প্রিয় বন্ধুরা। আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমার এই পোষ্ট নাস্তিকদের বিরুদ্ধে। বেশ কিছুদিন ধরে নাস্তিক রা ব্লগে বেশ এক্টিভ আছে অন্য যে কোন সময়ের তুলনায়। আর অনলাইনে মিথ্যা আর আজগুবী প্রপাগান্ডা ছড়ানোর কাজে লিপ্ত আছে। দেখি তাদের মিথ্যা আর শয়তানী প্রপাগান্ডা বিষয়ে একটু আলোকপাত করি।
বিষয় ১) রমজান সম্পর্কে ঃ
শবে বরাত শেষ হয়েছে। রমজান শুরু হচ্ছে। এই রমজান হচ্ছে আমাদের জন্য সিয়াম সাধনার মাস(সংযমের)। কিন্তু এই মাস নাস্তিকদের জন্য কষ্টের এটা তাদের জন্য হিপোক্রেসির মাস। কারন ঃ এই মাসে মুসলিম ভাইয়েরা সিয়াম সাধনার নামে বেশী বেশী ইফতারী করে আর এতে দ্রব্য মুল্য বেড়ে যায়- এই কারনে স্বল্প বেতনে চাকুরী করা নাস্তিকেরা সমস্যায় পড়ে।
আচ্ছা আমি মানলাম ইফতারী আমরা একটু বেশীই করি। আমি মনে করি শুধু না খেয়ে থাকলেই রোযা হয় না। এই মাসে সংযমের আরো শিক্ষা আছে। নিজেকে সকল পাপ-অশ্লীল কর্ম থেকে দূরে রাখা। চুরি-ছিনতাই-হত্যা-অপহরন-প্রতারনা-ঘুষ সব কমে যায় কারন মুসলিম সমাজ সংযম পালন করে। যাকাত, ফিতরা গরীব মানুষের জন্য অকাতরে দান করা হয়। ইফতারী/সেহরীতে অসংখ্য গরীব মানুষ ভালো মতন খেতে পারে। মানুষজন সকল প্রকার অশ্লীলগালী/কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে। নিজেকে পরিশুদ্ধ করে গড়ে তুলতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো- ১) চাহিদা বাড়লে যোগান সমানুপাতিক থাকলে পন্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু যদি পন্যের দাম বাড়ে তাহলে এখানে ইসলামের দোষ কি? ব্যাবসায়ীক সিন্ডিকেটের কারনে দাম বাড়লে ইসলামের দোষ কোথায়? ৩০ দিন এতো ত্যাগ আর কষ্ট স্বীকারের পরেও রমজান কি ভাবে হিপোক্রেসির মাস হয়? ইফতারি বেশী করলেই নাস্তিকদের চোখে পড়ে, কিন্তু এতো দান-খয়রাত,ত্যাগ, সংযম এগুলো চোখে পড়ে না? নাকি ইচ্ছা করেই এই শয়তানী করে?
বিষয় ২)কোরবানী সম্পর্কে ঃ কোরবানীর ঈদ আসলেই এদের শোকের মাতম শুরু হয়ে যায়। কোরবানী বিষয়ে এদের ভন্ডামী আরো একধাপ বেশী। প্রথমে প্রপাগান্ডা শুরু করবে ধাপে ধাপে, যাতে মুসলিমদের মেন্টালী কনফিউশন করা যায়। শুরু করবে বিভিন্ন দেশে কু-প্রথা সম্পর্কে - যেমনঃ চায়নাতে জোর করে কি ভাবে মানুষের পা কে ছোট রাখা হতো, জাপানে কি ভাবে মানুষের দেহকে নির্মম ভাবে ধ্বংস করা কতো। মঙ্গোলিয়াতে মৃত মানুষের লাশ কেটে পাখিকে খাওয়ানো হতো। এর পরেই অপ্রাসঙ্গীক ভাবে যোগ করে দেয়া হবে কি ভাবে কোরবানীর গরুকে মুসলিমরা জবাই করে মেরে ফেলছে। কম জানে বা বুঝে এই রুপ নবীন ব্লগার সত্যই দ্বিধা দ্বন্দে পড়ে যাবে। আরো অনেক ভাবেই তারা ইনিয়ে বিনিয়ে ব্যাখ্যা করবে- কোরবানী অমানবিক। এই আদিম প্রথা বাতিল যোগ্য।
আমার কথা হলো- বিভিন্ন দেশে যেই কু-প্রথা প্রচলিত ছিলো সেগুলো মানুষের উপরে অত্যাচার করা হয়েছে ,যে গুলো সত্যই অমানবিক ছিলো। কিন্তু পশু কোরবানী কিভাবে মানুষের উপরে অত্যাচার হয়?
