বেচে থাকার তাগিদেই প্রথম মানুষেরা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য ভাবনা শুরু করে আর সেই নতুন কিছু জানার আগ্রহ থেকেই বিজ্ঞানের শুরু। জ্ঞানের আলো মানুষকে আজকের উন্নত সভ্যতায় নিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান, দশ`ন, নতুন কিছু জানার আগ্রহ মানুষ জাতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে মানুষ সৌরজগতের শেষ প্রান্তে ভয়েজার ২ পাঠিয়েছে যেটা এক সময় সৌরজগতের সীমা অতিক্রম করবে। মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর জন্য কাজ চলছে। ঐখানে কিভাবে বসবাস করা যায় তার জন্য ভাবনা শুরু হয়ে গেছে। চিকিতসা বিজ্ঞানের উতকষে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে, শিশু এবং প্রসুতী মায়ের মৃত্যু হার অনেক কমে গেছে। গুটি বসন্ত রোগ এখন শুধুই কয়েকটা ল্যাবেই পাওয়া যায়, পলিও মুক্ত বিশ্বের ঘোষনা আসবে কিছু দিন পরেই।
মানুষ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে তেমনি অজ্ঞতাও কিন্তু বিভিন্ন রকমের চাদর দিয়ে অনেক মানুষকে ঘিরে রাখছে, আজ তেমন কিছু বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো।
জ্ঞানের উতকষ`তার সাথে সাথে অজ্ঞতাকে ও কিছু মানুষ ব্যবসার পুজি হিসেবে ব্যবহার করে এবং সমাজে কিছু মানুষকে অজ্ঞতার চাদরে ঢেকে নিজেদের সাথ` হাসিল করে।
নিচের বিষয় গুলি সম্পকে আমরা সবাই কমবেশি জানি এবং অনেকেই এই জিনিস গুলি নৈতিক এবং সত্য বলে বিশ্বাসও করি।
দাস প্রথা:- আপনি যদি এই লেখাটা পড়ছেন তার অথ` হলো আপনি আমার মতনই একজন ব্লগার। আপনি আমারই মতন একজন মানুষ। কিন্তু পৃথিবির একটা সময় কিছু মানুষ, অন্য কিছু মানুষকে নিজের সমান মানুষ মনে করতো না। তাদের দাস মনে করতো, তাদের পন্যের মতন কেনা বেচা করতো, অত্যাচার করতো, মেরে ফেলতো এবং সেটা অপরাধ ছিলো না।
প্রাচীন কালে এই বিষয়ের কিছু আইনও পাওয়া যায়।
কোড অফ হাম্মুরাবি
পৃথিবীর প্রথম সভ্যতা থেকেই মনে হয় দাস প্রথার শুরু হয়েছিলো,খৃস্টপূব` ৩৫০০ বছর আগের মেসোপটিমিয়া সভ্যতায়, খৃস্টপূব` ১৮৫০ সালের হ্যামুরাবীর আইনেও দাসপ্রথার বিষয়টা পাওয়া যায়। মানুষ কেনা বেচা তাদের দাস বানানোর এই প্রকৃয়া্টি এক সময়ে মানুষ বিশ্বাস করতো।
ইয়ামেনে দাসের বাজার
বিশ্বে শুধু মাত্র ১৬-১৯শতকে প্রায় ১২ মিলিওনের বেশি মানুষকে আফ্রিকা থেকে দাস হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। এটা যদি কিছু দিন আগের ঘটনা হয় তবে বিশ্বের ইতিহাসে মোট দাসের সংখ্যা বিলিওনের ঘরে পৌছে যাবে বলেই আমার মনে হয়।
এই দাস প্রথাও কিন্তু এক সময় অনৈতিক ছিলো না। তখন মানুষ এটাকে অন্যায় মনে করতো না।
ধমীয় বিশ্বাস:- বিশ্বে আনুমানিক প্রায় ৪২০০ ধম` বিশ্বাস মানুষ অনুসরন করে।
বড় ধম`গুলির টাইমলাই
সকল ধম`ই মানুষের উপকারে মানুষের ভালোর জন্যই। কিন্তু যেহেতু বিশ্বাসের উপরে ভিক্তিকরে গড়ে উঠে তাই ধমী`য় বিশ্বাসের কারনে আরো অনেক কুসংস্কার গড়ে উঠে। পানি পড়ে, জ্বীনে ধরা, ডিমনের আছর, দেবতার উদ্দেশ্য মানুষ উতসগ`, ক্রুসেড, রাজনীতি সব সময়ই ধম`কে ব্যবহার করেছে জনগনকে অধীনে রেখে ক্ষমতা বজায় রাখতে।
যদিও ধম` বিশ্বাস অনেক পুরানো কিন্তু প্রাচীন কালে ধম`বিশ্বাসের কারনে যুদ্ধ হতো না। বরং হিন্দু বনাম বৌদ্ধ, খৃস্টান বনাম ইসলাম ধমের প্রসারের কারনে ধমের কারনে হানাহানির কারনে লাখো মানুষের প্রান গিয়েছিলো। প্রায় ২-৩ লক্ষ মানুষ ইসলাম বনাম খৃস্টানদের ধম`যুদ্ধ ক্রুসেডে প্রান হারিয়াছিলো। বত`মানেও ধমের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ হয় নি। আইসিস, আলকায়েদা, কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ডে মসজিদে গুলি।
যারা মানুষ হত্যা করছে তারা কিন্তু বিশ্বাস করে তারা ঠিক কাজটিই করছে।

মজার একটা বিষয় হলো সকল ধমের বিশ্বাসীরাই কিন্তু মনে করে তারাই মাত্র সঠিক এবং বাকিরা ভুল পথে আছে... তাহলে আসলে সঠিক পথ কোনটি?
