somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দারুচিনি দ্বীপে একদিন.........

০১ লা অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দারুচিনি দ্বীপে যাওয়ার শখ ছিলো অনেক আগে থেকেই, বেশ কয়েকবার কক্সবাজার ঘুরে এলেও দারুচিনি দ্বীপে যাওয়া হয়নি একবারও।তাই এবার বেশ জোরেসোরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। দারুচিনি দ্বী্পকে আমরা সবাই সেন্টমার্টিন নামেই চিনি। এর আরো একটি নাম আছে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’, স্থানীয়রা এই নামেই ডাকে। প্রচুর নারিকেল উৎপন্ন হয় এই দ্বীপে তাই এরুপ নামকরন।

এবার ছয়দিনের ছুটি ছিলো।কক্সবাজারের হিমছড়ি,মহেশখালি,ইনানী বীচ চষে বেড়ানো শেষে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে বের হলাম।খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই কক্সবাজার থেকে টেকনাফের দিকে যাত্রা শুরু হল আমাদের।জাহাজের টিকেট রাতেই কাটা হয়ে গেছে।আমাদের জাহাজের নাম এল,সি,টি কুতুবদিয়া।আমার স্বামী জাহাজের এক্সিকিউটিভ সুইটগুলো ভাড়া করতে চেয়েছিলো। আমিই না করলাম।ডেকে বসে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করার মজাই আলাদা।শেষ পর্যন্ত ওপেন ডেকের বিজনেস ক্লাস সিটের টিকেট কাটা হল।আমাদের গাড়ী টেকনাফের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলছে।চারপাশের সবুজ শ্যামলে ঘেরা প্রকৃতি আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে পুরোটা সময়।সবুজ সুন্দরের মাঝে এ এক দারুন ভাললাগা, যা কখনো ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা!প্রকৃতির এই ভালোলাগায় বুঁদ হয়ে থাকতে থাকতে কখন যে টেকনাফ পৌছে গেলাম বুঝতেই পারলাম না।তীরে নোঙ্গর ফেলে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছে আমাদের জাহাজ।টিকেট চেক শেষ হওয়ার পর উঠে পড়লাম জাহাজে।সিট নাম্বার অনুযায়ী বসতে গিয়ে পড়লাম বিপত্তিতে।
ওমা! একি! আমাদের সিটে আগে থেকেই কারা যেন বসা। কাছে গিয়ে বললাম, ‘ভাইয়া এগুলো তো আমাদের সিট, আপনি কি আপনার টিকেটটা আর একবার চেক করবেন?’
ভদ্রলোক তাদের টিকেট বের করলো। আশ্চর্য আমাদের সিট নাম্বার একই।আমার তো মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো!আমার হাজব্যান্ড আবার অত্যন্ত কুল ব্রেনের অধিকারি।সে আমাকে শান্ত থাকতে বলে নিচে গেলো ডেকের দায়িত্বে থাকা ছেলেটিকে ডেকা আন্তে।সে এসে অনেক মাফ টাফ চেয়ে আলাদা দুটো চেয়ারের ব্যাবস্থা করে দিলো এবং ঐ ভদ্রলোককে রিকোয়েস্ট করলো চেয়ারে গিয়ে বসার জন্য, কারন আমাদের সাথে বাচ্চা আছে আর তাছাড়া আমরা টিকেট কেটেছি রাতে আর উনি কেটেছেন কিছুক্ষন আগে, তো আমাদের ই অধিকার বেশী।কিন্তু ভদ্রলোক কিছুতেই সিট ছাড়লো না।অগ্যতা বাধ্য হয়ে আমাদেরকেই চেয়ারে বসতে হল।টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন প্রায় দু ঘন্টার পথ।পুরোটা সময় জুড়ে আমার মেয়ে জাহাযে দৌড়ুদৌড়িতে ব্যস্ত ছিলো আর তার বাবা ব্যস্ত ছিলো তাকে নিয়ে।কেউই বসে ছিলো না, সবাই রেলিঙ্গে ভর দিয়ে দাড়িয়ে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলো।আমিও তাই।
কিচ্ছুক্ষন পর পাশের ভদ্রলোককে দেখলাম তার সঙ্গীকে নিয়ে উঠে গেলো, রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে দুজন টুকটুক করে গল্প করছে।ঘন্টাখানেক পর আমি উঠে গিয়ে ভদ্রলোককে বললাম ‘কি ভাইয়া, বসার জায়গা নিয়ে তো মারামারি লেগে যাচ্ছিলেন প্রায়!! এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন যে ??’
ভদ্রলোক আমার কথা শুনে হেসে দিলো।আমিও হেসে দিলাম।শেষমেশ তাদের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো আমাদের, পুরো রাস্তা গল্প করতে করতে গেলাম।

