চারদিকে শুধু চমক আর চমক! বাঙ্গালী জাতিকে খালি চমকের পর চমক দিতে হবে কারন এই জাতি চমকাতে পছন্দ করে। সারািদর-রাত চিব্বশ ঘন্টা চমেকর উপরই রাখেত হেয়! সেদিন দেখলাম ঢাকায় একটা মৃদু ভূমিকম্প হওয়ার পর কয়েকটি টিভি চ্যানেল ব্রেকিং নিউজ হিসেবে তা উপস্থাপণ করছে। সত্যি সেলুকাস, তোমাকে বড় মিস করি!
জানতাম, হয়তো ভুলই জানতাম যে, পত্রিকার লাল কালির শিরোনাম মানে হলো জাতীয় জীবনের অসম্ভব গুরুত্ববহ কোন সংবাদ যা ইতিহাসের পাতায় আসন করে নিতে পারে। কিন্তু এখন দেখা যায় কিংবা মনে হয় যে লাল রং এর হেডিং নিছকই চাররঙা পত্রিকার কালার কম্বিনেশন।
বিশ্ব ভালবাসা দিবস, বাবা দিবস, মা দিবস এই বিষয়গুলোর প্রসার যেন দিন কে দিন বেড়েউ চলেছে। কয়েকদিন পর বিশ্ব ঘৃণা দিবস, রাগ দিবস, যৌন দিবস, মৌন দিবস, নানা দিবস, দাদা দিবস, চাচা, খালা, ফুফু দিবস ইত্যাদি বের হতেও সময় লাগবে না বোধ করি।
যতদূর জানি জন্ম লগ্ন জীবণাচরণ থেকে ধীরে ধীরে ঐতিহ্যের জন্ম নেয়। এই ঐতিহ্য প্রথম দিকে অনেক প্রবল ও জীবন্ত থাকলেও সময়ের প্রয়োজনে এবং বিবর্তনে ঐহিত্য ধীরে ধীরে বিবর্ণ হতে থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছর আমরা যে অতি উৎসাহে বৈশাখ পালন করেছি আমাদের এলাকার মানুষের বাপ-দাদা, চৌদ্দ পুরুষও করে নাই। তারা বোধ করি এই কর্পোরেট যুগের আমাদের মত নাগরিকদের চেয়েও ব্যস্ত ছিল, সারা দিনের ব্যস্ত সময় শেষে এই সব করার সময় পেত না! আর বর্তমানে আমরা অতিতের যেকোন সময় থেকে বেশী ইভেন্ট আর নিত্য-নতুন আইডিয়া যেমন মঙ্গল প্রদিপ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, উত্তরীয় এইসব দিয়ে বৈশাখকে পালন করছি। এ কিন্তু উল্টো রাজার দেশের লক্ষণ! দিন কে দিন আরও জোশের সাথে পান্তা - ইলিশ গিলছি।
রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তী পালনে মিডিয়ার অতি বাড়াবাড়ি সাধারন জনতার মাঝে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আম জনতার অনেকেই রবীন্দ্র সৃষ্টির গভীরতা সম্পর্কে ধারণা পোষন করে না। বস্তুত তারা শিক্ষিতই বা কতজনে। ফলাফলস্বরূপ জনতার হীন মন্তব্য শুনতে হয়েছে স্বয়ং কবিগুরুরই, চ্যানেল মালিকদের নয়।
এভাবে তাৎপর্যহীন বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অঘাট কে ঘাট, অপথ কে পথ বানিয়ে মিডিয়াওয়ালারা রস-কষ সহ সকল ফায়দা লুটছে আর বানর নাচ, ডুগডুগির বোল শুনে আমরা আনন্দে হাততালি দিচ্ছি, বাঙালী জাতি হিসেবে জন্মটাকে এখন আরও গভীর, সংস্কৃতিবান ও অর্থপূর্ণ মনে হচ্ছে।