বন`বাদ/ উন্নত জাতি বিশ্বাস:- ১৯০০ শতকে রেসিজমের ধারনা মানুষের মাঝে আসে, কালো মানুষদের নিচু জাত মনে করে এবং এই ভাবনা দাসপ্রথার সাথে চলতে থাকে এবং অনেক মানুষ এই বন`বাদের কারনে মারাও গেছে। এখনো অনেক মানুষ মনে করে তারা উন্নত জাতি । ১৭৩৫ সালে বিজ্ঞানী Carl Linnaeus তার Systema Naturae বই এ প্রানী.উদ্ভিদকে বিভিন্ন শ্রেনীতে ভাগ করার প্রকৃয়ার ধারনা দেন, সেখানে মানুষকেও শ্রেনীবিন্যাসের অন্তভুক্ত করেন। এই রকমের আইডিয়া থেকে মানুষের বিভিন্ন জাতি ভাগের ধারনা কিছু রাজনিতিক,দাশনিক আরম্ভ করেন এটা। হিটলার তার আরিয়ান জাতি বিশ্বাস থেকে নিচু জাতি ঈহুদীদের ইউরোপ থেকে নিশ্চিন্হ করতে পরিকল্পনা করেছিলেন এবং তাতে পায় ৬ মিলিওন ইহুদীকে হত্যা করা হয়েছিলো। বন`বাদের প্রভাব থেকে বিশ্বকে বের হতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে। যদিও এখনো সাদারা নিজেদের উন্নত জাতি মনে করে কালোদের নিচু জাতি। হিন্দু ধমের জাতি ভাগের কারনে নিচু জাতের মানুষের জন্য আলাদা পাত্র খাবার দেওয়া হতো, তাদের মাটিকে বসতে দেওয়া হতো তাদের সাধারন মানুষের মতন জীবন জাপন করার ব্যবস্হা তাদের ছিলো না, এখনো অবস্হা খুব বেশি ভালো হয় নি যদিও।
হোমিওপ্যাথি:- বিশ্বে প্রায় ২০ কোটি মানুষ হোমিওপ্যাথি ব্যবহার করে থাকে, আধুনিক চিকিতসা বিজ্ঞানের শুরুর আগে অনেক বিকৃত রকমের প্রদ্বতিতে রোগের চিকিতসা করা হতো, তখন হোমিওপ্যাথি নতুন একটা তত্ব নিয়ে আসে এবং যদিও হোমিওপ্যাথি কাজ করে এমন কোন প্রমান নেই তবুও মানুষের বিশ্বাসের উপরে ভর করে এখনও প্রায় ৬ বিলিওন ডলারের হোমিও ঔষুধ বিশ্বে বিক্রি হয়।বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথির উপরে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ আছে এবং সরকারী ভাবে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে হোমিওডাক্তার নিয়োগ দেয়। এমনকি ইংল্যান্ডের রানীরও নিজেস্ব হোমিও ডাক্তারও আছে।
সমতল পৃথিবী:- মানুষ চাদে গিয়েছে চাদ থেকে পৃথিবির ছবি তুলেছে, স্যাটেলাইট যাচ্ছে ছবি তুলছে, আইএসএস ৯০ মিনিটে পৃথিবি প্রদক্ষিন করে মানে ২৪ ঘন্টায় ১৬ বার পৃথিবির চারপাশে চক্কর দেয়।
কিন্তু এতো কিছুর পরেও দুনিয়াতে কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে পৃথিবি আসলে সমতল। এন্টারটিকা চারপাশে উচু বরফের দেওয়াল এবং তার পরে কিছুই নাই। এটা সবার কাছ থেকে নাসা এবং সরকার ষড়যন্ত করে লুকিয়ে রেখেছে, মানুষ চাদে যায়নি, সূয` এবং চাদ পৃথিবির উপরে ঘোরে এবং সূয` ছোট এবং মাত্র ৩০০০ কিমি উপরে আছে।

বিশ্বের সবচেয়ে পুরানো ম্যাপ যেটা পাওয়া যায় সেটা ৬স্ঠ শতকের ব্যবলিওন সভ্যতায় পাওয়া ম্যাপ Imago Mundi ,
