somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্নমর্যাদা!

০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার জন্য যে রাস্তা ব্যবহার করা হতো তা দিয়ে খুব বেশি মানুষ চলাচল করতো না। রেহমান সাহেব প্রায়শই ভাবতেন সরকারের এই নির্জন জায়গায় বিদ্যালয় স্থাপনের কারণ কী? রাস্তায় তেমন গাড়ি চলাচল না থাকায় রেহমান সাহেবকে পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। অত্যন্ত সজ্জন প্রকৃতির মানুষ হওয়ায় অনেকে রেহমান সাহেব কে লিফট দিত কিন্তু না পেলে এত দূর পথ পায়ে হেঁটে তাকে বিদ্যালয়ে যেতে হত এবং আসতে হত। বাসায় ফেরত এসে রেহমান সাহেব প্রতিদিন প্রতিজ্ঞা করতেন যে নিজে একটি সাইকেল কিনবেন এবং মানুষকে লিফট দিয়ে সহায়তা করবেন।বিদ্যালয়ের বেতনের টাকা জমিয়ে অবশেষে তিনি ব্যাটারি চালিত একটি সাইকেল কিনলেন এবং মানুষকে লিফট দিয়ে সহায়তা করতেন।কোনো এক রবিবারে বাড়ি ফেরার পথে রেহমান সাহেব দেখতে পেলেন এক অচেনা লোক তার নিকট সাহায্য চাচ্ছেন।রেহমান সাহেব তাকে সাইকেলে চড়িয়ে নিলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর লোকটি রেহমান সাহবের পিঠে ছুরি ধরে এবং বলতে থাকে, 'যা যা সাথে আছেন বের করুন '। রেহমান সাহেব খুব ভয় পেয়ে গেলেন কারণ তার কাছে সাইকেল ছাড়া দেয়ার মতো কিছু ছিলো না। লোকটি তখন রেহমান সাহেবের সাইকেল নিয়ে চলে যাচ্ছিল তখন রেহমান সাহেব বলেন, ' বাবা একটু শুনে যাও'। লোকটি বললো, 'কি বলবেন কাকু তাড়াতাড়ি বলে ফেলেন '। রেহমান সাহেব বলতে লাগলেন, ' তুমি যে সাইকেল ছিনতাই করেছ তা কাউকে বলবা না। তোমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করলে তুমি বলবা মাস্টার স্যার আমাকে সাইকেলে টি দিয়েছেন। ' লোকটি জিজ্ঞাসা করলো, ' এমন বলার কারন কি? রেহমান সাহেব বললেন, ছিনতাইয়ের খবর শুনলে এই রাস্তায় কেউ আর লিফট দিবে না। রেহমান সাহেব লোকটিকে আশস্ত করলেন যে তিনি থানায় অভিযোগ করবেন না।' লোকটি চলে গেলো।

পরদিন সকালে রেহমান সাহেব দরজা খুলতেই দেখতে পেলেন তার সাইকেল দরজার সামনে দাঁড় করানো আছে। সাইকেলের বাস্কেটে একটি চিঠিও রয়েছে। চিঠিতে লেখা, ' মাস্টার মশাই, আপনার সাইকেল চুরি করে একটি দিন আমি ঘুমাতে পারিনি। সাইকেল টি আমি কোথাও বিক্রিও করতে পারেনি। ' এর পর লোকটি মূল ঘটনা খুলে বলতে শুরু করে।

'আপনার সাইকেল টি নিয়ে প্রথমে গেলাম চোরাই মাল কিনে এমন লোকের দোকানে। লোকটি সাইকেল টি দেখেই বলা শুরু করে, 'আরে রেহমান স্যারের সাইকেল তোমার কাছে কি করে এলো? ' আমি তখন ভয়ে জবাব দেই, 'হ্যা, স্যারের সাইকেল! আমাকে দিয়েছে কিছু বাজার করে নেয়ার জন্য। এই কথা বলে আমি দোকান থেকে সাইকেল নিয়ে কেটে পড়ি। '

' এরপর আমি গেলাম হোটেলে কিছু খাবার খেতে। হোটেলের মালিক আমার সাইকেলটা দেখেই বলেন, " তোমার কাছে রেহমান স্যারের সাইকেল কেন? " আমি তড়িঘড়ি করে বলি, স্যার সাইকেল টি আমাকে দিয়ে হোটেলে এসে কিছু খাবার কিনে নিয়ে যেতে বলেছেন।' এই বলে খাবার হোটেল থেকেও চম্পট দেই। ' রাস্তায় সবাই আমাকে প্রশ্ন করতে করতে পাগল বানিয়ে ফেলে যে রেহমান স্যারের সাইকেল আমার কাছে কেন? ' আমি একদিকে ক্ষুধার জ্বালায় অন্যদিকে সাইকেল টা কোথাও বিক্রি করতে না পেরে ভাবলাম এলাকার বাইরে গিয়ে সাইকেল টি বিক্রি করে দিবো। '

' এলাকার থেকে বাহির হওয়ার সময় আমি পুলিশ চেকিংয়ের মুখে পড়লাম। পুলিশ আমাকে দেখেই বলে, "তোমার কাছে রেহমান স্যারের সাইকেল কেন? " এই কথা বলে পুলিশ আমার কাছে আসার আগেই আমি প্রাণপণে সাইকেল চালিয়ে পগার পার! ' আপনার এই সাইকেল টি ছিনতাই করে আমি অনেক বড়ো ভুল করেছি এবং সেই ভুলের মাশুল হিসাবে আমি আপনার সাইকেলে একটি টর্চ বাতি লাগিয়ে দিলাম যাতে রাতে চলাফেরায় আপনার অসুবিধা না হয়। '
চিঠি পড়া শেষে রেহমান সোবহান সাহেব খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেলেন। তিনি মনে মনে ভাবলেন, 'সৎ কাজের প্রতিদান আজ বা কাল পাওয়া যাবেই।অন্যরা খারাপ হলেই যে তোমাকে খারাপ হতে হবে এমনটি সত্য নয়। ভালো কাজের প্রতিদান হয়তো সাথে সাথে পাওয়া যায় না কিন্তু কখনো বৃথা যায় না।'
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৫২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×