''কম খান'' – এই জাতীয় কোন প্রস্তাবনার অবতারণা করছি না। বরং বলছি ভেবে দেখার জন্য। দেশের অর্থনীতি সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে একজন দায়িত্বশীল ব্যবসায়ীর যেমন প্রয়োজন তেমনি একজন যুক্তিবান ভোক্তার ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মধ্যবিত্ত শিক্ষিত জনগণের মধ্যে ইদানিং দুইটি অনাকাঙ্খিত বিষয় দৃশ্যমান হচ্ছে। ১. পন্য ক্রয়ে গুরুত্বের ক্রম (প্রায়োরিটি) নির্ধারনে কুশলী না হওয়া আর ২. পণ্যের ন্যায্যমূল্য সম্পর্কে ঔচিত্য ধারণার কাছাকাছি আসতে না পারা।
এই দুইটি বিষয় দ্রব্যমূল্য পূনঃনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
যদি ক্রম অনুসারে বিশ্লেষণে যাইঃ
১. নববর্ষে ইলিশ মাছ আমাদের খেতেই হবে। পান্তা-ইলিশ না খেলে আমাদের বাঙ্গালীত্ব যেন পরিপূরণ হয় না। হোক কেজি ৩০০০ টাকা, যেটা স্বাভাবিক সময়ে বড়োজোর ৩৫০/৪০০ টাকা। রোজায় টমেটো খেতেই হবে হোক কেজি ১৮০ টাকা যার স্বাভাবিক মূল্য ৩০/৩৫ টাকা। অকালে শীম খেতেই হবে যার কেজি অকালে ১০০/১২০ টাকা যা শীতকালে ২৫/২৮ টাকা কেজি। কেন আমরা বলতে পারি না অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সময়ে আমরা এই ভোগ্যপন্য সমূহ নিয়ন্ত্রিতভাবে কিনবো, গুরুত্বের ক্রমে না আসলে কেনা থেকে বিরত থাকবো। এগুলো কাঁচাপণ্য, জীবন রক্ষাকারী কোন আবশ্যকীয় কিছু নয়। আপনি-আমি না খেলে এই বাজারী পন্য বাজারেই পচবে। মধ্যবর্তী ফড়িয়ারা ৩/৪ বার মার খেয়ে পূজিঁ হারিয়ে ভাল কোন ব্যবসার ধান্দা ধরবে (এই উচ্চমূল্যের কিছুই উৎপাদক শ্রেণী তথা কৃষকরা পায় না।)। আহবান জানালাম, চলুন অস্বাভাবিক মূল্যের সময় এই সামগ্রীগুলো ভোগ করা থেকে বিরত থাকি, শুধু তাই নয় কোন পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক লাগলে সেটা কেনা হতে বিরত থাকি। তাতে দ্রব্যমূল্য অনেক নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে।
২. যেহেতু বাজারে ক্রেতার অভাব নেই (১৬ কোটি ক্রেতার দেশ এই আমাদের বাংলাদেশ) কিন্তু সে অনুযায়ী পণ্য কম (চাহিদা-যোগান তত্ব) সেহেতু বল সবসময় বিক্রেতার কোর্টে থাকে। মানুষ হা পিত্যে করে পণ্য কিনে ফেলে যাই হোক দাম। দেখা গেলো একজন রুই মাছের খুচরা বিক্রেতা তার মাছের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করলো ১৫০ টাকা কেজি (২০% লাভে)। বাজার বাজিয়ে দেখার জন্য সে দাম হাকলো ২২০ টাকা। একজন অসচেতন ক্রেতা ২২০ টাকা বা ২০০ টাকায় সেই মাছ কিনে ফেললো। ব্যাস! ঐ খুচরা ব্যবসায়ী সেইদিনের জন্য মাছের মুল্য নির্ধারণ করে ফেলল ২২০/২০০ টাকা। এতে ঐ অসচেতন ক্রেতা শুধু নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হলো না বরং ঐ দিনের বাকী সব ক্রেতাকেই মাছের কেজি প্রতি অপ্রয়োজনীয় ৫০/৭০ টাকা গুনতে বাধ্য করলো। এমতাবস্থায় এই ক্ষেত্রে আমার আহবান হলো, খুচরা বাজারে যথাযথ দর কষাকষি করে পন্য ক্রয় করুন, রিক্সাওয়ালা/টেক্সিওয়ালাদের সাথে দরাদরি করুন। এতে নিজেও ক্ষতির হাত হতে বাঁচুন আর অন্যকেও বাঁচান। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এই দুইটি ছোট পদক্ষেপ যথেষ্ঠ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রতিমন্তব্যঃ
- অপর মত সুস্বাগত
- অতি দামাদামি করে আবার গরীব খুচরা ব্যবসায়ীকে পথে বসাবেন না। একজন রুই মাছ বিক্রেতাকেও এই উচ্চমূল্যের বাজার থেকে চাল-ডাল কিনে খেতে হয়।
- আমি কোন অবস্থাতেই নিজেকে একজন কৃপণ মনে করি না।