গত দু-একদিন থেকে একটা খবর সামনে আসছে খুব। আব্দুল হান্নান নামে একজন রিক্সা চালক ৯৯৯ এ ফোন করে একজন মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছেন।
আমি ধর্ষণ রিলেটেড নিউজ গুলি কখনও পড়ি না। লজ্জা লাগে। কোথাও যেন পড়েছিলাম যে বাংলাদেশে ধর্ষণের নিউজে ধর্ষণের যে বর্ণনা দেওয়া হয় তা পর্ণ ম্যাগাজিনের মতই নাকি হয়।
আমি নিউজ টাইটেল থেকে ঠিক বুঝতে পারিনি যে মেয়েটির জীবন বেঁচেছে না ধর্ষণ থেকে বেঁচে গেছে। দোয়া করি যেন ধর্ষণ থেকে বেঁচে যাওয়াই হয় খবরটি।
আব্দুল হান্নান ৯৯৯ এ ফোন করেছেন। আমি আপনি কি করতাম? ফোন করলে হাজারটা ঝামেলা হতে পারে, তার মধ্যে বড় ঝামেলা পুলিশের ঝামেলা; এই ভেবে কি ফোন না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতাম?
দেশে মধ্যে ধর্ষণের হার খুব বেড়ে গিয়েছিলো। এ নিয়ে নানান কথা হয়েছে। ধর্ষকদের থেকেও খারাপ ছিলো কারা জানেন? যারা ধর্ষকদের প্রায় সমর্থন করেই কথা বলেছীলো। এদের কারও কারও কথার টোন ছিলো এমন যে ধর্ষক যা করেছে ঠিকই করেছে।
মা-বোন-বউ-মেয়ে-ভাবী-ভাতিজি আছে; আমার ভয় লাগে। এদের আমি প্রাণের চাইতেও বেশী ভালোবাসি। কিছুদিন আগে একটা নিউজ দেখেছিলাম যেখানে স্বামীর গাড়ির ভিতর থেকে বউকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছিলো বা চেষ্টা করা হয়েছিলো। সেই স্বামী স্ত্রীকে বাঁচাতে পারেননি; তিনি কি সারা জীবনে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন? নিজের প্রতি সারা জীবন কি ধিক্কার রয়ে যাবে না?
আমাদের দেশ তো ইউরোপ-আমেরিকার মত খারাপ দেশ হবার কথা নয়। ইউরোপ আমেরিকাতে ধর্ষণ একটা ডাল-ভাত বিষয়। আমরা কি সেদিকেই হাটছি?
আমার বন্ধুর ক্লাস মেট, বিয়ে করে স্বামীর সাথে সুইডেন গেলো। ওখানে ৬/৭মাস থাকার পর একদিন তার সাথে কথা হচ্ছিলো। সে বললো যে ওখানে নাকি রাতেও সে স্বাভাবিক ভাবে হাটতে পারে; কোন ভয় লাগে না। রাত ১০-১১টা কোন বিষয় না। এদিকে সে দেশে এসে ১৫দিন থাকতেই তার হাত থেকে ব্যাগ ছিন্তাই হয়েছিলো। পরে শুনেছি সে সুইডেনে পরপর দুইবার ধর্ষণ হয়। পুলিশ কেস করেও কোন লাভ হয়নি। ধর্ষনের হারের দিকে সুইডেন বেশ উপরে!
গতকাল অফিসের আর এক বাঙ্গালী কলিগ এই আব্দুল হান্নানের নিউজ পড়ছিলো, পাশ থেকে সৌদী এক কলিগ জিজ্ঞাসা করলো কিসের নিউজ। পুরা ঘটনা জেনে সে বললো, তোমরা কি আদিম যুগে বসবাস করো? তোমাদের মধ্যে মানবতা নাই? মনুষত্ব নাই?
সৌদী আরবে গৃহকর্মী ধর্ষণ হয় এমন নিউজ আমরা প্রচুর পড়েছি। ঘটনা গুলির আংশিক সত্যও বটে। তবে সেটা বাংলাদেশে বাংলাদেশী গৃহকর্মী ঘটনার মতই ঘটনা। এখানের রাস্তায় নারীরা কতটা নিরাপদ তা এখানে না থাকলে বোঝা যায় না।
যে আমি আমার স্ত্রীকে সন্ধ্যার পর গেটের বাইরে যেতে দিতে ভয় পাই; সেই স্ত্রীকেই এখানে রাত ২টার সময় পার্কে বসিয়ে রেখে মুরগি আর কয়লা কিনতে যেতে সাহস পাই! কিভাবে?
আমার দেশের মানুষ ধর্ষনের নিউজ সামনে আসলেই কাপড় নিয়ে টানাটানিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। একদল বলে কাপড়ের কারণে হয়েছে, অন্যদল বলে কাপড়ের জন্য কিছু হয়নি। কিন্তু ধর্ষক যে ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে যায়, সেই কথা কেউ সাহস করে বলে না।
আব্দুল হান্নান ৯৯৯ এ ফোন দিয়েছেন; পুলিশ সাহায্য করেছে........................... উভয়কে ধন্যবাদ। তবে ধীক আমাদের অন্য সকলকে।