পিছনে ফিরে তাকাতে দেখলো ঠিক বিশ কদম দূরে মৃন্ময়ী । কেমন যেন উৎকন্ঠা আর উদ্বেগের ছাপ যোগ হয়েছে তার চোখে ও মুখে । কপাল ও চিবুক জুড়ে ঘামের অবাধ বিচরণ ।
মৃন্ময়ী- হঠাৎ একদম দম মেরে গেলে যে । ক্লাস শেষ হতে না হতে চুপিসারে কোন দিক দিয়ে বের হয়ে গেলে ।
নভো- ভার্সিটির এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখে হুশ বুদ্ধি ঠিকমতো কাজ করেনি।
মৃন্ময়ী- ওহ বুঝতে পারছি । হট্টগোল আর জটলার মধ্যে মেয়েটি আটকা পড়লো কিনা সহপাঠি হিসেবে তোমার একটু খোঁজ নেওয়া উচিত নয় কি!
নভো- সরি, সরি, সরি
-জটলার মধ্যে তোমাকে এইভাবে একা রেখে আসা আমার একদম উচিত হয়নি ।
মৃন্ময়ী- ইট’স ওকে ।
নভো- সত্যি বলতে কি আজকে রাস্তায় ঐ ঘটনার পর থেকে আমি কিছুটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম । বলতে পারো ভয় পেয়ে গিয়েছি । স্যারের ক্লাস পুরোটায় মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে । তুমি ডাক না দিলে হয়তো এতক্ষনে আমি নীল আকাশের বুকে ঠাঁয় পেতাম ।
মৃন্ময়ী- ঐ পরিস্থিতিতে আমিও খুব হতম্ভব হয়ে গিয়েছিলাম । তুমি বড় বিপদ থেকে উদ্ধার হয়েছো সেই জন্য আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি ।
নভো- মনে হচ্ছে তোমার বদৌলতে পৃথিবীতে আজ দ্বিতীয়বার নভোর জন্ম হলো ।
মৃন্ময়ী- আমি নয়, আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করেছ । আমি শুধু উসিলা মাত্র ।
নভো- প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাবি দেশের পুরোনো ভার্সিটি। অথচ বর্তমান অবস্থা দেখলে ছাত্র হিসেবে খুব লজ্জাবোধ করি ।
মৃন্ময়ী- তুমি ঠিক বলেছো।
নভো- একটু পিছনে ফিরে গিয়ে দেখো জন্মলগ্ন থেকে শিক্ষা, গবেষনা ও জাতীয়ভাবে অবদানের ক্ষেত্রে ঢাবির অবস্থান প্রথম স্থানেই ছিলো সবসময় । দেশের বহু জ্ঞানীগুনী, পণ্ডিত, শিল্পী-সাহিত্যক ও সৎ রাজনীতিবিদের জন্ম হয়েছে এই আঙিনা থেকে। অথচ আজ তার কী করুণ অবস্থা ।
মৃন্ময়ী- ঠিক তাই । দেশের নোংরা রাজনীতির বলি হচ্ছে স্বনামধন্য আমাদের এই বিদ্যাপীঠ ।
নভো- আমাদের পড়াশোনার মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে এখন নিয়মিত মারামারি, রেষারেসি, হানাহানি, দলবাঝি, টেন্ডারবাঝি, ও ক্ষমতার দম্ভ প্রকাশের মধ্য দিয়ে ।
মৃন্ময়ী- আজকের ঘটনাটি দেখো । কত রকম হট্টগোল । পড়াশোনার পরিবেশ একদম নষ্ট হয়ে গিয়েছে ।
নভো- আমাদের মতো শান্তিপ্রিয় স্বপ্নবান শিক্ষার্থীদের হাজারো রঙিন স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের স্বপ্নগুলো প্রতিনিয়ত নষ্ট করে দিচ্ছে এই সব অপরাজনীতি ।
আধো আলো আধো ছায়াময় পথ ধরে দু’জন পাশাপাশি হাঁটা ধরলো । চলার পথে কথা বলছিলো আর একে অপরের দিকে খানিক বাঁকা হয়ে আড়চোখে তাকাচ্ছিলো । ঝিরিঝিরি বাতাসে মৃন্ময়ীর সাথে হাঁটতে বেশ ভালোলাগা কাজ করছে নভোর মাঝে । এর আগে সেই কখনো কোন মেয়ের এত সান্নিধ্য আসেনি । মৃদু বাতাসের ঝাপটায় মুখের বাম পাশে চোখ বরাবর ঝুলে পড়া একগুচ্ছ কুকডানো চুলের কারনে মৃন্ময়ীর মুখখানা এক পাশ থেকে দেখে নভোর মনে হলো অবিকল রূপকথার কোন পরী । যার মুখ পানে চেয়ে থাকা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা পলকহীন ।
স্কুল ও কলেজ সময়ে মৃন্ময়ীর জন্য অনেক ছেলে পাগল ছিলো । মৃন্ময়ী পড়াশোনা ছাড়া আর কোন দিকে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ কখনও করেনি। ফলে ওদের কেউ তার ধারে-কাছে ঘেষার কোন সুযোগ পায়নি কিংবা সাহস করেনি । মৃন্ময়ীর গায়ের রঙ হয়তো নভোর মতো অতটা ফর্সা হবে না । পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মেয়েটির দিপ্তীময় সুশ্রী চেহারায় আছে মোহনীয় ক্ষমতা ।
মুন্ময়ী যে কিনা কোন ছেলেকে কখনো পাত্তা দিতো না । সেই কিনা এই গোবেচারা টাইপ ছেলের মাঝে এক অজানা আকর্ষনে মন বার বার তার কাছে আসার তাড়না দিচ্ছে । এই ভেবে তার মনে মনে এক বড্ড হাসি পেলো । নভোর সামনে তা প্রকাশ না করে নিরবে মুখ থেকে সেই হাসি মুর্হূতে পেটের মধ্যে চালান করে দিলো । প্রথম দেখায় নিজের অজান্তে নভোর জন্য ভালোলাগা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলো । মৃন্ময়ীর কেন যেন মনে হচ্ছে নভোর প্রতি তার ভালোলাগা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
এর মধ্যে অনেকদূর হাটাঁ হয়ে গিয়েছে কেউ খেয়ালই করেনি। মৃন্ময়ীর পানির খুব পিপাসা পেয়েছে । ফুটপাতের পাশেই একটা দোখান থেকে এক লিটার পানির বোতল নিলো নভো …(অসমাপ্ত)
ভাবতে ভাবতে পথ চলছিলো হঠাৎ নভো বলে একটা ডাক শুনে পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল---- (ষষ্ঠ পর্বের শেষ বাক্য )
নভোনীল এর অন্য পর্ব সমূহঃ
পর্ব – ১ রিম সাবরিনা জাহান সরকার
পর্ব – ২ পদ্ম পুকুর
পর্ব – ৩ মেঘশুভ্রনীল
পর্ব – ৪ খায়রুল আহসান
পর্ব – ৫ আখেনাটেন
পর্ব – ৬ পুলক ঢালী
পর্ব - ৮ কবিতা পড়ার প্রহর
পর্ব - ৯ মনিরা সুলতানা
পর্ব - ১০ বিলুনী
পর্ব – ১১ ঢুকিচেপা
পর্ব-১২ মো. মাইদুল সরকার
আশা করি পরর্বতী পর্বের মশাল নতুন কেউ একজন ধরবেন। তার অপেক্ষায় রইলাম। শুভ কামনা সবার জন্য ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৪৬