somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমদের সচেতনতাই নিরাপদ করবে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবন!

০২ রা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সচেতনতাই পারবে অটিজম আক্রান্ত মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। মব, ক্ষমতালিপ্সায় সৃষ্ট সহিংসতা, বিক্ষুব্ধ ব‍্যক্তিদের কেউ না বোঝার কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি বিবেচনায় অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি ও শিশু-কিশোরদের পথচলা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে কিশোর-তরুণদের একা বের হওয়া আতঙ্কের বিষয়।

দুই.
যেমন–কোনো অটিজম আক্রান্ত কিশোর হয়তো কাউকে স্পর্শ করতে পারে। কোনো খাবার-পানীয়–ব‍্যক্তির হাত বা দোকান থেকে নিজেই নিয়ে নিতে পারে বা নিয়ে নিতে চায়; অথবা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড করে। ওষুধের সময়কাল শেষে বা কোনো কারণে উত্তেজিত হয়ে কাউকে ধাক্কা দিতে পারে। এমনকি গায়েও হাত তুলতে পারে। যেহেতু আমরা এসবে অভ্যস্ত নই, তাই এসব বোঝা আমাদের পক্ষে কঠিন। সে ক্ষেত্রে আমরা হিংসাত্মক না হয়ে সহমর্মী হতে পারি। সহমর্মিতা দেখাতে না পারলে, একটু সহ‍্য করে নিলে, এই মানুষ রাস্তায় বের হতে পারে। কিছু করতে না পারলে মব তৈরি না করি। নিজের দেমাক না দেখাই। এই সব শিশু-কিশোর-ব্যক্তির কাছে সাধারণ শিষ্টাচার আশা করাটা সঠিক হবে না। যেমন–হাঁচি বা কাশি দিতে গিয়ে মুখ ঢাকবে! সুবোধ বালকের মত নীরবে বসে থাকবে। ‘এক্সকিউজ মি’ বলে কোনো বিষয়ে অনুমতি চাইবে। সে রকমটি তারা করতে চায় না। তার মানে এই নয় যে, তার পরিবার বা স্কুল বা সেন্টার তাকে এই প্রশিক্ষণ দেয় না। দেয়। তবে, বাচ্চারা এসব মানতে চায় না। মানতে না চাওয়া, বা বিপরীত কাজ করতে ওরা বেশি পছন্দ করে। আবার অনেকে আছেন, দেখতে মানুষের মতো, তাঁরা বলবেন–এদের বাসায় আটকে রাখা হয় না কেন? অনেক সময় প্রেক্ষাপটে এ রকম হয়, কেউ কেউ এসব বাচ্চার দিকে তেড়ে আসেন।

তিন.
অটিজম আক্রান্ত সন্তানের বাবা হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা, শিক্ষিত মানুষ এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হিংসাত্মক আচরণ করে থাকেন। যেমন–আমার পরিবার ঢাকার যে এলাকায় থাকে, বা যেসব জায়গায় বাচ্চাকে নিয়ে খেতে বা কিছু কিনতে যাই, ডাক্তার দেখাই–এসব খুব উঁচু মানের না হলেও সমাজে ‘নামী’ হিসেবে বিবেচিত। এই জায়গায় যেসব মানুষ আসেন, তাঁদের ব্যবহার দেখলে আক্কেল হারানোর অবস্থা হয়। আবার একই এলাকার সেলুন, বাসার দারোয়ান, ভ্যানে সবজি বিক্রেতারা বরং এদের চেয়ে কোটিগুন সহানুভূতিশীল।

চার.
অটিজম আক্রান্ত মানুষকে বাসায় নয়, বাইরে আনতে হবে। তাদের ও তাদের পরিবারের প্রতি থাকতে হবে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সহানুভূতি। প্রতি বছর অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত হয় ঠিকই; তবে, যারা এর আয়োজন করেন, সেমিনারে কথা বলেন, বিশেষ মানুষদের মূলধারায় ফেরত আনার কথা বলেন–এদের ভেতরের চেহারা ভয়াবহ এবং কুৎসিত। এমনকি এরা ভয়ঙ্কর শব্দ সন্ত্রাসী। এসব সন্তানদের পরিবার তাদের চাপে অসহায়ত্বের কথা কাউকে বলতেও পারেন না।

পাঁচ.
আমার ছেলেকে নিয়ে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতায় ছায়ানট সংগীত স্কুলের ওস্তাদের এই বিষয়ে জ্ঞান না থাকায় তাঁর বিরক্তি দেখেছি, নালন্দার ভর্তির নামে হয়রানি মেনে বাচ্চাকে ফেরত এনেছি, কিংবা সহজ পাঠের ব‍্যবস্থাপনা কর্তাদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখেছি। এদের অটিজম নিয়ে আলাপ দেখলে এখন আমি হাসি, আর বলি–তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ!