পশু কোরবানীর মধ্য মহান আল্লাহ মানুষের মঙ্গল রেখেছেন? পশুর প্রতিটা অংগ-প্রত্যাংগ মানুষের কাজে লাগে। অর্থনৈতিক ভাবেও কাজে লাগে-যেমন চামড়া, হাড়। তাহলে এটাকে অত্যাচার বলা হচ্ছে কেন? কোন যুক্তিতে?
প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী আমিষ ভোজী একটি প্রানী প্রটিনের জন্য নিরামিষ ভোজী প্রানীদের খাবে। যেমন-বাঘ হরিনকে খাবে, কুমির মাছ খাবে। আর মানুষ গরুকে খাবে।
এই উদাহরন যদি দেয়া হয় তাহলে নাস্তিকেরা নতুন যুক্তি দেয়া শুরু করবে। প্রোটিন খাওয়া যাবে- আপত্তি নাই কিন্তু উৎসবের (ঈদ) সাথে পশু হত্যা করা যাবে না। এটা অনৈতিক।
তার মানে ব্যাপারটা কি দাড়ালো ? পশু হত্যা করা যাবে কিন্তু সেটা আল্লাহর নামে কুরবানী করা যাবে না। মানে এখানে পশুর প্রতি দরদের বদলে আল্লাহর নামে জবাই করলেই নাস্তিকদের বেশী আপত্তি। যতো ইচ্ছা গরু খাও জবাই করো-কিন্তু আল্লাহর নামে উৎসবের সাথে করা যাবে না। এখানে উনাদের পশু প্রেম উধাও হয়ে খোদা বিরোধীতা চোখে পড়ে।
ও হ্যা- নাস্তিকদের কিন্তু গরুর মাংস খাইতে কোনোই আপত্তি নাই। অনেকেই মনে হয় রেগুলার খায়। তবে মালাউন নাস্তিক যেগুলা আছে সেগুলার কথা জানিনা।
ওহ !! আরেকটা কথা- হিন্দুদের পাঠা বলী, খ্রীষ্টানদের থ্যাংস গিভিংডে তে টার্কি হত্যা নিয়ে কিছু বলতে যাবেন না। তাহলে আপনি একজন সাম্প্রদায়িক মৌলবাদি আখ্যায়িত হবেন। সংখ্যা লঘু অধিকার হরনের জন্য আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে যেতে পারে।
বিষয় ৩ ঃ সমকামী ঃ নাস্তিকেরা আধুনিক আর প্রগতিশীল। উনারা সব কিছু বিজ্ঞান সম্মত আর বাস্তববাদি চিন্তা ভাবনায় থাকেন। তবে সমকামী বিষয়ে উনারা উদার। যে যার সাথে ইচ্ছা সেক্স করবে এটাতে কোনো বাধা থাকতে পারবে না। সেটা ছেলে-ছেলে। মেয়ে মেয়ে। যেভাবেই হোক এই অধিকার হরন করা যাবে না। অনেকেই(সমমনা নাস্তিক) আবার বিভিন্ন গবেষনার লিঙ্ক দিয়ে সেটা সঠিক প্রমান করার জন্য অন্য সমকামী পন্থি নাস্তিকদের পক্ষে সাফাই দিচ্ছে। বিভিন্ন প্রানী-পোকামাকড় সমকামী সে জন্য মানুষের সমকামী হওয়াটা দোষের কিছু না। একদিকে এরা প্রগতিশীল আধুনিক অন্য দিকে এরা সমকামীদের সাপোর্টার।
