পাশাপাশি সীটে বসে কোন অচেনা মেয়ের সাথে ছয় ঘন্টার জার্নি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নাইট কোচে.... কম্বল মুড়ি দিয়ে! বিষয়টা নি:সন্দেহে থ্রিলিং! ভিতরে ভিতরে আমি যার পর নাই পুলকিত!
হঠাৎ করেই চিটাগাং যেতে হচ্ছে.... জরুরী কাজে। এক কাপড়ে গ্রীনলাইনের রাজারবাগ কাউন্টারে হাজির হয়েছি.... রাত সাড়ে দশটায় গাড়ি। তখনও তিনটা সীট খালি আছে....A3 আর J3, J4..... একেবারে সামনের সারির একটা আর বাকি দু'টা একেবারে শেষের সারিতে।
সংগত কারনেই আমি A3 সীট-টা চাইলাম.... বাসের সামনের সীটে বসে জার্নিই আরামদায়ক! কিন্তু কাউন্টার থেকে আমাকে বলা হলো... A3 সীট-টা আমাকে দেয়া যাবেনা, কারন ঐটা নাকি লেডি রিকোয়েস্ট সিট!
- কি সীট?
- লেডি রিকোয়েস্ট সীট।
- মানে?!
- A4 সীটে একজন লেডিস যাচ্ছেন। তাই রিকোয়েস্ট আছে পাশের সীটে কোন লেডিস যাত্রী দিতে।
- গাড়ি ছাড়তে আর মাত্র ৪৫ মিনিট বাকি.... এর মধ্যে যদি কোন লেডিস যাত্রী না পান?!
- আমরা গাড়ি ছাড়ার আধ ঘন্টা আগ পর্যন্ত দেখব।
আমিও নাছোড় বান্দা! ততক্ষণে আমার পুলকিত ভাব শুরু হয়ে গেছে....
- ভাই এইডা কোন বিচার হইল?! আমি আগে এসে যাব পিছনের সীটে, আর পরে এসে কেউ পাবে সামনের সীট ?!
- আর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেন, এর মধ্যে কোন লেডিস না পেলে টিকেট সেল কিরে দেব।
মাত্র ১৫ মিনিট অপেক্ষা করলেই লেডি রিকোয়েস্ট সীট-টা আমার হয়ে যাচ্ছে.... এমনটাই আশা করছি। একেকটা করে মিনিট যাছে.... আর বাড়ছে আমার সম্ভাবনা! এর মধ্যে আসমান থেকে কোন লেডিস টুপ করে না পড়লে ঐ সীটের প্রতি সব্রাগ্রে যে আমারই অধিকার... তা আমি প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছি। তাই কাউন্টার ছেড়ে নড়ছিনা! এর মধ্যে J4 বিক্রি হয়ে গেল।
কাউন্টারের সামনে ওয়েটিং লাউঞ্জে আনেক যাত্রী নিজ নিজ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। ভাল করে চোখ বুলালাম একবার। যা খুঁজছিলাম... পেয়েও গেলাম! মার্জিতভাবে পেঁচিয়ে শাড়ি পড়া এক মহিলা এক কোনায় একা বসে আছেন! বয়স ৩২ থেকে ৩৫ হবে। ইনিই কি আমার পাশের যাত্রি!? বড়জোর এক বাচ্চার মা হবে! গায়ের রং হালকা শ্যামলা হলেও চেহারাটা বেশ শার্প... সুশ্রী ও স্মার্ট লুকিং! শাড়িতে মানিয়েছে বেশ! ব্যাংক বা কোন কর্পোরেট হাউজে জব করেন হয়তো। কিন্তু একা কেন?! স্বামী ভদ্রলোক কই?! স্বামীর সাথে রাগ করে মা'র বাড়ি যাচ্ছে বুঝি...নাকি অন্য কোন কারনে ?!