নাফ নদীর নীল আর বাদামী পানি কেটে কেটে আমাদের জাহাজ এগিয়ে চলছে স্বপ্নের দ্বীপ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে।জাহাজ থেকেই দেখা যায় মায়ানমারের সীমান্ত।নাফ নদীই তার প্রবাহমান ধারায় ভাগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ও মায়ানমার কে।
তখন বেলা প্রায় ১২ টা। সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি পৌছে গেছি আমরা।দূর থেকে দ্বীপটিকে দেখে মনে হচ্ছে ঘন নীল সমুদ্রের মধ্যে একটু সবুজের ফোঁটা!জাহাজ থেকে নেমে ঘুরে ঘুরে দেখছি সবকিছু আর বিস্মিত হচ্ছি। এত সৌন্দর্য! এত সৌন্দর্য!! ঝিমধরা এই নীল সৌন্দর্য যাত্রার সব ক্লান্তিকে ভুলিয়ে দিয়ে মনটাকে একদম ফ্রেশ করে দিলো।দুপুরও হয়ে গেলো। ক্ষিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছিলো।একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবারটা সেরে নিলাম। মাছ আর শুটকির হরেক রকম পদ।যা খাচ্ছি অমৃতের মত লাগছে!খাওয়া দাওয়া শেষে আবারো ঘুরতে বের হলাম।চারিদিকে শুটকির দোকানের ছড়াছড়ি।

বীচের পাশে সারিসারি নারিকেল গাছ।সম্পুর্ন বীচেই অসংখ্য প্রবালের ছড়াছড়ি। কিছু কিছু প্রবাল আবার বেশ ধারালো, খালি পায়ে হাটার জো নেই!স্থানীয় এক লোকের সাথে কথা হল, সেন্টমার্টিনে নাকি ধান ও তরমুজের ও ভালো চাষ হয়।দ্বীপের মাঝখানেই ছোট একটা বাজার আছে। মাছ ও শুটকি ছাড়াও সামুদ্রিক শামুক ঝিনুক নিয়ে তৈরী গহনা গাটিও পাওয়া যায় সেখানে।শখের বসেই কিনে নিলাম বেশ কিছু।ঘুরতে ঘুরতেই চোখে পড়লো ‘সমুদ্র বিলাস’, হুমায়ুন আহমেদের বাড়ী।একদম বীচের পাশেই।

ঘুরতে ঘুরতে কখন যে বিকেল হয়ে গেলো টেরই পেলাম না।জাহাজ ছাড়ার সময় হয়ে এলো তাই জাহাজে উঠে পড়লাম।অপরূপ সৌন্দর্য চোখে নিয়ে আবারো ফিরে এলাম কক্সবাজারে।ফেরার সময় উপভোগ করলাম নাফ নদীতে সূর্যাস্তের দৃশ্য।মায়াবী আলোয় মনটা ভরে গেলো।অপরূপ মোহনীয় সুন্দর সেই স্মৃতি সত্যিই ভোলার নয়!




বিঃদ্রঃ ১ ও ২ নং ছবি নেটের সৌজন্যে
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ২:৪৬
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাটারি অটো রিক্সা বন্ধ করা কী খুব কঠিন কাজ?

লিখেছেন চোরাবালি-, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮



বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড় হল এখন অটো রিক্সা, স্বল্প পরিশ্রমে সহজ আয়ের মাধ্যম হিসাবে খুবই জনপ্রিয় একটা পেশা। স্বল্প ভাড়ার জন্য অনেক মানুষ এখন পায়ে হাঁটা ভুলেই গেছে আর হাঁটার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জিয়াউর রহমান

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৪



চাইলে জিয়াউর রহমান ঢাকায় ঝাঁ চকচকে দালান কোঠা রাস্তা বানিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে উন্নয়ন করার বাহাদুরি করতে পারতেন। সেটা না করে তিনি ঘুরতে লাগলেন সারা দেশে, গ্রামে গঞ্জে গিয়ে খাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জবাবদিহিতার অনন্য দৃষ্টান্ত

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৫

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয় সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে। সেসব পোস্টে তার বিরুদ্ধে বিপুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি যাত্রা করবেন নাকি রাজনীতি করবেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১১


ইদানীং দেশে রাজনৈতিক দল গজানোর হার দেখলে মনে হয়, দেশের মাটিতে এখন ধান নয়, গজায় দল। ভোট এলেই বুঝি এই দলগুলো দুলে ওঠে, আর না এলেই পড়ে থাকে ফাইলের পাতায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের নেতারা যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন, তাহলে তারা পালিয়ে গেলেন কেন?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:০৯

আওয়ামী লীগের নেতারা যদি সত্যিই নির্দোষ হতেন, তাহলে তারা পালিয়ে গেলেন কেন?

পলায়নপর ছবি কৃতিত্ব এআই

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×