তবে নাস্তিকদের মুখে বার বার “ গেলমান ছহবত কথাটা কেন আসে সেটা আমার কাছে আস্তে আস্তে ক্লীয়ার হচ্ছে।“
কতো বড় দ্বি-মুখী এরা বুঝতে কোনো সমস্যাই হয় না।
বিষয় ৪ঃ বিয়ে/লিভ টুগেদার প্রসঙ্গেঃ
এই বিষয়ে ভন্ডামী ওদের সকল শয়তানীকে ছাড়িয়ে যায়। নাস্তিকদের কাছে বিয়ে একটা কাগুজে চুক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। যেখানে মানুষের মনের মিল থাকে না সেখানে কাগুজে চুক্তি দিয়ে কি হবে? নারীদের সেক্স একভাবে করলেই হয়। কাগজের দরকার কি? কারন বিয়ে নামক কাবিনের মাধ্যমে একজোড়া নারী পুরুষকে জোর করে একসাথে থাকতে বাধ্য করা হয়।
তাই লিভটুগেদারের ব্যাপারে এদের উৎসাহ বেশী। কারন এতে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। ইচ্ছে মতন ছেলেটি ওই মেয়েটিকে ফেলে চলে যেতে পারবে। সন্তানের ভরন-পোষনের আইনগত দায়বদ্ধতা থেকে ছেলেটি মুক্ত থাকবে।
অথচঃ ইসলাম বিয়েকে ফরজ ঘোষনা করে নারীকে নিরাপত্তা দিয়েছে। স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীকে অধিকার দিয়েছে। তার ভরন পোষনের নিশ্চয়তা স্বামীদারা নির্ধারিত করেছে। সন্তানের রাষ্ট্রীয় বৈধতা দিয়েছে। আর এর পরেও স্ত্রী না চাইলে তালাক নিয়ে স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারবে, শরিয়ত মোতাবেক। আর সে পুর্ন মোহরানা নিয়ে চলে যেতে পারবে।
লিভ টুগেদার করলে ঐ মেয়েটি সম্পুর্ন শুন্য হাতেই চলে যেতে হতো। দাবী করার কোনো অধিকারই মেয়েটির থাকতো না।
অন্য দিকে নাস্তিকেরা গলা ফাটিয়ে চিল্লাবে ঃ ইসলাম নারীকে ভোগের বস্ততে পরিনত করেছে। নারীকে কোনো মর্যাদা দেয়নি। নারীদের স্বাধীনতা আর অধিকার কে ভু-লুন্ঠিত করা হয়েছে।
আমি এদের ভন্ডামির আর দ্বি-মুখী নীতির কয়েকটা বিষয় গুলো তুলে ধরলাম। আরো অনেক বিষয় লিখার ছিলো। এখন আপনার বাকিটা বিবেচনা করবেন।
*** পোষ্ট অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। এদের দ্বি-মুখী আর ভন্ডামী নিয়ে আরো অনেক বলার আছে। (বাউল সম্পর্কে, অন্য ধর্ম সম্পর্কে নাস্তিক্যবাদ, আরো বেশ কিছু বিষয়ে)। পরবর্তিতে সেগুলো নিয়ে লিখবো।
*** এই পোষ্টে নাস্তিকেরা কমেন্ট করলে যুক্তির সাথে করবেন। বাজে কমেন্ট/গালী দিলে কমেন্ট মুছে দিয়েই ব্লক করবো।