মার্কেটিং এর ম্যাডাম একবার বলেছিলেন, "No publicity is bad publicity." প্রচারের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের মনে ব্র্যান্ডের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া। কিছুদিন পরে মানুষ ভালো কি মন্দ সেটা মনে রাখে না, বরং শুধুই ব্র্যান্ডের নামটাই মাথায় থাকে। উদাহরণস্বরূপ, অনেকেই প্যারিস হিলটন এবং কিম কার্দাশিয়ানকে সেলিব্রিটি হিসেবে জানেন, কিন্তু তাদের কী প্রতিভার কারণে তারা সেলিব্রিটি, সেটা অনেকে জানে না।দিনের শেষে তারা জনপ্রিয় সেটা মানুষ মনে রাখে।
বিশ্বে এইযে কোকাকোলা বয়কটের হুজুগে সবাই জজবা নিয়ে আলোচনা করছে। তার পছনের মুল কলকাঠি নাড়ছে অন্য কোমল পানীয় কম্পানী। এই বয়কটে ফয়দা লুটছে অন্য কোমল পানীয় কম্পানীগুলি। নতুবা মানুষের উপকারের কথা চিন্তা করলে সকল কোমল পানীয় বয়কটের ডাক দেওয়ার কথা

যদি মানুষের উপকারে এই বয়কট হতো তবে সকল কোমল পানীয় বয়কটের কথা বলতো সবাই। তা না বলে কোকাকোলা বয়কট করে অন্য কোমল পানীয়কে হাইলাইট করা হচ্ছে, অনেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভুতি দেখিয়ে ভোক্তাদের নজরে পরতে চাইছে।
এক যুগের বেশি হসপিটালিটি ইন্ড্রাস্টির সাথে জড়িত আছি। প্রতিবছর আমার ডিপাটমেন্টে বছরে ৫০ কোটি টাকার বেশি কোকাকোলা পন্য বিক্রি করে থাকি কিন্তু আমি শুধুই ঠান্ডা পানিই পান করি।
আমি নিজে কোকাকোলা সহ সকল কোমল পানীয় বয়কট করেছি প্রায় ১০ বছর হলো। আমার পছন্দের পানীয় ঠান্ডা পানি।
যদি গরমে যখন বেশি ঘাম হয়, ক্লান্তি মেটাতে তখন আমার পছন্দের জিনিস হইলো লেবু সরবত।
২ চামচ চিনি, এক চিমটা লবন, লেবু, পুদিনা পাতা + ঠান্ডা পানি বা সোডা। বিট লবনও দিতে পারেন, একটু অন্য রকমের স্বাদ হবে। এক রকমের Mojito বলতে পারেন।
- Click This Link
যেকোন ব্যবসার ধান্দা যতবেশি টাকা কামানো যায়। তাই বিশ্বের খাবারের ইন্ড্রাস্টি সব খাবারে স্বাদ বাড়াতে চিনি এবং আরো অনেক রকমের ক্যামিক্যাল যোগ করে থাকে যাতে কাস্টোমার তাদের পন্যই বেশি কেনে।
এই ফুড ইন্ড্রাস্টির এই সব আরেক বিরাট ইতিহাস, এই সব খাবার আমাদের বর্তমানের আধুনিক রোগের জন্য বেশি দায়ী।

খাবারে অতিরিক্ত চিনি আমাদের ওজন বাড়ায়। বেশি চিনি শরিরে ম্যানেজ করতে গিয়ে করতে ডায়াবেটিকসের ঝুকি বাড়ে, হৃদরোগ, অতিরিক্ত ক্যামিক্যালের কারনে কিডনিতে চাপ পড়ে।
তাই বয়স যেহেতু বাড়তেছে তাই কোমল পানিও বাদ দিসি। যতোটা সম্ভব কম ক্যামিক্যাল যুক্তি খাবার খেতে চেস্টা করি।
আসুন দেখি কিভাবে কোমল পানিও পরিবেশন করা হয়। ক্যান বা বোতল কারখানা থেকে আসে সরাসরি দোকানে জনগন কিনে পান করেন। কিন্তু রেস্টুরেন্টে সোডা ফাউন্টেন থেকে গ্লাসে করে পরিবেশন করা হয়। যদিও অনেকে ক্যান/বোতল পছন্দ করে কারন ফাউন্টেনের কোলা আর ক্যানের মাঝে স্বাদে বেশ পার্থক্য আছে।
রেস্টুরেন্টে সোডা ফাউন্টেন মেশ্যিনে ঘন দ্রবন আসে কারখানা থেকে। ১০ বা ১৯ লিটারের ঘন দ্রবনের প্যাকেট থেকে দ্রবনের সাথে সাথে কার্বন ড্রাই অক্সাইড( Co2) +পানি মিশিয়ে গ্লাসে পরিবেশন করা হয়।
১ গ্লাস কোকাকোলা = ১ ভাগ ঘন মিশ্রনের সাথে ৫ ভাগ সোডা পানি।
নিচের ভিডিওতে দেখুন কোকাকোলার বোতলজাত করার কারখানা।
কোকাকোলা সিক্রেট রেসিপি। কোকাকোলার বোতলে লেখা থাকে প্রাকৃতিক ফ্লেবার যেটার আসল রেসিপি কোকাকোলার কয়েকজন ছাড়া অন্য কেউই জানেনা। এই রেসিপি প্যাটেন্ট করেনি কারন তাতে একটা সময় পরে এটা জনগনের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
কোমল পানীয়তে বিভিন্ন ক্যামিক্যালের সাথে থাকে প্রচুর চিনি। যেটা আমাদের সাধারন খাবারে পাবেন না। এমনকি এক গ্লাস সরবতেও আপনি অত বেশি চিনি যোগ করবেন না।
নিচের ছবিতে দেখুন প্রতিটা বোতলে কি পরিমান চিনি আছে যেটা অনেকে প্রতিদিনই কয়েক বোতল করে পান করছে।
১৯০০ এর আগে চিনি এতো সহজ লভ্য ছিলো না, চিনি যত বেশি মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়েছে তত বেশি মানুষের ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিকস, হৃদরোগের হার বেড়েছে।
https://www.weforum.org/agenda/2016/02/is-sugar-really-that-bad-for-you
তাই আসুন নিজের স্বাস্থের জন্য সকল কোমল পানিও বয়কট করি। হুজুগে পরে কোকাকোলা বয়কট করে অন্য কোলা পান করে আমরা শুধুই অন্য কম্পানির মার্কেটিং স্ট্রাটিজির সফল বানিয়ে অন্যদের ব্যবসা বাড়াচ্ছি মাত্র।