এই ভাবে অনেক দিন যাবত সমতল পৃথিবির ধারনা চলে আসছিলো। খুস্টপূব ৫ম শতকে গোলাার পৃথিবির ধারনা গ্রীক দাশ`নিকরা প্রথম দেয় এবং এটা খৃস্টপূব` ৩য় শতকে এসে Cleomedes' দুই শহরের দুপুরের সূযে`র আলো কত ডিগ্রিতে পড়ে এবং দুরুত্বের হিসাব করে পৃথিবির পরিধি হিসাব করেছিলো।
কিন্তু আধুনিক কালে এসো আবার কিছু মানুষ পৃথিবি সমতল বলে বিশ্বাস করা শুরু করেছে এবং তাদের অনেক অনুসারী রয়েছে। দেশেও অনেকেই এই রকমের বিশ্বাস করে। কারন এরা গুজব,হুজুগে বিশ্বাসী, যৌক্তিক ভাবনা পছন্দ করেনা।
পৃথিবি সবকিছুর কেন্দ্র এবং সূয`,তারা সবকিছু পৃথিবী কেন্দ্রকরে ঘুরে এমন আইডিয়ার বিরোধিতার জন্য গ্যালেলিওকে নিবাসনে দেওয়া হয়, ব্রুনকে আগুনে পুরিয়ে মারা হয় তার বিজ্ঞান বিশ্বাসের জন্য।
কালো জাদু :- প্রাচীন সমাজ থেকেই মনে হয় অলৌকিকতায় বিশ্বাস চলে এসেছে কারন তখন তাদের কাছে অজানা বিপদ থেকে রক্ষার পেতে চাইতো এবং সেই আশা থেকেই অজানা শক্তি তাদের সাহাজ্য করতে পারে এবং সেই রকমের শক্তির জন্য চেস্টা থেকেই জাদুর বিষয়টা এসেছে। কিছু মানুষ বিভিন্ন ভেলকি/জাদু দেখিয়ে সমাজে সবার উপরে প্রভাব বিস্তার করতো। অনেকেই তাদের কাছে সাহাজ্য চাইতো। একটা সময় এই রকমের জাদুকর, পুরহিত,ডাইনি,সাধক সমাজে অনেক প্রভাব বিস্তার করেছে।
যদিও ব্লাকম্যাজিক/কুফুরীর প্রমানিত কিছু না কিন্তু মানুষ এটা বিশ্বাস করে এসেছে ইতিহাসের অনেকটা সময়। এখন এই বিশ্বাস এখন কমতে শুরু করেছে। কিন্তু শিক্ষার প্রভাব যাদের মাঝে কম তারা এখনো বিশ্বাস করে। সচেতন মানুষ বিশ্বাস করেনা কারন বিজ্ঞানের আবিস্কার এবং ব্যক্ষা জানার পরে ভন্ডামীর বিষয়টা মানুষ টের পেয়েছে এবং তাদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস কমে যাবার ফলে তাদের আয় কমে গেছে এবং এর মাত্রা কমেছে।
কিন্তু সমাজ যদি শিক্ষিত না হয় তবে কুসংস্কার দুর হয় না এবং এই রকমের ভেলকী,জাদু, দিখিয়ে অলৌকিক ক্ষমতার বিশ্বাস করিয়ে অনেকেই টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে এখনো।
মিচিও কাকুর একটা ভিডিও দেখেছিলাম তিনি বলছিলেন যে মনে হয় অলৌকিক বিশ্বাসের জন্য আমাদের কোন জীন আছে। কারন হয়তো ১০ বারের ৯ বারই মনে হোওয়া জিনিস ভুল হবে কিন্তু হয়তো ঐ ১ বারের কারনে আপনি অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। এই ভাবেই মানুষের মতনে এই অলৌকিক ভাবনাটি রয়ে গেছে বিব`তনের অংশ হিসেবে।

এই রকমের অনেক বিশ্বাস বিশ্বের ইতিহাসে মানুষের মাঝে ছিলো কিন্তু বত`মানে জ্ঞানের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মাঝে পরিব`তন আসছে। সব শেষে আশা করবো সবাই তার নিজের জ্ঞানের উতকষতার মাধ্যমে অজ্ঞতার চাদরের বাইরে বের হয়ে যৌক্তিক ভাবনায় বিশ্বকে দেখা শুরু করুক।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:৪৪