somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সু চি, রোহিঙ্গা এবং শান্তি!

০৯ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্ট একটা খবর, বড় ধরণের ধাক্কা দিলো, সকালে। প্রথম আলো খবরটি প্রকাশ করেছে, সংবাদ সংক্ষেপে। সু চি'র মুখপাত্র বলছেন, রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলা যাবে না।
খবরের তথ্য, সু চির মুখপাত্র উ কিও জে ইয়া বলেন, 'রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না।তাই সরকার তাদের ওই নামে ডাকবে না। জে ইয়ার ভাষায়, ‘আমরা তাদের রোহিঙ্গা বলব না। কারণ, তারা মিয়ানমারের স্বীকৃত ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয়’। (সূত্র প্রথম আলো, ০৯ মে ২০১৬)

সু চি কে যারা অহিংস নেত্রী হিসাবে জানেন, যারা তাকে গণতন্ত্রের মানস কন্যা বলে অভিহিত করেন, শান্তির দূত হিসাবে ভাবনায় রেখে আনন্দ উপভোগ করেন, তারা নিশ্চিতভাবেই একটা ধাক্কা খাবেন। বা খেয়েছেন।

দেশহীন মানুষ বিশ্বজুড়েই আছে, রোহিঙ্গারা জাতিসঙ্ঘের হিসাবে সবচে প্রান্তিক দেশহীন মানুষ। কিন্তু এদের এখন আর মানুষ হিসাবে দেখতে অভ্যস্ত নই আমরা। কারণ রোহিঙ্গাদের করুণ আর্তির ছবি এ দেশে, বিশ্বে ছাপা হয়েছে, যেখানে দুর্দিনেও তাদের নৌকা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ কাজটি এমন দেশ করেছে, যে দেশটির লক্ষ লক্ষ লোক মহান স্বাধীনতার সময় পাশের দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, এবং সেখানে বছরখানেক থেকেছিল। এ একথা এ জন্য বল্লাম যে, এটা গণমা্নুষের আকাঙ্খার সঙ্গে যায় না। (ঘটনা অক্টোবর, ২০১২ )

রোহিঙ্গাদের প্রান্তিক থেকে প্রান্তিকতর করার কাজটি করা করছে? কারা এটা বিষফোঁড়ার মত টিকিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর, সে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে সমাধানটা খুবই জরুরী হলেও তা আমরা করতে পারিনি। যার জন্য আমাদের মত গরিব দেশের উপর বর্মার নাগরিকদের চাপ বাড়ছে। বর্মার লোকেরা আমাদের সাথে বসলে এ সমাধানের আশ্বাস দেয় এবং বিমানে চড়ার পর সে কথা ভুলে যায় ।

রোহিঙ্গা বলতে চোখের সামনে অপরাধ উন্মাদ একদল মানুষের ছবি দেশি গণমাধ্যম তুলে দিয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি মিডিয়া বলছে, তারা সবচে নিপীড়িত। বাংলাদেশের গণমাধ্যম রোহিঙ্গা নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। এখানকার গণমাধ্যমের বড় অংশ রোহিঙ্গাদের জমাত ইসলামের দিকে ঠেলে দিয়ে বিচার করে। এতে করে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আসল চিত্র মিডিয়ায় আসে না।

বাংলায় কথা বলা এ সব মানুষ দশকের পর দশক ধরে এ বর্মা থেকে তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। বৈধ অধৈ দু'পন্থায় এ দেশে বহু রোহিঙ্গা আছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ধারণা করা হচ্ছিল, সু চি দেশরি নেতৃত্বে আসলে সমস্যার সমাধান হবে, তবে এটি এ দুঃস্বপ্ন। সু চি কেবল রোহিঙ্গা বিদ্বেষিই নন, তিনি মুসলিম বিদ্বেষিও। সম্প্রতি তার একটি বক্তব্য বেশ আলোড়ন তুলেছিল, যে দিনি কোনো মুসলিম সাংবাদিককে তার প্রথম সাক্ষাৎকার দিতে চান না।

অনেকেই বলতে চাইবেন বাংলাদেশের পাহাড়ি মানুষেরও দেশ নেই। সেটা নিয়ে আমরা ত কথা বলছি না। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে দ্বিমত করি। পাহাড়িরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং তাদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকার কাজ করছে। এমনটি সংবিধান অনুমোদন করে না, তার পররেও আওয়ামী লীগ সরকার ঝুঁকি নিয়ে তাদের সাথে চুক্তি করে, তা বাস্তবায়ন করে চলেছে।

