সেদিন আমার অনুভূতিগুলো কেমন ভোতা হয়ে গিয়েছিল। এমন এক জগতে পৌঁছে গিয়েছিলাম যেখানে কোনো ম্যাড়ম্যাড়ে কষ্ট নেই, কোনো নীরস আনন্দ নেই, কোনো ক্লান্তিকর চিন্তা নেই, আসলে কোনো চেতনাও নেই। আমি বোধহয় মৃত্যুর খুব কাছাকাছি কোনো জগতে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমার চোখে কোনো কান্না ছিল না, কোনো আলোও ছিল না। গভীর হাহাকার ছাড়া যেন কিছুই ছিল না! আমার শরীরটা যেন প্রাণহীন কোনো জড়বস্তু। এত বেশি কষ্ট পাচ্ছিলাম। কষ্টটা বোধহয় তখন কষ্টের এন্ডিউরিং পয়েন্ট পেরিয়ে গেছে। চোখে একটুও কান্না নেই! চোখটা চলে গেল ফ্যানের বুকের দিকে। সে এক অদ্ভুত অবস্থা। খাটের উপর দাঁড়ালাম। ওড়নাটা হাতে নিলাম। তার মুখটা ঝাপসা মনে পড়লো। মনে পড়লো তার সাথে বলা শেষ কথাগুলো। আমার পৃথিবী তখন টলায়মান। আমি চলে যাচ্ছি। ফ্ল্যাশব্যাকের মতো মনে পড়ে যাচ্ছিল তার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোকে। লম্বায় ওড়নাটা ফ্যানের পাখা স্পর্শ করবে কিনা ভাবছি। ঠিক সেই মুহূর্তে নক করলো আমার মেয়ে....
আসলে মৃত্যুও আমাকে নিতে চাইলো না। আমি বেঁচে রইলাম। ভেবেছিলাম রাতে ঘুম হবে না। সারা রাত কেঁদে কেঁদে কাটবে। কিন্তু প্রচণ্ড রকমের ঘুম হলো সেই রাতে। স্বপ্নে অপূর্ণ এসে উপস্থিত। তার সাথে হাত ধরে অদ্ভুত মুগ্ধতায় হাটলাম। ঘুম যখন ভাঙলো, বুকটা কেমন খালি আর ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। ভালোবাসার অবস্থান হৃদয়ে বলেই হয়তো এমন লাগলো। খুব বেশি মিস করছিলাম তাকে। তার মুখখানা মনে পড়ছিলো বারবার আর দমকে দমকে কান্না উঠে আসছিলো বুকের গভীর থেকে। কষ্টের কী এক ভয়ংকর রূপ পরিগ্রহ করছিলাম যেন। ভীষণ সে যন্ত্রণা! আমি কাজ করছি, চলছি, ফিরছি। কিন্তু কী এক অসীম শূন্যতা আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। আমি ডুবে যাচ্ছি, ডুবে যাচ্ছি।
ওহ! আমার চারপাশে এত শূন্যতা কেন? এভাবেই বুঝি জীবন যাবে আমার? সেই মুহূর্তে যখন মরতে পারিনি, এখন আর আত্মহত্যার কথা ভাবিনা। আমি আমার নিয়তির শেষটা দেখতে চাই!