এই সব কারণে এই ধরনের বাচ্চাদের হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া, অন্যদের পড়াশোনা হয় না। আমার ছেলের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও প্রচলিত মাধ্যমের বদলে প্রি ভকেশনালে পড়াশোনা করছে।

ছয়.
অটিজম আক্রান্ত মানুষের জন্য রাষ্ট্র অনেক কিছু করছে, এমন কথা জানছি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। তবে, এর ফল ভোগ করা মানুষ খুব একটা চোখে পড়েনি। অটিজমের মতো ব‍্যয়বহুল ব্যবস্থাপনায় সরকার অনেক কিছু না করে অল্প কিছু করলে হয়। কিন্তু করে না। কারণ, তারাই বলতে পারবেন। এই জন্য সম্ভবত সশস্ত্র বাহিনী তাদের মতো করে স্কুল করে নিয়েছে। আর সাধারণের জন্য কার্যক্রম সরকারের ফাউন্ডেশন, কিছু থেরাপি সেন্টার আর সরকারি হাসপাতালের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ। বড় বাচ্চাদের জন্য সরকারি উদ্যোগ নেই । বেসরকারি উদ্যোগও দু‑তিনটি।

এ রকম প্রেক্ষাপটে দিবসকেন্দ্রিক অটিজম সচেতনতা দিবস, একটি রেওয়াজ। এই আয়োজনে রাষ্ট্রের যে টাকা খরচ হয়, তা দিয়ে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য শেল্টার হোম করা যায়।

আমাদের মৃত্যুর পর এসব সন্তানের কী হবে–এই চিন্তায় সামর্থবানরা দেশ ছাড়েন। যারা পারেন না, তাঁরা শঙ্কায় দিন পার করেন। তাদের বাবা বা মা কেউ একজন মারা গেলেও বিপদ বাড়ে। গত মাসে এ রকম একটা ফোন পাই মোহাম্মদপুর থেকে–সৎ মা তাদের অটিজম আক্রান্ত সন্তানের চোখে আঘাত করেছেন। মেরে রক্তাক্ত করেছেন। এসব শুনে অনেকে ক্ষণিকের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও কেউ কিছু করতে পারেন না। কারণ, এসব বাচ্চার ব্যবস্থাপনা খুবই কঠিন। তার ওপর প্রতিবেশী, সমাজ যদি সহযোগী না হয়, তাহলে প্রচণ্ড বিপদ। তাই রাষ্ট্র বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কিত তহবিল একসাথে করে, পুনর্বাসন উদ্যোগ জরুরি।

সাত.
আমরা, সমাজের মানুষ যত দ্রুত এদের পুনর্বাসন ভাবনা মাথায় আনব, ততই মঙ্গল। প্রয়োজনে, রাষ্ট্র বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান–যেমন সিআরপির মতো কোনো উদ্যোগ–এসব মানুষের পুনর্বাসনের জন‍্য নির্ধারিত ফি নিতে পারে। যেটি দিয়ে তাদের চিকিৎসা, থেরাপি ও অন‍্যান‍্য ব‍্যয় মেটানো সম্ভব হবে। বিশ্বাস করেন, কত পরিবার যে এই সমস্যা নিয়ে নির্ঘুম উদ্বেগে দিন পার করে, তার হিসেব নেই।

আট.
আশার কথা, বৈষম‍্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশে প্রথমবারের মতো বিশেষ মানুষদের জন্য আলাদা সেল করেছে। অন‍্য রাজনৈতিক দলগুলোও এটি অনুসরণ করতে পারে। ক্ষমতার বিভিন্ন বিষয় তো তারা উপভোগ করেন, একটা কাজ না হয় তারা অবুঝ মানুষের করলেন–অটিজম, ডিফারেন্টলি অ্যাবল মানুষের জন্য। এটাই কামনা করি।

আপনার-আমার সচেতনতা অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের জীবন সহজ করবে।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:২২

কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!

পেহেলগাম, ছবি গুগল থেকে প্রাপ্ত।

কাশ্মীরে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। বিশ্লেষকদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসর্জনের ছাই

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:০৯




একদিন দগ্ধ ঘাসে ভালোবাসা পুড়িয়ে দেব।
সর্বাংগে ওর ছাই মেখে আমি বৈরাগ্য নেব।
রগড়ে রগড়ে ধুয়ে ফেলব শ্রবন মেঘের জলে।
কায়াটা কে শুকতে দেব তোমার বাড়ির উঠনে।

পায়ের নখে গজিয়ে উঠবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু আশা, কিছু হতাশা, কিছু বাস্তবতা

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯



বাংলাদেশ যেন একটা রোলার কোষ্টারে সওয়ার হয়ে চলছে এখন। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে; একটা সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমরা সরকারের কর্মকান্ডে আশান্বিত যেমন হচ্ছি, তেমনি হতাশায়ও নিমজ্জিত হচ্ছি;... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:১২


এই উষ্ণতায় ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই নদীতে সমুদ্দুরে
বালুচরে হেঁটে বেড়াই,
ঢেউয়ে থাকি বসে, জল এসে ছুঁয়ে দিক আমায়,
হিম হাওয়া এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাক সুখের সপ্ত আসমানে।

এই বৈশাখে ইচ্ছে করে পুকুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি শেষ কবে একটি বই পড়েছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২


আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব বই দিবস। অনেকেই একে বলেন ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’। ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে বই, লেখক এবং কপিরাইট রক্ষার বার্তা নিয়ে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×