ছবি ঋণ: বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম ।
বেগমের সাথে আমার পরিচয় অষ্টম শ্রেণি পড়ার সময়। বেগম পত্রিকার একটা ঈদ সংখ্যা খরিদ করেছিলাম, সোনাইমুড়ি বাজারের পশ্চিম মাথার পত্রিকার স্টল থেকে। সে সংখ্যায় ঝর্ণাদাশ পুরকায়রেস্থর একটা গল্প খুব ভালো লেগেছিল। সেই সাথে অসংখ্য নারী লেখককে এক মলাটে পেয়েছিলাম।।
বেগম পত্রিকার প্রতি সেই প্রথম প্রেম। নূর জাহান বেগম দক্ষ সম্পাদকই নন, ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত পরিশীলিত এবং ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ দ্বিতীয় জন এই বঙ্গে আমার নজরে পড়েনি।
নূর জাহান বেগমের সাথে সম্বাদিকতার খাতিরে একবার দেখা হয়েছিল। সম্ভবত ২০০০ সালে। বেগমের কোনো একটা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে। অত্যন্ত মার্জিত ও বিনয়ী নূর জাহান আপার আন্তরিক অভ্যর্থনা এবং সমাজ ভাবনায় মুগ্ধ হয়েছিলাম।
তাঁর প্রতি আমার বিশেষ শ্রদ্ধার জায়গা হলো, বাংলা সাহিত্যে নারীর বিশেষ অবস্থান তৈরিতে তিনি অনন্য, যিনি তাঁর পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত-সমৃদ্ধ করেছেন।
নূরজাহান বেগমের জন্ম ১৯২৫ সালে এখনকার চাঁদপুর জেলায়। ১৯৪২ সালে বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত কলকাতার সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাইস্কুল থেকে তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে পড়াশুনা করে বি এ পাশ করেন নূরজাহান বেগম।
বেগমের সম্পদাক নূর জাহান বেগম গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হসপিটালে ইন্তেকাল করেন। পরে তাঁকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য, নারী জাগরণ, নারীদের শিল্প-সাহিত্য-নন্দনতত্ত্ব চর্চার জগতে অনন্য বেগম বেঁচে থাকবেন সবার মনে। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
সেই সাথে আমাদের দীনতার জন্য তার প্রতি ক্ষমা চাই। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা পদক তাঁর হাতে ওঠেনি। না বিম্পির আমলে না আম্লীগের আমলে। রাষ্ট্রের এ পদক কারা পান, কারা এর জন্য নির্বাচন করেন, এ প্রশ্নটা রাখলাম। আগে কখনো করিনি। আজ করলাম।
তাঁর মৃত্যুর পর সবার মরাকান্না দেখছি, জীবিত থাকতে তাঁর মত মানুষকে স্বীকৃতি দিতে পারিনি। নাগরিক হিসাবে রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের জিজ্ঞাসা --- দলদাস না হলে কি বাপু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি-সম্মান মিলবে না!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৪