আজকে বৃস্টি হচ্ছে অনেক। আমি আমার বারান্দায় চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছি, আজকে টাইম টা আমার জন্য অনেক অনেক অলস। জানি না কতো দিন পরে এতো অলস টাইম পেয়েছি, অনেক আয়েসী ভাবে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছি। কিছুক্ষন পরে পরে বিরতিহীন ভাবে বৃস্টির ছিটা আমার গায়ে পড়ছে, খুব ভালো লাগছে।আমার বাসার সামনের প্লট গুলো এখনো খালি আছে। কয়েকটি প্লটে কচু গাছ জন্মেছে আর বৃস্টিতে ভিজে কচু গাছের পাতা গুলো চক চক করছে। হাউজিং প্রজেক্ট গুলো বালু দিয়ে ভরাট করা তাই অনেক প্লট গুলোতে বাড়ী উঠেনি, প্লট গুলোর বালুর উপরে আস্তে আস্তে সবুজ ঘাস জন্মাচ্ছে। কিছু দিন পরে এখানে বাড়ী উঠবে আর চোখের সামনে ভরে যাবে ইটের দালানে। আমার পাশের বাড়ীর ছাদে পেয়ারা গাছ ভিজে টুইটুম্বুর। সেখানে গুটি গুটি পেয়ারা ধরেছে। সেগুলো দেখে খুব ভালো লাগলো, মনে হচ্ছে বিট লবন দিয়ে কচি পেয়ারা গুলো চিবিয়ে চিবিয়ে খাই।
ধুর!! কি ভাবছি যা তা। এই বয়সে এসে ছেলে মানুষী।
কি করবো?- পাগল মন আমার। ইট পাথরের এই নগরীতে আমি অনেক ব্যাস্ত মানুষ, অবসরের সময়ে এই বর্ষার দিনে মন তো পাগলামী করতে চাইবেই।
আগে আমি যখন স্টুডেন্ট লাইফে ছিলাম, তখন কি মজাই না করতাম। ভাবতে ভাবতেই আমি নস্টালজিক হয়ে যাই।
আমি থাকতাম চট্রগ্রামে। সেখান আমাদের পরিবারের নিজস্ব বাড়ী ছিলো। বাড়ীটি ছিলো দুইতলা। আর আমার এলাকাটি ছিলো অনেকটা মফস্বল এলাকার মতন। আমার বাড়ীর ছাদে অনেক গাছ লাগানো ছিলো। বর্ষার দিনে আমার বাসার ছাদে আমার প্রতিবেশী বন্ধু দের দিয়ে অনেক মজা করতাম, ভিজতাম। ছাদের চিপায় লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট টানতাম। সন্ধ্যা বেলা কারেন্ট চলে যেতো প্রায়ই। কারেন্ট চলে গেলে বাসার ছাদে উঠে আড্ডা দিতাম একোনায়, সাথে থাকতো প্রতিবেশী+বন্ধু+ক্লাসমেট কয়েকজন। আরেক পাশে আমার মা, পাশের বাড়ীর খালাম্মার সাথে গল্প করতো। আমাদের বাড়ীর সাথে পাশের বাড়ীর দুরত্ত্ব এতোই কম ছিলো যে, আমার মা, জানালা দিয়ে নাস্তা বানিয়ে বাটিতে দিতো আর ঐ বাড়ীর বড় আপা জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে নাস্তা রিসিভ করতো... হা হা হা।
আমার বাড়ীর পিছনের সব জমি ছিলো একজন ধনী স্থানীয় জমিদারের(সওদাগর)। তার জমিতে ছিলো বাশঝাড়,কলাগাছ,পুকুর ইত্যাদি। সন্ধ্যাবেলা জোনাকির আলো জ্বলতো। রাতের বেলা পড়ার সময় মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে বাইরের সেই প্রকৃতি দেখতাম। শবে বরাতের সময়ে আমাদের এলাকার সবার বাসায় বাসায় মিস্টি-হালুয়া বিতরন চলতো। রোযা আসলে একসাথে সবাই তারাবী পড়তে যেতাম। তারাবী পড়ে রাতে আড্ডা দিতাম, বাসায় এসে খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম আরেকটি সুন্দর দিনের প্রতিক্ষায়। ঈদের চাঁদ রাতে কতো মজাই না করতাম। অনেক হাসি ও কস্টের স্মৃতি জড়ানো আছে। সব লিখতে গেলে পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে।
সময়ের সাথেই মানুষের ভাগ্য ও রিযিক পরিবর্তন হয়। আমি ও আমার পরিবার চট্রগ্রাম ছেড়ে এসেছি আজকে বহু বছর হতে চললো।
এখন আমি ঢাকার ফ্লাট কালচারের সাথে পরিচিত। এটা এমন একটা কালচার যেখানে পাশের বাসার মানুষ গুলো আপনাকে চিনবে না। আপনার বিপদ-আপদে তারা টেরই পাবে না। সময় যেখানে যন্ত্রের মতন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠি, তারাতারি গোসল করে খেয়ে অফিসে দৌড়। অফিস থেকে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়, কখনো রাত হয়ে যায়। বাসায় এসে খেয়ে হয়তো একটু নেটে বসি তার পরেই খেয়ে ঘুমিয়ে যাই আগামীকালের আরেকটি কর্ম ব্যাস্ত দিনের জন্য।
মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে গেলে সেই সময়ের বিভিন্ন ঘটনা গুলো মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখি। আর তাকেও দেখি, যে ছিলো আমার জীবনের সবচাইতে স্পেশাল, সব থেকে আলাদা, আমার জান। আধোঘুম-আধো জাগরিত অবস্থায় তার সাথে যেন আমার মাঝে মাঝে সাক্ষাত হয়। অস্ফুস্ট স্বরে মনে হয় ঘুমের ঘোরেই তার সাথে কথা বলি। সে আমার চোখের আড়াল হয়েছে অনেক বছর হলো, কিন্তু তার চেহারা আমার কাছে এখনো সবুজ। তার জন্য সব সময় দোয়া করি সে যেখানেই থাকে, যেন ভালো থাকে।
ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নাই। সম্বিত ফিরে পেলাম আমার ছোট ভাইয়ের ডাকে। এই ভাইয়া !! তুমি তো ভিজা যাইতেছো। তারা তারি ভেতরে আসো। দেখলাম বৃস্টি আরো তীব্র হয়েছে। আমার ভাই চায়ের কাপ আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আধো ভেজা অবস্থায় চা পান করলাম।
এখন সিগারেট খাইতে ইচ্ছা করতেছে। বাবা-মার সাথে থাকি তাই ঘরে সিগারেট রাখি না। কেমনে সিগারেট খাই?
মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো- আমি বৃস্টিতে ভিজে দোকানে গিয়ে সিগারেট খাবো আবার ভিজে ভিজে বাসায় আসবো। কতো দিন ছেলে মানুষি করি না। হোক না বয়স হয়েছে, তাই বলে কি মজা করা যাবে না? .................... ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে গেলাম বাসা থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:০৮