আরেকটি মেয়েকেও দেখলাম একা বসে আছে... বয়স কম। ইউনিভার্সিটি বা মেডিকেলের ছাত্রী হবে হয়তো। সাথে ছোট্ট একটা ট্রলী ট্রাভেল ব্যাগ। জিন্সের প্যান্ট আর ফতুয়া ধরনের টপস পড়া। মোবাইল ফোনে ফেসবুকিং-এ মহা ব্যস্ত! ছুটি শেষে হোস্টেলে ফিরছে হয়তো। এইরকম স্মার্ট মেয়ের পক্ষে একা একা রাতের জার্নি করা অস্বাভাবিক কিছুনা!
এরই মধ্যে দেখি..... কাউন্টার থেকে ইশারা করে আমকে ডাকা হচ্ছে... অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সীট-টি আমার হতে যাচ্ছে। মহা আনন্দে টিকিটের দাম চুকিয়ে দিলাম। যথারিতী নাম আর মোবাইল নম্বর লিপিবদ্ধ করে আমার হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো সেই আরাধ্য টিকেট.... A3, দ্যা লেডি রিকোয়েস্ট সীট! আমি আহলাদিত!
এতক্ষণ সিগারেটের তেষ্টা পেলেও আমি কাউন্টার থেকে নড়ি নাই। এক কাপ কড়া লিকার চায়ের অর্ডার দিয়ে এবার আয়েশ করে একটা সিগারেট ধরালাম। রাস্তায় যানজট থাকলে ছ' ঘন্টার জার্নি ক' ঘন্টা লাগে কে জানে!..... মন্দ কি! আমার যেন কোন তাড়া নাই ..... লেডি রিকোয়েস্ট সীটের ফায়দাটাই আমার কাছে এখন মূল চিন্তা! আমি পুলকিত!
ঠিক সাড়ে দশটায় গাড়ি ছাড়লো! কিন্তু আমার পাশের লেডিস যাত্রীর দেখা নাই! পাশের সীট খালি! হায় হায়!..... গাড়ি যে ছেড়ে দিল!! উনি কি যাত্রা ক্যান্সেল করেছেন... নাকি সামনের কোন কাউন্টার থেকে উঠবেন!?
ঠিক তাই.... আরামবাগ কাউন্টার থেকে কিছু যাত্রী উঠলো গাড়িতে। আমার ঠিক পিছনের সারিতে এক দম্পতি বসলো... কোলে দুধের বাচ্চা! ভদ্র মহিলা নিজ আসনে স্থিতু হয়ে বসার পর ভদ্রলোক অন্যদিকে নজর দিলেন...." ফুলির মা, তোমার সীট এইদিকে.... ভাই, একটু যেতে দেন"। আমি উঠে দাঁড়িয়ে পথ করে দিলাম! পিছনের দম্পতির বাচ্চার দুধের ফিডারের ঝুড়িটা পায়ের কাছে রেখে পাশের সীটে বসলো আমার সেই বহু কাঙ্ক্ষিত লেডি সহযাত্রী.... ফুলির মা! মাঝ বয়সী... গাট্টা গোট্টা স্বাস্থ্যবতী শরীর! কাজের বুয়াদের সচরাচর এমন স্বাস্থ্যবতী শরীর দেখা যায়না! কিন্তু এই ফুলির মা যে এই দম্পত্তির বাসায় খেয়ে দেয়ে ভালই আছেন.... তা বোঝাই যাচ্ছে!
হায় ঈশ্বর! এ তোমার কেমন প্রহসন!.... আমার নারী ভাগ্য বরাবরই মন্দ ! আমি করিডোরের দিকে যথাসাধ্য চেপে বসার চেষ্টা করলাম। হে ভগবান!.... আমায় রক্ষা কর!
পরিশিষ্ট:
আমার লেখা এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। কিন্তু কৌতুহলী পাঠক মাত্রই মালুম করতে পারছেন... ইহা কাহিনীর শুরু মাত্র! বাকিটুকু বুদ্ধিমান পাঠকের উর্বর মস্তিস্কের উপর ছেড়ে দিলাম! কবি যেখানে নিরব.... সেখানে লেখককে পাঠকের চিন্তা শক্তির উপর আস্থা রাখতেই হচ্ছে....উপায় কি?!
( ইহা একটি শোনা গল্প কাস্টোমাইজ করে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা মাত্র)