বান্দরবান জেলার অন্তত ৪৬ হাজার মুরং বা ম্রো সম্প্রদারে লোক আছেন, যারা বর্মার রাখাইন রাজ্য থেকে তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে এসেছেন এবং থাকছেন। নাগরিক হিসাবেও তাদের আমরা কেবল স্বীকার করিনা, আমরা তাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি।

কিন্তু রোহিঙ্গাদের স্বেদেশ থেকে তাড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশি বলে, এবং এ কাজটি করছে বর্মা। যাদের আমরা সামরিক শক্তির দিক থেকে দুর্বল মনে করতাম। এখন অবশ্য করার কারণ নেই। কারণ শক্তি সমরে তারা অনেক এগিয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সরকারি হিসাবে বর্তমানে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। এর বাইরে আরো হাজার হজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে।

বিবিসির বিশ্লেষক ডেভিড লয়েন বলছেন, রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণ একটি জাতিগত নির্মূল চেষ্টা। তিনি এও বলছেন, সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষায় দেশটির সরকারের চেষ্টা যথেষ্ট নয়।

স্থানীয় সংবাদদাতাদের উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম যে সব খবর প্রচার করছে তাতে দেখা যাচ্ছে, রাখাইন প্রদেশের যে আট লাখ মুসলিম বাস করেন, তাদের বিরুদ্ধে কেবল সরকার নয় স্থানীয় বৌদ্ধধর্মীয় গুরুরাও দাঙ্গা উসকে দিচ্ছে।
বর্মা অঞ্চলের জাতিগত সঙ্ঘাত নিয়ে কাজ করেন ল্যারি চাগান। তাকে উদ্ধৃত করে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছিল, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মনে করে মালয়েশিয়া এক সময় বৌদ্ধদের দেশ ছিল। কিন্তু সেখানে ক্রমেই মুসলমানরা বেড়ে গিয়ে সেটি এখন ইসলামিক দেশে পরিণত হয়েছে। বার্মায় মুসলিমদের অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের মেনে নেয়া হলে এবং তাদের বংশ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দেশটি একই রকম হয়ে যেতে পারে।

ল্যারি বলছেন, বার্মায় রোহিঙ্গারা অত্যন্ত কষ্টকর জীবনযাপন করছেন, তাদের নির্ধারিত চৌহদ্দির বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এর কারণ তারা মসুলিম ও তাদের ভাষা বাংলা। এমনকি তারা রেঙ্গুনেও যেতে পারেন না। তাদের এলাকায় কোনো স্কুল পর্যন্ত নেই, এতে করে রোহিঙ্গা শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে বার্মা স্বাধীন হওয়ার পর আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গারা ছিল না বলে দাবি করে সেখানকরা বৌদ্ধরা। অন্য দিকে রোহিঙ্গারা নিজেদের বর্তমানের রাখাইন রাজ্য যা আগে আরাকান হিসেবে পরিচিত ছিল তার ভূমিপুত্র বলে দাবি করেন। এর কোনো সমাধান এখন পর্যন্ত না হওয়ায় এ সঙ্কট টিকে আছে।

ল্যারি বলছেন, সেখানে মুসলিমরা এতটাই নিপীড়নের শিকার যে তারা বিয়ে পর্যন্ত করতে পারেন না। তাদের বিয়ে করতে হলে বাংলাদেশে এসে বিয়ে করে যেতে হয়। আবার বিয়ে করে বার্মায় ঢোকার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অভিভাসন আইনে আটক করে। এ রকম এক সঙ্কটময় কাল অতিক্রম করছে বার্মার রোহিঙ্গারা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:১২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাষ্ট্রদূত নিয়োগ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তুঘলকি কান্ড !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪৪

৫ই নভেম্বর অন্তবর্তীকালীন সরকারের তিন মাস পূর্ণ হয়েছে। চারিদিকে আলোচনা চলছে এই সরকারের সময়ে কোন মন্ত্রণালয় কেমন পারফরম্যান্স করেছে তা নিয়ে। আলোচনা হচ্ছে অতি গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকানরা ভীষণ কনজারভেটিভ

লিখেছেন মুনতাসির, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২৬

আমেরিকা নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার নেই—এটা প্রথমেই বলে ফেলা ভালো। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি। আমেরিকা তথা উত্তর আমেরিকাতে আমার যাওয়া হয়েছে বেশ কিছুবার। সবগুলো ভ্রমণ যোগ করলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×