চিলেকোঠার এক রুমের যে বাসাটিতে আমরা থাকি তার ছাদ থেকেই গুনগুন করে কান্নার শব্দটি আসছিলো। গভীর অভিমান থেকে উৎসরিত অতল দুঃখের কান্না। রেডিয়াম দেয়া দেয়াল ঘড়িতে রাত এখন প্রায় সাড়ে তিনটা। শীতের এমন রাতে কম্বলের নরম আদর ছেড়ে ওঠাটা যদিও অনেক কষ্টকর তারপরও মানবিক আর নাগরিক দায়িত্ব হিসেবে উঠতেই হলো।
কোন বাসার ছোট্ট ছেলে বা মেয়েটি পালিয়ে এসে এইখানে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এই শীতের কুয়াশা আচ্ছন্ন রাতে প্রচন্ড ঠান্ডায় খেই হারিয়ে ফেলেছে। এখন আমার কাজ হলো বাচ্চাটিকে শীত থেকে সরিয়ে আনা এবং নিরাপদে তার বাবা-মার কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা
দরজা খুলে রূম থেকে বের হলাম। ফুট দশেক দূরে রূমের ছাদে উঠার মই। বরফ শীতল লোহার মই বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। সিটি কর্পোরেশনের লোকজনের অবহেলার কারণে এলাকায় কুকুরের অত্যাধিক সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে। তারস্বরে চেঁচাচ্ছে সেগুলো। দু’একটা আবার লম্বা সুর তুলে করুণ স্বরে কাঁদছে। মইয়ের প্রায় মাঝামাঝি পর্যন্ত উঠতেই ছাদের ওপরটা দেখা গেল। যা ভেবে ছিলাম তাই। গুটিশুটি মেরে একটা বাচ্চা বসে আছে সেখানে, বয়স ১৩/ ১৪ হবে। মইয়ের দিকে আগ থেকেই তাকিয়ে ছিলো যেন জানতোই কেউ একজন এসে নিশ্চয়ই ওকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে এখান থেকে। মানুষ মানুষের কষ্টে সাড়া না দিয়ে পারে না – এটা বাচ্চারাও অবচেতন মনে বুঝে নিয়েছে।
সে জন্যই আমাকে দেখে তার মুখে এক অপার্থিব হাসি ছড়িয়ে পড়লো। চাঁদের কুয়াশা মাখা আলোতে তার হাসিটা কেমন যেন অদ্ভুত মনে হয়, গা ছমছম করে ওঠে অকারণে – এমন। বসে বসে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে সে এগিয়ে আসতে থাকে আমার দিকে। নীচের কুকুরগুলা কি পাগল হয়ে গেছে!! ঘেউ ঘেউ শব্দে কান পাতা দায়। আমার শরীরও ঠান্ডায় বরফের মত জমে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মইয়ের সিঁড়িগুলো হাত থেকে ফসকে যাবে এখুনি। আর যদি তা হয় তা হলে ছয় তলার ছাদ থেকে সোজা কনক্রিটে শান বাঁধানো পেভমেন্টে পতন। ফটাশ করে ফাটবে মাথার খুলি আর খুলে যাবে হাঁড়ের বাঁধন। এই সময় হঠাৎ আতরের তীব্র গন্ধে যেন আচ্ছন্ন হয়ে গেল আমার সমগ্র ইন্দ্রিয়।
‘ওই! ওই!! আপনেরে রূমের বাইরে আইতো কইছো কিউ? যান, ঘরেকে যান....’!!! পাশের উঁচু ছাদ থেকে লম্বা এক হুজুর তীব্র ধমক দিলো আমাকে। অদ্ভুত তার উচ্চারণ, গলার স্বর আর শব্দ চয়ন! এস. এস. পাইপের রেলিং দিয়ে দেখ যাচ্ছে আপদমস্তক সাদা কাপড়ে ঢাকা লম্বা হুজুরটিকে। তার তীব্র রাগতঃ আচরণ আর বিক্ষুব্ধ ভঙ্গি দেখে চেতনার কোন একটা জায়গা তীব্রভাবে ঝনঝন করে বেজে ওঠে আমার। আমি বুঝতে পারি এইখানে চরম অসংলগ্ন কিছু ঘটছে যেখানে আমার জড়িয়ে পড়াটা সাংঘাতিক অশুভ হবে আমার জন্য। দ্রুত লাফিয়ে লাফিয়ে মই বেয়ে নেমে এলাম। এক দৌড়ে রুমে ঢুকে দরজাটায় সবগুলো খিল লাগিয়ে দিলাম। ঢুকে পড়লাম কম্বলের নীচে আবার। তীব্র এক ক্লান্তিতে চোখে ঘোর লেগে এসেছে আমার। ঢুলু ঢুলু ঘুম নিয়ে চিন্তা করলাম, যা হয়েছে কাল সকালে সেটা বিশ্লেষণ করবো। আজ আপাততঃ ঘুমিয়ে যাই।
আলোচিত ব্লগ
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন