহরের দিকে ধাবিত হইয়া আজ ক্রমে ক্রমে ষাঁড় হইতে বলদে পরিণত হইতেছে। নিম্নে উহাদের "বই"জ্ঞ্যানিক নাম সহ আবাসস্থল সম্পর্কে আলোচনা করা হইল।
সুতি (সফিকুল ইসলাম) {শ্যামলী}ঃ এই গরুটি বেশ নামকরা গরু। ইহা একাই একটি আস্তাবল দখল করিয়া বসবাস করে। এবং বিনামুল্ল্যে অপর গরুদের ইহাতে আশ্রয় প্রদান করিয়া থাকে। আজ সে মাঠের ঘাস কাটা শেষ করে একটি নামকরা সংস্থায় ভবিষ্যতের জন্য ঘাস লাগাইতেছে। যাহাতে তাহার পরবর্তী বাছুরটি আসিয়া ঘাস খাইতে পারে। ইহার মাথায় একটি শিং রহিয়াছে, যাহা একই সাথে আত্মরক্ষা ও নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে উহাকে সহায়তা প্রদান করে।
জজ ভাই (জর্জ মাহমুদ) {মাই-মন-সিংহ}ঃ এই গরুটি একটি তালব্য গরু। তাল ও ছন্দে সে বেসামাল। তাহার মত প্রতিভাধর গরু ইহজনমে আমি কম ই দেখিয়াছি। বাংলা ভাষায় আন্তঃ বাংলার মাটিতে খ্যাতনামা এক শ্রদ্ধেয়া শিক্ষিকার পুত্র কিভাবে জজ নাম ধারন করিল? এবং, কি খাইয়া সে কাঠের বেঞ্চি ছাড়িয়া প্লাটফর্মে উঠিয়া মাথা হেলাইয়া ইংরাজি র্যাপ গাওয়া শুরু করিল? আল্লাহ মালুম। পৃথিবীতে আল্লার বেশ কিছু মুজিজা আছে। জজ এমনই একজন। এই প্রতিভাবান গরুটি শুধুযে ঘাস খাইতেছে এবং লাগাইতেছে তাহা নয়, সে একজন চিকিৎসক ও বটে। আসা করি, তাহার কাছে চিকিৎসার জন্য যাইয়া কিছু টাকা বাঁচিবে।
র্যাটস ভাই (আসিফুর রহমান রাতুল) {আজ-ইম-পুর}ঃ একবাক্ক্যে সকল গরু হাম্বা হাম্বা ডাক ছাড়িয়া স্বীকার করিবে, যে ইঁদুর নামধারি একটি গরু কিভাবে নিজেকে গরুত্ব- পূর্ণ করিয়া তুলিল। খাদ্দ্য গ্রহন, পাঁচন ও এর হইতে গৃহীত এনার্জি আকামে ঢালায় তাহার কোন জুড়ি নেই। প্যাচহীন এই গরুটির কাছে আমাদের অনেক আশা। চাই সে একদিন গরুর মত গরু হোক।
পর্ন স্টার (ইসমাইল) {ইউ-এছ-এ}ঃ এই গরুটি দেখিতে দেখিতে দেশ ছাড়িয়া কপাল জোরে বিদেশী ঘাস উৎপাটন করিতে সক্ষম হইয়া যায়। বাকি গরুগুলির চোপা হইয়াছিল দেখিবার মতন। সাধাসিধে গরুটি কিছুদিনের মধ্যেই বিদেশী হইয়া যাইবে। আশা আছে সানি-লিওনি ম্যাদামের সহিত তাহার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবিগুলি একদিন আমাদের একাকিত্তের সাথী হোক।
এ্ন-ডি-ছি (নিয়ামুল হাসান) {এলিট ক্লাস আবাসিক}ঃ বসুন্ধরা আবাসিকে থাকা এন-এস-ইউ এর একটি যোগ্য গরু এটি। বিশিষ্ট হবু শিল্পপতি ও কোটিপতি নিয়ামুল আমাদের সবার প্রিয় (কিছু কিছু ক্ষেত্রে উত্তেজিত) মুখ। পকেটে ২০ টাকা লইয়া একটি গরু কিভাবে মারছিডিয ও বিএম-ডাবলু চড়িবার প্রশান্তি মুখে লইয়া বসে থাকিতে পারে, তাহা আজ ও আমার বোধগম্য নয়। তাহার ভোজন তৃপ্তি ও ক্ষুধা যে কোন গোছের তাহা আর কাউকে বুঝাইবার প্রয়োজন বোধ করিতেছি না। ২ টি নান খাইয়া যদি সে ইহাকে প্রারম্ভিক ক্ষুধা মৃত্যু বলে এবং পরে এক প্লেট বিরিয়ানি শাবড়ে দেয়, তবে আমি আর কি বলিতে পারি??? নিয়ামুল আমাদের এই দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত গরু গোষ্ঠীর এক অনন্ন্য নাম, এবং এ নাম স্বীয় ওউজ্জল্ল্যে ভাস্বর।
মেরিল (ফয়সাল আজাদ) {ফেরী ঘাট, নৌকা ঘাট, বন্দর, আরিচা, মাওয়া, সদরঘাট ইত্যাদি}ঃ এই গরুটি সাঁতার জানে, নাবিক গরুটিও খুলনার। ঘাস কাটিতে কাটিতে একদিন সে পানিতে পড়িয়া গিয়াছিল, সেই হইতে সে কচুরিপানা কাটিতেছে। নান্দনিক কবিত্ত্ব ও স্বীয় অক্ষয় কুমারের ন্যায় অভিনয় তাহার একাত্মতা ঘোষণা করে। গায়ক আছিফের মতন চেহারা ও সম** নাবিকের সৌন্দর্য তাহার মুখে দৃশ্যমান। কালো সাইজ করা দাঁড়ির অন্তরালে হাসিমাখা মুখে কত যে দুষ্টামি মিশে আছে,রশি ফেয়াও তাহার কেউ তল খুজিয়া পাবে না।
টিপি (তন্ময় চৌধুরী) {ধান-মন্ডি}ঃ আমি এই হতভাগা বলদ বাছুর, যে রচনাটি লিখিতেছে। আদু হইতে হইতে ক্রমে এখন সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাইতে শুরু করিয়াছি। খেতে-খামারে ঘুরে ঘুরে ঘাস খাওয়া আমার কাজ, এবং কোন ঘাস হজম না হওয়াতে আজ অম্বলের ব্যাথায় জীবন পেরেশান। মাথা নষ্ট এই বলদ বাছুরটি লম্ফ ঝম্প করিতেই বেশি পছন্দ করে। গোয়ালের অপর গরুগুলির সাথে সক্ষতা ও হ্যাং আউট ই আমার নিকট বেশি প্রোডাক্টিভ কাজ। আশা করি, একদিন গরুর মত গরু হইতে পারিব। ইদানিংকাল আমার একটি গাভী জুটিয়াছে। ভবিষ্যৎ গাভী ও বাছুর গুলোর জন্য দোয়া রাখিবেন।
উপরিউক্ত আলোচনা হতে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হইতে পারি যে, গরু গরুই হইবে। ইহা ঘাস কাটিবে, খাইবে ও গোবর ঢালিবে। গরুগুলিকে সাধাসিধে লাগিলেও গোবর কিন্তু শতভাগ খাঁটি। যে বীজ ই বোনা হোক, ফসল ফুটিবেই। আপনারাও গোয়ালে আসুন। দেশের গরু, দেশের ই থাকুন।