মিষ্টি কিনতে গেলাম কোলকাতার এক দোকানে।বিরাটি অঙ্গনা মোড়ের মিষ্টির দোকানিকে শুধালাম, 'দাদা, কিলো কতো?' দোকানি দাদা হা করে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। পরক্ষনেই বুঝে গেলেন, 'ওম্মা! দাদা নির্ঘাত বাংলাদেশ থেকে এয়েচেন'। কাজেই, উত্তর দিলেন, 'দাদা, একানে তো কিলো দরে বিক্রি হয় না, পিস পিস হয়'।
আমি বললাম, 'বুঝতেই পারছেন, বাংলাদেশ থেকে এসেছি! এবার এক কাজ করুন, ৫শ দিন।' আমি যে মিষ্টিটা দেখাচ্ছিলাম, সেটায় রস আছে। তাই দেখে দোকানি বললো, 'এটা বেশিদিন রাখা যাবে না, নষ্ট হয়ে যাবে'। অর্থাৎ, ওরা এই ৫০০ মিষ্টি অনেকদিন রেখে খায়। দোকানির আন্তরিকতা দেখেও মুগ্ধ হলাম, লোকটা বাটপার নয়। বেশ, বললাম, 'এই যে, এই ছানার সন্দেশগুলো দিন।' দোকানি বললো, 'তাহলে ওজনে যা হয় সেই মতে দিয়ে দিচ্চি'।
তারপর ৫শ মিষ্টি নিয়ে ছুটলাম গন্তব্যে। প্যাকেট মিষ্টি দেখে সবাই খুশি। আমাকেও খেতে দিলো। খেয়ে বুঝলাম, এক পিস খেলে আর খাওয়া লাগে না, অমৃত! আরও একটি দিতে চাইলে আমি না বলে দিলাম।
কোলকাতার চায়ের কাপ ছোট বলে আমরা অনেকেই হাসাহাসি করি। অথচ সেদিন সকালে ফরিদপুর থেকে জার্নি করে বিকেলে দমদম এসে এই এক কাপ চা খেয়েই চোখের সব ঘুম দূর হয়েছিলো! কাপ ছোট হলে কি হবে, খুব ঘন চা, ভালোই লাগে খেতে। ছোট কফির কাপে ৫ টাকা, আর মাটির পাত্রে ৬টাকায় চা খেলাম। এক পিস কোন আইসক্রিম, দাম মাত্র ১০ টাকা, দুপুরে একটা খেয়ে রাতে আবার প্রায় ১ মাইল হেঁটে গিয়ে আরেকটা খেয়েছি! এখানে অনেক কিছুর দাম আমাদের চেয়ে কম, তাই ওরা বলে এখানে টাকা রোজগার করাও নাকি অনেক কঠিন!
আর বাস ভাড়া শুনলে অবাক হতে হয়, এতো রিজনেবল। সেটা তো গতকালই বললাম। হলুদ ট্যাক্সি আছে, সেই পুরাতন অ্যাম্বাস্যাডর, কোলকাতার ব্র্যান্ড! আছে উবার আর অলোও। রিক্সা আছে, ক্রিং ক্রিং নেই, আছে প্যাপু প্যাপু! টেনে নেওয়া রিক্সা এখনও চোখে পড়েনি, কোথায় পাবো? ভিআইপি রোডের ফুটপাতগুলো উঁচু উঁচু, যাতে ক্যালরি খরচ বেশি হয়। বাসগুলোতে পিচ্চি পিচ্চি বাচ্চারা যেভাবে স্মার্টলি ওঠানামা করে, দেখে ভালো লাগে। ওরা ভীষণ চটপটে।
আজ এক নার্সারি পড়ুয়া বাচ্চাকে নিয়ে ওর মা বাসে উঠলো। বাচ্চাটা নিজেই বাসের ব্রেকের তালে ভারসাম্য রাখছে দেখে অবাক হলাম। সামনেই বাসের ইঞ্জিন কভার, যা টপকে সিটে যেতে হবে। বাচ্চাটার মা বললো, 'কাম অন! গেট আপ!' আর অমনি বাচ্চাটা ইঞ্জিন কভারে উঠলো, আমি হাত ধরলাম, ও সিটে গিয়ে বসলো। তারপর ওর মা ওর পাশে বসলো। তারপর বাচ্চাটার বায়না, 'মোবাইলটা দাও না!' মা বকা দিলো, আবার মোবাইলও দিলো। মোবাইল নিয়েই তারপর সে ইউটিউবে স্পাইডারম্যানের কার্টুন দেখা শুরু করে দিলো! স্কুলের কাছে আসতেই আবার ঝটপট নেমেও গেলো। আমি তুলনা করছি না, আমার দেশের বাচ্চারাও চালু, কিন্তু ওদের ভালোটাকেও ভালো বলতে হবে। বাচ্চাটার ইনোসেন্ট হাসি এখনও চোখে ভাসছে! আর ভাসছে কালকের বাসের ঐ মেয়েটির মুখ।
লেখাঃ দেব দুলাল গুহ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৪